Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Wednesday 1 March 2023

দক্ষিণের ডুয়ার্স ঝালুয়ারবেড় (Jhaluarber)

 ডুয়ার্স! তাও আবার দক্ষিণে।! হ্যাঁ দক্ষিণে। দক্ষিণের ডুয়ার্স ‘ঝালুয়ারবেড়’। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার ডোমজুর মহকুমায় অবস্থিত মকরদহ-২ (Makardah- ii) গ্রাম পঞ্চায়েত একটি গ্রাম হল ঝালুয়ারবেড় (Jhaluarber)। অঞ্চল টির ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক হল: ২২°৩৭′৪০″ উত্তর, ৮৮°১৫′১০″ পূর্ব। একটা সময় গোটা এলাকাটাই জঙ্গলে ঘেরা ছিল। বর্তমানে বেশ কিছু জায়গা বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেই ঝালুয়ারবেড়ের মানুষ দিনযাপন করেন এখানে।

 দক্ষিণের ডুয়ার্স নামে পরিচিত এই অঞ্চলটি প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একপ্রকার স্বর্গ বলা যেতে পারে। ঝালুয়ারবেড়ও ডুয়ার্সের মতো মুহূর্তে মুহূর্তে চমকে দিতে প্রকৃতিকে ঢেলে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে অকৃত্রিমভাবে। সেখানে একটিই মাত্র রেললাইন। তার পাশে পটে আঁকা একটি প্ল্যাটফর্ম। তার পাশ ঘেঁষে ঘন জঙ্গল। সেখানে এক শীতদুপুরে...শর্ট টাইম আউটিং’ (স্বল্প সময় ভ্রমণ) বেড়িয়েই পডুন  ঝালুয়ারবেড় দক্ষিণের ডুয়ার্সের উদ্দেশ্যে। 

 জনমানবহীন এই নিরিবিলি জায়গাটিতে ঘোর দুপুরেও শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক। স্টেশনে দাঁড়িয়েই মনে হবে কোনো গহীন জঙ্গলে বোধহয় দাড়িয়ে আছেন। সুন্দর এই স্টেশনের মোহ কাটিয়ে কিছুটা এগোলেই দেখবেন একটা কালী মন্দির। এই মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটির দুপাশ জুড়ে ঘন বাঁশ বন। শুধু তাই নয়, বাঁশ গাছগুলো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রাস্তাটিকে ঢেকে রেখেছে। মাঝখান দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হবে যেন আস্ত এক বাঁশ গাছের গুহা। দুপুরে সূর্যের আলোটুকুও ভালো ভাবে মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। আবার শীতের দিনে কুয়াশা ঘেরা এই রাস্তাটি অপরূপ এক মায়াবি দৃশ্যের সৃষ্টি করে। জীর্ণ সেতুর গায়ে গা এলিয়ে দিয়েছে তার হলুদ শরীর, রোদ পোয়াচ্ছে বুড়ো গো সাপ। সেতু এখানে নির্জন। অচেনা পায়ের আওয়াজ পেয়ে চকিতে খালের জলে গিয়ে নামে সাপ। হয়ত মন খারাপ হয় বকটার, নুইয়ে পড়া গাছের ডাল থেকে নিমেষে উড়ে পালায় চোখের আড়ালে। এই জঙ্গলের পাহারাদার বুনো কুকুর আর বুনো বেড়াল। দাঁত বের করে ফ্যাঁসস করে আপনার পায়ের আওয়াজকে  আমন্ত্রণ জানাবে। ফ্যাঁসসটা হয়ত চলে যাওয়ার আদেশ। দুর থেকে সামান্য বিরতি দিয়ে তক্ষক ডেকে উঠছে। ঘোর দুপুরেও কানে তালা ধরায় ঝিঁঝিঁ। এখানে দিগন্তে তারা দেখা যায় সন্ধ্যার আগে আগেই। ঝালুয়ারবেড়কে বাস্তবিকই গরীবের ডুয়ার্স হয়ে মনের শান্তি হতে পারে।  

অন্য দিকে জঙ্গল যেখানে কম সেখানে উপভোগ করার মত রয়েছে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি। খেত জুড়ে বিভিন্ন ফসলের চাষ এবং খেতের মাঝখান দিয়ে রয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। জংলি গাছে ফুটে থাকা সাদা-হলুদ ফুল আর রঙিন প্রজাপতি পলকে মন আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। রাস্তার ধারের খালটা পুরো সবুজ। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কচুরিপানায় ঢাকা। সেই খালের শেষ দেখা যায় না। দু’পাশের গাছপালার ডাল খালের জলের উত্তাপ মেপে নিতেই যেন ঝুঁকে থাকে। শীতের সূর্য আর কুয়াশা বিকেলের সময়টা সেখানে লুকোচুরি খেলে। সন্ধ্যে নামলে অনেক সময় শিয়াল ও অন্যান্য বন্য জন্তুও বেরোয়। তাই সেসময় রাস্তাটি বেশ বিপজ্জনকও বটে। রাত গাঢ় হওয়ার আগেই এখানে শোনা যায় পেঁচার ডাক। এখানে মুহূর্তে যযেন মনটা কেমন হয়ে ওঠে। 

হাওড়া থেকে আমতাগামী ট্রেনে মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা।হাওড়া থেকে জঙ্গলে যাওয়ার ট্রেনের টিকিটের দাম ১০ টাকা। সন্ধ্যার পর সেটি বলার জন্য কাউকেই আর পাবেন না। শীতের রাত গড়ানোর আগেই জঙ্গলে ঘেরা স্টেশনে দাঁড়ালে গা ছমছম করে। রাত গাঢ় হওয়ার আগে পেঁচা ডাকে। তার ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভেসে আসে লাস্ট ট্রেনের ভোঁ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত কৃত্রিমভাবে ডুয়ার্সের স্বাদ পেতে এই শীতেই না হয় একবার ঘুরে আসুন দক্ষিণের ডুয়ার্সে। বিশাল এই কংক্রিটের শহরে এক টুকরো বন্যপ্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তি জোগাবেই!


No comments:

Post a Comment