পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটি পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে অবস্থিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য (প্রথম-উত্তর প্রদেশ,দ্বিতীয়- মহারাষ্ট্র, তৃতীয়-বিহার )। এই রাজ্যের আয়তন ৮৮৭৫২ বর্গ কি. মি.। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা-ভাষী বাঙালি জাতি অধ্যুষিত বাংলা অঞ্চলের একটি অংশ। এই রাজ্যের পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং উত্তর দিকে নেপাল ও ভুটান রাষ্ট্র অবস্থিত। ভারতের ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, সিক্কিম ও অসম রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরটি হল ভারতের সপ্তম বৃহত্তম মহানগরী৷ ভৌগোলিক দিক থেকে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, গাঙ্গেয় বদ্বীপ, রাঢ় অঞ্চল ও উপকূলীয় সুন্দরবনের অংশবিশেষ এই রাজ্যের অন্তর্গত। বাঙালিরাই এই রাজ্যের প্রধান জাতিগোষ্ঠী এবং রাজ্যের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বাঙালি হিন্দু।
প্রাচীন বাংলা ছিল একাধিক প্রধান জনপদের কেন্দ্রস্থল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে সম্রাট অশোক এই অঞ্চলটি জয় করেন। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩শ শতাব্দীর পর থেকে ১৮শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত একাধিক সুলতান, শক্তিশালী হিন্দু রাজন্যবর্গ ও বারো ভুঁইয়া এবং সামন্ত রাজা জমিদারেরা এই অঞ্চল শাসন করেন।
দিল্লি সলতনৎ এবং শাহী বাংলার সলতনৎ- এর সময়, ইওরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য প্রদেশ হিসেবে ধরতো মুঘল সাম্রাজ্য আমলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের (সাকুল্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবে বাংলায় যা তখনকার দিনের বিহার , ঝাড়খণ্ড ,ওডিশা , অসম ,ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল। যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের চেয়ে জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর দীর্ঘকাল কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের
রাজধানী। দীর্ঘকাল ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থলে থাকার সুবাদে বাংলায়
প্রাতিষ্ঠানিক পাশ্চাত্য শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক
সংস্কারের সূচনা ঘটে। এই ঘটনা পরবর্তীকালে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এই অঞ্চল দ্বিখণ্ডিত হয়। বাংলার পূর্ব ভূখণ্ড নিয়ে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলা (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ এবং অধুনা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ
রাষ্ট্র) গঠিত হয়। অন্যদিকে পশ্চিম ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারতের
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। রাজ্যের রাজধানী হয় কলকাতা।১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল
পর্যন্ত একটি কমিউনিস্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এই সরকারটিই ছিল সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান রাজ্য। ভারতের সাকুল্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে অবদানের অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ।
লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্য ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা
ও উৎসব-অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। নোবেল পুরস্কার
জয়ী বাঙালি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম এই রাজ্যে বিশেষ সমাদৃত ও জনপ্রিয়। কলকাতাকে "ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী" বলেও অভিহিত করা হয়।
খেলাধূলার ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের
স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি হল, এই রাজ্যের মানুষের মধ্যে জাতীয় স্তরে বিশেষ
জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
নাম
বঙ্গ বা বাংলা নামের সঠিক উৎসটি অজ্ঞাত। এই নামের উৎস সম্পর্কে একাধিক মতবাদ প্রচলিত। একটি মতে এটি খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে এই অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় উপজাতির ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃত সাহিত্যে বঙ্গ নামটি অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। কিন্তু এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হলে এই রাজ্যের নামকরণ পশ্চিমবঙ্গ করা হয়েছিল। ইংরেজিতে অবশ্য West Bengal (ওয়েস্ট বেঙ্গল) নামটিই সরকারিভাবে প্রচলিত। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের ইংরেজি নামটি পালটে Paschimbanga রাখার প্রস্তাব দেয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিবর্তন করে বাংলা বিষয়টি ২০১৬
থেকে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলা রাজ্যের বিধানসভায় এই
নাম পরিবর্তনের আইন পাস করা হয়। ২০১৬ সালের আগস্টে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে
নতুন নাম রাখার প্রস্তাব করা হয় বাংলা, ইংরেজিতে বেঙ্গল আর হিন্দিতে
বঙ্গাল্। রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের
ব্যবধানে পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৮৯ ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন
সংসদবিষয়ক ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের নাম
পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে দুটি প্রস্তাব
গৃহীত হয়- বাংলা অথবা বঙ্গ।
পরবর্তীকালে ভারত সরকার তিনটির পরিবর্তে একটি মাত্র নাম নির্ধারণের
পক্ষে পরামর্শ প্রদান করে। এই পরামর্শ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায়
২০১৮’এর ২৬ জুলাই দুপুরে সকল ভাষার জন্য ‘বাংলা’ নামটিই সর্বসম্মতভাবে পাশ
হয়েছে। বিধানসভার বাদল অধিবেশনে রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাবটি উত্থাপন
করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নামবদলের প্রস্তাব রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর হবে।
• ভূগোল :
পূর্ব ভারতে হিমালয়ের দক্ষিণে ও বঙ্গোপসাগরের উত্তরে এক সংকীর্ণ অংশে পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। রাজ্যের মোট আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গকিলোমিটার (৩৪,২৬৭ বর্গমাইল)। রাজ্যের সর্বোত্তরে অবস্থিত দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল পূর্ব হিমালয়ের একটি অংশ। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু (৩,৬৩৬ মিটার বা ১১,৯২৯ ফুট) এই অঞ্চলে অবস্থিত। এই পার্বত্য অঞ্চলকে দক্ষিণে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সংকীর্ণ তরাই অঞ্চল। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চল গাঙ্গেয় বদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করেছে পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলের থেকে। রাজ্যের সর্বদক্ষিণে একটি নাতিদীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমিও বিদ্যমান। অন্যদিকে সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য গাঙ্গেয় বদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী গঙ্গা রাজ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। এই নদীর একটি শাখা পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে; অপর শাখাটি ভাগীরথী ও হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা, তোরষা, জলঢাকা, ফুলহার ও মহানন্দা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদনদী। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান হল দামোদর, অজয় ও কংসাবতী। গাঙ্গেয় বদ্বীপ ও সুন্দরবন অঞ্চলে অজস্র নদনদী ও খাঁড়ি দেখা যায়। নদীতে বেপরোয়া বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে গঙ্গার দূষণ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান সমস্যা। রাজ্যের অন্তত নয়টি জেলায় আর্সেনিক দূষিত ভৌমজলের সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ১০ µg/লিটারের অধিক মাত্রার আর্সেনিক দূষিত জল পান করে ৮৭ লক্ষ মানুষ।
জলবায়ু
পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্মপ্রধান উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। এই রাজ্যের
প্রধান ঋতু চারটি - শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকাল,
শরৎকাল ও শীতকাল। বদ্বীপ অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল আর্দ্র হলেও, পশ্চিমের
উচ্চভূমি অঞ্চলে উত্তর ভারতের মতো শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাজ্যে গ্রীষ্মকালের
গড় তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস (১০০° ফারেনহাইট) থেকে ৪৫° সেলসিয়াস (১১৩°
ফারেনহাইট)।
রাত্রিকালে বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল আর্দ্র দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত হয়।
গ্রীষ্মের শুরুতে স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয় তা কালবৈশাখী নামে পরিচিত। বর্ষাকাল স্থায়ী হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। ভারত মহাসাগরীয় মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি
উত্তরপশ্চিম অভিমুখে ধাবিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত ঘটায়। রাজ্যে
শীতকাল (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) আরামদায়ক। এই সময় রাজ্যের সমভূমি অঞ্চলের
গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ১৫° সেলসিয়াস (৫৯° ফারেনহাইট)।
শীতকালে শুষ্ক শীতল উত্তরে বাতাস বয়। এই বায়ু তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে
আর্দ্রতার মাত্রাও কমিয়ে দেয়। যদিও দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে
প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। এই সময়ে এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও তুষারপাতও হয়।
পশ্চিমবঙ্গ জৈব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এর প্রধান কারণ হিমালয় পার্বত্য
অঞ্চল থেকে উপকূলীয় সমভূমি পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার
তারতম্য। রাজ্যের ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ১৪ শতাংশ বনভূমি; যা জাতীয় গড় ২৩
শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম। রাজ্যের আয়তনের ৪ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকা। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।
উদ্ভিজ্জভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: গাঙ্গেয় সমভূমি ও সুন্দরবনের লবনাক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্যভূমি। গাঙ্গেয় সমভূমির পললমৃত্তিকা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে উর্বর করে তুলেছে। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমির উদ্ভিদপ্রকৃতির সমরূপ। এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী বৃক্ষ হল শাল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি উপকূলীয় ধরনের। এই অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ হল ঝাউ।
সুন্দরবন অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বৃক্ষ সুন্দরী গাছ। এই গাছ এই
অঞ্চলের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় এবং সুন্দরবনের নামকরণও এই গাছের নামেই
হয়েছে। উত্তরবঙ্গের উদ্ভিদপ্রকৃতির প্রধান তারতম্যের কারণ এই অঞ্চলের উচ্চতা ও বৃষ্টিপাত। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে ঘন শাল ও অন্যান্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বন দেখা যায়। আবার ১০০০ মিটার উচ্চতায় উদ্ভিদের প্রকৃতি উপক্রান্তীয়। ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিঙে ওক, কনিফার, রডোডেনড্রন প্রভৃতি গাছের নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্য দেখা যায়।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত। রাজ্যে মোট ছয়টি জাতীয় উদ্যান আছে — সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, বক্সা জাতীয় উদ্যান, গোরুমারা জাতীয় উদ্যান, নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান, সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। রাজ্যের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভারতীয় গণ্ডার, এশীয় হাতি, হরিণ, বাইসন, চিতাবাঘ, গৌর ও কুমির উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের পক্ষীজগৎও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। পরিযায়ী পাখিদের শীতকালে এ রাজ্যে আসতে দেখা যায়।
সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের মতো উচ্চ পার্বত্য বনভূমি অঞ্চলে বার্কিং
ডিয়ার, রেড পান্ডা, চিঙ্কারা, টাকিন, সেরো, প্যাঙ্গোলিন, মিনিভেট, কালিজ
ফেজান্ট প্রভৃতি বন্যপ্রাণীর সন্ধান মেলে। বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবন
অঞ্চলে গঙ্গা নদী শুশুক, নদী কচ্ছপ, স্বাদুজলের কুমির ও লোনা জলের কুমির প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বন্যপ্রাণীও দেখা যায়। ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের কাজও করে। এখানে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় মাছ দেখা যায়।
প্রশাসনিক বিভাগ
প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে পাঁচটি বিভাগ ও ২৩টি জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে।
বর্ধমান বিভাগ
| মালদা বিভাগ
| জলপাইগুড়ি বিভাগ
| প্রেসিডেন্সি বিভাগ
| মেদিনীপুর বিভাগ
|
---|
- পূর্ব বর্ধমান জেলা
- পশ্চিম বর্ধমান জেলা
- বীরভূম জেলা
- হুগলি জেলা
|
- উত্তর দিনাজপুর জেলা
- মালদা জেলা
- মুর্শিদাবাদ জেলা
- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা
|
- আলিপুরদুয়ার জেলা
- কালিম্পং জেলা
- কোচবিহার জেলা
- জলপাইগুড়ি জেলা
- দার্জিলিং জেলা
|
- উত্তর ২৪ পরগণা জেলা
- কলকাতা জেলা
- দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা
- নদিয়া জেলা
- হাওড়া জেলা
|
- পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা
- পুরুলিয়া জেলা
- পূর্ব মেদিনীপুর জেলা
- বাঁকুড়া জেলা
- ঝাড়গ্রাম জেলা
|
প্রতিটি জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসক বা জেলা কালেক্টরের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি "ভারতীয় প্রশাসনিক কৃত্যক" (আইএএস) বা "পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন কৃত্যক" (ডব্লিউবিসিএস) কর্তৃক নিযুক্ত হন। প্রতিটি জেলা মহকুমার বিভক্ত। মহকুমার শাসনভার মহকুমা-শাসকের হাতে ন্যস্ত
থাকে। মহকুমাগুলি আবার ব্লকে বিভক্ত। ব্লকগুলি গঠিত হয়েছে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নিয়ে।
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী তথা বৃহত্তম শহর। কলকাতা ভারতের তৃতীয় বৃহৎ মহানগর। এবং বৃহত্তর কলকাতা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরাঞ্চল। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি রাজ্যের অপর এক অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন মহানগর। শিলিগুড়ি করিডোরে অবস্থিত এই শহর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে অবশিষ্ট দেশের সংযোগ রক্ষা করছে। আসানসোল ও দুর্গাপুর রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পতালুকে অবস্থিত অপর দুটি মহানগর। রাজ্যের অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওড়া, রাণীগঞ্জ, হলদিয়া, জলপাইগুড়ি, খড়গপুর, বর্ধমান, দার্জিলিং, মেদিনীপুর, তমলুক, ইংরেজ বাজার , কোচবিহার ও আরামবাগ ।
কৃষি
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিকভাবেই কৃষিভিত্তিক রাজ্য। যদিও এই রাজ্য ভারতের
ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ২.৭% জুড়ে আছে, কিন্তু জনসংখ্যার ৮% খাদ্যের
ক্ষেত্রে এই রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। ৭১.২৩ লক্ষ কৃষিজীবী পরিবারের ৯৬%-ই
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। জোতের গড় আয়তন ০.৭৭ হেক্টর। সর্বোপরি এই
রাজ্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এবং কৃষি-আবহাওয়ার ক্ষেত্রেও
গুরুত্বপূর্ণ, ফলত: বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য এখানে উৎপাদন করা সম্ভব। ধান
এবং সব্জী উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার
করেছে। আলু উৎপাদনে এই রাজ্য দ্বিতীয় স্থানে আছে (উত্তরপ্রদেশের পরেই)।
এছাড়া পাট, আনারস, লিচু, আম এবং খুচরো ফুলের উৎপাদনেও এই রাজ্য
গুরুত্বপুর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টার উৎপাদনের
ক্ষেত্রেও দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে।
নিট কৃষিক্ষেত্রের পরিমাণ ৫২.০৫ লক্ষ হেক্টর। এই পরিমাণটি মোট
ভৌগোলিক এলাকার ৬৮% এবং কর্ষণযোগ্য জমির ৯২%। এছাড়া কৃষি নিবিড়তার
পরিমাণ ৯৮৪%। অবশ্য যেহেতু এই রাজ্য আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত
এবং বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী তাই মাঝে মাঝেই বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টির
মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। যদিও এই রাজ্য চাল, সব্জী ও
আলুর উৎপাদন উদ্বৃত্ত হয়, ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টার উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাহিদা
ও যোগানে বিপুল পার্থক্য আছে। কৃষির উন্নয়নে প্রধান বাধাগুলি হল
রাসায়নিক সার ব্যবহারে ভারসাম্যের অভাবের দরুন ভূমিস্বাস্থ্যের অবনমন,
প্রয়োজনীয় উন্নত মানের বীজ পাবার অসুবিধা, জোত যন্ত্রায়ণের অপ্রতুলতা,
অসংগঠিত বাজার ইত্যাদি।
বনাঞ্চল
বাংলা সরকারের অধীনে ১৮৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে বন সংরক্ষণের কাজ চালু করা
হয়।পশ্চিমবঙ্গ বেসরকারি বন (সংশোধন) আইন,১৯৫৪-এর সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ
ভূস্বত্ত অধিগ্রহণ আইন,১৯৫৩ এবং ১৯৫৫ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপ করা এবং চা
বাগানের উদ্ধৃত জমির পুনর্গ্রহণ বিধিবদ্ধ হওয়ার ফলে এই রাজ্যে বনাঞ্চল
বৃদ্ধি পেয়েছে।উপরের বিষয়গুলির পূর্বেকারদুটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন,যেমন
১৯৫০ সালে কোচবিহার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং রাজ্যের
যথাযথ পুনর্গঠন,বিহারের পূর্বতন মানভূম জেলার কিছু অংশ ১৯৪৬ সালের ১
নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তির ফলে পুরুলিয়া জেলা সৃষ্টি
হওয়া,বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর
পর্যন্ত বিস্তৃত।এই রাজ্য ২১ ডিগ্রি ২০ মিনিট উত্তর এবং ২৭ ডিগ্রি ৩২ মিনিট
উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪ডিগ্রি ৫০ মিনিট এবং ৮৯ ডিগ্রি ৫২ মিনিট পূর্ব
দ্রাঘিমাংশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং ৮৮,৭৪২ বর্গ কিলোমিটার ভৌগোলিক
অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।পাঁচটি রাজ্য সিকিম,অসম,বিহার,ঝাড়খণ্ড এবং উড়িষ্যা
এবং তিনটি দেশ ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে রয়েছে।উত্তরে
সিকিম,উত্তরপূর্বে ভুটান,পূর্বে অসম এবং বাংলাদেশ,পশ্চিমে নেপাল,বিহার এবং
ঝাড়খণ্ড এবং দক্ষিণ পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যা অবস্থিত। বর্তমানে এই
রাজ্যে নথিভুক্ত মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ হল ১১,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার,যার মধ্যে
৭,০৪৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল সংরক্ষিত বনাঞ্চল,৩৭৭২ বর্গ কিলোমিটার সুরক্ষিত
বনাঞ্চল এবং ১০৫৩ বর্গকিলোমিটার শ্রেণীভুক্ত বিহীন সরকারি বনাঞ্চল,যা এই
রাজ্যের ভৌগোলিক অঞ্চলের ১৩.৩৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।বিগত চার দশকে এই রাজ্যে
বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক পরিকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।স্বাভাবিকভাবেই
বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক প্রয়োজন অনুসারে সামগ্রিকভাবে বনাঞ্চল এবং
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৃষি জলবায়ু অঞ্চলে বনাঞ্চল
ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সুসংহতকরণ এবং বৃহৎ আকারে এই রাজ্যের
বনাঞ্চল বিহীন অংশে সামাজিক/খামার/নগর বনাঞ্চলের প্রয়োগ সাধন ঘটেছে।বৃহৎ
আকারে বনজ ফসল উৎপাদন ,পরিবেশ-বান্ধব নতুন পর্যটন কেন্দ্র গঠন ,উৎপাদন ও
বনজ দ্রব্য বিপণন এবং এই ধরনের সহায়ক কাজকর্মের জন্য ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট
বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড আত্মপ্রকাশ করে।বিভিন্ন
পর্যায়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-এর
প্রশাসনিক কাজ বন অধিকারের ডেপুটেশনে থাকা অধিকারিকগণদ্বারা পরিচালিত হয়।
খনিজ সম্পদ
পশ্চিমবঙ্গ খনিজ সম্পদে মাঝারি মানের সমৃদ্ধ রাজ্য।এই রাজ্যের প্রধান খনিজ দ্রব্য হল কয়লা ও ফায়ার ক্লে বা তপসহ মাটি।এই দুটি খনিজ দ্রব্য রাজ্যটিতে বেশি পরিমানে পাওয়া যায়।অন্যান্য খনিজ দ্রবের মধ্যে চিনামাটি, চুনাপাথর, অ্যাপেটাইট, আকরিক লোহা, আকরিক তামা, ম্যাঙ্গানিজ, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
পরিবহন ব্যবস্থা
পশ্চিমবঙ্গে ভূতল সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ৯২,০২৩ কিলোমিটার (৫৭,১৮০ মাইল)। এর মধ্যে জাতীয় সড়ক ২,৩৭৭ কিলোমিটার (১,৪৭৭ মাইল),
এবং রাজ্য সড়ক ২,৩৯৩ কিলোমিটার (১,৪৮৭ মাইল)। রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব
প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ১০৩.৬৯ কিলোমিটার (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১৬৬.৯২
মাইল); যা জাতীয় ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ৭৪.৭ কিলোমিটারের (প্রতি
১০০ বর্গমাইলে ১২০ মাইল) থেকে বেশি।
রাজ্যের সড়কপথে যানবাহনের গড় গতিবেগ ৪০-৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টার (২৫-৩১
মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে গতিবেগ ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার
(১২-১৬ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। এই মূল কারণ রাস্তার নিম্নমান ও
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। রাজ্যে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৪১৩৫.১৯ কিলোমিটার (২৫৬৯
মাইল)। ভারতীয় রেলের পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল ক্ষেত্রদুটির সদর কলকাতায় অবস্থিত। রাজ্যের উত্তরভাগের রেলপথ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অন্তর্গত। কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল পরিষেবা। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অংশ দার্জিলিং হিমালয়ান রেল একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।
পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কলকাতার নিকটেই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দমদমে অবস্থিত। শিলিগুড়ির নিকটবর্তী বাগডোগরা বিমানবন্দর
রাজ্যের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর; সাম্প্রতিককালে এটিকে
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্তরে উন্নীত করা হয়েছে।উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের আরও
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হল কোচবিহার বিমানবন্দর। এটি বৃহত্তর অসম-বাংলা সীমান্ত এলাকায় পরিষেবা দেয়।
কলকাতা বন্দর পূর্ব ভারতের একটি প্রধান নদীবন্দর। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কলকাতা ও হলদিয়া ডকের দায়িত্বপ্রাপ্ত। কলকাতা বন্দর থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন পরিষেবা ও ভারত ও বহির্ভারতের বন্দরগুলিতে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন পরিষেবা চালু আছে। রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চলে, নৌকা পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। কলকাতা ভারতের একমাত্র শহর যেখানে আজও ট্রাম গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। এই পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি।
পশ্চিমবঙ্গের বাস পরিষেবা অপর্যাপ্ত। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন নিগম
ও ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি এই পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়া
বেসরকারি কোম্পানিগুলিও বাস চালিয়ে থাকে। শহরের বিশেষ বিশেষ রুটে মিটার
ট্যাক্সি ও অটোরিকশা চলে। কম দুরত্বের যাত্রার জন্য রাজ্যের সর্বত্র সাইকেল
রিকশা ও কলকাতাতে সাইকেল রিকশা ও হাতে-টানা রিকশা ব্যবহার করা হয়।
জনপরিসংখ্যান
পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০২৮ জন। এই রাজ্য জনঘনত্বের বিচারে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৫৪ শতাংশ বাস করে পশ্চিমবঙ্গে। ২০০১-২০১১ সময়কালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩.৮৪ শতাংশ; যা জাতীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৭.৬৪ শতাংশের থেকে কম। রাজ্যে লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৫০ জন মহিলা।
পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার ৭৬.২৬%, যা জাতীয় গড় ৭৪.০৪%-এর চেয়ে বেশি। ১৯৯১-১৯৯৫ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, এই রাজ্যের মানুষের গড় আয়ু ৬৩.৪ বছর, যা জাতীয় স্তরে গড় আয়ু ৬১.৭ বছরের থেকে কিছু বেশি।
রাজ্যের ৭০ শতাংশ মানুষ বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। ১৯৯৯-২০০০ সালের হিসেব
অনুযায়ী, রাজ্যের ৩১.৮৫ শতাংশ মানুষ বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। তফসিলি জাতি ও উপজাতিগুলি গ্রামীণ জনসংখ্যার যথাক্রমে ২৮.৬ শতাংশ ও ৫.৮ শতাংশ এবং নগরাঞ্চলীয় জনসংখ্যার ১৯.৯ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।
রাজ্যে অপরাধের হার প্রতি এক লক্ষে ৮২.৬; যা জাতীয় হারের অর্ধেক। ভারতের ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এই হার চতুর্থ নিম্নতম। যদিও রাজ্যের বিশেষ ও স্থানীয় আইন সংক্রান্ত অপরাধের হার সর্বোচ্চ বলেই জানা যায়। রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের হার ৭.১; উল্লেখ্য এই ক্ষেত্রে জাতীয় হার ১৪.১। পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) ভারতের প্রথম রাজ্য যেটি নিজস্ব মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছিল।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধর্মবিশ্বাস। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ৭০.৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাস এবং বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্ম। মুসলমানরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ২৭.০১ শতাংশ। শিখ, খ্রিস্ট ধর্ম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা জনসংখ্যার অবশিষ্ট অংশ।
সংখ্যালঘুসঙ্কুল জেলাগুলি হলো- মুর্শিদাবাদ জেলা, উত্তর দিনাজপুর জেলা ও মালদহ জেলা৷
২০১১ সালের জনগণনার তাৎক্ষণিক ফলাফল অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা
৯১,৩৪৭, ৭৩৬ (ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৫%)। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ
ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রাজ্য। জনসংখ্যার সিংহভাগই বাংলাভাষী। মাড়োয়ারি, বিহারি ও ওড়িয়া সংখ্যালঘুরা রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে বাস করে। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে শেরপা ও তিব্বতিদের দেখা যায়। দার্জিলিঙে নেপালি গোর্খা জাতির লোকও প্রচুর সংখ্যায় বাস করে। পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতাল, কোল, রাজবংশী ও টোটো আদিবাসীরাও বাস করে। রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় চীনা, তামিল, গুজরাতি, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, আর্মেনিয়ান, পাঞ্জাবি ও পারসি সংখ্যালঘুদেরও খুব অল্প সংখ্যায় বাস করতে দেখা যায়। ভারতের একমাত্র চায়নাটাউনটি পূর্ব কলকাতায় অবস্থিত।
রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ইংরেজি। দার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমায় সরকারি ভাষা হল নেপালি। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভাষাগত জনসংখ্যার বৃহত্তম থেকে ক্ষুদ্রতম ক্রম অনুযায়ী ভাষাগুলি হল বাংলা, হিন্দি, সাঁওতালি, উর্দু, নেপালি ও ওড়িয়া। রাজ্যের কোনো কোনো অংশে রাজবংশী ও হো ভাষাও প্রচলিত।
সংস্কৃতি
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই সংস্কৃতির শিকড় নিহিত রয়েছে বাংলা সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা, নাটক ও চলচ্চিত্রে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মহাকাব্য ও পুরাণ-ভিত্তিক জনপ্রিয় সাহিত্য, সংগীত ও লোকনাট্যের ধারাটি প্রায় সাতশো বছরের পুরনো। উনিশ শতকে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ছিল বাংলার নবজাগরণ ও হিন্দু সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। বিশ শতকের প্রথমার্ধ্বে এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমগ্র বাংলার প্রধান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তার
প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে আজও অক্ষুন্ন। এই সময়েই চলচ্চিত্র
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর। এরপর ১৯৫০-এর দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকের মতো চিত্র পরিচালকদের আবির্ভাব হয় এবং পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা লাভ করতে শুরু করে।
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব ব্যাপক। হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠের (৭২.৫%) ধর্ম হওয়ায়, এই ধর্মের প্রভাবই সর্বাধিক লক্ষিত হয়। শারদীয়া দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব। কালীপূজাও
মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে প্রধান সরস্বতী পূজা,
দোলযাত্রা, রথযাত্রা, পয়লা বৈশাখ, বইমেলা, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নেতাজি
জয়ন্তী ইত্যাদি।
উৎসব ও মেলা
দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম উৎসব। শরৎকালে আশ্বিন-কার্তিক মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) চারদিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অপর একটি বহুপ্রচলিত হিন্দু উৎসব হল কালীপূজা। এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে। রাজ্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিন্দু উৎসবগুলি হল পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, দশহরা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পূজা, মহালয়া, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, রাসযাত্রা, নবদ্বীপের শাক্তরাস, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, নবান্ন, জগদ্ধাত্রী পূজা, সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা, শিবরাত্রি ও চড়ক-গাজন। রথযাত্রা উপলক্ষে হুগলি জেলার মাহেশ ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে বিশেষ মেলা ও জনসমাগম হয়ে থাকে। হুগলি জেলার চন্দননগর ও নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা ও জগদ্ধাত্রী বিসর্জন শোভাযাত্রা বিখ্যাত। মকর সংক্রান্তির দিন বীরভূম জেলার কেন্দুলিতে জয়দেব মেলা উপলক্ষে বাউল সমাগম ঘটে। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বীরভূমপুত্র জয়দেবের উদ্দেশ্যে জয়দেব-কেন্দুলি মেলা হয়ে থাকে। পৌষ সংক্রান্তির দিন হুগলি নদীর মোহনার কাছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গঙ্গাসাগরে আয়োজিত গঙ্গাসাগর মেলায় সারা ভারত থেকেই পুণ্যার্থী সমাগম হয়। ৪ঠা মাঘ বাঁকুড়ার কেঞ্জেকুড়া গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে এক বিশাল মুড়ি মেলা হয়। শিবরাত্রি উপলক্ষে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির নিকটে প্রাচীন জল্পেশ্বর শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় বিখ্যাত জল্পেশ্বর মেলা। শ্রাবণ সংক্রান্তির সর্পদেবী মনসার
পূজা উপলক্ষে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আয়োজিত হয় ঝাঁপান উৎসব। বাঁকুড়া
জেলার বিষ্ণুপুরের ঝাঁপান উৎসব সবচেয়ে বিখ্যাত। বাঁকুড়া জেলার রাইপুর
ব্লককের অন্তর্গত মটগোদা গ্রামে ধর্মরাজ পুজো উপলক্ষে মাঘ মাসের শেষ
শনিবারে অনুষ্ঠিত হয় শনিমেলা; কোচবিহার শহরের মদনমোহন মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত রাসমেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মেলা।
ইসলামি উৎসব মধ্যে ঈদুজ্জোহা, ঈদুলফিতর, মিলাদ-উন-নবি, শবেবরাত ও মহরম বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। খ্রিষ্টান উৎসব বড়দিন ও গুড ফ্রাইডে; বৌদ্ধ উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা; জৈন উৎসব মহাবীর জয়ন্তী এবং শিখ উৎসব গুরু নানক জয়ন্তীও মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, পঁচিশে বৈশাখ, নেতাজি জয়ন্তী ইত্যাদি। প্রতি বছর পৌষ মাসে শান্তিনিকেতনে বিখ্যাত পৌষমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বইমেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা
রাজ্যে একমাত্র তথা বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। আঞ্চলিক বইমেলাগুলি
রাজ্যের সকল প্রান্তেই বছরের নানা সময়ে আয়োজিত হয়। এছাড়া সারা বছরই
রাজ্য জুড়ে নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
শিক্ষা
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়গুলি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অথবা বেসরকারি উদ্যোগে
পরিচালিত হয়ে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনও
বিদ্যালয় পরিচালনা করে। প্রধানত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত; তবে সাঁওতালি, নেপালি, হিন্দি ও উর্দু ভাষাতেও পঠনপাঠন করার সুযোগ এ-রাজ্যে অপ্রতুল নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অথবা কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (সিবিএসসি) অথবা কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজামিনেশন
(আইসিএসই) দ্বারা অনুমোদিত। ১০+২+৩ পরিকল্পনায় মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন
করার পর ছাত্রছাত্রীদের দুই বছরের জন্য প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় জুনিয়র কলেজে পড়াশোনা করতে হয়। এছাড়াও তারা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অথবা কোনো কেন্দ্রীয় বোর্ড অনুমোদিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে পারে। এই ব্যবস্থায় তাদের কলাবিভাগ, বাণিজ্যবিভাগ অথবা বিজ্ঞানবিভাগের যেকোনো একটি ধারা নির্বাচন করে নিতে হয়। এই পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করার পরই তারা সাধারণ বা পেশাদার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে পারে।
২০০৬ সালের হিসেব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আঠারো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম বৃহৎ আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে প্রায় ২০০টি কলেজ। বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের দুটি প্রসিদ্ধ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। শান্তিনিকেতনে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন এক প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (কলকাতা), বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (বর্ধমান), বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় (বাঁকুড়া), বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (মেদিনীপুর), উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (রাজা রামমোহনপুর, শিলিগুড়ি), বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় (কল্যাণী, নদিয়া), পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় – আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিসম্পন্ন রাজ্যের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, কলকাতা, রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান, দুর্গাপুর (পূর্বতন আঞ্চলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস, ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও অনুসন্ধান সংস্থান, কলকাতা; IISER-K) ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউশন।
পর্যটন
পার্বত্য অঞ্চল
দার্জিলিং দার্জিলিং জেলার সদর শহর৷ শহরটি সবুজাবৃত এবং চারদিকে তুষারশৃঙ্গদ্বারা পরিবেষ্টিত৷ মনোরম দৃৃশ্য ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার জন্য এটি অন্যতম৷
দার্জিলিং জেলার ১৪৫৮ মিটার উচ্চতাতে অবস্থিত একটি সুদৃৃশ্য পর্বতস্টেশন(হিলস্টেশন) ও মহকুমা সদর হলো কার্শিয়াং৷
- লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ রিম্বিক
লাভা, লোলেগাঁও ও রিশপ রিম্বিক হলো কার্শিয়াং মহকুমাতে ২৩০০ মিটার
উচ্চতায় অবস্থিত তিনটি পর্যটন গ্রাম৷ গ্রাম তিনটি পাইনগাছ দ্বারা বেষ্টিত,
মাঝে মাঝে মেঘের সমাহার একে আরো সুন্দর করে তোলে৷ শান্ত পরিবেশের জন্যও
এটি সমাদৃত৷
মিরিক হলো দার্জিলিং জেলার একটি দৃশ্যপট পর্যটনস্থল৷ প্রাকৃৃতিক
সৌন্দর্য, আবহাওয়া ও সহজলভ্যতার জন্য এটি পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় স্থান৷
এছাড়া সুমেংদু হ্রদ এখানকার বিশেষ আকর্ষণ৷
সান্দাকফু,এটি পশ্চিমবঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যার উচ্চতা প্রায় ৩৬৩৬
মিটার৷ দার্জিলিং জেলার সিঙ্গলিলা পর্বতশ্রেণীর দার্জিলিং নেপাল সীমান্তে
অবস্থিত এই পর্বতটি থেকে মাকালু,কাঞ্চনজংঘা ইত্যাদি পর্বতশৃৃঙ্গ সুদৃৃশ্য৷
এছাড়া এখান থেকে উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ ফালুট অবস্থিত৷
ডুয়ার্স অঞ্চল
পশ্চিমবঙ্গের
ডুয়ার্স অঞ্চল মূলত বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, অভয়ারণ্য ও চা-বাগানের
জন্য বিখ্যাত৷ এটি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে
বিস্তৃৃত৷ বিখ্যাত কিছু বন্যপ্রাণী বিচরণক্ষেত্রগুলি হলো-
- গরুমারা জাতীয় উদ্যান
- জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান
- বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প
- চিলাপাতা বনাঞ্চল
- মহানন্দা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ
- চাপড়ামারি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ
- সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান
ঐতিহ্যপূর্ণ পর্যটন
- হাজার দুয়ারী রাজপ্রাসাদ
- মালদহ টাউন
- বহরমপুর ও কাশেমবাজার নবাবী প্রাসাদ
- কোটিবর্ষ প্রত্নস্থল, দক্ষিণ দিনাজপুর
- শোভাবাজার রাজবাড়ি
- জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
- কুমোরটুলি
- মার্বেল প্যালেস
- চন্দননগর
- চুঁচুড়া
- নাখোদা মসজিদ
- বেলুরমঠ
- দক্ষিণেশ্বর
- কালীঘাট
- বিষ্ণুপুর মন্দির শহর
উপকূলীয়
- দীঘা সমুদ্রসৈকত
- মন্দারমণি সমুদ্রসৈকত
- উদয়পুর সমুদ্রসৈকত
- শঙ্করপুর সমুদ্রসৈকত
- তাজপুর সমুদ্রসৈকত
- বকখালি
- জুনপুট
- সাগরদ্বীপ কপিলমুনি আশ্রম
- সজনেখালি-ধামাখালি
- সুন্দরবন অভয়ারণ্য
- ভগবতপুর অভয়ারণ্য
@ পশ্চিমবঙ্গ ~
• দেশ : ভারত
• প্রতিষ্ঠা দিবস : ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০
• রাজধানী : কলকাতা
• বৃহত্তম মহানগরী / বৃহত্তম মহানগরীয় অঞ্চল : কলকাতা
• জেলা : ২৩টি
• শাসক : পশ্চিমবঙ্গ সরকার
• আইনসভা : পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা
(২৯৫টি আসন)
• হাইকোর্ট : কলকাতা হাইকোর্ট
• আয়তন :
• মোট ৮৮৭৫২ কিমি ২ (৩৪২৬৭ বর্গমাইল)
• এলাকার ক্রম : ১৪শ
• জনসংখ্যা (২০১১) :
• মোট ৯,১৩,৪৭,৭৩৬
• ক্রম : ৪র্থ
• ঘনত্ব : ১০২৯/কিমি২ (২৬৭০/ বর্গমাইল)
• সময় অঞ্চল : ভারতীয় প্রমাণ সময় ( ইউটিসি+০৫:৩০ )
• মানব উন্নয়ন সূচক : ০.৫০৯ ( মধ্যম)
• মানব উন্নয়ন সূচক অনুসারে স্থান : ৯ম (২০১১)
• সাক্ষরতা : ৭৭.০৮%
• সরকারি ভাষা : বাংলা , ইংরেজি , নেপালি (দার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমা ও কালিম্পং
জেলায়)
• ওয়েবসাইট : wb.gov.in
তথ্যসূত্র : https://bn.m.wikipedia.org/wiki/পশ্চিমবঙ্গ
©GEO HUB(Enhance Your Geo Knowledge)Ghoralia, Santipur, Nadia. ..............................
GEO
HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি
নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে
(জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ।