Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Monday, 26 June 2017

পশ্চিমবঙ্গ ( West Bengal)




শ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটি পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে অবস্থিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য (প্রথম-উত্তর প্রদেশ,দ্বিতীয়- মহারাষ্ট্র, তৃতীয়-বিহার )। এই রাজ্যের আয়তন ৮৮৭৫২ বর্গ কি. মি.। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা-ভাষী বাঙালি জাতি অধ্যুষিত বাংলা অঞ্চলের একটি অংশ। এই রাজ্যের পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং উত্তর দিকে নেপাল ও ভুটান রাষ্ট্র অবস্থিত। ভারতের ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, সিক্কিম ও অসম রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরটি হল ভারতের সপ্তম বৃহত্তম মহানগরী৷ ভৌগোলিক দিক থেকে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, গাঙ্গেয় বদ্বীপ, রাঢ় অঞ্চল ও উপকূলীয় সুন্দরবনের অংশবিশেষ এই রাজ্যের অন্তর্গত। বাঙালিরাই এই রাজ্যের প্রধান জাতিগোষ্ঠী এবং রাজ্যের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বাঙালি হিন্দু।

প্রাচীন বাংলা ছিল একাধিক প্রধান জনপদের কেন্দ্রস্থল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে সম্রাট অশোক এই অঞ্চলটি জয় করেন। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩শ শতাব্দীর পর থেকে ১৮শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত একাধিক সুলতান, শক্তিশালী হিন্দু রাজন্যবর্গ ও বারো ভুঁইয়া এবং সামন্ত রাজা জমিদারেরা এই অঞ্চল শাসন করেন।

দিল্লি সলতনৎ এবং শাহী বাংলার সলতনৎ- এর সময়, ইওরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য প্রদেশ হিসেবে ধরতো মুঘল সাম্রাজ্য আমলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের (সাকুল্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবে বাংলায় যা তখনকার দিনের বিহার , ঝাড়খণ্ড ,ওডিশা , অসম ,ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল।  যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের চেয়ে জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর দীর্ঘকাল কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। দীর্ঘকাল ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থলে থাকার সুবাদে বাংলায় প্রাতিষ্ঠানিক পাশ্চাত্য শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের সূচনা ঘটে। এই ঘটনা পরবর্তীকালে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এই অঞ্চল দ্বিখণ্ডিত হয়। বাংলার পূর্ব ভূখণ্ড নিয়ে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলা (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ এবং অধুনা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র) গঠিত হয়। অন্যদিকে পশ্চিম ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। রাজ্যের রাজধানী হয় কলকাতা।১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কমিউনিস্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এই সরকারটিই ছিল সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান রাজ্য। ভারতের সাকুল্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে অবদানের অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ। লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্য ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ও উৎসব-অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। নোবেল পুরস্কার জয়ী বাঙালি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম এই রাজ্যে বিশেষ সমাদৃত ও জনপ্রিয়। কলকাতাকে "ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী" বলেও অভিহিত করা হয়। খেলাধূলার ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি হল, এই রাজ্যের মানুষের মধ্যে জাতীয় স্তরে বিশেষ জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।



নাম

বঙ্গ বা বাংলা নামের সঠিক উৎসটি অজ্ঞাত। এই নামের উৎস সম্পর্কে একাধিক মতবাদ প্রচলিত। একটি মতে এটি খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে এই অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় উপজাতির ভাষা থেকে এসেছে। সংস্কৃত সাহিত্যে বঙ্গ নামটি অনেক জায়গাতেই পাওয়া যায়। কিন্তু এই অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা যায় না।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হলে এই রাজ্যের নামকরণ পশ্চিমবঙ্গ করা হয়েছিল। ইংরেজিতে অবশ্য West Bengal (ওয়েস্ট বেঙ্গল) নামটিই সরকারিভাবে প্রচলিত। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের ইংরেজি নামটি পালটে Paschimbanga রাখার প্রস্তাব দেয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিবর্তন করে বাংলা বিষয়টি ২০১৬ থেকে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলা রাজ্যের বিধানসভায় এই নাম পরিবর্তনের আইন পাস করা হয়। ২০১৬ সালের আগস্টে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে নতুন নাম রাখার প্রস্তাব করা হয় বাংলা, ইংরেজিতে বেঙ্গল আর হিন্দিতে বঙ্গাল্। রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১৮৯ ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন সংসদবিষয়ক ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ২ আগস্ট ২০১৬ তারিখে দুটি প্রস্তাব গৃহীত হয়- বাংলা অথবা বঙ্গ।

পরবর্তীকালে ভারত সরকার তিনটির পরিবর্তে একটি মাত্র নাম নির্ধারণের পক্ষে পরামর্শ প্রদান করে। এই পরামর্শ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ২০১৮’এর ২৬ জুলাই দুপুরে সকল ভাষার জন্য ‘বাংলা’ নামটিই সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়েছে। বিধানসভার বাদল অধিবেশনে রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নামবদলের প্রস্তাব রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর হবে।


• ভূগোল  :

পূর্ব ভারতে হিমালয়ের দক্ষিণে ও বঙ্গোপসাগরের উত্তরে এক সংকীর্ণ অংশে পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। রাজ্যের মোট আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গকিলোমিটার (৩৪,২৬৭ বর্গমাইল)। রাজ্যের সর্বোত্তরে অবস্থিত দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল পূর্ব হিমালয়ের একটি অংশ। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু (৩,৬৩৬ মিটার বা ১১,৯২৯ ফুট) এই অঞ্চলে অবস্থিত। এই পার্বত্য অঞ্চলকে দক্ষিণে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সংকীর্ণ তরাই অঞ্চল। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চল গাঙ্গেয় বদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করেছে পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলের থেকে। রাজ্যের সর্বদক্ষিণে একটি নাতিদীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমিও বিদ্যমান। অন্যদিকে সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য গাঙ্গেয় বদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য।

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী গঙ্গা রাজ্যকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে। এই নদীর একটি শাখা পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে; অপর শাখাটি ভাগীরথী ও হুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তা, তোরষা, জলঢাকা, ফুলহার ও মহানন্দা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদনদী। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান হল দামোদর, অজয় ও কংসাবতী। গাঙ্গেয় বদ্বীপ ও সুন্দরবন অঞ্চলে অজস্র নদনদী ও খাঁড়ি দেখা যায়। নদীতে বেপরোয়া বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে গঙ্গার দূষণ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান সমস্যা। রাজ্যের অন্তত নয়টি জেলায় আর্সেনিক দূষিত ভৌমজলের সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ১০ µg/লিটারের অধিক মাত্রার আর্সেনিক দূষিত জল পান করে ৮৭ লক্ষ মানুষ।

 জলবায়ু
পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্মপ্রধান উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। এই রাজ্যের প্রধান ঋতু চারটি - শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল। বদ্বীপ অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল আর্দ্র হলেও, পশ্চিমের উচ্চভূমি অঞ্চলে উত্তর ভারতের মতো শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাজ্যে গ্রীষ্মকালের গড় তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস (১০০° ফারেনহাইট) থেকে ৪৫° সেলসিয়াস (১১৩° ফারেনহাইট)। রাত্রিকালে বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল আর্দ্র দক্ষিণা বায়ু প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয় তা কালবৈশাখী নামে পরিচিত। বর্ষাকাল স্থায়ী হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। ভারত মহাসাগরীয় মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি উত্তরপশ্চিম অভিমুখে ধাবিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত ঘটায়। রাজ্যে শীতকাল (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) আরামদায়ক। এই সময় রাজ্যের সমভূমি অঞ্চলের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ১৫° সেলসিয়াস (৫৯° ফারেনহাইট)। শীতকালে শুষ্ক শীতল উত্তরে বাতাস বয়। এই বায়ু তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার মাত্রাও কমিয়ে দেয়। যদিও দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। এই সময়ে এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও তুষারপাতও হয়।

জীবজগৎ

পশ্চিমবঙ্গ জৈব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এর প্রধান কারণ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উপকূলীয় সমভূমি পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য। রাজ্যের ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ১৪ শতাংশ বনভূমি; যা জাতীয় গড় ২৩ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম। রাজ্যের আয়তনের ৪ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকা। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।

উদ্ভিজ্জভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: গাঙ্গেয় সমভূমি ও সুন্দরবনের লবনাক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্যভূমি। গাঙ্গেয় সমভূমির পললমৃত্তিকা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে উর্বর করে তুলেছে। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমির উদ্ভিদপ্রকৃতির সমরূপ। এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী বৃক্ষ হল শাল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি উপকূলীয় ধরনের। এই অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ হল ঝাউ। সুন্দরবন অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বৃক্ষ সুন্দরী গাছ। এই গাছ এই অঞ্চলের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় এবং সুন্দরবনের নামকরণও এই গাছের নামেই হয়েছে। উত্তরবঙ্গের উদ্ভিদপ্রকৃতির প্রধান তারতম্যের কারণ এই অঞ্চলের উচ্চতা ও বৃষ্টিপাত। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে ঘন শাল ও অন্যান্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বন দেখা যায়। আবার ১০০০ মিটার উচ্চতায় উদ্ভিদের প্রকৃতি উপক্রান্তীয়। ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিঙে ওক, কনিফার, রডোডেনড্রন প্রভৃতি গাছের নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্য দেখা যায়।

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত। রাজ্যে মোট ছয়টি জাতীয় উদ্যান আছে — সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, বক্সা জাতীয় উদ্যান, গোরুমারা জাতীয় উদ্যান, নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান, সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। রাজ্যের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভারতীয় গণ্ডার, এশীয় হাতি, হরিণ, বাইসন, চিতাবাঘ, গৌর ও কুমির উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের পক্ষীজগৎও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। পরিযায়ী পাখিদের শীতকালে এ রাজ্যে আসতে দেখা যায়। সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের মতো উচ্চ পার্বত্য বনভূমি অঞ্চলে বার্কিং ডিয়ার, রেড পান্ডা, চিঙ্কারা, টাকিন, সেরো, প্যাঙ্গোলিন, মিনিভেট, কালিজ ফেজান্ট প্রভৃতি বন্যপ্রাণীর সন্ধান মেলে। বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলে গঙ্গা নদী শুশুক, নদী কচ্ছপ, স্বাদুজলের কুমির ও লোনা জলের কুমির প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বন্যপ্রাণীও দেখা যায়। ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের কাজও করে। এখানে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় মাছ দেখা যায়।

প্রশাসনিক বিভাগ
            প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে পাঁচটি বিভাগ ও ২৩টি জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে।

বর্ধমান বিভাগ মালদা বিভাগ জলপাইগুড়ি বিভাগ প্রেসিডেন্সি বিভাগ মেদিনীপুর বিভাগ
  • পূর্ব বর্ধমান জেলা
  • পশ্চিম বর্ধমান জেলা
  • বীরভূম জেলা
  • হুগলি জেলা
  • উত্তর দিনাজপুর জেলা
  • মালদা জেলা
  • মুর্শিদাবাদ জেলা
  • দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা
  • আলিপুরদুয়ার জেলা
  • কালিম্পং জেলা
  • কোচবিহার জেলা
  • জলপাইগুড়ি জেলা
  • দার্জিলিং জেলা
  • উত্তর ২৪ পরগণা জেলা
  • কলকাতা জেলা
  • দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা
  • নদিয়া জেলা
  • হাওড়া জেলা
  • পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা
  • পুরুলিয়া জেলা
  • পূর্ব মেদিনীপুর জেলা
  • বাঁকুড়া জেলা
  • ঝাড়গ্রাম জেলা

প্রতিটি জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসক বা জেলা কালেক্টরের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি "ভারতীয় প্রশাসনিক কৃত্যক" (আইএএস) বা "পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন কৃত্যক" (ডব্লিউবিসিএস) কর্তৃক নিযুক্ত হন। প্রতিটি জেলা মহকুমার বিভক্ত। মহকুমার শাসনভার মহকুমা-শাসকের হাতে ন্যস্ত থাকে। মহকুমাগুলি আবার ব্লকে বিভক্ত। ব্লকগুলি গঠিত হয়েছে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নিয়ে।

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী তথা বৃহত্তম শহর। কলকাতা ভারতের তৃতীয় বৃহৎ মহানগর। এবং বৃহত্তর কলকাতা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরাঞ্চল। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি রাজ্যের অপর এক অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন মহানগর। শিলিগুড়ি করিডোরে অবস্থিত এই শহর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে অবশিষ্ট দেশের সংযোগ রক্ষা করছে। আসানসোল ও দুর্গাপুর রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পতালুকে অবস্থিত অপর দুটি মহানগর। রাজ্যের অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওড়া, রাণীগঞ্জ, হলদিয়া, জলপাইগুড়ি, খড়গপুর, বর্ধমান, দার্জিলিং, মেদিনীপুর, তমলুক, ইংরেজ বাজার , কোচবিহার ও আরামবাগ ।

কৃষি

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিকভাবেই কৃষিভিত্তিক রাজ‍্য। যদিও এই রাজ‍্য ভারতের ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ২.৭% জুড়ে আছে, কিন্তু জনসংখ‍্যার ৮% খাদ‍্যের ক্ষেত্রে এই রাজ‍্যের উপর নির্ভরশীল। ৭১.২৩ লক্ষ কৃষিজীবী পরিবারের ৯৬%-ই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। জোতের গড় আয়তন ০.৭৭ হেক্টর। সর্বোপরি এই রাজ‍্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এবং কৃষি-আবহাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ, ফলত: বিভিন্ন ধরনের খাদ‍্যশস‍্য এখানে উৎপাদন করা সম্ভব। ধান এবং সব্জী উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশের মধ‍্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। আলু উৎপাদনে এই রাজ‍্য দ্বিতীয় স্থানে আছে (উত্তরপ্রদেশের পরেই)। এছাড়া পাট, আনারস, লিচু, আম এবং খুচরো ফুলের উৎপাদনেও এই রাজ‍্য গুরুত্বপুর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে।

নিট কৃষিক্ষেত্রের পরিমাণ ৫২.০৫ লক্ষ হেক্টর। এই পরিমাণটি মোট ভৌগোলিক এলাকার ৬৮% এবং কর্ষণযোগ‍্য জমির ৯২%। এছাড়া কৃষি নিবিড়তার পরিমাণ ৯৮৪%। অবশ‍্য যেহেতু এই রাজ‍্য আর্দ্র-ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত এবং বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী তাই মাঝে মাঝেই বন‍্যা, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। যদিও এই রাজ‍্য চাল, সব্জী ও আলুর উৎপাদন উদ্বৃত্ত হয়, ডাল, তৈলবীজ ও ভুট্টার উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাহিদা ও যোগানে বিপুল পার্থক‍্য আছে। কৃষির উন্নয়নে প্রধান বাধাগুলি হল রাসায়নিক সার ব‍্যবহারে ভারসাম‍্যের অভাবের দরুন ভূমিস্বাস্থ‍্যের অবনমন, প্রয়োজনীয় উন্নত মানের বীজ পাবার অসুবিধা, জোত যন্ত্রায়ণের অপ্রতুলতা, অসংগঠিত বাজার ইত‍্যাদি।

বনাঞ্চল

বাংলা সরকারের অধীনে ১৮৬৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে বন সংরক্ষণের কাজ চালু করা হয়।পশ্চিমবঙ্গ বেসরকারি বন (সংশোধন) আইন,১৯৫৪-এর সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ ভূস্বত্ত অধিগ্রহণ আইন,১৯৫৩ এবং ১৯৫৫ সালে জমিদারি প্রথা বিলোপ করা এবং চা বাগানের উদ্ধৃত জমির পুনর্গ্রহণ বিধিবদ্ধ হওয়ার ফলে এই রাজ্যে বনাঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে।উপরের বিষয়গুলির পূর্বেকারদুটি ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন,যেমন ১৯৫০ সালে কোচবিহার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং রাজ্যের যথাযথ পুনর্গঠন,বিহারের পূর্বতন মানভূম জেলার কিছু অংশ ১৯৪৬ সালের ১ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্তির ফলে পুরুলিয়া জেলা সৃষ্টি হওয়া,বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।এই রাজ্য ২১ ডিগ্রি ২০ মিনিট উত্তর এবং ২৭ ডিগ্রি ৩২ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪ডিগ্রি ৫০ মিনিট এবং ৮৯ ডিগ্রি ৫২ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং ৮৮,৭৪২ বর্গ কিলোমিটার ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।পাঁচটি রাজ্য সিকিম,অসম,বিহার,ঝাড়খণ্ড এবং উড়িষ্যা এবং তিনটি দেশ ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে রয়েছে।উত্তরে সিকিম,উত্তরপূর্বে ভুটান,পূর্বে অসম এবং বাংলাদেশ,পশ্চিমে নেপাল,বিহার এবং ঝাড়খণ্ড এবং দক্ষিণ পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যা অবস্থিত। বর্তমানে এই রাজ্যে নথিভুক্ত মোট বনাঞ্চলের পরিমাণ হল ১১,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার,যার মধ্যে ৭,০৪৪ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল সংরক্ষিত বনাঞ্চল,৩৭৭২ বর্গ কিলোমিটার সুরক্ষিত বনাঞ্চল এবং ১০৫৩ বর্গকিলোমিটার শ্রেণীভুক্ত বিহীন সরকারি বনাঞ্চল,যা এই রাজ্যের ভৌগোলিক অঞ্চলের ১৩.৩৮ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।বিগত চার দশকে এই রাজ্যে বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক পরিকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান সময়ের প্রশাসনিক প্রয়োজন অনুসারে সামগ্রিকভাবে বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৃষি জলবায়ু অঞ্চলে বনাঞ্চল ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সুসংহতকরণ এবং বৃহৎ আকারে এই রাজ্যের বনাঞ্চল বিহীন অংশে সামাজিক/খামার/নগর বনাঞ্চলের প্রয়োগ সাধন ঘটেছে।বৃহৎ আকারে বনজ ফসল উৎপাদন ,পরিবেশ-বান্ধব নতুন পর্যটন কেন্দ্র গঠন ,উৎপাদন ও বনজ দ্রব্য বিপণন এবং এই ধরনের সহায়ক কাজকর্মের জন্য ১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড আত্মপ্রকাশ করে।বিভিন্ন পর্যায়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড-এর প্রশাসনিক কাজ বন অধিকারের ডেপুটেশনে থাকা অধিকারিকগণদ্বারা পরিচালিত হয়।

খনিজ সম্পদ

পশ্চিমবঙ্গ খনিজ সম্পদে মাঝারি মানের সমৃদ্ধ রাজ্য।এই রাজ্যের প্রধান খনিজ দ্রব্য হল কয়লা ও ফায়ার ক্লে বা তপসহ মাটি।এই দুটি খনিজ দ্রব্য রাজ্যটিতে বেশি পরিমানে পাওয়া যায়।অন্যান্য খনিজ দ্রবের মধ্যে চিনামাটি, চুনাপাথর, অ্যাপেটাইট, আকরিক লোহা, আকরিক তামা, ম্যাঙ্গানিজ, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

পরিবহন ব্যবস্থা

            পশ্চিমবঙ্গে ভূতল সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ৯২,০২৩ কিলোমিটার (৫৭,১৮০ মাইল)। এর মধ্যে জাতীয় সড়ক ২,৩৭৭ কিলোমিটার (১,৪৭৭ মাইল), এবং রাজ্য সড়ক ২,৩৯৩ কিলোমিটার (১,৪৮৭ মাইল)। রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ১০৩.৬৯ কিলোমিটার (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১৬৬.৯২ মাইল); যা জাতীয় ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ৭৪.৭ কিলোমিটারের (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১২০ মাইল) থেকে বেশি। রাজ্যের সড়কপথে যানবাহনের গড় গতিবেগ ৪০-৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টার (২৫-৩১ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে গতিবেগ ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার (১২-১৬ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। এই মূল কারণ রাস্তার নিম্নমান ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। রাজ্যে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৪১৩৫.১৯ কিলোমিটার (২৫৬৯ মাইল)। ভারতীয় রেলের পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল ক্ষেত্রদুটির সদর কলকাতায় অবস্থিত। রাজ্যের উত্তরভাগের রেলপথ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অন্তর্গত। কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল পরিষেবা। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অংশ দার্জিলিং হিমালয়ান রেল একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কলকাতার নিকটেই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার দমদমে অবস্থিত। শিলিগুড়ির নিকটবর্তী বাগডোগরা বিমানবন্দর রাজ্যের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর; সাম্প্রতিককালে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্তরে উন্নীত করা হয়েছে।উত্তর-পশ্চিমবঙ্গের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হল কোচবিহার বিমানবন্দর। এটি বৃহত্তর অসম-বাংলা সীমান্ত এলাকায় পরিষেবা দেয়।

কলকাতা বন্দর পূর্ব ভারতের একটি প্রধান নদীবন্দর। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কলকাতা ও হলদিয়া ডকের দায়িত্বপ্রাপ্ত। কলকাতা বন্দর থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন পরিষেবা ও ভারত ও বহির্ভারতের বন্দরগুলিতে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন পরিষেবা চালু আছে। রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চলে, নৌকা পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। কলকাতা ভারতের একমাত্র শহর যেখানে আজও ট্রাম গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। এই পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি।

পশ্চিমবঙ্গের বাস পরিষেবা অপর্যাপ্ত। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন নিগম ও ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি এই পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানিগুলিও বাস চালিয়ে থাকে। শহরের বিশেষ বিশেষ রুটে মিটার ট্যাক্সি ও অটোরিকশা চলে। কম দুরত্বের যাত্রার জন্য রাজ্যের সর্বত্র সাইকেল রিকশা ও কলকাতাতে সাইকেল রিকশা ও হাতে-টানা রিকশা ব্যবহার করা হয়।

জনপরিসংখ্যান

পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০২৮ জন। এই রাজ্য জনঘনত্বের বিচারে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৫৪ শতাংশ বাস করে পশ্চিমবঙ্গে। ২০০১-২০১১ সময়কালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩.৮৪ শতাংশ; যা জাতীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৭.৬৪ শতাংশের থেকে কম। রাজ্যে লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৫০ জন মহিলা।

পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার ৭৬.২৬%, যা জাতীয় গড় ৭৪.০৪%-এর চেয়ে বেশি। ১৯৯১-১৯৯৫ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, এই রাজ্যের মানুষের গড় আয়ু ৬৩.৪ বছর, যা জাতীয় স্তরে গড় আয়ু ৬১.৭ বছরের থেকে কিছু বেশি। রাজ্যের ৭০ শতাংশ মানুষ বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। ১৯৯৯-২০০০ সালের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের ৩১.৮৫ শতাংশ মানুষ বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। তফসিলি জাতি ও উপজাতিগুলি গ্রামীণ জনসংখ্যার যথাক্রমে ২৮.৬ শতাংশ ও ৫.৮ শতাংশ এবং নগরাঞ্চলীয় জনসংখ্যার ১৯.৯ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।

রাজ্যে অপরাধের হার প্রতি এক লক্ষে ৮২.৬; যা জাতীয় হারের অর্ধেক। ভারতের ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এই হার চতুর্থ নিম্নতম। যদিও রাজ্যের বিশেষ ও স্থানীয় আইন সংক্রান্ত অপরাধের হার সর্বোচ্চ বলেই জানা যায়। রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের হার ৭.১; উল্লেখ্য এই ক্ষেত্রে জাতীয় হার ১৪.১। পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) ভারতের প্রথম রাজ্য যেটি নিজস্ব মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছিল।

ধর্মবিশ্বাস

            ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধর্মবিশ্বাস। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ৭০.৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাস এবং বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্ম। মুসলমানরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ২৭.০১ শতাংশ। শিখ, খ্রিস্ট ধর্ম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা জনসংখ্যার অবশিষ্ট অংশ। সংখ্যালঘুসঙ্কুল জেলাগুলি হলো- মুর্শিদাবাদ জেলা, উত্তর দিনাজপুর জেলা ও মালদহ জেলা৷

ভাষাসমূহ

২০১১ সালের জনগণনার তাৎক্ষণিক ফলাফল অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৯১,৩৪৭, ৭৩৬ (ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৫%)। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রাজ্য। জনসংখ্যার সিংহভাগই বাংলাভাষী। মাড়োয়ারি, বিহারি ও ওড়িয়া সংখ্যালঘুরা রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়েছিটিয়ে বাস করে। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে শেরপা ও তিব্বতিদের দেখা যায়। দার্জিলিঙে নেপালি গোর্খা জাতির লোকও প্রচুর সংখ্যায় বাস করে। পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতাল, কোল, রাজবংশী ও টোটো আদিবাসীরাও বাস করে। রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় চীনা, তামিল, গুজরাতি, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, আর্মেনিয়ান, পাঞ্জাবি ও পারসি সংখ্যালঘুদেরও খুব অল্প সংখ্যায় বাস করতে দেখা যায়। ভারতের একমাত্র চায়নাটাউনটি পূর্ব কলকাতায় অবস্থিত।

রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ইংরেজি। দার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমায় সরকারি ভাষা হল নেপালি। ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভাষাগত জনসংখ্যার বৃহত্তম থেকে ক্ষুদ্রতম ক্রম অনুযায়ী ভাষাগুলি হল বাংলা, হিন্দি, সাঁওতালি, উর্দু, নেপালি ও ওড়িয়া। রাজ্যের কোনো কোনো অংশে রাজবংশী ও হো ভাষাও প্রচলিত।

সংস্কৃতি

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই সংস্কৃতির শিকড় নিহিত রয়েছে বাংলা সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা, নাটক ও চলচ্চিত্রে। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মহাকাব্য ও পুরাণ-ভিত্তিক জনপ্রিয় সাহিত্য, সংগীত ও লোকনাট্যের ধারাটি প্রায় সাতশো বছরের পুরনো। উনিশ শতকে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা ছিল বাংলার নবজাগরণ ও হিন্দু সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। বিশ শতকের প্রথমার্ধ্বে এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমগ্র বাংলার প্রধান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে আজও অক্ষুন্ন। এই সময়েই চলচ্চিত্র পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর। এরপর ১৯৫০-এর দশক থেকে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটকের মতো চিত্র পরিচালকদের আবির্ভাব হয় এবং পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা লাভ করতে শুরু করে।

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব ব্যাপক। হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠের (৭২.৫%) ধর্ম হওয়ায়, এই ধর্মের প্রভাবই সর্বাধিক লক্ষিত হয়। শারদীয়া দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব। কালীপূজাও মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে প্রধান সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা, রথযাত্রা, পয়লা বৈশাখ, বইমেলা, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নেতাজি জয়ন্তী ইত্যাদি।

উৎসব ও মেলা

দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম উৎসব। শরৎকালে আশ্বিন-কার্তিক মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) চারদিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অপর একটি বহুপ্রচলিত হিন্দু উৎসব হল কালীপূজা। এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে। রাজ্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিন্দু উৎসবগুলি হল পয়লা বৈশাখ, অক্ষয় তৃতীয়া, দশহরা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পূজা, মহালয়া, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, রাসযাত্রা, নবদ্বীপের শাক্তরাস, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া, নবান্ন, জগদ্ধাত্রী পূজা, সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা, শিবরাত্রি ও চড়ক-গাজন। রথযাত্রা উপলক্ষে হুগলি জেলার মাহেশ ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে বিশেষ মেলা ও জনসমাগম হয়ে থাকে। হুগলি জেলার চন্দননগর ও নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা ও জগদ্ধাত্রী বিসর্জন শোভাযাত্রা বিখ্যাত। মকর সংক্রান্তির দিন বীরভূম জেলার কেন্দুলিতে জয়দেব মেলা উপলক্ষে বাউল সমাগম ঘটে। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন এখানে বীরভূমপুত্র জয়দেবের উদ্দেশ্যে জয়দেব-কেন্দুলি মেলা হয়ে থাকে। পৌষ সংক্রান্তির দিন হুগলি নদীর মোহনার কাছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গঙ্গাসাগরে আয়োজিত গঙ্গাসাগর মেলায় সারা ভারত থেকেই পুণ্যার্থী সমাগম হয়। ৪ঠা মাঘ বাঁকুড়ার কেঞ্জেকুড়া গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে এক বিশাল মুড়ি মেলা হয়। শিবরাত্রি উপলক্ষে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির নিকটে প্রাচীন জল্পেশ্বর শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় বিখ্যাত জল্পেশ্বর মেলা। শ্রাবণ সংক্রান্তির সর্পদেবী মনসার পূজা উপলক্ষে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আয়োজিত হয় ঝাঁপান উৎসব। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের ঝাঁপান উৎসব সবচেয়ে বিখ্যাত। বাঁকুড়া জেলার রাইপুর ব্লককের অন্তর্গত মটগোদা গ্রামে ধর্মরাজ পুজো উপলক্ষে মাঘ মাসের শেষ শনিবারে অনুষ্ঠিত হয় শনিমেলা; কোচবিহার শহরের মদনমোহন মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত রাসমেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মেলা।

ইসলামি উৎসব মধ্যে ঈদুজ্জোহা, ঈদুলফিতর, মিলাদ-উন-নবি, শবেবরাত ও মহরম বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। খ্রিষ্টান উৎসব বড়দিন ও গুড ফ্রাইডে; বৌদ্ধ উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা; জৈন উৎসব মহাবীর জয়ন্তী এবং শিখ উৎসব গুরু নানক জয়ন্তীও মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, পঁচিশে বৈশাখ, নেতাজি জয়ন্তী ইত্যাদি। প্রতি বছর পৌষ মাসে শান্তিনিকেতনে বিখ্যাত পৌষমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বইমেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা রাজ্যে একমাত্র তথা বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। আঞ্চলিক বইমেলাগুলি রাজ্যের সকল প্রান্তেই বছরের নানা সময়ে আয়োজিত হয়। এছাড়া সারা বছরই রাজ্য জুড়ে নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

শিক্ষা

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়গুলি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অথবা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনও বিদ্যালয় পরিচালনা করে। প্রধানত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত; তবে সাঁওতালি, নেপালি, হিন্দি ও উর্দু ভাষাতেও পঠনপাঠন করার সুযোগ এ-রাজ্যে অপ্রতুল নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ অথবা কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (সিবিএসসি) অথবা কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজামিনেশন (আইসিএসই) দ্বারা অনুমোদিত। ১০+২+৩ পরিকল্পনায় মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ছাত্রছাত্রীদের দুই বছরের জন্য প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় জুনিয়র কলেজে পড়াশোনা করতে হয়। এছাড়াও তারা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অথবা কোনো কেন্দ্রীয় বোর্ড অনুমোদিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে পারে। এই ব্যবস্থায় তাদের কলাবিভাগ, বাণিজ্যবিভাগ অথবা বিজ্ঞানবিভাগের যেকোনো একটি ধারা নির্বাচন করে নিতে হয়। এই পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করার পরই তারা সাধারণ বা পেশাদার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে পারে।

২০০৬ সালের হিসেব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আঠারো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম বৃহৎ আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে প্রায় ২০০টি কলেজ। বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের দুটি প্রসিদ্ধ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। শান্তিনিকেতনে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন এক প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (কলকাতা), বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (বর্ধমান), বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় (বাঁকুড়া), বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (মেদিনীপুর), উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (রাজা রামমোহনপুর, শিলিগুড়ি), বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় (কল্যাণী, নদিয়া), পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় – আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিসম্পন্ন রাজ্যের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, কলকাতা, রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান, দুর্গাপুর (পূর্বতন আঞ্চলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস, ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও অনুসন্ধান সংস্থান, কলকাতা; IISER-K) ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউশন।


পর্যটন

পার্বত্য অঞ্চল

  • দার্জিলিং

দার্জিলিং দার্জিলিং জেলার সদর শহর৷ শহরটি সবুজাবৃত এবং চারদিকে তুষারশৃঙ্গদ্বারা পরিবেষ্টিত৷ মনোরম দৃৃশ্য ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার জন্য এটি অন্যতম৷

  • কার্শিয়াং

দার্জিলিং জেলার ১৪৫৮ মিটার উচ্চতাতে অবস্থিত একটি সুদৃৃশ্য পর্বতস্টেশন(হিলস্টেশন) ও মহকুমা সদর হলো কার্শিয়াং৷

  • লাভা-লোলেগাঁও-রিশপ রিম্বিক

লাভা, লোলেগাঁও ও রিশপ রিম্বিক হলো কার্শিয়াং মহকুমাতে ২৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত তিনটি পর্যটন গ্রাম৷ গ্রাম তিনটি পাইনগাছ দ্বারা বেষ্টিত, মাঝে মাঝে মেঘের সমাহার একে আরো সুন্দর করে তোলে৷ শান্ত পরিবেশের জন্যও এটি সমাদৃত৷

  • মিরিক

মিরিক হলো দার্জিলিং জেলার একটি দৃশ্যপট পর্যটনস্থল৷ প্রাকৃৃতিক সৌন্দর্য, আবহাওয়া ও সহজলভ্যতার জন্য এটি পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় স্থান৷ এছাড়া সুমেংদু হ্রদ এখানকার বিশেষ আকর্ষণ৷

  • সান্দাকফু

সান্দাকফু,এটি পশ্চিমবঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যার উচ্চতা প্রায় ৩৬৩৬ মিটার৷ দার্জিলিং জেলার সিঙ্গলিলা পর্বতশ্রেণীর দার্জিলিং নেপাল সীমান্তে অবস্থিত এই পর্বতটি থেকে মাকালু,কাঞ্চনজংঘা ইত্যাদি পর্বতশৃৃঙ্গ সুদৃৃশ্য৷ এছাড়া এখান থেকে উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ ফালুট অবস্থিত৷

ডুয়ার্স অঞ্চল

পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল মূলত বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, অভয়ারণ্য ও চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত৷ এটি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার মধ্যে বিস্তৃৃত৷ বিখ্যাত কিছু বন্যপ্রাণী বিচরণক্ষেত্রগুলি হলো-

  • গরুমারা জাতীয় উদ্যান
  • জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান
  • বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প
  • চিলাপাতা বনাঞ্চল
  • মহানন্দা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ
  • চাপড়ামারি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ
  • সিঙ্গলিলা জাতীয় উদ্যান

ঐতিহ্যপূর্ণ পর্যটন

  • হাজার দুয়ারী রাজপ্রাসাদ
  • মালদহ টাউন
  • বহরমপুর ও কাশেমবাজার নবাবী প্রাসাদ
  • কোটিবর্ষ প্রত্নস্থল, দক্ষিণ দিনাজপুর
  • শোভাবাজার রাজবাড়ি
  • জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি
  • কুমোরটুলি
  • মার্বেল প্যালেস
  • চন্দননগর
  • চুঁচুড়া
  • নাখোদা মসজিদ
  • বেলুরমঠ
  • দক্ষিণেশ্বর
  • কালীঘাট
  • বিষ্ণুপুর মন্দির শহর

উপকূলীয়

  • দীঘা সমুদ্রসৈকত
  • মন্দারমণি সমুদ্রসৈকত
  • উদয়পুর সমুদ্রসৈকত
  • শঙ্করপুর সমুদ্রসৈকত
  • তাজপুর সমুদ্রসৈকত
  • বকখালি
  • জুনপুট
  • সাগরদ্বীপ কপিলমুনি আশ্রম
  • সজনেখালি-ধামাখালি
  • সুন্দরবন অভয়ারণ্য
  • ভগবতপুর অভয়ারণ্য



@ পশ্চিমবঙ্গ ~

• দেশ : ভারত
• প্রতিষ্ঠা দিবস : ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০
• রাজধানী : কলকাতা
• বৃহত্তম মহানগরী / বৃহত্তম মহানগরীয় অঞ্চল : কলকাতা
• জেলা : ২৩টি
 • শাসক :  পশ্চিমবঙ্গ সরকার
• আইনসভা : পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা
(২৯৫টি  আসন)
• হাইকোর্ট : কলকাতা হাইকোর্ট
• আয়তন :
 • মোট ৮৮৭৫২ কিমি ২ (৩৪২৬৭ বর্গমাইল)
• এলাকার ক্রম : ১৪শ
• জনসংখ্যা (২০১১) :
• মোট ৯,১৩,৪৭,৭৩৬
• ক্রম : ৪র্থ
• ঘনত্ব : ১০২৯/কিমি২ (২৬৭০/ বর্গমাইল)
• সময় অঞ্চল : ভারতীয় প্রমাণ সময় ( ইউটিসি+০৫:৩০ )
• মানব উন্নয়ন সূচক : ০.৫০৯ ( মধ্যম)
• মানব উন্নয়ন সূচক অনুসারে স্থান : ৯ম (২০১১)
• সাক্ষরতা : ৭৭.০৮%
• সরকারি ভাষা : বাংলা , ইংরেজি , নেপালি (দার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমা ও কালিম্পং
জেলায়)
• ওয়েবসাইট : wb.gov.in


তথ্যসূত্র : https://bn.m.wikipedia.org/wiki/পশ্চিমবঙ্গ
 
©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ।
 

Saturday, 24 June 2017

নদিয়া (Nadia)





          নদিয়া জেলা (উচ্চারণ: ˈnədɪə or nəˈdɪə) (পুরনো বানানে নদীয়া জেলা ; পূর্বনাম নবদ্বীপ জেলা ) পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সি বিভাগের একটি জেলা। এই জেলার উত্তর-পশ্চিমে ও উত্তরে মুর্শিদাবাদ জেলা; পূর্ব সীমান্তে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ , দক্ষিণ-পূর্বে ও দক্ষিণে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা এবং পশ্চিমে হুগলি ও বর্ধমান জেলা অবস্থিত।
             নদিয়া একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে জেলা হিসেবে নদিয়ার আত্মপ্রকাশ। সে সময় বর্তমান হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ আগস্ট কিয়দংশ বাদে নদিয়া পুনরায় ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নদিয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে সাময়িকভাবে জেলার নামকরণ নবদ্বীপ করা হলেও অনতিবিলম্বেই সেই নামকরণ বাতিল হয়।



                নদিয়া মূলত একটি কৃষিপ্রধান জেলা। স্বাধীনতার পর বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে কল্যাণী নগরীকে কেন্দ্র করে একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে এই জেলায়। এছাড়া ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পেও এই জেলার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে নদিয়া জেলা গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতিবিজড়িত।

নামকরণ:

              নদিয়া নামের উৎস সম্বন্ধে নানা ধারণা প্রচলিত আছে। নদিয়া ও নবদ্বীপ এই দুটিনামই এই জনপদে প্রচলিত। এই স্থান বহু বার বৈদেশিক আক্রমণের শিকার হয়েছে, যার ফলে উচ্চারণের বিকৃতির মাধ্যামে নদিয়া ও নবদ্বীপ সম্পর্কযুক্ত হতে পারত, যদিও তা হয় নি। নদিয়ার নামকরণ প্রসঙ্গে কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী একটি কিংবদন্তির উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে, ভাগীরথী তীরস্থ নবসৃস্ট চরভূমিতে একতান্ত্রিক প্রতিদিন সন্ধ্যায় ন’টি দিয়া  (প্রদীপ) জ্বালিয়ে তন্ত্র-সাধানা করতেন। দূর থেকে দেখে লোকে এই দ্বীপটিকে ন’দিয়ার চর বলত। আর সেই থেকেই নাকি লোকমুখে ‘নদিয়া’ নামের প্রচলন করে।

ইতিহাস:

              ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় নদিয়া হিন্দু ধর্মালম্বিদের জন্য একটি তীর্থস্থান। রাজা বল্লাল সেন নদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন বাংলার হিন্দু রাজারা গৌড়ের পাশাপাশি নদিয়াতেও অবস্থান করতেন। রাজা বল্লাল সেন তার শাসনামলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাগীরথী নদীতে তীর্থস্নান করার উদ্দেশ্যে আসতেন। তিনি এই নদীর তীরে
পঞ্চরত্ন নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২২ ও ১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি জরিপ ম্যাপে  একই সময়ে খননকৃত একটি দীঘির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বিজিত হওয়ার আগে অবধি নদিয়া বাংলার রাজধানী ছিল। নদীর পশ্চিম তীরে প্রাচীর বেষ্টিত একটি নগরীতে রাজপ্রাসাদ, হারেম, বাজার ও বাসস্থান ছিল। ধারণা করা হয় যে, তিব্বত, নেপাল ও ভূটানের সাথে নদিয়ার বানিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ১৮৬৯ সালে নদিয়া পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ইংরেজ আমলে অবিভক্ত নদিয়া জেলা কৃষ্ণনগর সদর , রাণাঘাট , কুষ্টিয়া , মেহেরপুর , চুয়াডাঙ্গা এই পাঁচটি মহকুমায় বিভক্ত ছিল। দেশভাগের পরে কুষ্টিয়া , মেহেরপুর , চুয়াডাঙ্গা এই তিনটি মহকুমা বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়।

ভূগোল:

             নদিয়া জেলা ২২°৫৩' ও ২৪°১১' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০৯' ও ৮৮°৪৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা এই জেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে পূর্বদিকে মাজদিয়ার সামান্য উত্তর দিয়ে পশ্চিমে চাপড়া, নবিননগর, মধুপুর, কৃষ্ণনগরের উত্তরে-- ঘূর্নি, ঘূর্ণি গোডাউণ, কালিদহ, পাণিনালা, হরনগর, আনন্দনগর, ভক্তনগর, হাঁসাডাঙ্গা-
বনগ্রাম, চৌগাছা, মায়াকোল, বাহাদুরপুরের উপর দিয়ে চলে গেছে। সেজন্য তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশী (বা শীতকালে কম) থাকে এই সব জায়গা গুলিতে। এই জেলার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে মুর্শিদাবাদ জেলা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা, পশ্চিমে বর্ধমান ও হুগলি জেলা এবং পূর্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের খুলনা বিভাগ অবস্থিত।

ভূপ্রকৃতি:

               গঙ্গা - ভাগীরথী ও তার অন্যান্য উপনদী দ্বারা গঠিত নদিয়া জেলা মূলত বিশাল গাঙ্গেয় সমভূমির একটি অংশ। এই জেলা গঙ্গার পরিণত বদ্বীপের অন্তর্গত। জলঙ্গী ও চুর্নীর প্রবাহ এই অঞ্চলের ভূমিরূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। জেলার স্বাভাবিক ভূমিঢাল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। তবে বর্তমান ভূমির ঢাল খুব কম এবং ঝিল, পুরনো নদীখাত ও জলাভূমি দ্বারা বিচ্ছিন্ন। জলঙ্গী ও চুর্নী নদীর প্রবাহপথ সর্পিল এবং স্থানে স্থানে তা অনেক বিল সৃষ্টির কারণ হয়েছে। এই নদীগুলির প্রবাহপথ ক্রমাগত পলি পড়ে পড়ে মজে এসেছে। এই কারণে বর্ষার সময় এখানে অনেক জায়গায় বন্যা হয়।

• জলবায়ু:


              নদিয়া জেলার জলবায়ু উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। কর্কটক্রান্তি রেখা জেলার মাঝামাঝি দিয়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। জেলায় মূলত চারটি ঋতু দেখা যায়। যথা – গ্রীষ্মকাল (মার্চ-জুন), বর্ষাকাল (জুন- সেপ্টেম্বর), শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর) ও শীতকাল (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)। গ্রীষ্মকালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় উষ্ণতা যথাক্রমে ৪৩° সেন্টিগ্রেট ও ১৯° সেন্টিগ্রেট। অন্যদিকে শীতকালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় উষ্ণতা যথাক্রমে ৩০° সেন্টিগ্রেট ও ০৯° সেন্টিগ্রেট। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২০০-১৪০০ মিলিমিটার। অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকালেই।

নদনদী:

            নদিয়া জেলার প্রধান নদনদীগুলি হল ভাগীরথী , জলঙ্গী , ভৈরব , চূর্ণী , মাথাভাঙা ও ইছামতী ইত্যাদি। এই জেলায় ভাগীরথীর দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার। ভাগীরথীর বদ্বীপ প্রবাহে শেষ উপনদী হিসেবে যুক্ত হয়েছে মাথাভাঙা নদী। এরপর ভৈরব নদ ভাগীরথী থেকে নির্গত হয়ে জলঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আরও দক্ষিণে ভাগীরথী থেকে নির্গত হয়েছে জলঙ্গী নদী (দৈর্ঘ্য ২০৬ কিলোমিটার)। এই অংশ বর্তমানে পলি পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। জলঙ্গী নদী উত্তর-পশ্চিমাংশে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত বরাবর দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর জেলার মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে নবদ্বীপের নিকট ভাগীরথী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ভৈরব নদ বর্তমানে মৃতপ্রায়। মাথাভাঙা (দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার) উপনদীটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর পুনরায় ভারতে প্রবেশ করে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। পশ্চিম শাখাটি চূর্ণী (দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার) নামে পশ্চিমে ও পূর্ব শাখাটি ইছামতী (দৈর্ঘ্য ৬৮ কিলোমিটার) নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। নদিয়া জেলার নদীগুলি বারবার দিক ও গতি পরিবর্তন করে। বন্যা এখানকার নদীগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য। নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে জেলায় অনেক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, জলাভূমি ও বিল গড়ে উঠেছে। নদিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য নদী ঝোড় নদী, যেটি ভীমপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

                নদিয়া জেলার মাত্র ১.২২ হেক্টর জমিতে অরণ্য বর্তমান, যা জেলার মোট ভৌগোলিক আয়তনের মাত্র ০.৩১ শতাংশ। নাকাশিপাড়া ব্লকের বেথুয়াডহরি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য এই জেলায় একমাত্র অভয়ারণ্য যেখানে শাল গাছ ও মেহগনি গাছ গাছের অরণ্যে হরিণ দেখা যায়। এছাড়া কৃষ্ণনগরের চার কিলোমিটার উত্তরে বাহাদুরপুর অরণ্যে প্রচুর অর্জুন, সেগুন ইত্যাদি গাছ দেখা যায়। এই বনাঞ্চলগুলি ছাড়াও জেলায় মনুষ্যরোপিত উদ্ভিদ যথা শাল, শিশু গাছ, গামার গাছ, তৃণ, শিমুল গাছ , নিম গাছ , অর্জুন গাছ, বাবলা গাছ , জাম গাছ , দেবদারু গাছ ইত্যাদিও দেখা যায়।

• জনপরিসংখ্যান:


নদিয়া জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিন্দু , যা মোট জনসংখ্যার ৭২.১৫%। এছাড়া অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইসলাম (২৬.৭৬%), খ্রিস্টান (০.৬৫%), শিখ (০.০২%),বৌদ্ধ (০.০১%), জৈন (০.০১)। এছাড়া অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী ০.৩৩% মানুষ ও বিবৃতি নেই এমন মানুষ ০.০৭%।

পুরাতাত্ত্বিক সংস্কৃতি:

মায়াপুরে সেনরাজা বল্লাল সেনের স্মৃতিসম্বলিত 'বল্লাল ঢিবি' বর্তমান। এখানকার বামনপুকুর বাজারে চৈতন্য মহাপ্রভুর সমকালীন নবদ্বীপ শাসক 'চাঁদকাজী'র সমাধি আছে। নবদ্বীপের পশ্চিমে পাড়ভাঙায় উঁচু ঢিবি বৌদ্ধস্তুপ হিসাবে চিহ্নিত, যা 'পাহাড়পুর' নামে খ্যাত। যোগীনাথতলা পাড়ায় হাত-পা হীন কূর্মাকৃতি পাথরখণ্ড 'বৌদ্ধ শূন্যবাদ'এর প্রতীক বলে স্বীকৃত। দণ্ডপাণিতলায় দ্বিভূজ দণ্ডপাণির মূর্তি হাঁস ও মড়ার মাথার খুলিসহ পূজিত হয়। এছাড়া আছে, ধর্মরাজ বুদ্ধের মূর্তি৷ এখানকার কিছু স্থানে শিবলিঙ্গের বদলে শিবের পাথুরে লোড়ামূর্তি পূজিত হয়; এদের কোনোটি 'বুদ্ধমূর্তি' বা প্রতীকচিহ্ন আঁকা মূর্তি৷ ভবতারণ শিবমন্দিরে একটি পাথরখণ্ডে পদ্মপাণি বুদ্ধমূর্তি খোদিত আছে। এছাড়া, 'অ্যালানে শিব' বা 'আলোকনাথ শিব' পালযুগের বৌদ্ধসংস্কৃতির ধারাকে বহন করে আসছে। দিগনগরে নদিয়া রাজপরিবার -এর রাজা রাঘব রায়ের প্রতিষ্ঠিত 'রাঘবেশ্বর শিবমন্দির' (১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে) আছে। শিবনিবাসে তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজরাজেশ্বর, রাজ্ঞীশ্বর, ও রামচন্দ্র নামে তিনটি দেবমূর্তি আছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় -এর সময় থেকে তাঁর আদেশে নদিয়ায় বিশালাকারে দীপান্বিতা শ্যামাপূজার প্রবর্তন ঘটে। অগ্রদ্বীপে ঘোষঠাকুর প্রতিষ্ঠিত গোপীনাথ বর্তমান। চৈত্র একাদশীতে
ঘোষঠাকুরের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে বিশাল মেলা বসে। এছাড়া, রাস পূর্ণিমায় শাক্তরাস এখানকার অভিনব আকর্ষণ। পোড়া-মা তলায় প্রাচীন দেবীপ্রতিমা অধিষ্ঠিতা। উলা-বীরনগরে উলাই চণ্ডী সাড়ম্বরে পূজিতা হন।
নবদ্বীপ ও শান্তিপুরে বেশ কিছু 'বৈষ্ণব মন্দির' বর্তমান। বৈষ্ণব তিথি অনুসারে মন্দিরসমূহে উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে 'রাস-উৎসব' ও 'দোল-উৎসব' অন্যতম। ফুলিয়ায় 'যবন' হরিদাস ঠাকুরের সাধন পীঠস্থান 'ভজন গোফা' বর্তমান। ফুলিয়ায় কবি কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান। কাঁচরাপাড়ায় কৃষ্ণ দেবরায়ের প্রতিষ্ঠিত আটচালা বাংলা মন্দির বিখ্যাত। কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় দোল-পূর্ণিমায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ের গুরুঠাকুরাণী সতীমায়ের বিশাল মেলা বসে।

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব:
  • কবি কৃত্তিবাস ওঝা, রামায়নের প্রাচীন অনুবাদক ও কবি ।
  • শ্রী চৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩) মহাপুরুষ সমাজসংস্কারক, বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক।
  • কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ (জন্ম আনু. ১৬০০-১৬১০) নবদ্বীপের এক খ্যাতনামা তন্ত্র তথা কালীসাধক যিনি দক্ষিণাকালীর রূপকল্পনা করে বাংলার ঘরে ঘরে কালী পূজার প্রচলন করেন।
  • রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ (জন্ম: ১৭৮৬ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৮৪৫) একজন আভিধানিক ও পণ্ডিত। তিনি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাভাষায় প্রথম অভিধান বঙ্গভাষাভিধান রচনা করেন। তিনি ব্রাহ্মসমাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।
  • তারাশঙ্কর তর্করত্ন (?-১৮৫৮) ছিলেন উনিশ শতকের একজন লেখক যিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজের কৃতী ছাত্র ছিলেন।
  • মদনমোহন তর্কালঙ্কার (১৮১৭-১৮৫৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ঊনবিংশ শতাব্দীয় অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসাবেও পরিগণিত।
  • দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭৩), নাট্যকার, সাহিত্যিক।
  • বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (১৮৪১-১৮৯৯), ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম আচার্য।
  • কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস (১৮৬১-১৯০৫), ব্রাজিলের গৃহযুদ্ধে কৃতিত্ব, দুঃসাহসী অভিযাত্রী।
  • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১৮৬১ – ১৯৩০), ইতিহাসবিদ ও প্রাবন্ধিক। জন্মস্থান সিমলা।
  • দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকার।
  • দীনেন্দ্রকুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩) একজন পত্রিকা সম্পাদক, অনুবাদক এবং গ্রন্থকার।
  • হরিদাস দে (১৯০২ - ২৪ মে, ১৯৭৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
  • চঞ্চল কুমার মজুমদার (১৯৩৮-২০০০) - বিখ্যাত বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, মজুমদার-ঘোষ মডেলের উদ্ভাবক।
  • বিশ্বনাথ সর্দার - নীলবিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা ও শহীদ।
  • অনন্তহরি মিত্র- ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ
  • বসন্ত বিশ্বাস- অগ্নিযুগের বিপ্লবী কিশোর ও শহীদ
  • প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্ত - স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সশস্ত্র বিপ্লবী।
  • বীণা দাস - অগ্নিযুগের বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদ
  • নির্মলনলিনী ঘোষ - নদিয়া জেলার প্রথম মহিলা সত্যাগ্রহী
  • করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় - খ্যাতনামা কবি
  • চার্লস জিমেলিন - প্রথম পদকজয়ী ব্রিটিশ অলিম্পিয়ান
  • যতীন্দ্রমোহন বাগচী - খ্যাতনামা কবি
  • হেমচন্দ্র বাগচী - খ্যাতনামা কবি
  • মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক-কবি, সাংবাদিক
  • সরলাবালা সরকার - সাহিত্যিক
  • দিলীপ বাগচী - বাঙালি গণসংগীত শিল্পী ও রাজনৈতিক নেতা
  • আজিজুল হক-আইনজীবী, কূটনৈতিক
  • গোপাল ভাঁড়-রম্য গল্পকার ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী
  • লালন-সাধক, গায়ক, গীতিকার, সুরকার, বাউল-দার্শনিক
@ নদিয়া জেলা~

• দেশ- ভারত
• রাজ্য -পশ্চিমবঙ্গ
• প্রশাসনিক বিভাগ- প্রেসিডেন্সি বিভাগ
• সদরদপ্তর -কৃষ্ণনগর
 • লোকসভা কেন্দ্র  -২টি
• বিধানসভা আসন- ১৭টি
• আয়তন : মোট ৩৯২৭ কিমি ২(১৫১৬ বর্গমাইল)
• জনসংখ্যা (২০১১): মোট ৫১,৬৮,৪৮৮
• ঘনত্ব ১৩০০/কিমি ২ (৩৪০০/বর্গমাইল)
• শহুরে ৯,৭৯,৫১৯
 • সাক্ষরতা ৭৫.৫৮ %
• লিঙ্গানুপাত ৯৪৭
• প্রধান মহাসড়ক - জাতীয় সড়ক ৩৪
 
 
তথ্যসূত্র : https://bn.m.wikipedia.org/wiki/নদিয়া_জেলা

 
©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ।
 

শান্তিপুর (Santipur)

            শান্তিপুর ( ইংরেজি ভাষায় : Santipur) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। শান্তিপুর মূলত তাঁতশিল্প-তন্তুবায়, মেয়েদের রূপচর্চা-কেশবিন্যাস এবং বৈষ্ণবাচার্য অদ্বৈত মহাপ্রভু তথা সংস্কৃত বিদ্বদসমাজের জন্য বিখ্যাত ছিল।

ইতিহাস ও সংস্কৃতি

                       নদীয়ার শান্তিপুর একটি সুপ্রাচীন ও ঐতিহাসিক গঙ্গা (সুরধনী) তীরবর্তী জনপদ। প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন এই জনপদ বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতির পীঠস্থান ও বিখ্যাত তাঁত শিল্পের সূতিকাগার। মহাপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষাগুরু অদ্বৈত আচার্যর সাধনপীঠ শান্তিপুর স্টেশনের নিকটবর্তী বাবলা গ্রামে বলে কেউ কেউ মনে করেন ।যদিও অদ্বৈত মহাপ্রভুর আদি বাড়ি শান্তিপুর শহরের দক্ষিণে গঙ্গা গর্ভে বিলীন বলে গবেষকদের অভিমত।তার প্রকৃত পৈতৃক বাসভূমি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট জেলা তে। চৈতন্যদেব, নিত্যানন্দ মহাপ্রভু ও অদ্বৈতাচার্যের মিলন ঘটেছিল এই শান্তিপুরে। সন্ন্যাস গ্রহণের পর এই শান্তিপুরেই চৈতন্যের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শচীমায়ের। অদ্বৈতাচার্যের বংশেই জন্ম আরেক বৈষ্ণবসাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর। তারও স্মৃতিমন্দির রয়েছে শান্তিপুরে। শান্তিপুরের কাছে হরিপুর গ্রামে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের পৈত্রিক বাসভূমি এবং শান্তিপুর মিউনিসিপাল স্কুলের পাশে কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফুলিয়ায় আদি কবি রামায়ণ রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর কবিগানের একজন বাধনদার সাতু রায় এর বাড়িও শান্তিপুর। এছাড়া শান্তিপুরের রাসযাত্রা জগৎ বিখ্যাত এবং দোলযাত্রা, সূত্রাগড় জগদ্ধাত্রী পূজা, হরিপুরের রামনবমী ও অদ্বৈত প্রভুর জন্মতিথি মাঘি সপ্তমী বা মাকড়ি সপ্তমী, বৈশাখ মাসের শেষে রবিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের গাজী মিয়ার বিয়ে এখানকার উল্লেখযোগ্য উৎসব ও পরব। বড়গোস্বামী বাড়ি সহ বিভিন্ন গোস্বামী বাড়ি ও গোকুলচাঁদের আটচালা মন্দির এবং অদ্বৈত পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত বড় গোস্বামী বাড়িতে হাজার বছরের প্রাচীন কষ্টি পাথরের রাধারমণ বিগ্রহ (শান্তিপুরের বিখ্যাত রাস উৎসব এই রাধারমন বিগ্রহকে কেন্দ্র করেই সূচনা হয়) এবং অদ্বৈত মহাপ্রভু আনীত নেপালের গণ্ডকী নদী থেকে প্রাপ্ত নারায়ণ শিলা এবং শান্তিপুরের একমাত্র চৈতন্যদেবের ষড়ভূজ মূর্তি বর্তমান।

            তন্ত্রসিদ্ধ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের বংশধর শান্তিপুরে দক্ষিণাকালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন; যা একটি দালান-মন্দিরে দেবী আগমেশ্বরী নামে অধিষ্ঠিত। পটেশ্বরীতলায় আছেন দেবী পটেশ্বরী (চার-পাঁচশো বছর আগে তান্ত্রিক সাধকরা রাসপূর্ণিমাতে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে তার উপর বৃহৎ বৃহৎ পটে আঁকা দক্ষিণাকালীমূর্তি 'পটেশ্বরী'র পূজা করতেন; পরে বারোয়ারি পূজা প্রবর্তিত হলে রাসোৎসবে পটেশ্বরী কালীমূর্তির শোভাযাত্রা শুরু হয়)। এছাড়া এখানে মহিষখাগী, শ্যামাচাঁদুনী, ঘাটচাঁদুনী, বিল্বেশ্বরী, সিদ্ধেশ্বরী প্রভৃতি লোকায়ত কালীমূর্তি অধিষ্ঠিতা আছেন।

           মতিগঞ্জ-বেজপাড়ায় অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত নিপুণ হাতের পোড়ামাটির কারুকাজযুক্ত জলেশ্বর শিবমন্দির বিদ্যমান। বউবাজার পাড়ায় আছে দক্ষিণাকালীর পঞ্চরত্ন মন্দির

        শ্যামচাঁদ পাড়ায় ১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের রামগোপাল খাঁ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত কোষ্ঠীপাথরের কৃষ্ণমূর্তি শ্যামচাঁদের আটচালা মন্দির আছে। মন্দিরটি তৈরী করতে সেসময় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।

        এছাড়া, শান্তিপুরে ১৭০৩-০৪ খ্রিষ্টাব্দে (১১১৫ হিজরী) তখনকার স্থানীয় ফৌজদার গাজী মহম্মদ ইয়ার খাঁ নির্মিত 'তোপখানা মসজিদ' বিখ্যাত। এর গম্বুজ ও মিনার এখনো অক্ষত আছে।

        দানবীর বলে খ্যাত শরিয়ৎসাহেব নতুনহাট এলাকায় ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি মসজিদ ও একটি অতিথিশালা নির্মাণ করেন। ডাকঘর-পাড়ায় দুশো বছরেরও প্রাচীন একটি মসজিদ এবং তার পাশে ফকির তোপসেনিয়ার সমাধি আছে।

ভৌগোলিক উপাত্ত

                         শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩°১৫′উত্তর ৮৮°২৬′পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৮.৪৩° পূর্ব। সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১৫ মিটার (৪৯ ফুট)।

জনসংখ্যা
            ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে শান্তিপুর শহরের জনসংখ্যা হল ১৩৮,১৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫১%, এবং নারী ৪৯%। এখানে সাক্ষরতার হার ৬৪%, । পুরুষদের মধ্যেসাক্ষরতার হার ৬৯%, এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৫৮%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে শান্তিপুর এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ১২% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

ধর্মবিশ্বাস

                      শান্তিপুরের প্রায় ৭৯.১৫ % মানুষ হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী। এখানে ইসলামে ২০.২৫ %, খ্রিস্ট ধর্মে ০.০৪ %, শিখধর্মে ০.০২ %, বৌদ্ধ ধর্মে ০.০১ %, জৈন ধর্মে ০.০১ % মানুষ বিশ্বাসী। এছাড়া অন্যান্য ধর্মে ০.৪২ % মানুষ বিশ্বাসী ও বিবৃতি নেই এমন মানুষ ০.১১ %।

যোগাযোগ

                        শান্তিপুর শহর বাস ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে রাজ্য রাজধানী কলকাতা ও জেলা সদর কৃষ্ণনগরে র সাথে যুক্ত। কলকাতা হতে শান্তিপুরের ওপর দিয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অতিক্রম করেছে। রেলপথে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন হতে সরাসরি শান্তিপুর বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত। অতীতে শান্তিপুর - কৃষ্ণনগর - নবদ্বীপ ঘাট ন্যারো গেজ রেলপথ ছিল। অধুনা তা ব্রড গেজে রূপান্তরিত হয়েছে। ভাগীরথী নদী র অপর পাড়ে বর্ধমান জেলা র কালনা ও হুগলী জেলা স্থিত গুপ্তিপাড়া র সাথে শান্তিপুর নৌকা পথে যুক্ত।

@ শান্তিপুর ~

• স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′উত্তর ৮৮°২৬′পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৮.
• দেশ : ভারত
• রাজ্য : পশ্চিমবঙ্গ
• জেলা : নদিয়া
• উচ্চতা : ১৫ মিটার (৪৯ ফুট)
• জনসংখ্যা (২০১১):
• মোট ২,৮৮,৭১৮
• ভাষা:
 • দাপ্তরিক বাংলা , ইংরেজি
• সময় অঞ্চল: ভাঃপ্রঃসঃ ( ইউটিসি+5:30 )
• পিন : ৭৪১৪০৪
• কলিং কোড : ০৩৪৭২
• লোকসভা নির্বাচনী ক্ষেত্র : রাণাঘাট
• বিধানসভা নির্বাচনী ক্ষেত্র : শান্তিপুর



তথ্যসূত্র : https://bn.wikipedia.org/wiki/শান্তিপুর

 
©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ।
 
 

Friday, 23 June 2017

ভারতীয় ভূগোলের পিতৃপুরুষ অধ্যাপক ডঃ শিবপ্রসাদ চ্যাটার্জী

শান্তিপুর তথা ভারতের গর্ব …………

অধ্যাপক ডঃ শিবপ্রসাদ চ্যাটার্জী,
( এম.এস.সি, পি.এইচ.ডি, ডি.লিট ), পদ্মভূষণ
জন্ম : 22 শে ফেব্রুয়ারী 1903
জন্মস্থান : শান্তিপুর
মৃত্যু : 27 শে ফেব্রুয়ারী 1989

• কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলবিভাগের প্রতিষ্ঠাতা
• মেঘালয় রাজ্যের নামকরণ করেন
• তিনি National Atlas and Thematic Maping Organisation গড়ে তোলেন
• Geograpical society of India - এর প্রতিষ্ঠাতা
• ধর্ম অনুযায়ি জনবসতি বিষয়ক Map of Bengal এর রচয়িতা
• কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলের শিক্ষক শিক্ষণ বিভাগে ভূগোল বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেন

          তিনি ছিলেন শান্তিপুরের এক কৃতী ছাত্র | 1926 খ্রীষ্টাব্দে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভূবিদ্যায় এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন |এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য ফ্রান্সের সারবান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 1936 সালে ভূগোলের উপর রিসার্চ করে ডি. লিট উপাধি লাভ করেন | লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম পি. এইচ. ডি. লাভ করেন | তিনি রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও ভূগোল বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন 1928-1932 সাল পর্যন্ত | প্যারিসের ভৌগোলিক সমিতি থেকে তিনি 'গোভি' পদক পান | এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলের অধ্যাপক পদে বৃত হন এবং শিক্ষক শিক্ষণ বিভাগে ভূগোল বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেন | তাঁর প্রচেষ্টায় 1939 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েভূগোল অনার্স এবং 1941 সালে ভূগোলে এম. এ. ক্লাস খোলা হয় | ভূগোলে গবেষণা করে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি পান | ঐ সময় তিনি আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক কংগ্রেসে আমন্ত্রিত হন | দেশ স্বাধীন হলে ভারতের মানচিত্র বিষয়ে একটি কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব উঠলে ভারত সরকার তাঁকে আহ্বান করে | তিনি National Atlas and Thematic Maping Organisation গড়ে তোলেন | এই প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন | প্রতিষ্ঠানটি আজ বিশ্বমানে উন্নীত |

        ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্যের নামকরণও করেছিলেন এই বঙ্গসন্তান - মেঘালয় | ওই অঞ্চলের মালভূমি নিয়ে গবেষণা রয়েছে তাঁর | এছাড়া কাজ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের নদী-মৃত্তিকা, কলকাতা ও 24 পরগনার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, রাঁচির মালভূমি ইত্যাদি বহু বিষয়ে | বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র নিয়েও গবেষণা রয়েছে তাঁর | শিবপ্রসাদের লেখা ' বঙ্গল ইন ম্যাপস' এ রাজ্যের মানচিত্র বোঝার জন্য এখনও বহুল ব্যবহৃত | আন্তর্জাতিক ভূগোল ইউনিয়নের সভাপতিও ছিলেন শিবপ্রসাদ | 1989 সালের 27 শে ফেব্রুয়ারী কলকাতাতে তিনি মারা যান |


তথ্য সূত্র : শান্তিপুর প্রসঙ্গ, দ্বিতীয় খণ্ড : কল্যাণী নাগ ; আনন্দবাজার পত্রিকা, 23 মার্চ, 2012



লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Thursday, 22 June 2017

ভৌগোলিক পরিচয়


******* UNDER CONSTRACTION *******
# প্রধান কয়েকজন ভূগোলবিদদের তালিকা:

• এরাতোস্থেনেস (খ্রীস্টপূর্ব ২৭৬ -
১৯৪ অব্দ) : সর্বপ্রথম "ভূগোল" শব্দটি ব্যবহার
করেন ও পৃথিবীর আয়তন নির্ণয় করেন।
স্ট্রাবো (খ্রিস্টপূর্ব ৬৪/৬৩ - খ্রিস্টীয়
২৪ অব্দ) : ভূগোল বিষয়ক প্রথম
বিশ্বকোষীয় গ্রন্থ "The Geographica" -
এর লেখক।
• টলেমি (খ্রিস্টীয় ৯০ - ১৬৮ অব্দ) :
"Geographia" নামক গ্রন্থে গ্রীক ও
রোমানদের আহরিত জ্ঞানকে সুসঙ্গবদ্ধ
করেন।
• আল-ইদ্রিসি (১১০০ - ১১৬৫/৬৬) : "নুজহাতুল
মুসতাক" গ্রন্থের লেখক।
• জেরারডাস মারকেটর (১৫১২ - ১৫৯৪) :
অন্যতম প্রধান মানচিত্র অঙ্কনবিদ ও "মার্কেটর
অভিক্ষেপ"-এর প্রবর্তক।
• আলেকজান্ডার ফন হুমবোল্ড্ট্ (১৭৬৯ -
১৮৫৯) : আধুনিক ভূগোলের জনক বলে
গন্য করা হয় ও "জীব-ভূগোল"-এর প্রবর্তক।
• কার্ল রিটার (১৭৭৯ – ১৮৫৯) : আধুনিক
ভূগোলের জনক বলে গন্য করা হয় ও
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগের
প্রতিষ্ঠাতা।


তথ্য সূত্র : https://bn.m.wikipedia.org

© Ayan Biswas (GEO HUB)

ভূগোল (Geography)

    

        ভূগোল ( ইংরেজি ভাষায় : Geography, যেটি এসেছে গ্রীক শব্দ “γεωγραφία”, বা, geographia , থেকে; যার শাব্দিক অর্থ: " পৃথিবী সম্পর্কিত বর্ণনা বা আলোচনা " ) হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যেখানে পৃথিবীর ভূমি, এর গঠন বিন্যাস, এর অধিবাসী সম্পর্কিত সমস্ত প্রপঞ্চ সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচিত হয়। এই শব্দটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে গ্রিক জ্ঞানবেত্তা এরাতোস্থেনেস (২৭৬–১৯৪ খ্রিস্টপূর্ব) প্রথম ব্যবহার করেন। ভূগোলে মানুষের বসবাসের জগৎ ও তার সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপঃ ভৌত ভূগোলে জলবায়ু, ভূমি ও জল নিয়ে গবেষণা করা হয়; সাংস্কৃতিক ভূগোলে কৃত্রিম, মনুষ্যনির্মিত ধারণা যেমন দেশ, বসতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহন, দালান, ও ভৌগোলিক পরিবেশের অন্যান্য পরিবর্তিত রূপ আলোচনা করা হয়। ভূগোলবিদেরা তাদের গবেষণায় অর্থনীতি, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব এবং গণিতের সহায়তা নেন। সাধারণতঃ প্রায়শই এটিকে প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানবীয় ভূগোল নামক দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। ভূগোলের চারটি ঐতিহাসিক গবেষণা পদ্ধতি হচ্ছেঃ প্রকৃতি ও মানবজাতি সম্পর্কিত স্থানিক বিশ্লেষণ , স্থান ও অঞ্চল সম্পর্কিত এলাকা পঠন , মানব-ভুমি সম্পর্ক পঠন এবং ভূবিজ্ঞান । ভূগোলকে "পৃথিবী পঠন-বিভাগ" ও "মানুষ এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যকার সেতু-বন্ধন" বলেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।


প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত এরাতোস্থেনেস (২৭৬-১৯৪ খ্রীস্টপূর্ব) পৃথিবীর বর্ণনা অর্থে সর্বপ্রথম এ জিওগ্রাফিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। Geo অর্থ কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থে সৃষ্ট ভূমণ্ডল বা পৃথিবী এবং graphy অর্থ বর্ণনা বা লেখা। বাংলা ভাষায় প্রাচীন হিন্দু পুরাণে ব্যবহৃত ভূগোল শব্দটি ‘জিওগ্রাফি’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে; যদিও ভূগোল শব্দটি ‘জিওগ্রাফি’ শব্দের মর্মার্থ প্রকাশ করে না। এ ছাড়া বর্তমান জিওগ্রাফির সংজ্ঞা অনুসারে ‘ভূগোল শব্দটি দিয়ে জিওগ্রাফি শব্দটিকে ধারণ করা যায় না। বাংলা একাডেমির ইংরেজি-বাংলা অভিধানে (তৃতীয় সংস্করণ, ২০১৫) জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ ‘ভূগোলবিদ্যা’ বা ‘ভূবিজ্ঞান’ করা হয়েছে, ‘ভূগোল’ নয়। এ কারণে বাংলাভাষা সচেতন অনেক ভূগোলবিদ জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ হিসেবে ‘ভূবিদ্যা’ শব্দটির ব্যবহারে অধিক আগ্রহী।


ধারনা:
            মানচিত্রাঙ্কনবিদ এবং বিভিন্ন স্থানের নাম ও সংখ্যা বিষয়ক অধ্যয়নকারীকে ভূগোলবিদদের সাথে মিলিয়ে ফেলা ঠিক নয়; যদিও অনেক ভূগোলবিদ ভূসংস্থান ও মানচিত্রাঙ্কন বিষয়ে অধ্যয়ন করে থাকেন, তবুও প্রকৃতপক্ষে এটা তাঁদের মূল বিচরণক্ষেত্র নয়।

শাখা সমূহ :
            ভূগোলের মূল বিষয়বস্তুকে বর্ণনা এবং বিশ্লেষণের সুবিধার্থে:
1. প্রাকৃতিক ভূগোল এবং
2. মানবীয় ভূগোল - এই দু'টি শাখায় বিভক্ত করা হয়।

1. প্রাকৃতিক ভূগোল :
        প্রাকৃতিক ভূগোল (ভূবিদ্যা) হলো ভূগোলে সেই অংশ যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ ও তাদের গঠন উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। এটি মূলত: অশ্মমন্ডল, বারিমন্ডল, বায়ুমন্ডল, ভূপৃষ্ঠ, এবং বৈশ্বয়িক উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগত (জীবমন্ডল) নিয়ে গঠিত এবং তাদের সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করে থাকে। প্রাকৃতিক ভূগোল অসংখ্য বৃহত্ উপশাখায় বিভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে- জৈবভূগোল, আবহাওয়াবিদ্যা ও জলবায়ুবিদ্যা, উপকূল ভূগোল,গাণিতিক ভূগোল, ভূতত্ত্ববিদ্যা, হিমবাহ বিদ্যা,ভূস্থিত বাস্তুসংস্থান, সমুদ্রবিদ্যা, মৃত্তিকা ভূগোল
প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা

ভূত্বকের উপরিভাগের ভৌত পরিবেশ এবং এতে কার্যরত বিভিন্ন ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ বিজ্ঞানের যে শাখায় সমীক্ষা করা হয়, তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। অধিকাংশ ভূগোলবিদ ভূগোলকে প্রাকৃতিক ও মানবিক নামক দুই শাখায় বিভক্ত করতে আগ্রহী। আবার অনেকে ভূপৃষ্ঠে জীবমণ্ডলের বাস্তুসংস্থানকে উপেক্ষা করা সমীচীন নয় বিধায় ভূগোলকে প্রাকৃতিক, মানবিক ও জীবভূগোল নামক তিন শাখায় বিভক্ত করে থাকেন। বিগত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক ভূগোলের সংজ্ঞা, বিষয়বস্তু এবং পঠনপাঠন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শুরুতে প্রাকৃতিক ভূগোল বলতে কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের (ভূমিবন্ধুরতা, পানি ও বায়ু) অধ্যয়নকে বুঝাতো। যেমন- আর্থার হোমসের (Arther Holmes, 1960) মতে, ‘পৃথিবী পৃষ্ঠের বন্ধুরতা, সাগর-মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের বিষয়াদি যা নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত, তার সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল। কার্ল রিটারের (Carl Ritter, 1779-1859) মতে, ‘প্রাকৃতিক ভূগোল হচ্ছে বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব, বৈচিত্র্য ও সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসেবে বিবেচনা করে।’ হার্টশোর্ন বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের সঠিক, সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা প্রাকৃতিক ভূগোলের কাজ।’

এ দিক থেকে বিবেচনা করলে, প্রাকৃতিক ভূগোল কেবল কতিপয় ভূবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়ের একীভবনই নয়, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের কর্মকাণ্ডের আন্তঃক্রিয়ার ধরনও পর্যালোচনা করে। ভূগোলের একটি প্রতিষ্ঠিত শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে পারিসরিক (spatial) ধরন এবং ভূপৃষ্ঠের পরিবেশের উপাদানগুলোর পারিসরিক সম্পর্ক সমীক্ষা করে। এ ছাড়াও এটি আঞ্চলিক ধরনের সাথে পারিসরিক সম্পর্কের কারণ, একই সাথে পরিবেশের উপাদানগুলোর পরিবর্তনের কারণও ব্যাখ্যা করে থাকে। এ থেকে বলা যায়, ভূমি, বায়ু, পানি এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারণের সহায়ক যে জীবমণ্ডল, তার বিস্তারিত সমীক্ষাই হচ্ছে প্রাকৃতিক ভূগোল।


প্রাকৃতিক ভূগোলের বিকাশ
            প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র বোঝাতে প্রাকৃতিক ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রটি ভূগোল জ্ঞানের পুরো শাখাটির মতোই প্রাচীন। চিরায়ত গ্রিক যুগে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে ভূগোলের উৎপত্তি এবং উনবিংশ শতকের শেষভাগে নৃভূগোল (Anthropogeography) বা মানবিক ভূগোলের উৎপত্তির পূর্ব পযর্ন্ত ভূগোল ছিলো মূলত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান : অবস্থানের সমীক্ষা ও জ্ঞাত পৃথিবীর সকল স্থানের ধারাবাহিক বর্ণনা। 


প্রাচীন ভারতে ভুগোল তথা ভূবিদ্যা-র আলোচনা পাওয়া যায় বেদ ও প্রাচীন পুরাণে। বেদ-এর লিখিত-রচনা কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের দ্বিতীয় ভাগ। অথর্ববেদ-এ প্রাচীন পুরাণ-এর উৎস সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। বিদ্বজ্জনদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ - ১০০০ অব্দে অথর্ববেদ এর স্তোত্র গুলি রচিত হয়েছিল। প্রাচীন পুরাণের রচয়িতাগণ পৃথিবীকে সাতটি মহাদেশীয় দ্বীপে ভাগ করেছিলেন - জম্বু দ্বীপ, ক্রৌঞ্চ দ্বীপ, কুশ দ্বীপ, প্লক্ষ দ্বীপ, পুষ্কর দ্বীপ, শক দ্বীপ ও শাল্মলী দ্বীপ ও সেই সব দ্বীপের জলবায়ু আর ভূ-প্রকৃতির বিবরণ দিয়েছিলেন। বরাহমিহির পৃথিবীতে জল-এর সৃষ্টি, মেঘ ও বৃষ্টিপাত, মহাজাগতিক গ্রহ সম্পর্কিত বস্তু সমূহের অবস্থান আর সঞ্চারণ পথ সম্পর্কে লিখেছিলেন। প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট সেই সময়ে পৃথিবীর পরিধি ২৪৮৩৫ মাইল গণনা করেছিলেন যা প্রকৃত পরিধি থেকে ০.২ % কম ছিল। 
 
 
প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্রসমূহ
             পৃথিবী সম্পর্কে তথ্য আহরণের মধ্যদিয়ে ভৌগোলিক জ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিলো। বর্তমান যুগে মানুষের জ্ঞানের পরিধি এতো ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে যে, কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে সমস্ত ভৌগোলিক জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব নয়। ফলে দেখা দিয়েছে বিশেষায়নের ঝোঁক। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের মতো প্রাকৃতিক জগতের বিষয়ে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আজকের দিনে বিরল। অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ভৌগোলিক জ্ঞানের সন্ধানে উত্তরোত্তর জটিল-কঠিন পদ্ধতি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশেষায়ন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞানে বিশেষায়নের প্রয়োজন আছে। প্রথমে সামগ্রিক জ্ঞানকে কতকগুলো বিষয়ে খণ্ড করা হয়, আবার প্রতিটি বিষয়কে কতিপয় বিশেষীকরণে ভাগ করা হয়। এভাবেই বিজ্ঞানের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। বিগত শতকে প্রাকৃতিক ভূগোলের বিভিন্ন বিষয় একটি গুচ্ছ হিসেবে বিকশিত হয়েছে (ব্লিজ-১৯৯৩)।

১. ভূরূপবিজ্ঞান (Geomorphology) : ভূদৃশ্যের ভূগোল ‘ভূরূপবিজ্ঞান’ বা ভূমিরূপবিজ্ঞান প্রাকৃতিক ভূগোলের সর্বাপেক্ষা উৎপাদনশীল একটি ক্ষেত্র। মূল ইংরেজি পরিভাষাটি চয়ন করেন জার্মান ভূতত্ত্ববিদ আলবার্ট প্যাঙ্ক (Albert Penck)। গ্রিক তিনটি শব্দ Geo অর্থ পৃথিবী, morph অর্থ গঠন বা আকার এবং logos অর্থ বর্ণনা দিয়ে ভূপৃষ্ঠের গঠনকাঠামো সম্পর্কিত আলোচনার ক্ষেত্রকে বোঝানো হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের অবয়বসমূহের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকৃতি এবং এগুলোর উদ্ভবের পশ্চাতে ক্রিয়াশীল কার্যকারণ প্রভৃতির বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনাই হচ্ছে ভূরূপবিজ্ঞান। ভূরূপবিজ্ঞান হচ্ছে ভূগোলের সেই শাখা, যাতে অভ্যন্তরীণ অবস্থাসহ পৃথিবীর উপরিভাগের ভূদৃশ্য পরিবর্তনকারী প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করে।

ভূরূপবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু মূলত (১) ভূমির বন্ধুরতা বা ভূগঠনের দিক এবং স্কেল, (২) পদ্ধতি- যা ভূপৃষ্ঠের আকৃতি প্রদান করে, এবং (৩) যে দৃষ্টিভঙ্গিতে ভূমিরূপ পর্যালোচনা করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে (আলম, ২০১৪)।

২. জলবায়ুবিজ্ঞান (Climatology) : আবহবিদ্যা ও প্রাকৃতিক ভূগোল যৌথভাবে জলবায়ু ও তার বিস্তৃতি আলোচনার জন্য জলবায়ুবিজ্ঞান গঠন করেছে। জলবায়ুবিজ্ঞান কেবলমাত্র জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগ বা বিস্তৃতিই পর্যালোচনা করে না, বৃহত্তরভাবে এটি মানব সমাজের সাথে জলবায়ুর সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন, উদ্ভিজ্জের ধরন, মৃত্তিকা গঠনসহ পরিবেশের বিভিন্ন প্রশ্ন ও অন্তর্ভুক্ত করে। পৃথিবীকে বেষ্টনকারী বায়ুমণ্ডলের উপাদন এবং এদের বৈশিষ্ট্যের বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনাই হচ্ছে আবহবিদ্যা ও জলবায়ুবিজ্ঞান। নির্দিষ্ট সময়ে কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর সমষ্টিগত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। অপরদিকে, কোনো স্থানের আবহাওয়ার দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা পর্যালোচনা করলে যে সাধারণ অবস্থা দেখা যায়, তাকে জলবায়ু বলে। জলবায়ুবিজ্ঞানের তিনটি শাখা রয়েছে। এগুলো হলো : (১) প্রাকৃতিক জলবায়ুবিজ্ঞান, (২) আঞ্চলিক জলবায়ুবিজ্ঞান ও (৩) ফলিত জলবায়ুবিজ্ঞান।

৩. জীবভূগোল (Biogeography) : জীববিজ্ঞানের দিক থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান, বাস্তুবিদ্যা ও প্রাণিবিজ্ঞান- এ তিনটি উপক্ষেত্র প্রাকৃতিক ভূগোলের সাথে সম্পর্কিত। যখন জীববিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক ভূগোল উপরিস্থাপিত (overlap) হয়, তখন বৃহৎ উপক্ষেত্র জীবভূগোলের সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেখানে জীবভূগোল নিজেই বিশেষায়িত। প্রাকৃতিক ভূগোল উদ্ভিদবিদ্যার সমন্বয়ে উদ্ভিদভূগোল গঠন করে এবং প্রাণিবিদ্যার সাথে সমন্বয়ে প্রাণিভূগোল উপক্ষেত্রের সৃষ্টি করে। স্মর্তব্য যে, জীবভূগোল নিজেই বাস্তুবিদ্যার সংযোজক, যা এই উপক্ষেত্র দুটির মধ্যে অবস্থান করে; বাস্তবে প্রাণিভূগোল ও উদ্ভিদ ভূগোল উভয়েই জীবভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের পর্যালোচনাই হচ্ছে জীবভূগোল, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৃত্তিকা, প্রাণী ও উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জীবভূগোল শব্দটি দ্বারা জীববিজ্ঞান ও ভূবিদ্যা উভয়কে একত্রে নির্দেশ করে। অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও বারিমণ্ডলে জীবের বসবাসের উপযোগী অংশ যা জীবমণ্ডল নামে পরিচিত- এর আলোচনার ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। জীবমণ্ডলের জৈব বিষয়গুলো উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, প্রাণ-রসায়ন প্রভৃতি শাখায় পর্যালোচনা করা হলেও জ্ঞানের পৃথক শাখা হিসেবে ভূগোল এর অর্থ ও বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করে থাকে।

৪. মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography) : প্রাকৃতিক ভূগোলের উপক্ষেত্র মৃত্তিকা ভূগোলের সম্পর্ক রয়েছে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের (Soil Science) বা পেডোলজির (Pedology) সাথে। পেডোলজিস্টরা মৃত্তিকার অভ্যন্তরীণ গুণাবলি এবং মৃত্তিকার গঠন প্রক্রিয়ার ওপর আলোকপাত করে থাকেন। মৃত্তিকা ভূগোলে মৃত্তিকার পারিসরিক ধরন, বিস্তৃতি এবং জলবায়ু, উদ্ভিজ্জ ও মানুষের সাথে সম্পর্কের বিষয় আলোচনা করা হয়।

৫. সমুদ্র ভূগোল (Marine Geography) : সমুদ্র ভূগোল সমুদ্রবিজ্ঞানের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। প্রকৃতপক্ষে, এটি গঠনে সহায়তাকারী অন্যতম উপাদান যেমন মানবীয়, তেমনি প্রাকৃতিক। যে শাস্ত্রে বারিমণ্ডলের সমীক্ষা করা হয়, তাকে সমুদ্রবিজ্ঞান বলে। এটি বারিমণ্ডলের প্রাকৃতিক ও জৈবিক বিষয়গুলো বর্ণনা করে। সমুদ্রবিজ্ঞান অনেকগুলো উপক্ষেত্রে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র ভূতত্ত্ব, সমুদ্র ভূরূপবিজ্ঞান, প্রাকৃতিক সমুদ্রবিদ্যা, সমুদ্রের জলের রসায়ন, জৈব সমুদ্রবিদ্যা ইত্যাদি (আলম, ২০১৪)।
 
প্রাকৃতিক ভূগোলের উদ্দেশ্য

                    বায়ু, জল, জীব, মৃত্তিকা এবং ভূগঠন প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার প্রধাণ উদ্দেশ্য এবং মানুষ কর্তৃক ভূপৃষ্ঠে এসবের ব্যবহার সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়। আবার পৃথিবীকে মানুষের সর্বোত্তম ব্যবহারের স্বার্থে বিজ্ঞানীগণ আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন। প্রাকৃতিক ভূগোল আলোচনার উদ্দেশ্যকে তাদের মাত্রা (dimension) এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভাগ করা যায়।

আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বসবাস ও হাঁটাচলা করি, প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠ বলতে তারও থেকে বেশি কিছু বোঝায়। ভূপৃষ্ঠ কেবল একটি আয়তন (volume) নয়, বরং এর সাথে মানুষের সম্পর্ক ও অনুভবের দ্বারা একে চিহ্নিত করতে হবে।

এ আয়তনের কেন্দ্রে রয়েছে ভূপৃষ্ঠ, যেখানে আমরা বসবাস করি। এরসাথে ভূপৃষ্ঠের ঠিক নিচে ভূত্বকের একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভূমিরূপ ভূত্বকের পৃষ্ঠকে সজ্জিত করেছে, যা মূলত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির কর্মকাণ্ডের ফলাফল। ভূপৃষ্ঠের উপরের বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত, যা প্রাকৃতিক ভূগোলে আলোচনা করা হয়। বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া ও অবস্থা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন আবহাওয়া ও জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে ভূপৃষ্ঠের উপর ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, ভূত্বকের নিচের কিছু অংশ, জল ও স্থলভাগসহ সমগ্র ভূপুৃষ্ঠ এবং এর উপরের প্রায় ২০ কিমি ব্যাপী বায়ুমণ্ডল এ আয়তনের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে প্রাকৃতিক ভূগোলে স্থলভাগ বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হয়। কারণ এটি হাতের কাছে এবং মানুষের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যাহোক, খাদ্য, খনিজ, জ্বালানি ইত্যাদির প্রধাণ উৎস এবং ভূপৃষ্ঠে পরিবহনের প্রধাণ মাধ্যম হিসেবে মহাসাগরগুলো ক্রমবর্ধমানহারে মনোযোগ আকর্ষণ করছে।  

অশ্মমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল ও জীবমণ্ডলের প্রতিটি পদার্থ কিছুসংখ্যক উপাদান দ্বারা গঠিত। যেমন- বায়ুমণ্ডলকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয়। শিলা, ভূমিরূপ, মৃত্তিকা ইত্যাদি অশ্মমণ্ডলের উপাদান। নদী, হ্রদ, হিমবাহ, বরফাবরণ, মহাসাগর ইত্যাদি বারিমণ্ডলের অংশ এবং উদ্ভিজ্জ ও প্রণী জীবমণ্ডলের অংশ (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭)।১০ প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন উপাদানের সন্বেয়ে প্রাকৃতিক ভূগোলের অনেক প্রপঞ্চ (phenomenon / ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গঠিত হয়।

প্রাকৃতিক ভূগোলে এরসব উপাদানগুলোর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা পৃথিবীর বর্ণনা করা যায়। এগুলো সময়ে বা একস্থান থেকে অন্যস্থানে প্রায়শ পরিবর্তিত হয়ে থাকে। যেমন- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বর্ষণ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ হচ্ছে বায়ুমণ্ডীয় চলরাশি বা সূচক, যা কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ও সময়ের আবহাওয়া অবস্থা প্রকাশ করে। এদের প্রকৃতি এবং দীর্ঘ সময়কালে এগুলোর পরিবর্তন জলবায়ুর অবস্থা বর্ণনা করে। তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ ইত্যাদির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায়। এসব চলরাশি বা সূচক ভৌগোলিক পার্থক্য প্রদর্শন করে, একই সাথে এর দ্বারা জলবায়ু অঞ্চল নির্ধারণ করা যায় (আলম, ২০১৪)।

যখন একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন অপর একটি চলরাশি বা সূচকের পরিবর্তন ঘটায়, তখন উপাদানগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটে।চলরাশি বা সূচক গুলো কীভাবে একে অপরের ওপর প্রভাববিস্তার করে তা জানা থাকলে প্রপঞ্চ (ক্রিয়া-প্রক্রিয়া) গুলোর পরিবর্তন ও ভৌগোলিক ব্যাখ্যা করা যায়।

এরূপ মিথস্ক্রিয়া সাধারণত অনেক বেশি জটিল হয়ে থাকে। বাস্তবে অসংখ্য চলরাশি বা সূচক একসাথে মিথস্ক্রিয়া করে। সিস্টেমগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সম্পর্কগুলোকে মডেলরূপে তৈরি করার প্রয়াস চালানো হয়। প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধাণ উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূপৃষ্ঠ বা আয়তনকে বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, অশ্মমণ্ডল, জীবমণ্ডল এবং মানুষের পারস্পরিক মিথস্কিয়াকে একটি পদ্ধতি (system) হিসেবে উপস্থাপন করা (জেমস, এস. গার্ডনার, ১৯৭৭).
 
প্রাকৃতিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি
              
                    প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এতে অশ্মমণ্ডল, বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও জীবমণ্ডল- এ চারটি মণ্ডলের উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে ও গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করা হয়।

উল্লেখিত চারটি উপাদান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা লাভের জন্য পৃথিবীর উৎপত্তি, বয়স, ভূঅভ্যন্তরের গঠন এবং সমুদ্রের পর্যঙ্ক প্রভৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ সমীক্ষা করা হয়। ভূআলোড়নের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃজ শক্তির অধ্যয়ন, উভয়বিধ শক্তির মিথস্ক্রিয়া এবং এদের ফলাফল সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ শক্তি ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের উঁচুনিচু ভূমিরূপের সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, বায়ুমণ্ডল থেকে সৃষ্ট বহিঃজ শক্তি ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলোকে সমুদ্র সমতলে নামিয়ে আনার কাজে সবসময় ব্যস্ত থাকে।

প্রাকৃতিক ভূগোলে ভূপৃষ্ঠের পর্বতমালা, ভাঁজ, চ্যুতি প্রভৃতি বন্ধুর ভূপ্রকৃতির উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য এবং বিস্তৃতি বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, এদের বিস্তৃতি এবং অগ্ন্যুঃপাতের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ ও বিপর্যয়, যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর প্রভাববিস্তার করে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। বহিঃজ শক্তির দ্বারা (বিচূর্ণীভবন, ক্ষয়ীভবন, নগ্নীভবন) সৃষ্ট ভূপৃষ্ঠের অবয়বগুলোর পর্যালোচনা থেকে ভূমিরূপ পদ্ধতি এবং এর কাজের ধরন (প্রবহমান জলরাশি, ভূগর্ভস্থ জল, সমুদ্র ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদি দ্বারা ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজ) সম্পর্কে জানা যায় (আলম, ২০১৪)।

বারিমণ্ডলের বৈশিষ্ট্যগুলোর পর্যালোচনায় সমুদ্র তলের বন্ধুরতা, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, সমুদ্রের সঞ্চয়, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্র স্রোত, প্রবাল প্রাচীর, এটল ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলোর পর্যালোচনায় বায়ুমণ্ডলের সংমিশ্রণ, গঠন, উপাদান, জলবায়ু ও আবহাওয়ার নিয়ামক, সৌরতাপ, সৌর বিচ্ছুরণ, তাপসমতা, ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বর্ষণ, বায়ুভর, বায়ুপুঞ্জ, ঘূর্ণিঝড়, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, মৃত্তিকা ক্ষয় ও সঞ্চয়ন, পরিবেশ দূষণ, দুর্যোগ ও বিপর্যয় ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ধারাবাহিক পর্যালোচনা একই সাথে মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের আন্তঃক্রিয়ার সম্পর্ক প্রাকৃতিক ভূগোলের সমীক্ষার বিষয়। নিম্নলিখিত কারণে প্রাকৃতিক ভূগোলের পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুতে প্রধাণ পরিবর্তনগুলো সূচিত হয়ে থাকে :

১.  প্রাকৃতিক ভূগোল মানুষের কল্যাণে অধিকতর অর্থবহ ও প্রায়োগিক এবং মানবীয় ভূগোলের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। জ্ঞানের শাখা হিসেবে প্রাকৃতিক ভূগোল সংবদ্ধ এবং সমাজের সাথে অধিকতর সম্পর্কিত করার ইচ্ছা সর্বজনীন।

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের প্রতি মানুষের অধিকতর মনোযোগ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের বৈরী আচরণের ফলে পরিবেশগত ভরেসাম্য বিনষ্ঠ এবং প্রতিকারের উপায় অনুসন্ধান।

৩. বহিরাঙ্গন ও গবেষণাগারে যান্ত্রিকায়ন ও বিভিন্ন ভূমিরূপ পদ্ধতি পরিমাপের ক্রিয়াপদ্ধতি এবং উপাত্তসমূহের গাণিতিক বিশ্লেষণের প্রতি অধিকতর গুরুত্বারোপ।

৪. কতিপয় বিশেষ অবয়ব, যেমন- বাস্তুপদ্ধতি এবং বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও অস্থিতিশীলতা, জলবিজ্ঞান, প্লেট টেকটোনিক্স ইত্যাদির প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেওয়া।

৫. সাম্প্রতিক সময়ে ম্যাক্রো-টেম্পোরাল (macro-temporal) স্কেলের পরিবর্তে মাইক্রো-টেম্পোরাল (micro-temporal) স্কেল এবং বৃহৎ ম্যাক্রো-স্পেশিয়াল (macro-spatial) স্কেলের পরিবর্তে ক্ষুদ্র মাইক্রো-স্পেশিয়াল (micro-spatial) স্কেল; ভূমিরূপ ও পারিবেশিক (environmental) পদ্ধতির সমীক্ষায় সমাজের সাথে অধিক সম্পর্কযুক্ত পারিবেশিক সমস্যাসমূহ সমাধনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে (আলম, ২০১৪)।
 
 

প্রাকৃতিক ভূগোল অসংখ্য বৃহত্ উপশাখায় বিভক্ত, যাদের মধ্যে রয়েছে:

Línea de Wallace.jpg Cyclone Catarina from the ISS on March 26 2004.JPG 90 mile beach.jpg Gavin Power Plant.jpg
জীবভূগোল আবহাওয়াবিদ্যা ও জলবায়ুবিদ্যা উপকূলীয় ভূগোল পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা
Meridian convergence and spehrical excess.png Delicate Arch LaSalle.jpg Receding glacier-en.svg Meander-bn.svg
গাণিতিক ভূগোল ভূতত্ত্ববিদ্যা হিমবাহবিদ্যা জলবিদ্যা ও জলবিজ্ঞান
Khajuraho-landscape.jpg World11.jpg Soil profile.jpg Pangea animation 03.gif
ভূস্থিত বাস্তুসংস্থান সমুদ্রবিদ্যা মৃত্তিকাবিদ্যা প্রত্নভূগোল
Milankovitch Variations sv.png
কোয়াটার্নারি বিজ্ঞান
 
 
2. মানবীয় ভূগোল:
           

                মানবীয় ভূগোল হল ভূগোলের এমন একটি শাখা যা মানব সমাজের আকৃতিগত পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে। এতে মানুষ, তার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং আর্থনৈতিক দিক নিয়ে পর্যালোচনাভূক্ত। মানবিক ভূগোলে পৃথিবীপৃষ্ঠে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা, স্থানিক পার্থক্য এবং এই পার্থক্যের পেছনে প্রাকৃতিক প্রভাবকের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়।

মানবীয় ভূগোলকে অনেকগুলো বিস্তৃত ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:সাংস্কৃতিক ভূগোল, উন্নয়ন ভূগোল, অর্থনৈতিক ভূগোল, ঐতিহাসিক ভূগোল ও কালীক ভূগোল, রাজনৈতিক ভূগোল ও ভৌগোলিকবিদ্যা,জনসংখ্যা ভূগোল, জনবসতি ভূগোল, সামাজিক ভূগোল, পরিবহন ভূগোল, পর্যটন ভূগোল কালে কালে মানবীয় ভূগোল গবেষণা করার বিভিন্ন পন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে এবং এর অন্তর্ভুক্ত পদ্ধতিগুলো হচ্ছে: আচরণিক ভূগোল, নারীবাদী ভূগোল, সংস্কৃতি তত্ত্ব, ভূজ্ঞান



মানবীয় ভূগোলকে অনেকগুলো বিস্তৃত ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন:

Qichwa conchucos 01.jpg Pepsi in India.jpg Christaller model 1.jpg Star of life.svg
সাংস্কৃতিক ভূগোল উন্নয়ন ভূগোল অর্থনৈতিক ভূগোল স্বাস্থ্য ভূগোল
British Empire 1897.jpg UN General Assembly.jpg Pyramide Comores.PNG ReligionSymbol.svg
ঐতিহাসিক ভূগোল ও কালীক ভূগোল রাজনৈতিক ভূগোল ও ভৌগোলিকবিদ্যা জনসংখ্যা ভূগোল বা জনমিতি ধর্ম ভূগোল
US-hoosier-family.jpg RERParisVision2025.png Shahbazpur Meghna Tourist Spot, Tulatuli, Bhola (26).jpg New-York-Jan2005.jpg
সামাজিক ভূগোলপরিবহন ভূগোলপর্যটন ভূগোলনগর ভূগোল



তথ্যসূত্র: https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ভূগোল

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ।