Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Saturday, 14 September 2019

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ও শিক্ষক দিবস




            শিক্ষক আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষক ছাড়া যোগ্য সমাজ ও উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত। প্রতি বছর ৫ই সেপটেম্বর আমরা শিক্ষক দিবস পালন করি এবং আজকের দিনেই ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

        ১৯৬২-এ প্রথম বার ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়েছিল। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের দূত ছিলেন, কিন্তু সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক এবং দার্শনিক।

        বর্তমান তামিলনাড়ু এবং তৎকালীন মাদ্রাজ প্রদেশের তিরুতান্নিতে এক গরিব ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৮৮৮-এর ৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ [ ৫ সেপ্টেম্বর,১৮৮৮ - 17ই এপ্রিল 1975 ]। ছেলে পূজারি হোক, এমনটাই চাইতেন তাঁর বাবা। বাবা কখনোই চাননি ছেলে ইংরেজি পড়ুক। কিন্তু রাধাকৃষ্ণনের জেদে পরাজিত হন তাঁর বাবা। তিরুপতির একটি স্কুলে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এই শান্ত মানুষটি ছাত্রজীবনে অতি মেধাবী ছিলেন। জীবনে কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি। বিভিন্ন বৃত্তির মাধ্যমে তার ছাত্র জীবন এগিয়ে চলে।

        মেধাবী ছাত্র হওয়ার ফলে, স্কুল জীবনে অসংখ্য স্কলারশিপ পেয়েছেন রাধাকৃষ্ণণ । প্রথমে ভেলোরের ভুরহি কলেজে ভর্তি হলেও, পরে মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজে ভর্তি হন তিনি। তাঁর বিষয় ছিল দর্শন। কিন্তু দর্শন তাঁর প্রথম পছন্দের বিষয় ছিল না। বই কেনার টাকা ছিল না রাধাকৃষ্ণণের। কিন্তু সেই সময়েই একই কলেজ থেকে দর্শন নিয়ে স্নাতক হন তাঁর এক দাদা। দাদার বইয়ের জন্যই দর্শনকে বেছে নেন তিনি বিষয় হিসেবে।

        ১৯০৫ সালে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা’(The Ethics of the Vedanta and its Metaphysical Presuppositions) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি "বেদান্ত দর্শনের বিমুর্ত পূর্বকল্পনা " (The Ethics of the Vedanta and its metaphysical Presuppositions) বিষয়ে একটি গবেষণা মূলক প্রবন্ধ লেখেন। তিনি ভেবেছিলেন তার  গবেষণামূলক প্রবন্ধ দর্শনের অধ্যাপক বাতিল করে দেবেন। কিন্তু অধ্যাপক অ্যালফ্রেড জর্জ হগ তার প্রবন্ধ পড়ে খুবই খুশি হন। এই প্রবন্ধ যখন ছাপানো হয় তখন রাধাকৃষ্ণাণ এর বয়স ২০ বছর।
প্রথম জীবনে তিনি মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেন (১৯১৮)। এসময় তিনি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পত্রিকায় লিখতেন। সে সময়েই তিনি লেখেন তার প্রথম গ্রন্থ ‘The Philosophy of Rabindranath Tagore’। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘The Reign of Religion in Contemporary Philosophy’প্রকাশিত হয় ১৯২০সালে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বারবার অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন। অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি।
          
           ছাত্রছাত্রীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন রাধাকৃষ্ণণ । মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার উদ্দেশে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিচ্ছেন অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণন, তখন তাঁর পড়ুয়ারা, ফুলসজ্জিত গাড়ির ব্যবস্থা করে, তাঁকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল।

            বিশ্বের দরবারে তিনি অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৩১ সালে তাকে British knighthood-এ সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৪ সালে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন' দেওয়া হয়। ২৭ বার নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১৬ বার সাহিত্য ও ১১ বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য।

            মাত্র ১৬ বয়সে,  তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়া শিবাকামুকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৫৬য় তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়।

            তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি (১৯৫২-১৯৬২) হন। ১৯৫৭-য় রাষ্ট্রপতি হিসেবে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের কার্যকাল শেষ হওয়ার পর, রাধাকৃষ্ণনকেই রাষ্ট্রপতি করতে চেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কিন্তু মৌলানা আজাদের তীব্র বিরোধিতায় সেটা হয়নি। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ আরও পাঁচ বছর থাকেন। ১৯৬২-তে নেহরুর সক্রিয়তায় ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হন রাধাকৃষ্ণন (১৯৬২-৬৭) । কিন্তু তার আগে, অর্থাৎ ১৯৪৬-এ ইউনেস্কোর দূত হয়েছিলেন তিনি। এর পর সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের দূতও ছিলেন তিনি।

            শিক্ষাজগতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভারতে একজন দার্শনিকের কাজ অতীতকে ছুঁয়ে ভবিষ্যৎ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর শিক্ষকতায় মুগ্ধ ছিল। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর পড়ুয়াদের দাবি ছিল তাঁর জন্মদিনটা যেন বিশেষ ভাবে উদযাপন করা হয়। রাধাকৃষ্ণন বলেছিলেন, “জন্মদিন উদযাপন না করে সেই দিনটা যদি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়, তা হলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবে।” সেই থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের শিক্ষক দিবস।



            ১৯৭৫-এর ১৭ এপ্রিল পরলোকের উদ্দেশে যাত্রা করেন রাধাকৃষ্ণন। তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬২ সালে ছাত্রদের অনুরোধে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রথম শিক্ষক দিবস অনুষ্ঠান পালন করার অনুপ্রেরণা দেন। তিনি ছিলেন একজন বিদ্বান ব্যক্তি ও উপদেষ্টা। ভারতবর্ষের সকল বিদ্যার্থী তাকে সম্মান জানানোর জন্য আজকের দিনে শিক্ষক দিবস পালন করে থাকে।


তথ্যসূত্র :
1) https://bn.m.wikipedia.org/wiki/সর্বপল্লী_রাধাকৃষ্ণণ
2) https://www.google.com/amp/s/www.khaboronline.com/news/national/ten-facts-about-dr-sarvapalli-radhakrishnan/%3famp
3) www.google.com


লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments:

Post a Comment