Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Saturday, 22 August 2020

'ভারতের রূঢ়’ - দুর্গাপুর

                     দুর্গাপুর (প্রকারান্তরে দূর্গাপুর), ভারতের  পশ্চিমবঙ্গ  রাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান  জেলার একটি শহর ও পৌর কর্পোরেশনাধীন এলাকা। এটি পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থ বৃহৎ মহানগর বা নগরাঞ্চল। ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মানসপুত্র বলে পরিচিত এই শহর বিশ্বখ্যাত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানাটির  জন্য। 


                দুর্গাপুর রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত। শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩.৪৮° উত্তর ৮৭.৩২° পূর্ব । সমূদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৬৫ মিটার (২১৩ ফুট)।শহরটি দামোদর ও অজয় নদের অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থিত। দুর্গাপুরের দক্ষিণ সীমান্তে একদা বাংলার দুঃখ বলে পরিচিত দামোদর ও উত্তর সীমান্তে অজয় নদ প্রবাহমান। দুর্গাপুর শহরাঞ্চলের ভৌগোলিক আয়তন ১২৭.১ বর্গ কিঃমিঃ। পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর (পূর্বে পানাগড় থেকে পশ্চিমে অন্ডাল পর্যন্ত) শহরের বিস্তৃতি প্রায় ৪০ কিঃমিঃ। উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর (উত্তরে শিবপুর-অজয়ঘাট থেকে দক্ষিণে ন'ডিহা পর্যন্ত) শহরের বিস্তৃতি প্রায় ২২ কিঃমিঃ। ভৌগলিক বিস্তৃতি ও আয়তনের বিচারে দুর্গাপুর শহরাঞ্চল হল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় ও পূর্বোত্তর ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম শহরাঞ্চল।

                দুর্গাপুরের পানাগড় থেকে ক্রমশ পূর্বমুখে, ১৯ নং জাতীয় সড়ক (পুরাতন ২) ধরে বর্ধমান অভিমুখে যাত্রা করলে গাঙ্গেয় বাংলার উর্বর সমভূমি অঞ্চল পরবে যা গঙ্গা ও তার শাখানদী দ্বারা বয়ে আনা পলিমাটি দ্বারা পরিবেষ্টিত। অন্যদিকে, পশ্চিমদিকটি ছোটোনাগপুর মালভূমির পাদদেশ সন্নিবেষ্ট অঞ্চল যেখানকার মাটি তুলনামূলক ভাবে অনুর্বর, রুক্ষ, অসম ও তার রঙ হল লাল। গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলটি বহুফসলি এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধান-উৎপাদনকারী অঞ্চল। পশ্চিমের মাটি তুলনামূলক ভাবে অনুর্বর হওয়ায়ে, অঞ্চলটি মূলতঃ একফসলি। সম্ভবতঃ এই কারণেই, এই অঞ্চলটি শিল্পপ্রধান অঞ্চল। এই শিল্পাঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহত্তম শিল্পাঞ্চল। লৌহ ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে অধিকাঅংশ ইস্পাত কারখানা দুর্গাপুরে গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ইস্পাত শিল্পের উন্নতি ঘটানোর জন্য একটি ব্রিটিশ কোম্পানির সাহায্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দামোদর নদের তীরে দুর্গাপুরে ইস্পাত কারখানাটি [DSP]  প্রতিষ্ঠা করা হয় ।


                দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রিভবন এর অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান গুলি হল :- (১) রানিগঞ্জ, ঝরিয়ার, বোকারো, আসানসোল ও গিরিডির কয়লা  (২) সিংভূম, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, নোয়ামুণ্ডি, দুর্গ ও বাইলাডিলার উচ্চমানের  লৌহ আকরিক (৩) বীরমিত্রপুর, বোনাই, গাঅংপুর, বালাঘাট ও জব্বলপুরের চুনাপাথর, ডলোমাইট,  ম্যাঙ্গানীজ, নিকেল (৪) দামোদর, সুবর্ণরেখা, বরাকর, মহানদী, ব্রাহ্মণী নদীর জল  (৫) স্থানীয় দক্ষ শ্রমিক,  (৬) তিলাইয়া, মাইথন, পাঞ্চেত ও হীরাকুদের  জলবিদ্যুৎ এবং বোকারো, চন্দ্রপুরা ও দুর্গাপুরের তাপবিদ্যুৎ (৭) রেলপথ, সড়কপথ ও কলকাতা বন্দরের নৈকট্য (৮) দুর্গাপুর, হলদিয়া, আসানসোল, ঝরিয়া, জামশেদপুরে ইস্পাতের ব্যাপক চাহিদা (৯) সরকার, বিভিন্ন কোম্পানি, সরকারি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও বীমা কোম্পানির মূলধন বিনিয়োগ এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্র স্থাপনে সাহায্য করেছে। সেকারণে দুর্গাপুরে ইস্পাত ও সংকর ইস্পাত শিল্পের পাশাপাশি অসংখ্য মিনি স্টিল প্ল্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমেন্ট ও সার শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে।


                জার্মানির রূঢ়ের মত ভারতের দুর্গাপুর রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত। রূঢ় শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে -
১) অবস্থান: ইউরোপে জার্মানির রাইন নদী ও তার দুই উপনদী রূঢ় ও লিপের সংযোগস্থলে রূঢ় শিল্পাঞ্চলের মত ভারতের দামোদর নদের তীরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে।
২) শিল্প: রূঢ় অঞ্চলের লোহা ও ইস্পাত,ইঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক শিল্প কেন্দ্রের মত দুর্গাপুরে ইস্পাত ও সংকর ইস্পাত শিল্প এবং অসংখ্য মিনি স্টিল প্ল্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমেন্ট ও সার শিল্প গড়ে উঠেছে।
৩) কয়লা: রূঢ় অঞ্চলের রাইন উপত্যকার উন্নত বিটুমিনাস কয়লার মত দুর্গাপুরে, দামোদর উপত্যকার উৎকৃষ্ট গন্ডায়ানা কয়লার  ভিত্তিতে শিল্পাঞ্চল দুটির উন্নতি ঘটে।
৪) পরিবহণ: পরিবহনের দোলক নীতি অনুসারে রাইন উপত্যকার কয়লা ভর্তি রেল ফিরতি পথে ফ্রান্সের লোরেন অঞ্চলের আকরিক লোহা আমদানি করে। একইভাবে দামোদর উপত্যকার রানিগঞ্জ ও ঝরিযারা কয়লা বোঝায় রেল ফিরতি পথে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ ও কেওনঝড়ের লোহা বহন করে আনে।
৫) জল: রূঢ়, রাইন নদীর পর্যাপ্ত মৃদু জলের মত দামোদর নদের জল দুর্গাপুর ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

                উক্ত সাদৃশ্যের কারণেই জার্মানির রূঢ় (Rhur) শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে দুর্গাপুরকে ‘ভারতের রূঢ়’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে।


তথ্যসূত্র :

1. bengalstudents.com, 
2. https://wikipedia.org
3. আনন্দবাজার পত্রিকা, 
4. অর্থনৈতিক ভূগোল ও সম্পদ শাস্ত্রের পরিচয় - অনিশ চট্টোপাধ্যায়, 
5. উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল - অসিতেন্দু রায়চৌধুরী ও শঙ্কর হাজরা, 
6. উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল - সমরেন্দ্রনাথ মোদক।


লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments:

Post a Comment