Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Saturday, 22 August 2020

মরুভূমির গোলাপ (Desart Rose)

                 জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী স্ট্রিংয়ের ‘ডেজার্ট রোজ’ গানটি হয়তো অনেকেরই শোনা। তবে শুধু এই গানেই নয়, বরং বাস্তবেও কিন্তু মরুভূমির গোলাপ বা ‘ডেজার্ট রোজ’ রয়েছে। ডেজার্ট রোজ আসলে কোনো গোলাপ ফুল নয়। মরুভূমি অঞ্চলের অনুর্বর বালুরাশি আর জিপসামের মিশ্রণে যে পাথর তৈরি হয় সে পাথরগুলো পাশাপাশি মিলে গিয়ে গোলাপের পাপড়ির আকার ধারণ করে। আর সব পাপড়ি মিলে যে আকার দাঁড়ায় তা দেখতে গোলাপ ফুলের মতো। পুরো ব্যাপারটিই ঘটে প্রাকৃতিকভাবে। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এর পাপড়ি। যেহেতু বালিতে পাওয়া যায় তাই পাপড়িগুলোর চারপাশও বালুকাময় থাকে। বালি সরালে এর প্রকৃত সৌন্দর্য চোখে পড়ে। পাপড়িগুলো আলো প্রতিফলিত করে এবং বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোজ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়।



            গোলাপের মতো দেখতে এই বস্তুটি আসলে জিপসামের তৈরী একটি প্রাকৃতিক স্ফটিক। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালির কণা নিয়ে গঠিত হয় এই মরুভূমির গোলাপ। সাইপ্রাস, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মরোক্কো, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন (ফুয়ের্তেভেন্টুরা, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ; ক্যানেট ডি মার, কাতালোনিয়া; লা আলমারচা, কুয়েঙ্কা), মঙ্গোলিয়ায় গোলাপ শিলা পাওয়া যায় ( গোবি), জার্মানি (রোকেনবার্গ), আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র (মধ্য ওকলাহোমা; কোচিস কাউন্টি, অ্যারিজোনা; টেক্সাস), মেক্সিকো (সিউদাদ জুরেজ, চিহুহুয়া), অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়াতে এই স্যান্ড রোজ দেখা যায়।

গোলাপের মতো দেখতে প্রচুর বালুকণাসমৃদ্ধ জিপসাম বা ব্যারাইটের স্ফটিকগুচ্ছের প্রচলিত নাম হল মরুগোলাপ। স্ফটিকলেখচিত্রের অক্ষের উপর সামতলিকভাবে বিস্তৃত পানপাত্রের মতো খোলামুখের চারপাশে বিকীর্ণ সামতলিক স্ফটিকগুচ্ছ এর পাঁপড়িগুলো তৈরি করেছে।  শুষ্ক বালুকণা দিয়ে স্ফটিকের কৃত্রিম গোলাপ তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় যেমন অগভীর লবণ উপত্যকায় বাষ্পীভবনের ফলে লবণ তৈরি হয়। স্ফটিকগুলি সামতলিক প্লেটের বৃত্তাকার বিন্যাস তৈরি করে পাহাড়টিকে গোলাপ ফুলের মতো আকৃতি দিয়েছে। জিপসাম দিয়ে তৈরি গোলাপগুলো ব্যারাইট দিয়ে তৈরি গোলাপগুলোর চেয়ে বেশি সুন্দর এবং তীক্ষ্ণধারযুক্ত। সেলেস্টাইন এবং অন্যান্য বাষ্পীভূত তীক্ষ্ণধারযুক্ত খনিজ পদার্থগুলিও এইরকম কৃত্রিম গোলাপগুচ্ছ তৈরি করতে পারে। তারা একটি অথবা একগুচ্ছ কৃত্রিম গোলাপ তৈরি করতে পারে যেগুলির অধিকাংশের ব্যাস মটরদানার ব্যাস থেকে শুরু করে চার ইঞ্চি বা ১০সেমি দৈর্ঘ্যের হতে পারে। 

             পরিবেষ্টক বালি যা স্ফটিক গঠনের সময় একত্রে মিশ্রণ দ্বারা অঙ্গীভূত হয় অথবা অন্যভাবে স্ফটিকগুলির আবরণ তৈরি করে তা স্থানীয় পরিবেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।এক্ষেত্রে যদি আয়রনের অক্সাইডগুলি উপস্থিত থাকে তাহলে কৃত্রিম গোলাপগুলির উপর মরচের আস্তরণ পড়ে। মরুগোলাপ বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন--বালি গোলাপ, সেলেনাইট গোলাপ, জিপসাম গোলাপ এবং ব্যারাইট গোলাপ।
 
            মরুভূমির গোলাপ গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে দেখা দেয়। বৃষ্টিপাত যখন মরুভূমিতে পড়ে তখন জল তত্ক্ষণাত বালিতে মিশে যায়। বালিতে উপস্থিত প্রচুর সংখক জিপসাম বৃষ্টির জলের দ্বারা গভীরে পৌঁছায়। তীব্র উত্তাপে, জল আবার পৃষ্ঠতলের স্তরে উঠে যায় এবং এর সম্পূর্ণ বাষ্পীভবন নতুন জিপসাম স্ফটিক গঠনের দিকে পরিচালিত করে। তখন নতুন জিপসাম স্ফটিকগুলি এক অদ্ভুত বাঁকা এবং কিছুটা বাঁকানো আকারে তৈরি হয়। স্ফটিকগুলি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। স্ফটিকগুলির রঙ পুরোপুরি নির্ভর করে সেগুলি যে বালিতে তৈরি হয়েছে তার রঙের উপর। তিউনিসিয়ান সাহারায় সাদা মরু গোলাপ পাওয়া যায়। তবে কালো মরু গোলাপ গুলি আর্জেন্টিনার মরুভূমিতে রয়েছে।

                প্রাচীন কাল থেকেই সাহারা মরুভূমির বাসিন্দারা এই ফুলের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেন। যাযাবররা প্রকৃতির এই অলৌকিক ঘটনাটি প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন। তারা ধরে নিয়েছিল যে মরুভূমির গোলাপটি উটের মূত্র থেকে তৈরি হয়েছিল। সাহারার যাযাবর উপজাতিরা যখন ওসিসে পৌঁছায় এবং মানুষ ও উট তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে বিশ্রাম নেয় তখন উটের প্রস্রাব দ্বারা বালি ধুয়ে "মরুভূমির গোলাপ" পৃষ্ঠের উপরে উপস্থিত হয়। পুরানো দিনগুলিতে, এটি বিশ্বাস করা হত যে এই "ফুলগুলি" উটের মূত্র থেকে সঠিকভাবে গঠিত হয়েছিল।

            তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মিশর এবং আরও কিছু দেশ, যেখানে প্রচুর বালুকাময় মরুভূমি রয়েছে, সেখানে পর্যটকদের মধ্যে একটি খুব জনপ্রিয় স্যুভেনির হ'ল "মরুভূমির গোলাপ" নামক একটি অস্বাভাবিক খনিজ। খনিজটির রূপ বৈচিত্র্যই হ'ল জিপসাম। না ... সুন্দর এবং কাব্যিক নাম ছাড়া এটি কিছু নয় এটি "মরুভূমির গোলাপ"।

             অপূর্ব প্রাকৃতিক সৃষ্টি এই "মরুভূমির গোলাপ" সংগ্রাহক এবং গহনা প্রেমীদের দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান। ডেজার্ট রোজ গুলি সাধারণ কী রিং, স্যুভেনির, দুল এবং অন্যান্য গহনা আকারে বিক্রি হয়। কিছু কিছু দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রেমের প্রতীক হিসাবে "মরুভূমির গোলাপ" দেওয়ার রীতি আছে। এটি একটি বিশেষ উপহার, কারণ অনেকে বিশ্বাস করেন যে এই পাথর গভীর ভালবাসার প্রতীক। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের বাসিন্দারা একটি নির্দিষ্ট ঐতিহ্য অনুসরণ করে এবং বিয়ের দিন, কনের বাবা-মা তাকে যথাযথভাবে এই জাতীয় পাথর দেয় কারণ এটির প্রতীক গভীর ভালবাসা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই অনন্য প্রাকৃতিক সৃষ্টির ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও আলজেরিয়ান সরকার এর রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মরুভূমি গোলাপ বিশ্বের শুকনো অঞ্চলের বেশিরভাগের প্রতীক। অনেকের বিশ্বাস যে মরুভূমির গোলাপ পাথরের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে তাহল ঔষধি বৈশিষ্ট্য... ভাঙা হাড়গুলির দ্রুত নিরাময়ের জন্য মরু গোলাপ বেশ উপকারী, তবে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের চিকিত্সা ক্ষেত্রে জিপসাম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

             ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে পারমিয়ান যুগে যখন  রোজ রক বা গোলাপি পাহাড়  তৈরি হয়েছিল তখন পশ্চিম এবং মধ্য ওকলাহমা অগভীর সমুদ্র দ্বারা আবৃত ছিল। এরপর সমুদ্র সরে গিয়ে জলবিহীন ব্যারাইট অধঃক্ষিপ্ত হয়ে কোয়ার্টজ বালুকণার চারধারে জমা হল। এভাবেই বিরাটাকারে তৈরি লালাভ বালিপাথরের মাধ্যমে তৈরি হল রোজ রক বা গোলাপি পাহাড়।

             পাথরের এই গোলাপ ছোট থেকে শুরু করে বিশাল আকারের হতে পারে। গোলাপ শিলাগুলির গড় আকার ০.৫  ইঞ্চি (১.৩ সেন্টিমিটার) থেকে ৪ ইঞ্চি (১০ সেমি) ব্যাসের হয়ে থাকে। ওকলাহোমা ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ কর্তৃক খুঁজে পাওয়া বৃহত্তম  গোলাপটি ছিল ১৭ ইঞ্চি (৪৩ সেমি) লম্বা এবং ১০ ইঞ্চি (২৫ সেমি) উচ্চতা, ওজন ১২৫ পাউন্ড (৫৭ কেজি)৷ তবে গোলাপ শৈলগুলি সর্বাধিক ৩৯ ইঞ্চি ( ৯৯ সেন্টিমিটার) লম্বা ও ওজনে প্রায় ৪৫৪ কিলোগ্রাম হতে পারে। এর কঠোরতা খুব কম - ২ ।আপেক্ষিক গুরুত্ব - ২.৩-২.৪ । নিখুঁত বিভাজন বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ফ্র্যাকচারটি অসম।


            এপ্রঙ্গে জানিয়ে রাখি, কাতার শুধুমাত্র তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য সারা পৃথিবীতে পরিচিত তা নয়। কাতারের আরো একটি মূল্যবান সম্পদের নাম হচ্ছে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা ‘মরুভূমির গোলাপ’।মরুভূমির এরকম গোলাপের আদলে একটি  জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে বলে একে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা ‘মরুভূমির গোলাপ’ বলা হয়। এই ডেজার্ট রোজের জন্যও কাতারকে আলাদাভাবে চেনে পৃথিবী।


তথ্যসূত্র: 

1. Wikipedia, 
2. roar.media, 
3. domsireni.com



লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments:

Post a Comment