Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Tuesday 21 December 2021

আকাশ ও মহাশূণ্য অথবা মহাকাশ


আকাশ হল ভূপৃষ্ঠ থেকে বাইরের দিকে অবস্থিত অংশবিশেষ। বায়ুমণ্ডল এবং মহাশূন্যও এর অংশ।


জ্যোতির্বিদ্যায় আকাশ কে খ-গোলক ও বলা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে এটিকে একটি কাল্পনিক গোলক কল্পনা করা হয় যেখানে সূর্য, তারা,চাঁদ এবং গ্রহসমূহকে পরিভ্রমণ করতে দেখা যায়। খ-গোল কেসাধারণতত বিভিন্ন নক্ষত্রমণ্ডলে ভাগ করা হয়।সাধারণতত আকাশ শব্দটি ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে যেকোনো বিন্দু নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর অর্থ এবং ব্যবহার ভিন্নও হতে পারে। যেমন, আবহাওয়ার ক্ষেত্রে আকাশ বলতে কেবলমাত্র বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকের অধিক ঘন অংশ কে বোঝায়।


দিনের আলোয় আলোর বিক্ষেপণের জন্য আকাশ নীল দেখায়। আর রাতের বেলায় আকাশকে তারায় পরিপূর্ণ একটি কালো গালিচার মত মনে হয়। দিনের বেলায় মেঘ না থাকলে আকাশে সূর্য দেখা যায়। আর রাতের আকাশে (কখনও কখনও দিনেও) চাঁদ, গ্রহসমূহ এবং তারা দৃশ্যমান থাকে। মেঘ, রংধনু, অরোরা বা মেরুপ্রভা, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা আকাশে পরিলক্ষিত হয়।




মহাশূণ্য অথবা মহাকাশ বলতে সাধারণভাবে মাথার উপরকার অনন্ত আকাশ বোঝানো হলেও বস্তুত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলসমৃদ্ধ আকাশকে পৃথিবীর আকাশ বলা হয়। তাই পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে মহাকাশ হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের অনন্ত স্থান। এ আকাশসীমায় অতি অল্প ঘনত্বের বস্তু বিদ্যমান। অর্থাৎ শূন্য মহাশূন্য পুরোপুরি ফাঁকা নয়। প্রধানত, অতি অল্প পরিমাণ হাইড্রোজেন প্লাজমা, তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ, চৌম্বক ক্ষেত্র এবং নিউট্রিনো এই শূন্যে অবস্থান করে। তাত্ত্বিকভাবে, এতে কৃষ্ণবস্তু এবং কৃষ্ণশক্তি বিদ্যমান।মহাশূন্য এমন অনেক কিছু আছে যা মানুষ এখনও কল্পনা করতে পারেনি।

শিশির ও কুয়াশা



শিশির হল কোনো শীতল বস্তুর উপর জলীয় বাষ্প জমা হয়ে সৃষ্ট বিন্দু।

একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাতাস একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে। তাপমাত্রা বাড়লে যেমন ধারনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি তাপমাত্রা কমলে ধারনক্ষমতা হ্রাস পায়। সাধারণত সন্ধার পরে তাপমাত্রা কমে যায় এবং বাতাস জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়ে থাকে। যদি তাপমাত্রা আরো কমে যায়, তখন বাতাস আর জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে না এবং তা শীতল বস্তুর উপর পানির কণা হিসেবে জমা হয়। এ পানির বিন্দু শিশির বিন্দু নামে পরিচিত (যেমন, ঘাসের উপর শিশির বিন্দু জমা হয়)।



শিশিরের পরিমাপ করার জন্য ড্রোজোমিটার নামক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।শিশির ভোরে ঘাসের উপর দেখা যায়


 কুয়াশা হল ভূমির সংস্পর্শে থাকা মেঘমালা। মেঘকেও আংশিকভাবে কুয়াশা বিবেচনা করা যায়, মেঘের যে অংশটুকু মাটির ওপরে বাতাসে ভাসমান থাকে তা কুয়াশা হিসেবে বিবেচিত নয়, তবে মেঘের ভূমির উঁচু অংশের সংস্পর্শে থাকা মেঘকে কুয়াশা বলা হয়। কুয়াশা আর ধোঁয়াশার মধ্যে পার্থক্য হল এদের ঘনত্বে, যা কিনা এদের ফলে সৃষ্ট দর্শনযোগ্যতার হ্রাস দ্বারা হিসাব করা হয়: কুয়াশার কারণে দর্শনযোগ্যতা ১ কিমির কম হয়, যেখানে ধোঁয়াশা দর্শনযোগ্যতা ২ কিমির বেশি হ্রাস করে না।



পৃথিবীর সর্বাধিক কুয়াশাচ্ছন্ন স্থান হল নিউফাউন্ডল্যান্ডের গ্রান্ড ব্যাংকস, যেখানে উত্তর দিক থেকে আসা শীতল লাব্রাডর প্রবাহ ও দক্ষিণ দিক থেকে আসা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ গালফ প্রবাহ মিলিত হয়। সর্বাধিক কুয়াশাচ্ছন্ন ভূমি অঞ্চলের মধ্যে আছে পয়েন্ট রেয়েস, ক্যালিফোর্নিয়া। এবন আর্জেন্টিনা, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর , যেখানে বছরের ২০০ দিনই কুয়াশায় ঢাকা থাকে। এমনকি এমনিতে উষ্ণ দক্ষিণ ইউরোপের নিম্নভূমি ও উপত্যকা অঞ্চলে ঘন কুয়াশা পড়ে, বিশেষত শরৎ ও গ্রীষ্মে।

Saturday 16 October 2021

বিশ্ব খাদ্য দিবস (World Food Day)

১৬ অক্টোবর, বিশ্ব খাদ্য দিবস (World Food Day)। একটি দেশের নাগরিকগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পৃথিবীর সব উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ, বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে আছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। পৃথিবী জুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং আরও কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এখন সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের মধ্যে একটি।



খাদ্য নিরাপত্তা বলতে খাদ্যের লভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকারকে বোঝায়। কোন বাসস্থানকে তখনই “খাদ্য নিরাপদ ” বলে মনে করা হয়, যখন এর বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসবাস করেন না কিংবা খাদ্যাভাবে উপবাসের কোনও আশঙ্কা করেন না। বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন (১৯৯৬) অনুযায়ী “খাদ্য নিরাপত্তা তখনই আছে বলে মনে করা হয় যখন সকল নাগরিকের সব সময়ের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকে যা তাঁদের সক্রিয় ও সুস্থ জীবন নিশ্চিতকরণের জন্যে সঠিক পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে।”


 ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার FAO (Food and Agricultural Organisation) ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. প্যাল রোমানি বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) দারিদ্র ও ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে। 

বিশ্ব খাদ্য দিবসের ইতিহাস:

হাঙ্গেরির প্রাক্তন কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রী ডঃ পল রোমানি-র পরামর্শ অনুসারে ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে 'বিশ্ব খাদ্য দিবস' চালু করা হয়। তারপরে এটি ধীরে ধীরে ক্ষুধা, অপুষ্টি, স্থায়িত্ব এবং খাদ্য উৎপাদন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির একটি উপায় হয়ে ওঠে।

বিশ্ব খাদ্য দিবসের তাৎপর্য:

প্রতি বছর জাতিসংঘের FAO (Food and Agricultural Organisation) প্রতিষ্ঠার বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়। এই দিনটির লক্ষ্য হল, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা মোকাবেলা এবং সারা বিশ্বে ক্ষুধা সমস্যা দূর করার জন্য প্রচেষ্টা করা।


কেবলমাত্র ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বে অপুষ্টির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এজন্য মানুষকে সচেতন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষের সুস্থ-সবল থাকার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আজও অপুষ্টির কারণে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের জীবন হারাচ্ছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে, খাদ্যকে প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্ব খাদ্য দিবসের মূল উদ্দেশ্য :

• কৃষি খাদ্য উৎপাদন করতে উৎসাহিত করা।
• অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করা।
• গ্রামের মানুষের অবদান সম্পর্কে উৎসাহিত করা, বিশেষ করে নারী ও সমাজেক সব থেকে নিচু শ্রেণীর মানুষকে বিশেষ সুযোগ দেওয়া।
• উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তর সম্পর্কে প্রচার করা।
• ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কে সমস্ত জাতিকে উত্সাহিত করা এবং সচেতনতা বাড়ানো।
• কৃষি উন্নয়ন সম্পর্কে নজর দেওয়া।

পূর্ববর্তী বিশ্ব খাদ্য দিবসের কিছু থিম যা উদযাপিত হয়েছিল তা নীচে দেওয়া হল :

1981 and 1982 : Food Comes First
2000: A Millennium Free from Hunger
2001: Fight Hunger to Reduce Poverty
2002: Water – Source of Food Security
2003: Working Together for an International Alliance Against Hunger
2004: Biodiversity for Food Security
2005: Agriculture and Intercultural Dialogue
2006: Investing in Agriculture for Food Security
2007: The Right to Food
2008: World Food Security – The Challenges of Climate Change and Bioenergy
2009: Achieving Food Security in Times of Crisis
2010: United Against Hunger
2011: Food Prices – From Crisis to Stability
2012: Agricultural Cooperatives – Key to Feeding the World
2013: Sustainable Food Systems for Food Security and Nutrition
2014: Family Farming - “Feeding the World, Caring for Earth
2015: Social Protection and Agriculture – Breaking the Cycle of Rural Poverty
2016: Climate Change – Climate is Changing. Food and Agriculture Must Too
2017: Change the Future of Migration. Invest in Food Security and Rural Development
2018: Our Actions are Our Future
2019: healthy diets for a zero hunger world
2020: Grow, nourish, sustain. Together. Our actions are our future

এবছর, বিশ্ব খাদ্য দিবসের উদযাপন FAO, UNHCR, UN Refugee Agency, World Food Programme দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত হবে। জাতিসংঘ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫০টি দেশে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করা হবে। ২০২১-এ প্রতিপাদ্য “Safe food now for a healthy tomorrow”.

তথ্যসূত্র: 

1. এইসময়
2. 
vikaspedia.in
3. bankbazar.com
4. 
bengali.boldsky.com



লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। 

Wednesday 1 September 2021

“এলিয়েন দ্বীপ সোকোত্রা”

 


এলিয়েন শব্দটি শোনা মাত্রই আমাদের মস্তিষ্কে ভাসে আজব সব চিত্র। যা আমাদের পৃথিবীর সাধারণ সব চিত্র থেকে একেবারে ভিন্ন। এই জায়গাটির গাছ-পালা পশু  পাখি সব কিছুই আমাদের চেনা পৃথিবীর বাইরের মতো।এমন আজব বা রহস্যময় একটি জায়গার নাম সোকোত্রা দ্বীপ।


সোকোত্রা আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত। ভৌগোলিক পরিবেশ এবং গাছপালার অদ্ভুত দর্শনের কারণে এই দ্বীপকে ভিনগ্রহবাসীদের দ্বীপ বা ‘এলিয়েন দ্বীপ’ বলা হয়ে থাকে। দ্বীপ বললে ভুল বলা হবে, কেননা সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ আরব সাগরের চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলোর বেশিরভাগ অংশই পড়েছে ইয়েমেনের ভেতরে।

মধ্য প্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোকোত্রা দ্বীপপুঞ্জ। সোকোত্রাই আয়তনে সবচেয়ে বড়। সুকাত্ররর আয়তন প্রায় ৬৫৬০ বর্গকিলোমিটার। ইয়েমেন ২০১৩ সালে এটিকে একটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে। এটা হর্ন অফ আফ্রিকা থেকে ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মাইল) পূর্ব এবং আরব উপদ্বীপ থেকে ৩৮০ কিলোমিটার (২৪০ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। এর স্থানাঙ্ক ১২°৩০′৩৬″ উত্তর ৫৩°৫৫′১২″ পূর্ব। ৩,৭৯৬ বর্গ কিলোমিটার ভূমি বিশিষ্ট এ দ্বীপপুঞ্জ দৈর্ঘ্যে ১৩২ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৫০ কিলোমিটার। প্রদেশটির রাজধানীর নাম হাদিবু।


আজব বা রহস্যময় দ্বীপ সোকোত্রা। এখানে তেমন কোনো আজব ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি, তবে দ্বীপটি নিজেই যেন অপার্থিব রহস্যে ভরপুর। এখানকার জীবজগৎ, প্রাণীকুল কোন কিছুর সাথেই পৃথিবীর অন্য কোন স্থানের কোনো মিল নেই। যেমন অদ্ভুত দর্শনের গাছপালা এখানে, তেমনিই অদ্ভুত এখানকার পশুপাখি। এখানকার সবকিছু এত অদ্ভূত দর্শনের যে এই দ্বীপকে ভিনগ্রহের কোনো জায়গা বললে মোটেই ভুল হবে না। আরব সাগরের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপ যেখানে এলিয়েনদের দেখা না মিললেও ভৌগোলিক পরিবেশ এবং গাছপালার ভিন্নতার জন্যই নাম হয়েছে “এলিয়েন দ্বীপ”।


ভৌগলিকভাবে দ্বীপটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সারাবছরই এখানে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষাকালে এই বৃষ্টিপাতের পরিমান বেড়ে যায়। সারাবছরই দ্বীপের তাপমাত্রা মোটামুটি স্থিতিশীল। গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীত যেকোনও সময় এখানে এলে দেখা যাবে একধরনের কুয়াশা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাজুড়ে সবসময় এক কুহেলিকার আবরণ তৈরি করে রেখেছে।


এ দ্বীপের বেশিরভাগ উদ্ভিদই স্থানীয়। এ দ্বীপের বেশিরভাগ উদ্ভিদই এন্ডেমিক। পৃথিবীর কোথাও এগুলোর দেখা মেলে না। এই স্থানীয় উদ্ভিদগুলো গড়ন এতটাই অদ্ভুত যে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না।

উদ্ভিদগুলোর অদ্ভুত গড়নই এই দ্বীপকে ভিনগ্রহীদের দ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করার মূল কারণ। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের জীববিজ্ঞানীগণ জরিপ করে প্রায় ৭০০ প্রজাতির স্থানীয় উদ্ভিদ পেয়েছেন সারা পৃথিবীতে। আর সোকোত্রা দ্বীপে ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩০৭টি প্রজাতিই স্থানীয়, অর্থাৎ প্রায় ৩৭ শতাংশ উদ্ভিদ আপনি পৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। ২০০৪ সালে IUCN এর লাল তালিকায় সোকোত্রার ৩টি অতিবিপন্ন এবং ২৭টি বিপন্ন উদ্ভিদের নাম রয়েছে।


এই দ্বীপের সবচেয়ে অদ্ভুত গাছ হলো ড্রাগন-ব্লাড ট্রি। এই গাছটি দেখতে একেবারে ব্যাঙের ছাতার মতো। উচ্চতায় বড়জোড় ৭-৮ ফুট। অদ্ভুত গড়নের ছাতাকৃতির এই গাছটি থেকে লাল বর্ণের আঠালো পদার্থ বের হয়। কথিত আছে বহুকাল আগের ড্রাগনের রক্ত থেকে এই গাছের উৎপত্তি এবং সে অনুযায়ী এর নামকরণ! এই গাছের আঠা রঙ তৈরিতে এবং বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়।


আরেকটি বিশেষ উদ্ভিদ হলো ডেন্ড্রোসসিয়াস নামক এক প্রকারের শশা গাছ। বিভিন্ন আকৃতির কান্ডটি লম্বা হয়ে চূড়া তৈরি করে, যেখানে হলুদ, গোলাপী ফুল ফোটে। উভলিঙ্গ এই গাছের জন্ম এই দ্বীপের বয়সের দ্বিগুণ আগে বলে গবেষকদের ধারণা। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এদের বংশবিস্তারের অনুকূল।


এছাড়াও রয়েছে পোমেগ্র্যানেট নামক ফুলের উদ্ভিদ। এটি আড়াই থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সাধারণত ফুল এবং ফল হয়। ফুলগুলো সাধারণত গোলাপি বা লালের কাছাকাছি রঙের হয় আর ফল পাকলে তা হলদে-সবুজ রঙ ধারণ করে। এই গাছের কাঠ খুব শক্ত হয় এবং ছোটখাট আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃতও হয়। এই গাছটি সোকোত্রার বিশেষ উদ্ভিদ হলেও হাওয়াইতে দ্বীপে চাষের চেষ্টা চলছে।


এমন অদ্ভুত দেখতে গাছ খুব একটা চোখে পড়েছে কি? আরব সাগরের বুকে একটি দ্বীপে এমন আরও অনেক বিচিত্র দর্শন গাছ রয়েছে যেগুলিকে দেখলে সত্যজিৎ রায়ের লেখা কল্পবিজ্ঞানের গল্পগুলির কথা মনে পড়ে যেতে পারে। প্রফেসর শঙ্কুর নানা অভিযানের মধ্যে এমন অনেক বিচিত্র গাছের বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু এই দ্বীপে এলে কল্পবিজ্ঞানের গল্পের বিচিত্র দর্শন গাছপালা চোখের সামনে দেখতে পাবেন।

২০০৮ সালে ইউনেসকো এই দ্বীপপুঞ্জকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা দেয়। এই সোকোত্রা দ্বীপের বিচিত্র দর্শন গাছপালাগুলির মধ্যে অন্যতম হল ড্রাগন-ব্লাড, ডেন্ড্রোসসিয়াস, পোমেগ্র্যানট। এই দ্বীপে এলে চারপাশের পরিবেশ আর গাছপালা দেখে আপনার মনে হতেই পারে যে, আপনি হয়তো অন্য কোনও গ্রহে এসে পড়েছেন!


স্কিংস, পা-বিহীন টিকটিকি, নানা প্রকারের মাকড়শা এবং তিন প্রকারের কাঁকড়ার দেখা মেলে এ দ্বীপে। স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে মানুষ ও বাদুড় ছাড়া আর কোনো প্রাণীর সন্ধান মেলেনি।


দ্বীপটি তেমন জনবহুল নয়। সোকোত্রায় বর্তমানে ছশোটি গ্রামে প্রায় ষাট হাজার মানুষ বসবাস করে। দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলবর্তী হাবিদু শহরেই সবচেয়ে বেশি লোক বাস করে। দ্বীপে বসবাসকারী বেশিরভাগ লোকই স্থানীয়।


কি ভাবছেন ? একবার ঘুরে দেখবেন নাকি, এই "এলিয়েন দ্বীপ সোকোত্রা"। চাইলে আপনি যেতেই পারেন জাহাজে করে আরব সাগর দিয়ে তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস বাদে বছরের অন্যান্য সময়ে। অথবা বিমানে সোকোত্রা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। 

এখানে গণপরিবহন ব্যবস্থা খুবই সামান্য। দুই-একটি মিনিবাসের দেখা মিলতে পারে। তাছাড়া আপনি চাইলে গাড়িও ভাড়া করতে পারেন। পরিবহন ব্যবস্থা নগণ্য হবার প্রধান কারণ এই এলাকার বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেম। গাড়ির অতিরিক্ত ব্যবহারে খুব বাজেভাবে ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ভ্রমণের বেশিরভাগ সময় হয়তো আপনাকে পায়ে হেঁটেই চলতে হতে পারে।


তথ্যসূত্র:

Wikipedia, goggles.blog, আটপৌরে, Roarmedia, Zee24Ghanta, DurbinNews.


লেখক:

অয়ন বিশ্বাস

ঘোড়ালিয়া,শান্তিপুর,নদিয়া।

“ডিম পাড়া পাহাড়” বা এগ্ মাউন্টেইন

 


শিরোনাম পড়ে হয়তো অবাক হয়েছেন একটি পাহাড়ে আবার কীভাবে ডিম পাড়ে? হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন এমনই এক পাহাড় রয়েছে আমাদের দেশের খুব পাশেই। এই পাহাড়ের আঞ্চলিক নাম “চান দান ইয়া” (Chan Dan Ya)। এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় “ডিম পাড়া পাহাড়” (egg mountain)। 


আমাদের প্রতিবেশী দেশ চিনে পাহাড়টি দেখতে পাবেন (china)। এই পাহাড়টি আসলে গানডেং পর্বতশ্রেণীর একটি অংশ (Mount Gandeng)।

চীনের গুউঝু প্রদেশের কিয়ানান বুয়ী ও মিয়াও অঞ্চল জুড়ে এই পাহাড় রয়েছে। 


তবে কোনো পাহাড়ও যে ডিম পাড়ে, একথা জানতেন কি? হ্যাঁ, চীনের গুউঝু প্রদেশের “ডিম পাড়া পাহাড়” (egg mountain) এর যে অংশে আপনি ডিম পাবেন সেটি লম্বায় ৯ ফুট এবং চওড়ায় প্রায় ৬৫ ফুট।এক একটি ডিম পাড়তে নাকি লেগে যায় প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত সময়। এরপর ডিম আস্তে আস্তে পরিণত হতে হতে পাহাড়ের পাদদেশে এসে জমা হয়। তবে ডিমগুলি সত্যিকারের নয়। এগুলি ডিমের মতো গোল ও মসৃণ হওয়ায় একে ডিম ভেবে অনেকেই ভুল করেন। এগুলো আসলে পাথর যা এমন আকার ধারণ করেছে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে।


ডিমের মতোই গড়াতে গড়াতে এসে পড়ে ওই পাহাড়েরই পাদদেশে। সেই জায়গাটা সব সময় ভরে থাকে ডজন ডজন কুচকুচে কালো ডিমে।


এই পাথুরে ডিমগুলো দেখতেও একদম আসল ডিমের মতো মসৃণ আর গোল। কোনোটা আবার একদম ডিম্বাকৃতির। পাথরের ডিম গুলি গাঢ় নীল রঙের ডাইনাসরের ডিমের মতো হয়ে থাকে। ডিম এর আয়তন ১১.৮ ইঞ্চি থেকে ২৩.৬ ইঞ্চি এবং ওজন ৬৬০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।


কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, একটি পাহাড় কিভাবে ডিম পাড়ে? সে প্রশ্নের উত্তর এখনো ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভূতত্ত্ববিদরা এই প্রশ্নেরত্তর দিতে সত্যি সত্যিই গলদঘর্ম হচ্ছেন।


বিশেষজ্ঞের মতে পর্বতশ্রেণী পাললিক শিলা (sedimentary rock) দিয়ে গঠিত হলেও এই অংশটি তার ব্যতিক্রম কারণ এটি গঠিত হয়েছে চুনাপাথর (limestone) দিয়ে। চুনাপাথর অপেক্ষাকৃত নরম বলে, তা সহজেই ক্ষয় হতে থাকে কিন্তু তাতে যে কঠিন পাললিক শিলার অংশ থাকে, সেগুলো অত সহজে ক্ষয় হয় না। সেগুলি আস্তে আস্তে জমা হতে হতে ডিমের আকার ধারণ করে। ডিমের আশপাশের অংশ যত ক্ষয় হতে থাকে, ডিমও তত বড় হতে থাকে। তারপর পুরো ডিম হয়ে গেলে, আশপাশের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া এবং ডিমের ওজন বেড়ে যাওয়া মিলিয়ে সেটি টুক করে খসে পড়ে এবং পাহাড়ের পাদদেশে এসে জমা হয়।

তবে এমন ডিমের মতোই গোল কি করে হতে পারে পাথরগুলি তা ভাবার বিষয়।


 সেখানে যে চুনাপাথর (limestone) স্তর রয়েছে তা সৃষ্টি হয়েছিল সেই কেমব্রিয়ান যুগে,  প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। সেগুলো এখনও কি করে অক্ষত রয়েছে সেটি  একটি প্রাকৃতিক রহস্য।


সেখানকার মানুষের কাছে কিন্তু এসবের ব্যাখ্যা খুব সহজ। তাদের কাছে এই ডিমগুলো ঈশ্বরের দান।


 পাহাড়টির কাছেই একটি গ্রাম আছে, যার নাম গুলু।সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাথরগুলিকে ঈশ্বরের দান বলে মনে করেন।

তারা রীতিমতো পুজো অর্চণা  করেন এই পাথরের টুকরোগুলিকে। এমনকি এক একটি বাড়িতে একটি করে এমন ডিমও দেখতে পাবেন আপনি।


বর্তমানে এই ডিম ভর্তি পাহাড়ের আকর্ষণে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হওয়ায় ডিমগুলোকে নাকি চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আবার ডিমগুলো খসে পড়ার অনেক আগেই তা চুরি করে নেয় অধিক মুনাফার আশায়।


তথ্যসূত্র:

kolkata24x7.com

adwitiya.net.in Dailymail.co.usa

গঙ্গার ডলফিন শুশুক

 

গঙ্গা নদীর শুশুক (Ganges River Dolphin) শান্ত, নিরীহ জলজ প্রাণী। এই শুশুক প্রজাতি প্রাথমিকভাবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদী ও বাংলাদেশ ও নেপালে প্রবাহিত তাদের শাখানদীগুলোতে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ত দেখা যায়। স্বাদু জলের শুশুক  ডলফিনের একটি প্রজাতি। শুশুক  ডলফিন ও তিমির নিকট জ্ঞাতি, একান্তভাবে সামুদ্রিক কয়েকটি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রকৃতপক্ষে এগুলি Cetacea বর্গের Phoeconidae গোত্রের অন্তর্গত ছোট দাঁতের তিমি। এদের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘প্লাটানিস্টা গ্যাঞ্জেটিকা’ (দক্ষিণ এশীয় রিভার ডলফিন)। জাতীয় জলজ প্রাণীর তকমা মিলেছে। ঢুকে পড়েছে বিপন্নের তালিকায়।

 

 বাদামি বা কালো বর্ণের এই প্রাণীটি অবাধে মিঠে জলে ঘুরে বেড়ায়। প্রায় অন্ধ শুশুক পুরুষদের দৈর্ঘ্য দুই থেকে আড়াই মিটার এবং স্ত্রীদের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই মিটার। মাংশাসী প্রাণীটি খাবার হিসেবে মাছ এবং অন্য ছোট জলজ প্রাণীদের ভক্ষণ করে। প্রাণীটির নাসারন্ধ্রে একটি নরম মাংসপিণ্ড রয়েছে, এর নাম ‘বার্সা’; এর সাহায্যে এরা শব্দ উৎপন্ন করতে পারে।  এদের ঘ্রাণশক্তি তীব্র। এদের পুরো দেহ চর্বির আস্তরণে আবৃত, এই আস্তরণ ‘ব্লাবার’ নামে পরিচিত। এর কাজ হল ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চয় করা ও দেহকে গরম রাখা। শুশুকের মুখের সামনে রয়েছে একটি লম্বা ‘রস্ট্রাম’ যা তারা ‘ইকো-লোকেশন’-এর কাজে লাগায় ও শিকার ধরে। প্রাণীটির চোয়ালে রয়েচে ২৭ থেকে বত্রিশটি ছোট ছোট দাঁত যা আত্মরক্ষা, শিকার ধরার কাজে লাগে। শুশুকের শরীর মাথা থেকে লেজের দিকে ক্রমশ সরু, মজবুত অগ্রপদ ফ্লিপারে (Flipper) রূপান্তরিত হয়েছে, লেজের পাতাগুলি আনুভূমিক। দেহের মধ্যভাগে অবস্থিত সুবিকশিত পৃষ্ঠপাখনা (ব্যতিক্রম পাখনাহীন শুশুক Neophocaena phoeaenoides)। সব জাতের শুশুকই ঠোঁটবিহীন ও দুই চোয়ালেই একই রকম চেপ্টা চামচের মতো দাঁত। এদের পশ্চাৎপদ নেই,  দেহ সম্পূর্ণ লোমহীন। দুটি নাসারন্ধ্র মিলে একটি নাসিকাগহবর গঠিত হয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাসে সরাসরি জলের উপরের বাতাস ব্যবহার করে। এরা যখন ভেসে ওঠে তখন বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও শ্বাস নেয়।


শুশুকদের প্রধান খাদ্য মাছ। শিকারের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য এরা অতিদ্রুতগামী শব্দ সংকেত ব্যবহার করে। এদের তৈরি শব্দ লক্ষ্যবস্ত্তকে আঘাত করলে তার প্রতিধ্বনি দ্রুত শুশুকের কাছে ফিরে আসে। এ থেকে শুশুক তাৎক্ষণিকভাবে শিকারের আকার, দূরত্ব গতিবিধি নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। এরা সমাজবদ্ধ প্রাণী, প্রায়ই দলবেঁধে চলাচল করে এবং শব্দ সংকেতের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।


পুরুষ এবং স্ত্রী শুশুক একসঙ্গে থাকতে পছন্দ করে এবং কখনওই এরা একা থাকে না। কিন্তু বর্তমানে গঙ্গার বিভিন্ন জায়গায় এদেরকে একা একা ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়টি পশুপ্রেমীদের কাছে এক অশনিসঙ্কেত বহন করে আনছে। প্রায় এক বছর গর্ভধারণের পর শুশুক একটি সন্তান প্রসব করে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় আরও জানা যাচ্ছে, তাদের জন্মহারের থেকে গত কয়েক দশকে মৃত্যুহার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। গঙ্গার শুশুকদের বাৎসরিক মৃত্যুহার ১৫০ থেকে ১৬০। 


গাঙ্গেয় শুশুক তথা ডলফিন জাতীয় জলজ প্রাণীর মর্যাদা পেয়েছে ২০১০ সালে। কিন্তু জাতীয় জলজ প্রাণীর হওয়ার পরবর্তী ১০ বছরে এদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়মিত। জাতীয় জলজ প্রাণীর তকমা মিলেছে, কিন্তু আজ তাদের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ঢুকে পড়েছে বিপন্নের তালিকায়। একটা সময় দেখা যেত, গঙ্গার বুকে মাঝেমধ্যেই ভেসে উঠত শুশুক। আবার পরক্ষণেই জলে ডুব দিত।  এই সুন্দর দৃশ্য একটা সময় শিশুরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করত।


 ‘ওরা বসত করে ক’জনা’, তা রাজ্যের বন দফতরের অজানা। ‘ওরা’ গাঙ্গেয় ডলফিন, চলতি কথায় শুশুক। জলের দূষণ, জেলের জাল, নদীর বাঁধ ও মানুষের অত্যাচারে এই নিরীহ প্রাণীগুলো লুপ্ত হওয়ার পথে। শুশুক বাঁচাতে বহু দিন ধরে আন্দোলন করছে দেশের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, গত কয়েক দশকে গঙ্গায় শুশুকের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গিয়েছে। আইইউসিএন-এর ‘রেড ডেটা বুক’ অনুসারে আজ তারা বিপন্নের তালিকাভুক্ত। ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ বা ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গঙ্গায় চরম দূষণ এবং অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য শিকারের কারণে এদের সংখ্যা অত্যন্ত কমে গিয়েছে। চোরাশিকারিদের অবাধ বিচরণ এবং যত্রতত্র অনিয়ন্ত্রিত বাঁধ তৈরির কারণে এদের সংখ্যা উদ্বেজনক ভাবে কমছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া এবং বংশবৃদ্ধি। 


সাম্প্রতিক সমীক্ষায় আরও জানা যাচ্ছে,  বিহার সরকারের অনুদানে ‘জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’, ‘ওয়াইল্ড লাইফ অব ইন্ডিয়া’ এবং ভাগলপুরের টিলকামাঝি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে হাজার কিলোমিটার অঞ্চল বরাবর গঙ্গার শুশুকদের উপরে সমীক্ষা চা‌লানো হয়। এতে প্রায় ১,১৫টি০ শুশুকের সন্ধান মিলেছে। ২০০৫ সালে তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬০০। অথচ ১৯৮২ সালের গণনা অনুসারে দেখা যাচ্ছে এই সময়কালে তাদের সংখ্যা ছিল চার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে। গত শতকের এক সময়ে এই সংখ্যা ছিল প্রায় পঞ্চাশ হাজারের মতো। এদের সংখ্যা হ্রাসের কারণে জলজ বাস্তুতন্ত্রে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। বিশ্বে গাঙ্গেয় শুশুকের সংখ্যা মেরেকেটে ১,২০০ থেকে ১,৮০০। ২০১৭ সালে হুগলি নদীতে এই প্রজাতির শুশুকের সংখ্যা চিহ্নিত করে তাদের অস্তিত্ব সংকট সম্পর্কে সবিস্তারে রিপোর্ট দিয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড-এর (WWF) গবেষক দল। নদীর দূষিত জলে তাদের টিকে থাকার লড়াই দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন পরিবেশবিদরা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও তাদের সামর্থ্য অনুসারে যথেষ্টই কাজ করেছে। শুশুকদের উপরে সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য গঙ্গার ফরাক্কা থেকে ডায়মন্ড হারবার অঞ্চলটিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এটি হয়েছে রাজ্য সরকার ও ডব্লিউডব্লিউএফ-এর উদ্যোগে। প্রথম ভাগে রয়েছে ফরাক্কা ও ফিডার ক্যানাল, দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে বেলুড় মঠ, বর্ধমান এবং নবদ্বীপ লাগোয়া গঙ্গার অংশ। তৃতীয় ভাগে রয়েছে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা, এবং চতুর্থ ভাগে রয়েছে কোলাঘাট অঞ্চল। পঞ্চম ভাগে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার ও তার লাগোয়া এলাকা। সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবী ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে শুশুকদের সংরক্ষণের কাজে, তা না হলে কিন্তু পরবর্তী সময়ে গঙ্গার বুকে ভয়াবহ কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে। রাজ্য বনদপ্তরের উদ্যোগে ভাগীরথী ও অজয নদের সংযোগস্থলে রাজ্যের প্রথম গাঙ্গেয় শুশুক সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র তৈরি হল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায। 


কেন্দ্র গাঙ্গেয় শুশুক ও সামুদ্রিক ডলফিন, উভয় প্রাণীকেই সংরক্ষণ করবে। ‘প্রোজেক্ট ডলফিন’ একটি বহুমুখী প্রকল্প। এতে শুধু সংরক্ষণ নয় নদীর বাস্তুতন্ত্রের উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান ও পর্যটন ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনাও বাড়ার আশা। 




Wikipedia, প্রথম আলো, Hindustan Times Bangla, এইসময়, Banglapedia, আনন্দবাজার পত্রিকা

নিশীথ সূর্যের দেশ : নরওয়ে


একবার ভেবে দেখুন তো, যদি কোথাও ৬ মাস সূর্য ওঠে আর বাকি মাসগুলো অন্ধকারে থাকে, সেখানকার অবস্থা কেমন হবে? আবার এমনো হতে পারে, মধ্যরাতে হঠাৎ সূর্য উঠেছে আকাশে, তখন আপনার কেমন দশা হবে? তেমনই এক দেশ হলো নরওয়ে। এটি পৃথিবীর এমন একটি দেশ যেখানে মধ্যরাতে সূর্য ওঠে। সবসময় এমন ঘটনা না ঘটলেও বছরের বেশ কিছু সময়ে অনাকাঙ্খিত এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন সেখানকার জনগণ। এ ছাড়াও নরওয়ে সম্পর্কিত এমন অনেক তথ্য আছে; যেগুলো জানলে আপনি রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন!


নরওয়ে ইউরোপ মহাদেশের একটি রাজতান্ত্রিক দেশ। এটি সরকারিভাবে নরওয়ে রাজ্য হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বজুড়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এ দেশটি মূলত মধ্যরাতের সূর্যের দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন আছে নরওয়েতে। সেখানকার প্রতিটি স্থান দেখলে মনে হবে, রূপকথার একেকটি রাজ্য।


পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশ নরওয়ে। ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশে অবস্থিত নরওয়ের রাজধানী অসলোয় জুন-জুলাই মিলিয়ে দু’মাস সবসময় দিনের আলো থাকে। অর্থাৎ এ সময়ে এখানে সূর্য অস্ত যায় না। এর ফলে এ সময় রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে গোধূলির আলো দেখা যায় সারারাত।




বিশ্বব্যাপী নরওয়ে দেশটির পরিচিতি মধ্যরাতের সূর্যের দেশ বা নিশীথ সূর্যের দেশ  হিসেবে।  অর্থাৎ মধ্যরাতেও এই দেশটিতে সূর্যের দেখা মেলে। শুনতে অবাক লাগছে তাইনা? সূর্য তাও আবার মধ্যরাতে! অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে আকাশে সূর্য রয়েছে তাহলে দিন না হয়ে রাত কেন? অথবা রাতের বেলা আকাশে সূর্যই বা দেখা যাবে কি করে? আসলে, মধ্যরাতের সূর্য হচ্ছে এমন একটা ঘটনা যখন টানা ২৪ ঘন্টাই সূর্য দিগন্ত রেখার উপরে থাকে এবং ঐ সকল অঞ্চল সমূহ ২৪ ঘন্টা ই সূর্যের আলো পেয়ে থাকে। আবার একই ভাবে সূর্য যখন দিগন্ত রেখার নিচে অবস্থান করে তখন ঐ অঞ্চল সমূহে ২৪ ঘন্টাই রাতের অন্ধকার থাকে। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক এই বিষয়ে-


পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত নরওয়ের প্রাকৃতিক ঘটনা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ২৪ ঘন্টা ব্যাপী সূর্যের আলো বিদ্যমান থাকা। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে নরওয়ের কিছু অঞ্চলে ২ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত একটানা সূর্যের আলো বিদ্যমান থাকে এবং রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে আকাশে গোধূলির আলো ফুটে থাকে। নরওয়ে ছাড়াও উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত কয়েকটি দেশ যেমনঃ সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং আইসল্যান্ডেও একই ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু নরওয়েরই বেশিরভাগ অঞ্চল উত্তর গোলার্ধের মধ্যে অবস্থিত এবং সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পাওয়া যায়। আর এই কারনেই নরওয়ে মধ্যরাতের সূর্যের দেশ বা 'নিশীথ সূর্যের দেশ' হিসেবে পরিচিত।


২৪ ঘন্টা সূর্যের আলো থাকার কারণ হচ্ছে নরওয়ের ভৌগোলিক অবস্থান। ভৌগোলিকভাবে উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল তখন সুমেরু বৃত্ত থেকে যত উত্তরে বা উপরের দিকে যাওয়া যায় ততই সূর্যের আলো বেশি সময় ধরে পাওয়া যায়। উত্তর গোলার্ধের সর্বোচ্চ স্থান বা সর্ব উত্তরে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস সূর্য আলো দেয় এবং তার পর ৬ মাস অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। অর্থাৎ এই ৬ মাস উত্তরগোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে। নরওয়ের সালবার্ড (Svalbard) দ্বীপপুঞ্জ উত্তর গোলার্ধের জনসংখ্যা অধ্যুষিত সর্ব উত্তরের স্থান। এই অঞ্চলে ১৯ শে এপ্রিল থেকে ২৩ শে আগষ্ট পর্যন্ত একটানা প্রায় ৪ মাস সূর্য আলো দেয়। এছাড়াও অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন স্থানে ২-৩ মাস পর্যন্ত একই ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। তবে মধ্যরাতের সূর্য সবচেয়ে ভালো দেখা যায় ২১ জুন।


প্রাকৃতিক এই ঘটনাটিকে হোয়াইট নাইট বা শ্বেতরাত্রি বলা হয়। কারণ এই সময় স্বাভাবিক নিয়মে সূর্য উঠলেও তা অস্ত না গিয়ে দিগন্ত রেখার উপরে অবস্থান করে এবং রাতের বেলাও আকাশকে মৃদু আলোয় উদ্ভাসিত রাখে।



প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই অনন্য সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে নরওয়েতে আসেন।


বিশ্বজুড়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশটির পরিচিতি মূলত মধ্যরাতের সূর্যের দেশ হিসেবে থাকলেও এটি ছাড়াও এই দেশটির বিশেষত্ব হিসেবে রয়েছে এর বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেমন- রুপকথার গল্পের মত সুন্দর সব সমুদ্রখাত, অরোরা বোরিয়ালিস বা উত্তরের আলো, তুষার ঢাকা বিস্তৃত মালভুমি আর অবিশ্বাস্য সুন্দর সব পর্বতমালা।


মধ্যরাতের সূর্যের মত আরও একটি মনোমুগ্ধকর ঘটনা হচ্ছে রাতের আকাশ জুড়ে বর্ণময় আলোর খেলা, যা অরোরা বোরিয়ালিস বা নর্দার্ণ লাইটস নামে পরিচিত। নরওয়েতে গ্রীষ্মকালে ৬ মাস যেমন সূর্যের আলো থাকে ঠিক তেমনই শীতকালে এই অঞ্চলটি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। আর এই সময়েই দেখা মেলে অরোরা বোরিয়ালিস বা সুমেরুপ্রভা। এই মহাজাগতিক আলোর খেলা সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্ধকার রাত্রিতে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারনত উচ্চ অক্ষাংশ অঞ্চল সমূহে এই ঘটনা দেখা যায় এবং নরওয়ে ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য মেরু অঞ্চলেও অরোরা দেখতে পাওয়া যায়।


নরওয়ের অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আরেকটি উৎস হল সামুদ্রিক খাড়ি যা ফিয়র্ড নামে পরিচিত। সংকীর্ণ খাড়ি গুলো মনোমুগ্ধকর এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সৃষ্টি করে যা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। 


নরওয়েতে রয়েছে হাজার হাজার নয়নাভিরাম হ্রদ। মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি এ সকল হ্রদে পাওয়া যায় ইউরোপের সবচেয়ে সুস্বাদু স্যামন মাছ। ইউরোপের সবচেয়ে গভীর হ্রদ Hornindalsvatnet নরওয়েতে অবস্থিত । এই হ্রদের আয়তন ৫১ বর্গ কি.মি., গভীরতা ৫১৪ মিটার (১৬৮৬ ফুট)। এর উপরিভাগ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৩মি. (১৭৪ ফুট) উচুতে এবং তলদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৬১ মি. (১৫১২ ফুট) গভীরে।


নরওয়ের সৌন্দর্য্যের আধার বলা হয় উত্তর নরওয়েতে অবস্থিত লোফোটেন দ্বীপপুঞ্জকে। এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বেলাভূমি থেকে শুরু করে সুউচ্চ পর্বত শ্রেণি, রহস্যময় সমুদ্র খাড়ি, ছবির মত সুন্দর জেলেদের গ্রাম আর সবুজের সমারোহ। এখানে একটি ভাইকিং মিউজিয়ামও রয়েছে যা ভাইকিং ইতিহাসের বিভিন্ন সাক্ষ্য বহন করে। নরওয়ে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্য নয়, এর ইতিহাস এবং বর্ণীল সংস্কৃতির জন্যও সুপরিচিত। নরওয়ের শহর এবং নগরগুলো সার্বজনীন এবং নজর কাড়া স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্থাপত্যে ভরপুর। নরওয়ের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে ফ্রেডরিকস্ট্যাড দূর্গ, স্ট্যাইভ চার্চ, নিডারোস ক্যাথেড্রাল, জার্মান স্থাপনার আদলে তৈরি বাণিজ্যিক ভবন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও নরওয়েতে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ পথ যা ২৪.৫ কি.মি. দীর্ঘ। 


নরওয়ের প্রাণী বৈচিত্র্যও অসাধারন এবং অবিশ্বাস্য। এখানে রয়েছে তুষার শুভ্র সুমেরু শিয়াল থেকে শুরু করে বল্গা হরিণ, তিমি, সাদা লেজ যুক্ত ঈগল, মেরু ভালুক, সিন্ধু ঘোটক এবং আরও অনেক ধরনের প্রাণী। আর্কটিক ল্যান্ডস্কেপ, উত্তরে বনাঞ্চল আর জটিল উপকূল ভূমির কারণে উত্তর নরওয়েতে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।


 তথ্যসূত্র:

Wikipedia, Quora, myfuturepoint, techtunes, ইতিবৃত্ত, রোদ, বাংলাদেশ জার্নাল, Jagonews24

ভারতে জাতীয় পাখি : ময়ূর

 

ময়ূর (Peafowl) ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অত্যন্ত সুন্দর এক পাখি। এশিয়ায় পাভো (Pavo) গণে মোট দুই প্রজাতির এবং আফ্রিকায় আফ্রোপাভো (Afropavo) গণে একটি ময়ূরের প্রজাতি দেখা যায়। এশিয়ায় প্রাপ্ত ময়ূরের প্রজাতি দু’টি হল নীল ময়ূর আর সবুজ ময়ূর। এই নীল ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি।



আমাদের সকলেরই ময়ূরের সঙ্গে কম বেশী পরিচিতি আছে। পুরুষ পাখি 'ময়ূর' এবং স্ত্রী পাখি ‘ময়ূরী’ নামে পরিচিত। ময়ূর বৈচিত্রময়, রঙিন, রাজহাঁসের মতো বড় পাখি, পাখার মতো ঝুঁটিবিশিষ্ট, চোখের নীচে সাদা দাগ এবং লম্বা ও সরু গলাবিশিষ্ট। এই জাতের মধ্যে পুরুষগুলি নারীদের থেকে বর্ণময় হয়, নীল চকচকে বুকের দিক ও ঘাড়, দর্শনীয় ব্রোঞ্জ-সবুজ লেজ, যাতে প্রায় ২০০ টির মত লম্বা পালক থাকে। স্ত্রী পাখিরা বাদামি ধরনের, আকৃতি একটু ছোট হয় এবং লেজ থাকে না। পুরুষ ময়ূর দেখতে খুব সুন্দর হলেও এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ। ময়ূরের ডাককে বলা হয় কেকা। স্ত্রী ময়ূরকে আকৃষ্ট করার জন্যই পুরুষ ময়ূর পেখম তোলে। এ কারণেই এরা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পাখার মতো লেজ ছড়িয়ে এবং পালক ফুলিয়ে পুরুষদের প্রেম-প্রার্থনার নাচ সত্যিই দেখার মতো। স্ত্রী ময়ূরও পেখম তোলে তবে তা শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য। স্ত্রী ময়ূরের পেখম আকারে অনেক ছোট হয়।


ময়ূর বন্য পাখি। ময়ূরের সব প্রজাতিই সাধারণত বনে বাস করে এবং মাটিতে বাসা বাঁধে। মাটির গর্তে বাস করে কিন্তু গাছে বিশ্রাম করে। তবে মাঝে মাঝে এদের লোকালয়েও দেখা যায়। বিশেষ করে সংরক্ষিত এলাকায় এরা মানুষের খুব কাছে চলে আসে। 

 

এরা সর্বভূক প্রাণী। চারা গাছের অংশ, কীটপতঙ্গ, সাপ, বীজের খোসা, ফুলের পাপড়ি এবং ছোট ছোট সন্ধিপদী প্রাণী ইত্যাদি খায়। তবে সংরক্ষিত এলাকায় এরা মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজে লোকালয়েও চলে আসে। এরা টিরেস্ট্রিয়াল খাদক শ্রেণীর অন্তরভুক্ত। এরা ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। ছোট বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের সাথে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। বিপদ দেখলেই মায়ের ডানার নিচে এসে লুকায়। ছোট বাচ্চারা মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের পালকের আড়ালে, আবার কখনোবা পিঠের উপর লাফিয়ে ওঠে। সাধারনত শত্রুর কাছ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য Galliformes বর্গের প্রাণীদের মত এরাও এদের মেটাটারসাল (পায়ের নখর) ব্যবহার করে।


সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এদের দেখা যায়। ১লা ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ সালে ভারতীয় ময়ূরকে ( Pavo cristatus ) ভারতের জাতীয় পাখি হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ভারত ছাড়াও নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা সহ সমগ্র বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশে এই প্রজাতির ময়ূর পাওয়া যায়। সবুজ ময়ূর মায়ানমার থেকে জাভা পর্যন্ত বিস্তৃত। ভারতের প্রায় সব অংশে ময়ূরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে সবুজ ও নীল ময়ূরের পাশাপাশি সাদা ময়ূরও দেখা যায়। এদের দেহ সাদা ও চোখ নীল। প্রকৃতপক্ষে নীল ময়ূরই জিনগত মিউটেশনের কারণে সাদা বর্ণ ধারণ করে। তবে ভারতীয় ময়ূরের মত সাদা ময়ূরের পেখমে সোনালী পালক বা নীল রংয়ের বড় ফোঁটা নেই। সাদা ময়ূর সম্পূর্ণ সাদা।


১৯৬৩ সালে ময়ূরকে ভারতের জাতীয় পাখি হিসাবে ঘোষণা করা হয়, কারণ এটি সামগ্রিকরূপে ভারতের প্রচলিত রীতিনীতি ও সংস্কৃতির এক অংশ ছিল। ময়ূর হল লাবণ্য ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক। ময়ূরকে জাতীয় পাখি রূপে মনোনীত করার আরেকটি কারণ হল সারা দেশ জুড়ে তার উপস্থিতি। এমনকি সাধারণ মানুষও পাখির সঙ্গে খুব বেশিই পরিচিত। তাছাড়াও, এখনও পর্যন্ত আর অন্য কোনও দেশে তাদের জাতীয় পাখি হিসাবে ময়ূর ছিল না। ময়ূর এই সমস্ত কিছুকে পরিপূর্ণ করেছে, অতঃপর ভারতের জাতীয় পাখি হয়ে উঠেছে।


ময়ূরের পালককে অনেকেই মঙ্গলের চিহ্ন হিসেবে ভেবে থাকে। সে জন্যই যে কোনো শুভ কাজে বা মঙ্গলের চিহ্ন হিসেবে ময়ূরের পালক ব্যবহার করা হয়। ময়ূরকে ধন-সম্পদের প্রতীক হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। আর এই কারণেই বাড়িতে ধন-সম্পদের বৃদ্ধি করতে অনেকে বাড়িতে ময়ূরের পালক রাখেন। ময়ূরের পেখম নিয়েও বিভিন্ন  কাহিনী  শোনা যায়। পুরাণ ঘাঁটলে একাধিক পশু পাখির উল্লেখ পাওয়া যায়। বা ধরুন মহাভারত বা রামায়নের মতো একাধিক জায়গায় একাধিক পশু পাখির উল্লখ পাওয়া যায়। ময়ূর সেভাবে এখন দেখা না মিললেও একরকম ভাবে একে প্রেমের প্রতিক মানা হয়ে থাকে। শ্রীকৃষ্ণের মুকুটে ময়ূরের পালক লক্ষ্য করা যায়। ময়ূর হল লাবণ্য ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক হলেও বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।


ঐতিহাসিকভাবে প্রজাতিটি মায়ানমারের জাতীয় প্রতীক এবং 1963 সালে ময়ূর, ভারতের জাতীয় পাখি হিসাবে ঘোষিত হলেও ময়ূর সংরক্ষণের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ময়ূরের পালক বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্য ময়ূর হত্যা ও চোরাশিকারিদের কারণে এদের সংখ্যা উদ্বেজনক ভাবে কমছে। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে এদের দেখা মিললেও বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। পূর্বে বাংলাদেশে এরা বিস্তৃত থাকলেও এখন তা সম্ভবত বিলুপ্ত। বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে বিশ্বব্যাপী এই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে এরা বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত।

 


তথ্যসূত্র:

1) https://bn.vikaspedia.in

2) https://www.onlineshikkhasite.com

3) https://bn.quora.com

4) www.wikipedia.org

5) https://flimandsports.com


লেখক:

অয়ন বিশ্বাস

ঘোড়ালিয়া,শান্তিপুর,নদিয়া।

Saturday 7 August 2021

জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস (National Handloom Day)

    জাতীয় তাঁত দিবস। প্রতি বছর ৭ আগস্ট  পালিত হয় জাতীয় তাঁত দিবস।১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউন হলে এই দিনেই স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, বিদেশি পণ্য বর্জন করে স্বদেশী পণ্য গ্রহণ। তার স্মরণে ৭ই অগাস্ট জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে থাকে।


দেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে তুলে ধরতে এবং তাঁতিদের সম্মানের উদ্দেশ্যেই ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর এই দিনটিকে জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালের ৭ই অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবসের সূচনা করেছিলেন।   




তাঁত হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্র যা দিয়ে তুলো বা তুলো থেকে উৎপন্ন সুতো থেকে কাপড় তৈরি হয়। সাধারণত তাঁত নামক যন্ত্রটিতে সুতো কুণ্ডলী আকারে টানটান করে ঢুকিয়ে দেওয়া থাকে । লম্বালম্বি সুতাগুলিকে টানা এবং আড়াআড়ি সুতাগুলিকে পোড়েন বলা হয়। যখন তাঁত চালু করা হয় তখন নির্দিষ্ট সাজ অনুসারে সুতা টেনে নেয়া হয়। তাঁতের আকার এবং এর ভেতরের কলা কৌশল বিভিন্ন রকমের হতে পারে। বাংলা তাঁত যন্ত্রে ঝোলানো হাতল টেনে সুতো জড়ানো মাকু (spindle) আড়াআড়ি ছোটানো হয়। মাকু ছাড়াও তাঁতযন্ত্রের অন্যান্য প্রধান অঙ্গগুলি হল - শানা, দক্তি ও নরাজ । শানার কাজ হল টানা সুতার খেইগুলিকে পরস্পর পাশাপাশি নিজ নিজ স্থানে রেখে টানাকে নির্দিষ্ট প্রস্থ বরাবর ছড়িয়ে রাখা। শানার সাহায্যেই কাপড় বোনার সময় প্রত্যেকটি পোড়েনকে ঘা দিয়ে পরপর বসানো হয়। শানাকে শক্ত করে রাখার কাঠামো হল দক্তি। একখানি ভারী ও সোজা চওড়া কাঠে নালী কেটে শানা বসানো হয় আর তার পাশ দিয়ে কাঠের উপর দিয়ে মাকু যাতায়াত করে। শানাটিকে ঠিক জায়গায় রাখার জন্য তার উপরে চাপা দেওয়ার জন্য যে নালা-কাটা কাঠ বসানো হয় তার নাম মুঠ-কাঠ। শানা ধরে রাখার এই দুখানি কাঠ একটি কাঠামোতে আটকে ঝুলিয়ে রাখা হয় । এই সমগ্র ব্যবস্থাযুক্ত যন্ত্রটির নাম দক্তি ।


শানায় গাঁথা আবশ্যকমত প্রস্থ অনুযায়ী টানাটিকে একটি গোলাকার কাঠের উপর জড়িয়ে রাখা হয়, একে বলে টানার নরাজ । আর তাঁতি যেখানে বসে তাঁত বোনে , সেখানে তার কোলেও একটি নরাজ থাকে- তার নাম কোল-নরাজ । টানার নরাজের কাজ হল টানার সুতাকে টেনে ধরে রাখা আর কোল-নরাজের কাজ হল কাপড় বোনার পর কাপড়কে গুটিয়ে রাখা ।  "তাঁত বোনা" শব্দ কটি এসেছে "তন্তু বয়ন" থেকে। তাঁত বোনা যার পেশা সে হল তন্তুবায় বা তাঁতী।


 তাঁত শিল্প মূলত কুটির শিল্প। দিনের পর দিন আমাদের দেশে ঐতিহ্যময় কুটির শিল্পগুলি ধ্বংসপ্রায় । তাই তাঁত ও হ্যান্ডলুম ব্যবসায়ীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকার তৎপর হয়ে উঠেছে। এই বিশেষ দিনটিতে তাঁতিদের কারুশিল্প এবং কারুকার্যর জন্য ‘সন্তু কবি’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁত শিল্পীরা এইজন্য তাঁদের শৈল্পিক কাজে আরো বেশি উৎসাহী হন।


তবে এই হাতে বোনা সুতির কাপড় বহুদিন আগে থেকে ভারতে প্রচলিত। প্রাচীনে রাজা এবং রানিরা যে সমস্ত হাতে বোনা পোশাক পরতেন তা অত্যন্ত ঐশ্বর্য এবং সৌর্যের পরিচয় বাহক। তাঁত শিল্প আসলে কুটির শিল্প হলেও, তা আমাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে রেখেছে আষ্টেপৃষ্ঠে।


তথ্যসূত্র: Editorji বাংলা,  Calcatanews, প্রতিবেদন, Wikipedia.


লেখক:

অয়ন বিশ্বাস

ঘোড়ালিয়া,শান্তিপুর,নদিয়া।

Tuesday 20 July 2021

জমি জরিপ (Land Measurement)

ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মানভূম ইত্যাদি বিভিন্ন এলাকায় এককের মানে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বিঘা, কাঠা, শতক, ছটাক ইত্যাদি জমি পরিমাপের এককগুলির নাম প্রায় সকলেই অল্পবিস্তর শুনেছেন, কিন্তু এক বিঘা বা এক কাঠা জমি বলতে প্রায় কতটা জায়গা বোঝায় সেটা ধারণা করা অনেকের পক্ষেই মুশকিল। কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ পরিমাপের ক্ষেত্রে মিটার, সেন্টিমিটার, ফুট ইত্যাদি এককগুলোই বেশি ব্যবহার করে আসছি। আর তাই এই এককগুলোর সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণাও রয়েছে, যেমনঃ ১ ফুট বলতেই পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করা কাঠের স্কেলের কোথায় আগে মাথায় আসবে। কোনো জায়গার মোট পরিমাপ মানে ক্ষেত্রফল বোঝাতে বর্গফুট বা বর্গমিটার ইত্যাদি এককই বেশি ব্যবহৃত হয়, আর তাই এগুলো নিয়েও আমাদের কিছুটা ধারণা আছে। কিন্তু বিঘা, কাঠা এগুলো দিয়ে  সাধারনত বড় জায়গা পরিমাপ করা হয়, তাই এক বিঘা জমি বলতে কত বর্গফুট জমি বোঝায় সেটা জানতে পারলে জায়গাটার পরিমাপ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়।



ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিল লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজে ব্যবহার্য দুই প্রকার পরিমাপ হলো শতাংশের হিসাব ও কাঠা'র হিসাব। এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক এই যে, এক একরের এক শত ভাগের এক ভাগকে বলা হয় "এক-শতাংশ" জমি। অধিকতর প্রচলিত শব্দবন্ধ হলো "এক ডেসিমাল জমি"। অন্যদিকে কাঠার উর্ধ্বতর একক হলো "বিঘা" এবং বিঘা'র উর্ধ্বতর একক হলো "একর।" ২০ কাঠা সমান এক বিঘা জমি এবং তিন বিঘা সমান এক একর জমি। এই পরিমাপ সর্বজনীন, এবং "প্রমিত মান" (Standard Measurement) হিসেবে সরকারীভাবে অনুমোদিত। তবে আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে কখনো কখনো সরকারী কাগজে হেক্টর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


দলিলঃ যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মোতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবেতাকে দলিল বলে।


মৌজা: CS জরিপ / ক্যাডষ্টাল জরিপ করা হয় তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা অালাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিহ্তি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।। এক বা একাদিক গ্রাম বা পাড়া নিয়ে একটি মৌজা ঘঠিত হয়।

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে সিএস, এসএ এবং আরএস উল্লেখযোগ্য। ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে “খতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। 

সি এস খতিয়ানঃ ১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত।

এস এ খতিয়ানঃ ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত। কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত। বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্রস্তুত হয় বলে বেশির ভাগ মানুষের কাছে এসএ খতিয়ান ৬২র খতিয়ান নামেও পরিচিত।

আর এস খতিয়ানঃ একবার জরিপ হওয়ার পর তাতে উল্লেখিত ভুলত্রুটি সংশোধনের জন্য পরবর্তীতে যে জরিপ করা হয় তা আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। দেখা যায় যে, এসএ জরিপের আলোকে প্রস্তুতকৃত খতিয়ান প্রস্তুতের সময় জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে তদন্ত করেনি। তাতে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। ওই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি মাপ-ঝোঁক করে পুনরায় খতিয়ান প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই খতিয়ান আরএস খতিয়ান নামে পরিচিত। সারাদেশে এখন পর্যন্ত তা সমাপ্ত না হলেও অনেক জেলাতেই আরএস খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

সরকারি আমিনরা মাঠে গিয়ে সরেজমিনে জমি মাপামাপি করে এই খতিয়ান প্রস্তুত করেন বলে তাতে ভুলত্রুটি কম লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এই খতিয়ান বি এস খতিয়ান নামেও পরিচিত।

বি এস খতিয়ানঃ সর্ব শেষ এই জরিপ ১৯৯০ সালে পরিচালিত হয়। ঢাকা অঞ্চলে মহানগর জরিপ হিসাবেও পরিচিত।

.


= “খানাপুরি” কাকে বলে?

জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কর্তৃক পূরন করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।

.

= নামজারি কাকে বলে ?

ক্রয়সূত্রে/উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যেকোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলা হয়।

.

= “তফসিল” কাকে বলে?

জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।

.

= “দাগ” নাম্বার কাকে বলে? /  কিত্তা কি ?

দাগ শব্দের অর্থ ভূমিখ-। ভূমির ভাগ বা অংশ বা পরিমাপ করা হয়েছে এবং যে সময়ে পরিমাপ করা হয়েছিল সেই সময়ে ক্রম অনুসারে প্রদত্ত ওই পরিমাপ সম্পর্কিত নম্বর বা চিহ্ন।

যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে। একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে। মূলত, দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খূটিঁ বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়। দাগকে কোথাও কিত্তা বলা হয়।

.

= “ছুটা দাগ” কাকে বলে?

ভূমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা দাগ বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুন: সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।

.

= পর্চা কীঃ / “পর্চা” কাকে বলে?

ভূমি জরিপকালে চূড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভুমি মালিকদের প্রদান করা করা হয় তাকে “মাঠ পর্চা” বলে। এই মাঠ পর্চা রেভিনিউ/রাজস্ব অফিসার কর্তৃক তসদিব বা সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তাহলে তা শোনানির পর খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে “পর্চা” বলে।

.

= চিটা কাকে বলে?

একটি ক্ষুদ্র ভূমির পরিমাণ, রকম ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণ চিটা নামে পরিচিত। বাটোয়ারা মামলায় প্রাথমিক ডিক্রি দেয়ার পর তাকে ফাইনাল ডিক্রিতে পরিণত করার আগে অ্যাডভোকেট কমিশনার সরেজমিন জমি পরিমাপ করে প্রাথমিক ডিক্রি মতে সম্পত্তি এমনি করে পক্ষদের বুঝায়ে দেন। ওই সময় তিনি যে খসড়া ম্যাপ প্রস্তুত করেন তা চিটা বা চিটাদাগ নামে পরিচিত।

.

= দখলনামা কাকে বলে?

দখল হস্তান্তরের সনদপত্র। সার্টিফিকেট জারীর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তি নিলাম খরিদ করে নিলে সরকার পক্ষ সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর যে সনদপত্র প্রদান করেন তাকে দখলনামা বলে।

সরকারের লোক সরেজমিনে গিয়ে ঢোল পিটিয়ে, লাল নিশান উড়ায়ে বা বাঁশ গেড়ে দখল প্রদান করেন। কোনো ডিক্রিজারির ক্ষেত্রে কোনো সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় হলে আদালত ওই সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যে সার্টিফিকেট প্রদান করেন তাকেও দখলনামা বলা হয়। যিনি সরকার অথবা আদালতের নিকট থেকে কোনো সম্পত্তির দখলনামা প্রাপ্ত হন, ধরে নিতে হবে যে, দখলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে দখল আছে।

.

= “খাজনা” ককে বলে?

সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।.

.

= বয়নামা কাকে বলে?

১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির ২১ আদেশের ৯৪ নিয়ম অনুসারে কোনো স্থাবর সম্পত্তির নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে আদালত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তির বিবরণ সংবলিত যে সনদ দেন তা বায়নামা নামে পরিচিত।

বায়নামায় নিলাম ক্রেতার নামসহ অন্যান্য তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ থাকে। কোনো নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হলে ক্রেতার অনুকূলে অবশ্যই বায়নামা দিতে হবে।

যে তারিখে নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হয় বায়নামায় সে তারিখ উল্লেখ করতে হয়।

.

= জমাবন্দিঃ

জমিদারি আমলে জমিদার বা তালুকদারের সেরেস্তায় প্রজার নাম, জমি ও খাজনার বিবরণী লিপিবদ্ধ করার নিয়ম জমাবন্দি নামে পরিচিত। বর্তমানে তহশিল অফিসে অনুরূপ রেকর্ড রাখা হয় এবং তা জমাবন্দি নামে পরিচিত।

.

= দাখিলা কাকে বলে?

সরকার বা সম্পত্তির মালিককে খাজনা দিলে যে নির্দিষ্ট ফর্ম বা রশিদ ( ফর্ম নং১০৭৭) প্রদান করা হয় তা দাখিলা বা খাজনার রশিদ নামে পরিচিত।

দাখিলা কোনো স্বত্বের দলিল নয়, তবে তা দখল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে।

.

= DCR কাকে বলে?

ভূমি কর ব্যতিত আন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।

.

=“কবুলিয়ত” কাকে বলে?

সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।

.

= “ফারায়েজ” কাকে বলে?

ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফারায়েজ বলে।

.

= “ওয়ারিশ” কাকে বলে?

ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী । ধর্মীয় বিধানের অনুয়ায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরন করলেতার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্মীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।

.

= হুকুমনামা কাকে বলে?

আমলনামা বা হুকুমনামা বলতে জমিদারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নেয়ার পর প্রজার স্বত্ব দখল প্রমাণের দলিলকে বুঝায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে জমিদার কর্তৃক প্রজার বরাবরে দেয়া জমির বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নির্দেশপত্রই আমলনামা।

.

= জমা খারিজ কিঃ

জমা খারিজ অর্থ যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করা। প্রজার কোন জোতের কোন জমি হস্তান্তর বা বন্টনের কারনে মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমি নিয়ে নুতন জোত বা খতিয়ান খোলাকে জমা খারিজ বলা হয়।  অন্য কথায় মূল খতিয়ান থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।

.

= “

.

= “আমিন” কাকে বলে?

ভূমি জরিপের মাধ্যমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তত ও ভূমি জরিপ কাজে নিজুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।

.

= “কিস্তোয়ার” কাকে বলে?

ভূমি জরিপ কালে চতুর্ভুজ ও মোরব্বা প্রস্তত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব ভৌগলিক চিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।

.

= “সিকস্তি” কাকে বলে?

নদী ভাংঙ্গনের ফলে যে জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় তাকে সিকন্তি বলে। সিকন্তি জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হয় তাহলে সিকন্তি হওয়ার প্রাক্কালে যিনি ভূমি মালিক ছিলেন তিনি বা তাহার উত্তরাধিকারগন উক্ত জমির মালিকানা শর্ত সাপেক্ষ্যে প্রাপ্য হবেন।


= “পয়ন্তি” কাকে বলে?

নদী গর্ভ থেকে পলি মাটির চর পড়ে জমির সৃষ্টি হওয়াকে পয়ন্তি বলে।

-------------------------

বর্গগজ, বর্গফুট অনুযায়ী পরিমান

৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর

৪৩৫৬০ বর্গফুট = ১ একর

১৬১৩ বর্গগজ = ১ বিঘা

১৪৫২০ বর্গফুট = ১ বিঘা

৮০.১৬ বর্গগজ = ১ কাঠা

৭২১.৪৬ বর্গফুট = ১ কাঠা

৪৮.৪০ বর্গগজ = ১ শতাংশ

৪৩৫.৬০ বর্গফুট = ১ শতাংশ

৫.০১ বর্গগজ = ১ ছটাক

৪৫.০৯ বর্গফুট = ১ ছটাক

১.১৯৬ বর্গগজ = ১ বর্গমিটার

১০.৭৬ বর্গফুট = ১ বর্গমিটার

টিকা: কোন ভূমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গুণফল যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১ একর হবে। যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০×২২ গজ = ৪৮৪০ বর্গগজ।

হেক্টর অনুযায়ী পরিমান

১ হেক্টর = ২.৪৭ একর

১ হেক্টর = ৭.৪৭ বিঘা

১ হেক্টর = ১০০ এয়র

কাঠা, বিঘা, একর অনুযায়ী পরিমান

১ কাঠা = ১৬ ছটাক

১ কাঠা = ১.৬৫ শতাংশ

১ কাঠা = ১৬৫ অযুতাংশ

১ বিঘা = ৩৩ শতাংশ

১ বিঘা = ২০ কাঠা

১ একর = ১০০ শতাংশ

১ একর = ৬০.৬ কাঠা

১ একর = ৩.০৩ বিঘা

টিকা: একশত শতাংশ বা, এক হাজার সহস্রাংশ বা, দশ হাজার অযুতাংশ = ১ একর। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চার অঙ্ক হলে অযুতাংশ পড়তে হবে।

কিলোমিটার, মিটার, সেন্টিমিটার, মিলিমিটার, মাইক্রোমিটার, মাইল, গজ, ফুট, ইঞ্চি অনুযায়ী পরিমান

১ কিলোমিটার = ১০০০ মিটার

১ কিলোমিটার = ১০৯৩.৬১ গজ

১ কিলোমিটার = ০.৬২ মাইল

১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার

১ সেন্টিমিটার = ১০ মিলিমিটার

১ মিলিমিটার = ১০০০ মাইক্রোমিটার

১ মাইক্রোমিটার = ১০০০ ন্যানোমিটার

১ মাইল = ১৭৬০ গজ

১ মাইল = ১.৬ কিলোমিটার

১ গজ = ৩ ফুট

১ ফুট = ১২ ইঞ্চি

১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার

বিভিন্ন প্রকারের আঞ্চলিক পরিমাপ

বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের আশেপাশের ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি। অঞ্চল ভেদে এই পরিমাপগুলো আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হলেও সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর, শতক পদ্ধতিতে করা হয়। সারাদেশে একর শতকের হিসাব সমান।

কানি: কানি দুই প্রকার। যথা -

(ক) কাচ্চা কানি

(খ) সাই কানি

কাচ্চা কানি: ৪০ শতকে এক কাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতকে হয় বলে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয়।

সাই কানি: এই কানি কোথাও ১২০ শতকে ধরা হয়। আবার কোথাও কোথাও ১৬০ শতকেও ধরা হয়।

কানি গন্ডার সাথে বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের তুলনা:

১ গন্ডা = ৪ কড়া

১ গন্ডা = ৮৬৪ বর্গফুট

১ কড়া = ২১৬ বর্গফুট

১ কানি = ২০ গন্ডা

১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট

২ কানি ১০ গন্ডা = ১ একর

১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট

১ কানি = ১৯৩৬ বর্গগজ

১ কানি = ১৬১৯ বর্গমিটার

১ কানি = ৪০,০০০ বর্গ লিঙ্ক

১ একর = ১০ বর্গ চেইন

১ একর = ১০০ শতক

১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার

১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক

ছটাক, বিঘা এবং কাঠার হিসাব

১ ছটাক = ২০ গন্ডা

১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট

১ কাঠা = ১৬ ছটাক

১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট

১ বিঘা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত

১ বিঘা = ২০ কাঠা

১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক

১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট




জমি মাপের সহজ আধুনিক পদ্ধতিঃ

ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সঠিক এবং সহজ করার জন্য ইংরেজ বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরনের শিকল আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারেই এই শিকলের নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। আমাদের দেশে গান্টার শিকল দ্বারা জমি জরিপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। একর, শতক এবং মাইলষ্টোন বসানোর জন্য গান্টার শিকল অত্যন্ত উপযোগী। এই শিকলের দৈর্ঘ্য ২০.৩১ মিটার (প্রায়) বা ৬৬ ফুট।

গান্টার শিকল ভূমি পরিমাপের সুবিধার্থে একে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় থাকে। এর প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। প্রতি লিংকের দৈর্ঘ্য ৭.৯২ ইঞ্চি এর দু মাথায় দুটো হাতল এবং দশম লিংক একটি করে “পেন্ডিল” বা পুলি আছে।

দৈর্ঘ্য ১০ চেইন × প্রস্থে ১ চেইন = ১০ বর্গ চেইন = ১ একর

আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন বা সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমাণ বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক।

গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পর পর নস বা ফুলি স্থাপন করা হয়

২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়

৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়

৪০ লিঙ্ক বা ৩১৬.৮ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়

৫০ লিঙ্ক বা ৩৯৬.০ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়

৮০ গান্টার বা ১৭৬০ গজ পর স্থাপিত হয় - মাইল ষ্টোন

 লিঙ্ক অনুযায়ী পরিমান

১ লিঙ্ক = ৭.৯ ইঞ্চি

৫ লিঙ্ক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি

১০ লিঙ্ক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চি

১৫ লিঙ্ক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি

২০ লিঙ্ক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি

২৫ লিঙ্ক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি

৪০ লিঙ্ক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি

৫০ লিঙ্ক = ৩৩ ফুট

১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট

১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল

১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক

১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর


ইদানিং ফিতা/টেপ ব্যবহার করেও জমি পরিমাপ করা হয়। সার্ভেয়ার বা আমিন সব সময় পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হিসাব ও পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি নিজেই জমি পরিমাপ করতে পারবেন।


হিসাবটি হলোঃ

=========

১০০০ বর্গ লিংক (৩১.৬২x৩১.৬২ লিংক) ১ শতাংশ।


১৯৪.৬ বর্গ হাত (১৩.৯৫x১৩.৯৫ হাত) = ১ শতাংশ।


১০.০০০ বর্গ লিংক(১x১ চেইন) = ১০ শতাংশ।


৩৩.৩ শতাংশ কার্যত ৩৩ শতাংশ = ১ বিঘা। (ষ্টান্ডার্ড বিঘা)


১০০ শতাংশ বা ৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর।


৪৮৪০x৯ (৯ বর্গফুট = ১ বর্গ গজ বলে = ৪৩৫৬০ বর্গফুট।


৪৩৫৬০ ১০০ (১০০ শতাংশ ১ একর বলে)= ৪৩৫.৬ বর্গফুট।


অতএব ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট বা ৪০.৪৬ বর্গমিটার (প্রায়)


আমাদের দেশে কোথাও ৩৫ শতাংশে ১ বিঘা, কোথাও ৩৩ শতাংশে ১ বিঘা আবার ইদানিং ৩০ শতাংশে ১ বিঘা বলা হচ্ছে।


যদিও সরকারি বিঘা ৩৩ শতাংশেই গুণ করা হয়। অপরদিকে কাঠার পরিমাণ শতাংশের পরিমাণে স্থান বিশেষ পার্থক্য হলেও ২০ কাঠায় ১ বিঘার হিসেবে সর্বত্র প্রচলিত ও স্বীকৃত আছে।


বিঘা থেকে কাঠা ও শতাংশ বের করার পদ্ধতিঃ

৩৫ শতাংশ ১ বিঘা ধরে হিসেব করলে ১ কাঠা = ১.৭৫ শতাংশ বের করার পদ্ধতি হলো:

১ কাঠা = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট x৩৫ (৩৫ শতাংশে বিঘা হিসাবে) ২০ (২০ কাঠায় বিঘা বলে)।


১ কাঠা = ১৫২৪৬২০ = ৭৬২.৩ বর্গ ফুট, ১ কাঠা ৭৬২.৩ ৪৩৫.৬ = ১.৭৫ শতাংশ।


অনুরুপভাবে ৩৩ শতাংশে ১ বিঘা ধরলে ১ কাঠা সমান = ৪৩৫.৬x৩৩ ২০ = ৭১৮.৭৪ বর্গফুট, ১ কাঠা সমান ৭১৮.৭৪ ৪৩৫.৬ = ১.৬৫ শতাংশ


অনুরুপভাবে ৩০ শতাংশে ১ বিঘা ধরলে ১ কাঠা সমান = ১.৫০ শতাংশ।


বিভিন্ন পরিমানে জমির হিসাবঃ

১ শতক = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট

১ শতক = ৪৮.৪০ বর্গগজ

১ শতক ৪০.৪৬ বর্গমিটার

১ শতক = ১৯৪.৬০ বর্গহাত

১ শতক ১০০০ বর্গলিংক

১ কাঠা = ১.৭৫ শতক (৩৫ এর মাপে)

১ কাঠা = ১.৬৫ শতক (৩৩ এর মাপে)

১ কাঠা = ১.৫০ শতক (৩০ এর মাপে)

১ একর = ৬০.৬০ কাঠা

১ একর = ৩.০৩ বিঘা

১ হেক্টর = ২.৪৭ একর

১ একর = ৪৩৫৬০ বর্গফুট

১ একর = ৪৮৪০ বর্গগজ

১ একর = ৪০৪৬ বর্গমিটার

১ একর = ১৯৪৬০ বর্গহাত

১ একর = ১০০০০০ বর্গলিংক।


উদাহরণঃ

১) একটি জমির দৈর্ঘ্য উত্তর আইল ৫০ ফুট, দক্ষিণ আইল ৫৪ ফুট, প্রস্থ পশ্চিম আইল ৩০ ফুট, ভিতরে এক অংশে ৩৪ পুট, এক অংশে ৩৮ ফুট এবং পূর্ব আইল ৪০ ফুট জমিটির পরিমাণ কত ?


জমিটির দৈর্ঘ্য ৫০+৫৪ = ১০৪ (দুই দিকের দৈর্ঘ্য যোগ করা হলে) তাই ২ দিয়ে ভাগ করলে দৈর্ঘ্য পাওয়া যায় (১০৪ ভাগ ২) = ৫২ ফুট।

জমিটি প্রস্থে অসম হওয়ায় এর ২ দিকের বাউন্ডারীর প্রস্থ ছাড়াও ভিতরের দিকে অন্তত ২াট প্রস্থ পরিমাপ এবং তা গড় করে মূল প্রস্থ বের করা যায় ৩০+৪০+৩৪+৩৮ = ১৪২ (ফুট) এর গড় (১২৪ ভাগ ৪) ৩৫.৫ ফুট।

ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য x প্রস্থ = ৫২ x ৩৫.৫ = ১৮৪৬ বর্গফুট (জমিটির ক্ষেত্রফল)

সূত্র মতে ৪৩৫.৬০ বর্গফুট = ১ শতাংশ।

অতএব উপরের জমিটির পরিমাণ (১৮৪৬ ভাগ ৪৩৫.৬০) = ৪.২৪ শতাংশ।


This page is under construction