শিরোনাম পড়ে হয়তো অবাক হয়েছেন একটি পাহাড়ে আবার কীভাবে ডিম পাড়ে? হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন এমনই এক পাহাড় রয়েছে আমাদের দেশের খুব পাশেই। এই পাহাড়ের আঞ্চলিক নাম “চান দান ইয়া” (Chan Dan Ya)। এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় “ডিম পাড়া পাহাড়” (egg mountain)।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ চিনে পাহাড়টি দেখতে পাবেন (china)। এই পাহাড়টি আসলে গানডেং পর্বতশ্রেণীর একটি অংশ (Mount Gandeng)।
চীনের গুউঝু প্রদেশের কিয়ানান বুয়ী ও মিয়াও অঞ্চল জুড়ে এই পাহাড় রয়েছে।
তবে কোনো পাহাড়ও যে ডিম পাড়ে, একথা জানতেন কি? হ্যাঁ, চীনের গুউঝু প্রদেশের “ডিম পাড়া পাহাড়” (egg mountain) এর যে অংশে আপনি ডিম পাবেন সেটি লম্বায় ৯ ফুট এবং চওড়ায় প্রায় ৬৫ ফুট।এক একটি ডিম পাড়তে নাকি লেগে যায় প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত সময়। এরপর ডিম আস্তে আস্তে পরিণত হতে হতে পাহাড়ের পাদদেশে এসে জমা হয়। তবে ডিমগুলি সত্যিকারের নয়। এগুলি ডিমের মতো গোল ও মসৃণ হওয়ায় একে ডিম ভেবে অনেকেই ভুল করেন। এগুলো আসলে পাথর যা এমন আকার ধারণ করেছে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে।
ডিমের মতোই গড়াতে গড়াতে এসে পড়ে ওই পাহাড়েরই পাদদেশে। সেই জায়গাটা সব সময় ভরে থাকে ডজন ডজন কুচকুচে কালো ডিমে।
এই পাথুরে ডিমগুলো দেখতেও একদম আসল ডিমের মতো মসৃণ আর গোল। কোনোটা আবার একদম ডিম্বাকৃতির। পাথরের ডিম গুলি গাঢ় নীল রঙের ডাইনাসরের ডিমের মতো হয়ে থাকে। ডিম এর আয়তন ১১.৮ ইঞ্চি থেকে ২৩.৬ ইঞ্চি এবং ওজন ৬৬০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, একটি পাহাড় কিভাবে ডিম পাড়ে? সে প্রশ্নের উত্তর এখনো ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভূতত্ত্ববিদরা এই প্রশ্নেরত্তর দিতে সত্যি সত্যিই গলদঘর্ম হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞের মতে পর্বতশ্রেণী পাললিক শিলা (sedimentary rock) দিয়ে গঠিত হলেও এই অংশটি তার ব্যতিক্রম কারণ এটি গঠিত হয়েছে চুনাপাথর (limestone) দিয়ে। চুনাপাথর অপেক্ষাকৃত নরম বলে, তা সহজেই ক্ষয় হতে থাকে কিন্তু তাতে যে কঠিন পাললিক শিলার অংশ থাকে, সেগুলো অত সহজে ক্ষয় হয় না। সেগুলি আস্তে আস্তে জমা হতে হতে ডিমের আকার ধারণ করে। ডিমের আশপাশের অংশ যত ক্ষয় হতে থাকে, ডিমও তত বড় হতে থাকে। তারপর পুরো ডিম হয়ে গেলে, আশপাশের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া এবং ডিমের ওজন বেড়ে যাওয়া মিলিয়ে সেটি টুক করে খসে পড়ে এবং পাহাড়ের পাদদেশে এসে জমা হয়।
তবে এমন ডিমের মতোই গোল কি করে হতে পারে পাথরগুলি তা ভাবার বিষয়।
সেখানে যে চুনাপাথর (limestone) স্তর রয়েছে তা সৃষ্টি হয়েছিল সেই কেমব্রিয়ান যুগে, প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। সেগুলো এখনও কি করে অক্ষত রয়েছে সেটি একটি প্রাকৃতিক রহস্য।
সেখানকার মানুষের কাছে কিন্তু এসবের ব্যাখ্যা খুব সহজ। তাদের কাছে এই ডিমগুলো ঈশ্বরের দান।
পাহাড়টির কাছেই একটি গ্রাম আছে, যার নাম গুলু।সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাথরগুলিকে ঈশ্বরের দান বলে মনে করেন।
তারা রীতিমতো পুজো অর্চণা করেন এই পাথরের টুকরোগুলিকে। এমনকি এক একটি বাড়িতে একটি করে এমন ডিমও দেখতে পাবেন আপনি।
বর্তমানে এই ডিম ভর্তি পাহাড়ের আকর্ষণে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হওয়ায় ডিমগুলোকে নাকি চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আবার ডিমগুলো খসে পড়ার অনেক আগেই তা চুরি করে নেয় অধিক মুনাফার আশায়।
তথ্যসূত্র:
kolkata24x7.com
adwitiya.net.in Dailymail.co.usa
No comments:
Post a Comment