Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Sunday, 13 June 2021

মাসিক ভূগোল ও পরিবেশ সংবাদ, মার্চ-২০২১

 ৩ রা মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস

৩ রা মার্চ: বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস (World Wildlife Day)। প্রতিবছর এই দিনটি বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রসংঘের ৬৮-তম সাধারণ সভায় ৩ মার্চ দিনটি বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭৩ সালের ৩ মার্চ বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি সমূহকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে 'CITES' নামক সংস্থাটি গঠিত হয়। 'CITES' এর প্রতিষ্ঠা দিনটির স্মরণেই ৩ রা মার্চ তারিখটি বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস রূপে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২১ সালে অর্থাৎ এবছর বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসের থিম হল -- "Forests and livelihoods: sustaining people and planet”।


শুশুনিয়া পাহাড়ে আগুন

 ৪মার্চ: প্রথম আগুনের শিখা দেখা যায় শুশুনিয়া(Susunia Hill) পাহাড়ের চূড়ায়। দমকা বাতাসে জঙ্গলের শুকনো পাতায় আগুনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায় কয়েক ঘণ্টায়। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ে সর্বত্র। সময় যত গড়াচ্ছে ততই বিশাল জায়গা নিয়ে তার থাবা বিস্তার করছে আগুন।  রাতেই আগুন(Fire) নেভানোর কাজ শুরু করেন বন দফতরের কর্মীরা। রাতভর মরিয়া চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আজ সকাল থেকে ফের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করে চলেছেন বন দফতরের কর্মীরা। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন বাঁকুড়া এক্সপ্লোরেশন নেচার অ্যাকাডেমি-সহ পাহাড় ও পরিবেশপ্রেমী একাধিক সংগঠনের কর্মীরা। তবে তার পরেও এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে আগুন।


ভূমিকম্প ও সুনামির সতকর্তা নিউজিল্যান্ডে

৫ মার্চ; ভূমিকম্পের সতকর্তা আগেই ছিল। সেইমতো বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়েও নেওয়া হয়। রাত ২.২৭ নাগাদ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে নিউজিল্যান্ডের নিউক্যালেডোনিয়া, ভানুয়াতু। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.‌৭। সুনামি হতে পারে ভেবে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয় প্রশাসনের তরফে। নিউজিল্যান্ডের উত্তরের দ্বীপগুলিতে মূলত কম্পনের তীব্রতা অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পর সুনামির ঢেউ ১০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে বলে আগেই অনুমান করেছিল আবহাওয়াবিদরা। সরকারের তরফে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুনামি আছড়ে পড়লে কারোর যাতে কোনওরকম বিপদ না ঘটে সেজন্য আগেভাগেই সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। শেষপর্যন্ত সুনামি হয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন অংশে ঘন ঘন ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপ অনুভব করা গেলেও এর আগে ভূমিকম্পের এত শক্তিশালী রূপ দেখা যায়নি বলেই মত নিউজিল্যান্ডের জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত বিভাগের মন্ত্রী কিরি অ্যালানের। তাঁর আরও সংযোজন, ভূমিকম্পের হওয়ার ফলে দেশের সমস্ত দ্বীপগুলিতেই সুনামির একটা আশঙ্কা ছিলই। ভূমিকম্প হলেও বিরাট কোনও ক্ষতি হয়নি। উল্লেখ্য, এবারের ভূমিকম্পে কোনও হতাহতের খবর না মিললেও ১০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেবার ১৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।


মিলতে পারে চাঁদে ভ্রমণের সুযোগ

৬ মার্চ: কী ভাবছেন? যাবেন নাকি চাঁদে? ১৯৭২ সালের পর ২০২৩ সালে ফের একবার চাঁদে যাবার সুযোগ হয়েছে সাধারন মানুষদের এবং তা সম্পূর্ণভাবে বিনামূল্যে। অবাক হচ্ছেন! হ্যাঁ,  জাপানের একজন ধনকুবের এই ধরনের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন সামাজিক মাধ্যমে।

'ডিয়ার মুন’ নামের এই মিশনে স্পেসএক্সের যান নাকি  যাত্রী নিয়ে যাবে চাঁদে! ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের যানে চড়ে চাঁদের আশপাশ ভ্রমণে সঙ্গী হতে সাধারণ মানুষদের আবেদন করতে বলেছেন জাপানি ধনকুবের ইয়াসাকু মায়েজাওয়া। তবে যে ৮ জন ভাগ্যবানকে  বাছাই করা হবে,  থাকবে বিশেষ শর্ত। চাঁদে ভ্রমণের জন্য কোনও খরচ বহন করার প্রয়োজন না পড়লেও শর্ত আবশ্যক ভাবেই মানতে হবে। 

শর্ত হচ্ছে পরের উপকারের জন্য কাজ করতে হবে এবং তা ধারাবাহিকভাবে করে যেতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো ক্রু মেম্বারদের পাশে সব সময় থাকতে হবে।

তবেই মিলতে পারে চাঁদে ভ্রমণের সুযোগ। ট্যুইট বার্তায় এমনই বলেছেন মায়েজাওয়া। তিনি বলেছেন, এটাই হতে চলেছে সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি চাঁদে ভ্রমণ যাত্রা এবং সব টিকিটই তিনি নাকি কিনে নিয়েছেন। এর আগেও একবার গোটা পৃথিবী থেকে বাছাই ৮ জন শিল্পীকে চাঁদে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এই ধনকুবের।

তিনি জানান, মাঝে মাঝেই এই ধরনের অদ্ভুত সব খেয়াল জেগে উঠে । গত বছর মহাকাশ যাত্রায় নিজের সাথী হিসেবে বান্ধবীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরে সেই পরিকল্পনা আর এগোয়নি । ২০১৮ সালে ইলন মাস্ক মালিকানাধীন স্পেসএক্স চাঁদের আশপাশ ঘুরে দেখতে যাওয়া প্রথম টিকেট কাটা যাত্রী হিসেবে মায়েজাওয়ার নাম ঘোষণা করে। তবে এর জন্য খরচ কত টাকা বাজেট ধরা হয়েছে তার কিছু খোলসা করেননি। তবে নতুন পরিকল্পনায় জাপানিজ ধনকুবের ইয়াসাকু মায়েজাওয়া মনে করেন গোটা পৃথিবী থেকে বহু মানুষ এই আবেদনে সাড়া দেবেন।

প্রথমবার মহাকাশে ঘটল হারিকেন, চলল ৮ ঘণ্টা

 মহাকাশে প্রলয় তাণ্ডব।  টানা ৮ ঘণ্টা ধরে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর ঝড় তোলে  সৌরবায়ু সঙ্গে সৌরকণা বা ‘সোলার পার্টিক্‌লস’। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় স্পেস হারিকেন। যা নজরে এসেছে   জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। উত্তর মেরুর উপর এই প্রলয় ঘটেছে। স্থান উত্তর কানাডা।  বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ঘটেছে মহাকাশ হারিকেন। ১ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দেখা যায় এই মহাজাগতিক রোমাঞ্চকর দৃশ্য ।  মহাপ্রলয়ের ( space hurricane) এর ঘটনাটি নজরে এসেছিল ২০১৪ সালে ২০ আগস্ট। চিনের Shandong University-র জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নজরে আসে এই বিষয়টি।  এরপর উত্তর কানাডা থেকে DMSP (Defense Meteorological Satellite Program) উপগ্রহ মাধ্যমে নজরে রাখা হয় গোটা বিষয়টি। 3D magnetosphere modelling ছবিটি তৈরি করে। 

ঠিক কী ঘটেছ? সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে বেরিয়ে আসে সৌরবায়ু। তা ছুটে আসে সৌরমণ্ডলের দিকে। পাশাপাশি বেরিয়ে আসে প্রচুর পরিমাণে সৌরকণা। কিন্তু এদের হাত থেকে প্রাণের অস্তিত্বকে বাঁচাচ্ছে  পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও অদৃশ্য চৌম্বক ক্ষেত্রের বলয়। যখন সৌরকণা ও সৌরবায়ু এসে চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর আছড়ে পড়ে তখন তাতে বিরাটাকার কম্পন সৃষ্টি হয়। যার ফলে আমরা দেখতে পাই মেরুজ্যোতি।  এই মহাকাশ হারিকেনের কারণ হল ওই চৌম্বকক্ষেত্রের উপর সৌরকণার বর্ষণ অতিমাত্রায় ঘটেছে। যার ফলে তাণ্ডব করতে শুরু করে সৌরকণায় থাকা ঋণাত্মক আধানের ইলেকট্রন। 


পৃথিবীর থেকে মাত্র তিরিশ শতাংশ বড়, নতুন গ্রহ আবিষ্কার

৯মার্চ: পৃষ্ঠ এবড়ো খেবড়ো, অসমতল, পার্বত্য এলাকায় পূর্ণ। তবে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে উপস্থিত বেশ কিছু গ্যাসের সমাহার রয়েছে। এরকমই নতুন গ্রহের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই গ্রহের নাম Gliese 486b। পৃথিবী থেকে এর আয়তন ২.৮ গুণ বড়।

আমাদের সৌরজগত আকাশগঙ্গা থেকে ২৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত Gliese 486b। তবে অত্যন্ত উষ্ণ এই গ্রহের বায়ুমন্ডল, কারণ নিজেদের সৌরজগতের মূল নক্ষত্রের খুব কাছেই এর অবস্থান। Gliese 486b গ্রহটি নিজেদের সৌরজগতের মূল নক্ষত্রকে দেড়দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে, এতটাই কাছে অবস্থিত এটি। ফলে অত্যধিক উষ্ণ এর বায়ুমন্ডল (hot super-Earth)। এই গ্রহে বিভিন্ন গ্যাসের সমাহারে তৈরি। তবে অত্যন্ত পর্বতসঙ্কুল হওয়ায় Gliese 486b গ্রহটিকে খুব বেশি নিরীক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এর ভর পৃথিবী থেকে ২.৮ গুণ বেশি। নিজেদের নক্ষত্র থেকে এই গ্রহের দূরত্ব মাত্র ২.৫ কিলোমিটার।


বিজ্ঞানীদের গবেষণার মূল লক্ষ্যে রয়েছে এই গ্রহের বায়ুমন্ডলের গ্যাসের সমাহার চিহ্নিত করা। নেক্সট জেনারেশন টেলিস্কোপের সাহায্যে এটিকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। তবে Gliese 486b গ্রহটি সূর্যোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম গরম ও আগুনের হলকার পরিমাণও এখানে বেশ কম। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন Gliese 486b গ্রহটির পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত সর্বাপেক্ষা হতে পারে। শুক্র গ্রহের মতো বেশ কিছু ভূপৃষ্ঠ এই গ্রহের। অত্যন্ত শুষ্ক মাটি ও লাভার স্রোত শুকিয়ে খাত তৈরি করা ল্যান্ডস্কেপ দেখা গিয়েছে এখানে।

এদিকে, কয়েক মাস আগেই নাসা জানায়, খোঁজ মিলেছে দ্বিতীয় পৃথিবীর। আকারে একেবারে পৃথিবীর মতই। নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ থেকে তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেখানেই খোঁজ মিলেছে এই গ্রহের। মহাকাশবিদরা জানাচ্ছেন, এই গ্রহে নাকি রয়েছে হ্যাবিটেবল জোন। হ্যাবিটেবল জোন হল পাথুরে গ্রহের সেই অংশ যেখানে জল ধারণের ক্ষমতা রয়েছে।

পৃথিবী থেকে ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে ওই গ্রহ। নাসার কেপলার টেলিস্কোপের সাহায্যে যে সব গ্রহের অবস্থান এখনও পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে পৃথিবীর সঙ্গে সবথেকে বেশি মিল রয়েছে এই গ্রহটির। গ্রহটির নামকরণ করা হয়েছে। এটি পৃথিবীর থেকে মাত্র ১.০৬ গুন বড়। পৃথিবীতে যতটা সূর্যের আলো পৌঁছয়, নতুন এই গ্রহে তার নক্ষত্র থেকে সেই আলোর ৭৫ ভাগ আলো পৌঁছয়। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের অনুমান তাপমাত্রাও কাছাকাছি।

৮০ বছর পর টানা ৬ মাস গ্রীষ্ম, কমবে শীত-বসন্তও, বলছে গবেষণা

১২ মার্চ: বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে আর ৮০ বছরের মধ্যে ঋতুগুলি একেবারেই বদলে যাবে। সবক’টি ঋতুর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে তীব্র দহন জ্বালায় জ্বালাবে শুধুই গ্রীষ্মকাল। উত্তর গোলার্ধে তা চলবে টানা ৬ মাস। কমে যাবে শীতকালের আয়ু। বছরে তা মেরেকেটে হবে ২ মাসেরও কম। কমবে বসন্ত ও শরৎ কালের মেয়াদও। ২১০০ সালে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা যেমন ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে যাবে, তেমনই বেড়ে যাবে উত্তর গোলার্ধের শীতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ।

গবেষকরা জানিয়েছেন ঋতুগুলির মেয়াদ আর তাদের সময় শুধুই যে উত্তর গোলার্ধে বদলাবে তা নয়, বদলে যাবে দক্ষিণ গোলার্ধেও। কোথাও কিছুটা কম পরিমাণে কোথাও বা বেশি।

তবে ঋতুগুলির সময় আর তাদের মেয়াদের ব্যাপক পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। তাপপ্রবাহের তীব্রতা, ঝড়ের উন্মত্ততা আর দাবানলের বীভৎসতা ও সেই সব ঘটনার সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে যাবে। তার ফলে প্রচণ্ড ক্ষতি হবে কৃষিকাজে। ফসল উৎপাদনের পরিমাণ ভীষণ ভাবে কমে যাবে।

পৃথিবীর ঋতুগুলির সময় আর মেয়াদ পরিবর্তনের প্রভাব হবে আরও সুদূরপ্রসারী। গবেষণাপত্রটি জানাচ্ছে, আর ৮০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর ক্রান্তীয় (‘ট্রপিক্যাল’) অঞ্চলের দেশগুলির মশা আরও বেশি পরিমাণে মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক ভাইরাস বহন করবে। আর সেই মশককূলের গতিপথ আরও উত্তরমুখী হবে। তারা আরও বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পড়বে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে। গ্রীষ্মকালের মেয়াদ ও তীব্রতা অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় ভাইরাসঘটিত নানা ধরনের সংক্রমণ আরও বেশি পরিমাণে ছড়াবে মশককূল। তাতে কোভিড-১৯-এর চেয়েও বেশি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে।

গবেষকরা ১৯৫২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত উত্তর গোলার্ধের প্রতিটি দেশের প্রতি দিনের তাপমাত্রার ইতিহাস পরীক্ষা করে দেখেছেন। কী ভাবে ঋতুগুলির সময় ও মেয়াদ বছরে বছরে বদলাচ্ছে, সেটাই তাঁরা বুঝতে চেয়েছিলেন। তাতে তাঁরা দেখেছেন ’৫২ থেকে ২০১১, এই ৬০ বছরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে ২৫ শতাংশ।

গবেষকরা এ-ও দেখেছেন ওই ৬০ বছরে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে গ্রীষ্মকালের মেয়াদ বেড়েছে গড়ে ৭৮ থেকে ৯৫ দিন। মানে, আড়াই মাস থেকে তিন মাসের কিছু বেশি। বসন্তের মেয়াদ গড়ে ১২৪ দিন থেকে কমে গিয়ে হয়েছে ১১৫ দিন। আর শরৎকালের মেয়াদ গড়ে ৮৭ দিন থেকে কমে হয়েছে ৮২ দিন। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে শীতকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও।

গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, এখন যে হারে উষ্ণায়ন হচ্ছে তা যদি না কমে, তা হলে ২০১১ সালে যে মাসে গ্রীষ্ম ও বসন্ত শুরু হয়েছিল ২১০০ সালে পৌঁছে তা ১ মাস করে এগিয়ে আসবে। আর শরৎ ও শীতকাল শুরু হবে আধ মাস পর (১৫ দিন)।


মঙ্গলের আকাশে এই মেঘবালিকার রহস্য কী, প্রথম জানল এসা-র মহাকাশযান

১২ মার্চ: ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের আকাশে সেই দীর্ঘতম মেঘের আবির্ভাব ও উধাও হওয়ার রহস্যের জট খুলল ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র মহাকাশযান ‘মার্স এক্সপ্রেস’। দীর্ঘ দিন ধরে রহস্যে মোড়া মেঘবালিকাটির নাম- ‘আরসিয়া মন্‌স ইলঙ্গেটেডে ক্লাউড’। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১১৮ মাইল (বা, ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার)। চওড়ায় ৯৩ মাইল (বা, ১৫০ কিলোমিটার)।

মেঘটিকে মঙ্গলের একটি বিশেষ অংশের আকাশে প্রতি বছরই দেখা যায় ৮০ দিন ধরে। প্রতি দিনই দেখা দেওয়ার কিছু ক্ষণ পর মেঘটি উধাও হয়ে যায়। আবার পরের দিন মেঘটিকে দেখা যায়। সে দিনও কিছু ক্ষণ পর সেটি উধাও হয়ে যায়। এই ভাবেই চলে টানা ৮০ দিন।

মেঘটিকে প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেখা যায় লাল গ্রহের একটি আগ্নেয়গিরি ‘আরসিয়া মন্‌স’-এর উপরে। এত দীর্ঘ মেঘ আর একটিও দেখা যায়নি মঙ্গলের আকাশে এত দিনে। মেঘটি খুব উজ্জ্বলও। তার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বরফকণা থাকে বলে। মঙ্গলের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি ‘অলিম্পাস মন্‌স’-এর দিকে যাওয়ার পথেই পড়ে আরসিয়া মন্‌স আগ্নেয়গিরিটি। যা মাউন্ট এভারেস্ট তো বটেই এই সৌরমণ্ডলের সবক’টি গ্রহে যতগুলি পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু।

এসা-র মহাকাশযান মার্স এক্সপ্রেস-এর ভিস্যুয়াল মনিটরিং ক্যামেরা (ভিএমসি) দেখেছে, লাল গ্রহের এই দীর্ঘতম মেঘটিই মঙ্গলের ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড়ের কারণ। এই ধুলোর ঝড়েই মঙ্গলের মাটিতে নামা নাসার রোবটযান ‘অপরচুনিটি’ অচল হয়ে গিয়েছিল।

এ-ও দেখা গিয়েছে লাল গ্রহে সূর্যোদয়ের পরেই মেঘটিকে দেখা যায় ওই আগ্নেয়গিরিটির (আরসিয়া মন্‌স) উপরের আকাশে। তার পর আড়াই ঘণ্টা ধরে সেই মেঘ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টায় ৩৭৩ মাইল (বা, ৬০০ কিলোমিটার গতিবেগে)। তার পর যেখান থেকে উৎপত্তি সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মেঘটির বাকি অংশ। তার পর গোটা মেঘটিই উধাও হয়ে যায়। এমন মেঘ পৃথিবীর আকাশেও তৈরি হয়। কিন্তু বিশালত্বের নিরিখে সেটি মঙ্গলের রহস্যে মোড়া মেঘের কাছে নস্যি!

ঠিক কোথায় জন্মাচ্ছে সূর্যের সবচেয়ে শক্তিশালী হানাদার, প্রথম দেখল ২ মহাকাশযান

১৩ মার্চ: সূর্য থেকে প্রতি মুহূর্তে ছিটকে বেরনো এক ভয়ঙ্কর হানাদারের আঁতুড়ঘরের হদিশ মিলল এই প্রথম। যে আঁতুড়ঘরে তৈরি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ পরমাণু বোমার সমান শক্তি। একই সঙ্গে।

এই প্রথম জানা গেল সূর্যের ঠিক কোথায় এই হানাদারদের জন্ম হচ্ছে। তারা কী ভাবে গায়েগতরে বেড়ে উঠছে। হয়ে উঠছে দীর্ঘমেয়াদি। উত্তরোত্তর নিজেদের বদলে নিচ্ছে গোটা সৌরমণ্ডলের পক্ষে আরও বিপজ্জনক আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার জন্য।

জানা গেল, এদের জন্ম হচ্ছে সূর্যের বায়ুমণ্ডল (‘করোনা’)-এর ঠিক নীচের স্তরে। সূর্যের পিঠের (‘সারফেস’ বা ‘ফোটোস্ফিয়ার’) উপর থেকে কিছুটা উপরে যে স্তরটি রয়েছে (‘ক্রোমোস্ফিয়ার’), তার কিছুটা উপরে। যেখান থেকে একটি লম্বালম্বি রেখা টানলে তা ফোটোস্ফিয়ারের এমন একটি জায়গা ছোঁবে, যে এলাকাটিতে তৈরি হচ্ছে একের পর এক বিশাল সৌরকলঙ্ক বা ‘সানস্পট’।

এই হানাদাররা সূর্য থেকে বেরিয়ে ছুটছে প্রায় আলোর গতিবেগেই। ছুটে আসছে পৃথিবী-সহ বিভিন্ন গ্রহের দিকে। প্রায় সাড়ে ৯ কোটি কিলোমিটার দূরে পৃথিবীতে পৌঁছতে যাদের সময় লাগে বড়জোর এক ঘণ্টা। একই গতিবেগে তারা ছুটে যাচ্ছে সৌরমণ্ডলের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত।

এরা সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরকণা। সৌরবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাদের নাম- ‘সোলার এনার্জেটিক পার্টিকল্স‌ (এসইপি বা সেপ)’। যাদের শরীর গড়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকা ইলেকট্রন আর বিভিন্ন মৌলের আয়ন (ইলেকট্রন খোয়ানো পরমাণু) দিয়ে। এদের শক্তি ১০ লক্ষ ইলেকট্রন ভোল্ট।

নাসার মহাকাশযান ‘উইন্ড’ ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘জাক্সা’র মহাকাশযান ‘হিনোড’-এর যৌথ প্রচেষ্টাতেই সূর্যের এই ভয়ঙ্কর হানাদারের আঁতুড়ঘরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। মার্চের প্রথম সপ্তাহে।

সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরকণাদের গোটা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে সূর্যেরই কিছু চৌম্বক রেখা। সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছে সূর্যের মাংস উপড়ে বার করে আনা করোনাল মাস ইজেকশান (সিএমই)। পৃথিবী-সহ গোটা সৌরমণ্ডলে এই সৌরকণাদের ছুটে যাওয়ার আরও একটি ‘বাহক’ সৌরবায়ু (‘সোলার উইন্ড’)। যদিও মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার পর সৌরকণাদের শরীর কোন কোন মৌল দিয়ে গড়া থাকবে, তাদের পরিমাণের কতটা কী তারতম্য হবে, তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে সৌরবায়ু। যা পৃথিবী-সহ গোটা সৌরমণ্ডলের পক্ষে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে সৌরকণাদের।

সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরকণা-সহ সূর্যের এই সব হানাদারের (সৌরবায়ু, সৌরঝড় বা সোলার স্টর্ম, সিএমই) হাত থেকে আমাদের অহরহ বাঁচিয়ে চলেছে পৃথিবীকে চার দিক দিয়ে ঘিরে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র। যা কাজ করে বর্মের মতো। সৌরকণারা এসে আছড়ে পড়লে ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র। চুম্বকের সমমেরুর বিকর্ষণের জন্য সৌরকণাদের দূরে হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র। সে জন্যই আমরা ‘অরোরা’ বা মেরুজ্যোতি সবচেয়ে বেশি দেখি পৃথিবীর দুই মেরুতে। চৌম্বক ক্ষেত্রের দু’টি মেরু ভৌগোলিক মেরুদু’টির কাছাকাছি আছে বলে।

কিন্তু চাঁদে, মঙ্গলে বা মহাকাশে এই চৌম্বক ক্ষেত্রের বর্মটা নেই। তাই চাঁদে, মঙ্গলে নামা কোনও মহাকাশচারীর পক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে এই সৌরকণা। তা সরাসরি ঢুকে যেতে পারে তাঁদের শরীরে। তাঁদের কোষ, কলা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট করে দিতে পারে। কারণ হয়ে উঠতে পারে দুরারোগ্য ক্যানসারের। যেহেতু এই চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিধি অতিক্রম করে পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে কৃত্রিম উপগ্রহগুলি তাই ভয়ঙ্কর সৌরকণারা উপগ্রহগুলির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলিকে অকেজো, অচল করে দিতে পারে। ক্ষতি করতে পারে মহাকাশে পাড়ি জমানো মহাকাশযানগুলিরও।

তাই সূর্যের ঠিক কোথায় এদের আঁতুড়ঘর, তারা কী ভাবে গায়েগতরে বেড়ে উঠে সূর্য থেকে বাইরে ছুটে যাচ্ছে তা জানা-বোঝার প্রয়োজন ছিল। নাসা ও জাক্সার দুই মহাকাশযান সেই দরজাটা খুলে দিল।

অন্যতম প্রধান গবেষক ওয়াশিংটনের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ব্রুক্‌স ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-এর পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ই-মেলে জানিয়েছেন, দুই মহাকাশযান এই তথ্যাদি পাঠিয়েছিল ২০১৪ সালে। ‘‘সেই সব তথ্য খতিয়ে দেখে আমরাই প্রথম দেখাতে পেরেছি, সূর্যের ক্রোমোস্ফিয়ারের উপরে ঠিক কোথায় সৌরকণাদের জন্ম হচ্ছে’’, বলেছেন ব্রুক্‌স।

ব্রুক্‌স জানিয়েছেন, সূর্যের পিঠে একটি বিশেষ অঞ্চলের উপরেই এই সৌরকণাদের উৎপত্তিস্থল। সূর্যের পিঠের সেই বিশেষ অঞ্চলটির নাম ‘অ্যাকটিভ রিজিয়ন ১১৯৪৪ (এআর ১১৯৪৪)’। এই এলাকাটিতে ওই সময় প্রচুর পরিমাণে বিশাল বিশাল সৌরকলঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৪-র জানুয়ারির তিনটি দিন ৪, ৬ এবং ৮ তারিখে ওই এলাকার উপরে সূর্যের করোনায় বহু বড় বড় সৌরঝলক (‘সোলার ফ্লেয়ার’) এবং সিএমই দেখা গিয়েছিল।

মোহনপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার কলকাতা)’-এর অধ্যাপক সৌরবিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী বলছেন, ‘‘এত দিন জানা ছিল সূর্য থেকে এক মুখ খোলা বা উন্মুক্ত চৌম্বক রেখা (‘ওপ্‌ন ম্যাগনেটিক ফিল্ড’) ধরেই মহাকাশে ছুটে বেড়াতে বেরিয়ে পড়ে সৌরকণারা। হাইওয়ে ধরে যেমন গাড়ি ছোটে। এই গবেষণার অভিনবত্ব, দেখা গেল আবদ্ধ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলির (‘ক্লোজ্ড ম্যাগনেটিক ফিল্ড’) কোনও ফাঁক গলে বেরিয়ে পড়ছে সৌরকণারা। অনেকটা যেন মাছের জালের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়ছে মাছ। এটা কেন হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে, এ বার সেই গবেষণারও দরজা খুলে দিল সৌরকণাদের আঁতুড়ঘরের হদিশ।’’

আরও একটি অভিনবত্ব রয়েছে এই গবেষণার। আমদাবাদে ইসরো-র ‘ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (পিআরএল)’-র অধ্যাপক দিব্যেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘দু’ধরনের খুব শক্তিশালী সৌরকণার জন্ম হয় কোনও সৌরঝলকের পর। একটি ‘ইমপালসিভ সোলার পার্টিকল’। জন্মের কিছু ক্ষণের মধ্যেই তা উধাও হয়ে যায়। সেগুলিও ছিটকে বেরিয়েও আসে মহাকাশে। তবে সেগুলি মহাকাশের বেশি এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। তাদের আয়ুও কম। তাই তা মহাকাশযান, মহাকাশচারী বা পৃথিবীর পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে না অন্য ধরনের সৌরকণার সমান শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও। অন্যটি- ‘গ্র্যাজুয়াল সোলার পার্টিকল’। যা জন্মের পর ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের আয়ুও হয় এক দিনের মতো। এরা ছিটকে বেরিয়ে আসে মহাকাশে। ছড়িয়ে পড়তে পারে মহাকাশের অনেকটা এলাকা জুড়ে। তাই এরা খুবই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই গবেষণা সেই গ্র্যাজুয়াল সোলার পার্টিকল-এরও আঁতুড়ঘরের হদিশ দিয়েছে।’’


নৈনিতালের ‘আর্যভট্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব অবজারভেশনাল সায়েন্সেস (এরিস)’-এর অধিকর্তা দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানাচ্ছেন, এদের আঁতুড়ঘর কোথায় হতে পারে, তার একটা প্রাথমিক ধারণা ছিল বিভিন্ন তাত্ত্বিক গবেষণায়। তবে এই প্রথম দু’টি মহাকাশযান সেই উৎপত্তিস্থলটিকে চাক্ষুষ করল।

দীপঙ্কর ও দিব্যেন্দু (চক্রবর্তী) এ-ও জানাচ্ছেন আগামী বছর অভিযানে যাচ্ছে ইসরোর যে মহাকাশযান সেই ‘আদিত্য এল-ওয়ান’-এর গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে খুবই কার্যকরী হয়ে উঠবে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল।


৪০০ কোটি বছরেরও আগে ম্যাগমা মহাসাগর ছিল ভূপৃষ্ঠে, গ্রিনল্যান্ডে মিলল সেই পাথর

১৪ মার্চ: এখন যাকে আমরা ভূপৃষ্ঠ বলে জানি, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে তা ছিল অত্যন্ত উষ্ণ তরল পাথরের (‘ম্যাগমা’) মহাসাগরের তলায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অত্যন্ত উষ্ণ তরল পাথরের স্রোত নেমে গিয়েছে ভূপৃষ্ঠের অনেক নীচে। পৃথিবীর ‘কোর’ বা অন্দরের উপরের স্তরের কিছুটা উপরে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র এই খবর দিয়েছে।গবেষকরা গ্রিনল্যান্ড থেকে সেই সুপ্রাচীন ম্যাগমা মহাসাগরের কিছু পাথরের হদিশ পেয়েছেন। যেগুলি পরীক্ষা করে তাঁরা জানিয়েছেন এখনকার ভূপৃষ্ঠের উপর সেই ম্যাগমা মহাসাগর বইত আজ থেকে ৩৭০, ৩৮০ কোটি বছর আগে।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।

দক্ষিণ-পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডের যে এলাকা থেকে গবেষকরা এই প্রায় ৪০০ কোটি বছরের প্রাচীন পাথরগুলি পেয়েছেন, ভূতাত্ত্বিকরা সেই অঞ্চলটিকে বলেন, ‘আইসুয়া সুপ্রাক্রাস্টাল বেল্ট’। ভূপৃষ্ঠের প্রাচীনতম পাথরখণ্ডগুলি রয়েছে এই জায়গাতেই। যেগুলি টেকটনিক প্লেটের ধাক্কাধাক্কি, প্রচণ্ড তাপ ও নানা রকমের রাসায়নিক পরিবর্তনেও অবিকৃতই থেকে গিয়েছে কয়েকশো কোটি বছর ধরে।

গবেষকরা অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন, এই পাথরগুলির যা বয়স, ভূপৃষ্ঠে ম্যাগমা মহাসাগরের জন্ম হয়েছিল তারও অনেক আগে। প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে। যে সময় মঙ্গল গ্রহের সমান আকারের কোনও মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীর উপর। তাতে তার ভিতরের পাথর তুলে এনেছিল উপরে। সেই সময় পৃথিবীর অন্দরের সেই পাথর থেকেই জন্ম হয়েছিল চাঁদের।

‘‘ম্যাগমা মহাসাগরের সেই অত্যন্ত উষ্ণ তরল পাথরের স্রোত ঠাণ্ডা হয়ে কেলাসে জমাট বাঁধার পরেই পৃথিবীর পরিবেশ ধীরে ধীরে বাসযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করে। তবে এত দিন তার কোনও প্রমাণ মিলছিল না। কিন্তু এই পাথরগুলির হদিশ মেলায় এ বার সেই প্রক্রিয়ার কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেল’’, বলেছেন অন্যতম মূল গবেষক কেমম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওকেমিস্ট্রির অধ্যাপক হেলেন উইলিয়ামস।

মহাকাশে ৩ টন বর্জ্য নিক্ষেপ করল NASA! কোন বিপদের আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের?

১৬ মার্চ: ‘মহাকাশ-বর্জ্য’ (Space debris) ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে বহুদিন ধরেই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। এই পরিস্থিতিতে এবার জানা গেল, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA মহাকাশে সম্প্রতি বিপুল পরিমাণে বর্জ্য নিক্ষেপ করেছে। সব মিলিয়ে যার ওজন ২.৯ টন! বলা হচ্ছে, এত পরিমাণে বর্জ্য এই প্রথম নিক্ষিপ্ত হল মহাকাশে। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকেই ওই বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বাতিল ব্যাটারি।ভবিষ্যতে কী হবে এই বর্জ্যের? প্রশ্ন উঠছে, এর থেকে কি সরাসরি মানব সভ্যতার কোনও বিপদ হতে পারে? বিজ্ঞানীরা অবশ্য সেব্যাপারে আশ্বস্ত করছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ বছর ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে চক্কর কাটবে ওই বর্জ্যগুলি। পরে তা প্রবেশ করবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। তার মানে এই নয় যে, রাতারাতি সেটা আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীর মাটিতে। আসলে বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ার পরই তা জ্বলে উঠে ছাই হয়ে যাবে। সুতরাং সেই ধরনের কোনও বিপদের কোনও রকম আশঙ্কা নেই।


তবে মহাকাশ-বর্জ্য থেকে অন্য ধরনের বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে পাক খেতে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহগুলির সঙ্গে এই ধরনের বর্জ্যের কোনও টুকরোর সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। জানা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে পৃথিবীর চারপাশে এই মুহূর্তে চক্কর কাটছে ১৬ কোটি মহাকাশ-বর্জ্যের টুকরো। সেগুলির গতি ঘণ্টায় ১৮ হাজার মাইল। তবে এগুলির অধিকাংশই খুব ছোট আকারের। তাদের থেকে বিপদের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এদের মধ্যে অন্তত ১০ লক্ষ টুকরোর দৈর্ঘ্য ১ সেন্টিমিটারের বেশি। ভয় সেগুলিকে নিয়েই।

বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, কোনও একটি উপগ্রহের সঙ্গেও যদি এদের কারও ধাক্কা লাগে তাহলেই মহা অনর্থ ঘটে যেতে পারে। বিঘ্নিত হতে পারে সারা পৃথিবীর উপগ্রহ পরিষেবার প্রযুক্তি। প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে ২ হাজার ৮০০ উপগ্রহ। তার সঙ্গেই চক্কর কাটছে ৩ হাজার বাতিল উপগ্রহ।


Iceland-য়ে চল্লিশ হাজার Earthquake মাত্র চার সপ্তাহে! জেগে উঠেছে Volcano

২০ মার্চ: ২৮ দিনের মধ্যে ৪০ হাজার ভূমিকম্প!এক ভূমিকম্পের ধাক্কাতেই ভেঙে পড়ে যে কোনও ভূখণ্ড। আর এখানে একটা নয়, দুটো নয়, চল্লিশ হাজার ভূমিকম্প!

শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আইসল্যান্ডের (Iceland) একটি আগ্নেয়গিরি (volcano) থেকে লাভা বেরিয়ে আসে। মনে করা হচ্ছে, এর পিছনে রয়েছে বিপুল সংখ্যায় ভূমিকম্প (earthquake)। শেষ ২৮ দিনে ৪০ হাজার কম্পন হয়েছে এখানে। দেশের রাজধানী রেইকেভিকের (Reykjavik) সামান্য দূরেই জেগে উঠেছে শক্তিশালী আগ্নেয়গিরি। ধীরে ধীরে তার লাভা গ্রাস করছে দেশ। ভূমিকম্প, লাভা উদগীরণ-- এসবের জেরে বেহাল আইসল্যান্ড। 

প্রশাসনের তরফ থেকে সাধারণ মানুষকে বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ আগ্নেয়গিরির ছাই ও বিষাক্ত গ্যাস থেকে শরীরের ক্ষতি হতে পারে বলে তাঁরা সাবধান করছেন।

ইউরেশিয়ান ও উত্তর আমেরিকার টেকটনিক প্লেটের মাঝে থাকা আইসল্যান্ডে মাঝেমধ্যেই কম্পন হয়। এর উপর লাভার স্রোত। ফলে চিন্তা বাড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, কম্পন কমলেও লাভা উদ‌্গীরণ কমার সম্ভাবনা এখনই নেই।

২১ শে মার্চ, মহাবিষুব

২১ শে মার্চ: মহাবিষুব (Vernal / Spring Equinox)। আজ সারা পৃথিবীতে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান। দিবারাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির চক্রে বছরে দুইবার উভয় গোলার্ধে দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। একে বিষুব বা Equinox বলে। ২০/২১ মার্চ ও ২২/২৩ সেপ্টেম্বরে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান থাকে। আমরা জানি পৃথিবী সূর্যকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে। আমরা জানি উপবৃত্তের দুইটি উপকেন্দ্র থাকে। সেই হিসেবে পৃথিবী বছরে দুইবার এর কক্ষপথের উপকেন্দ্র অর্থাৎ সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকে। এই ঘটনাকে অনুসূর বলে। এর বিপরীত ঘটনা অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরতম অবস্থানকে অপসূর বলে। যেহেতু পৃথিবী অনুসূর অবস্থানে সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করে স্বাভাবিক ভাবেই এই দুই অনুসূর দিনে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য বেশী হবে। তাই ঘটে। তবে কিছু ব্যাপার আছে। আমরা অনেকেই জানি আমাদের পৃথিবী কিন্তু উত্তর - দক্ষিন মেরু সোজা বরাবর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে না। বরং পৃথিবী ২৩.৪৪ ডিগ্রি কোণে বাঁকা হয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। একে কৌণিক নতি বলে। তাই, জুন মাসের অনুসূরে পৃথিবী সূর্যের নিকটে থাকলেও কেবল এর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের বেশী নিকটে থাকে। তাই এই দিন উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য ও উত্তাপ দুই ই বেশী থাকে। বিপরীতক্রমে, দক্ষিন গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করে বলে এই দিন দক্ষিন মেরুতে সবচেয়ে ছোট দিন ও বড় রাত।

আবার, ২১ ডিসেম্বর দক্ষিন গোলার্ধ সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকে, তাই এই দিন দক্ষিন গোলার্ধে বড় দিন আর উত্তর গোলার্ধে ছোট দিন। তাই অপসূর ও অনুসূর দিনে পৃথিবীর দুই গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্যের পরিমান বিপরীত হয়। দুই বিষুবের দিনে সূর্য পৃথিবীর বিষুবরেখা বরাবর অবস্থান করে। অর্থাৎ সূর্য একদম পূর্ব দিকে উদিত হয়ে সোজা পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। এই কারণে পৃথিবীর নতি দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যে প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই পৃথিবীর অবস্থানের জন্য এই দুই বিষুবের দিনে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। সাধারনত প্রতিবছর ২১ শে মার্চ ও ২৩ শে সেপ্টেম্বর বিষুব অর্থাৎ দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান ধরা হয়। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যার সময় অনুসারে প্রতি বছর এটা ২০-২১ শে মার্চ এবং ২২-২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঘটে থাকে। ২০২১ সালে কোলকাতার স্থানীয় সময় অনুসারে ২০ শে মার্চ দুপুর ০৩:০৭ মিনিটে মহাবিষুব।



আন্তর্জাতিক অরণ্য দিবস

২১ শে মার্চ: আন্তর্জাতিক অরণ্য দিবস (International Day of Forests)। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অরণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২১ শে মার্চ দিনটি আন্তর্জাতিক অরণ্য দিবস রূপে পালন করা হয়। ২০১২ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা এটি অনুমোদন করে। ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক অরণ্য দিবস পালিত হয়। এবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অরণ্য দিবসের থিম হল -- "Forest restoration: a path to recovery and well-being"।


বিশ্ব জলদিবস

২২ শে মার্চ:  বিশ্ব জল দিবস (World Water Day)। জল আমাদের জীবন। জল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারেনা। পৃথিবীতে মোট জলের পরিমান প্রায় ১৩৮.৬ কোটি ঘন কিমি। এর মধ্যে মোট লবণাক্ত জল ১৩৫.১ কোটি ঘন কিমি এবং মিষ্টি জল মাত্র ৩.৫ কোটি ঘন কিমি। United Nations এর সমীক্ষা অনুসারে বর্তমান পৃথিবীর সকল মানুষের ব্যবহারের উপযোগী জলের পরিমাণ এই সময় মাত্র ২ লক্ষ ঘন কিমি। সুতরাং, জল সংকটের হাত থেকে আমাদের রক্ষা পেতে হলে জলকে সংরক্ষণ করা খুব প্রয়োজন। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের প্রতিটি মানুষ প্রতি দিন গড়ে ৩ থেকে ৫ লিটার জল পান করেন। তবে আমরা প্রতি দিন যে পরিমাণ জল পান করি তার বেশির ভাগ অংশই খাদ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা ২২ মার্চ তারিখটিকে বিশ্ব জল দিবস (World Day for Water বা World Water Day) হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে রাষ্ট্রসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (UNCED) এজেন্ডা ২১-এ প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব জল দিবস পালিত হয় এবং তার পর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশ্ব জল দিবস ২০২১ সালের থিম হল - ''Valuing Water"। 

 বিশ্ব আবহাওয়া দিবস

 ২৩ শে মার্চ, বিশ্ব আবহাওয়া দিবস (World Meteorological Day)। ১৯৫০ সালের ২৩ শে মার্চ World Meteorological Organization স্থাপিত হয়। এই প্রতিষ্ঠা দিনটির স্মরণে প্রতিবছর ২৩ শে মার্চ দিনটি বিশ্ব আবহাওয়া দিবস রূপে পালিত হয়। এবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বিশ্ব আবহাওয়া দিবসের থিম হল -- "The Ocean, our climate and weather"।

No comments:

Post a Comment