Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Friday, 11 March 2022

পৃথিবীর ব্ল্যাক বক্স

নামে ব্ল্যাক বক্স, কিন্তু রঙ তার কমলা। প্রতি এরোপ্লেনেই রাখা হয় এই ডিভাইস, যার মূল কাজ ডেটা রেকর্ড করে রাখা। যদি কোনও এরোপ্লেন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তা হলে এই ব্ল্যাক বক্স থেকেই বিমানের শেষ মুহূর্তের সব রকম তথ্য আবার খুঁজে বের করা যায়, বোঝা যায় কেন দুর্ঘটনা ঘটল। এমন ভাবেই তৈরি করা হয় ব্ল্যাক বক্স, যাতে বিমান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেলেও ওই ব্ল্যাক বক্স নষ্ট না হয়। কিন্তু, কোনও বিমান নয়, গোটা পৃথিবীর জন্যেই ব্ল্যাক বক্স? শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, এ রকমই পরিকল্পনা চলছে অস্ট্রেলিয়াতে এবং দ্রুতগতিতে কাজ-ও এগোচ্ছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর ফলে আগামীতে যদি মানবসভ্যতার অস্তিত্বটাই বিপন্ন হয়ে পড়ে, তখন ভবিষ্যতের জন্য সব তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এই ব্ল্যাক বক্সে।



অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ তটভূমিতে, তাসমানিয়া রাজ্যে তৈরি করা হবে এই ব্ল্যাক বক্স। একটা স্কুলবাসের সাইজের এই ব্ল্যাক বক্স তৈরির আইডিয়াটা যে বিজ্ঞাপন সংস্থার, তার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জিম কার্টিস বলছেন, ঠিক যে ভাবে এরোপ্লেনের ব্ল্যাক বক্স কাজ করে, সে ভাবেই কাজ করবে এই ‘ব্ল্যাক বক্স অফ আর্থ’। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক বা মানুষ অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগুক, এমনটা অবশ্যই কেউই চায় না, তাই ওই ব্ল্যাক বক্স কখনও যেন খুলতে না হয়, চাওয়া এটাই। এর পাশাপাশি, কথা উঠছে ভবিষ্যত প্রজন্ম এই ব্ল্যাক বক্সে থাকা তথ্য কী ভাবে সংগ্রহ করবে তা নিয়ে। আরও বড় প্রশ্ন, এত খরচ করে এমন একটা ব্ল্যাক বক্স তৈরির আদৌ কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। কার্টিস সাফ বলছেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর ফলে মানুষের হাল আরও খারাপ হলে, বিশ্বের তাবড় নেতাদের পরিবেশ সংক্রান্ত নীতিকে যাতে দায়ী করে কাঠগড়ায় তোলা যায়, সেটা দেখাবে এই ব্ল্যাক বক্স। যদি কখনও এমন দিন আসে যে ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর কারণে মানবসভ্যতার অস্তিত্বটাই প্রশ্নচিহ্নের মুখে, তখন একটা নিরপেক্ষ ‘ডেটা স্টোরি’ হিসেবে কাজ করবে এই ব্ল্যাক বক্স। খতিয়ে দেখা যাবে যে কেন ও কী ভাবে এমনটা হলো। ক্লাইমেট চেঞ্জ যে এখন মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা, সে কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোতে আঘাত আসা– সব দিক মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা পরিষ্কার বলছেন, যে খুব তাড়াতাড়ি সব দেশকে যৌথ উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। গত নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত ইউনাইটেড নেশনস-এর COP26 সম্মেলনেও এই কথাই উঠে এসেছে যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যদি আরও দেড় ডিগ্রি বেড়ে যায়, তার ফলশ্রুতিতে হিট-ওয়েভ ঘটে পরিবেশের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রটাই ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল হয়ে উঠবে। এ রকম পরিস্থিতিতেও, মানুষ যে সার্বিক ভাবে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন এমন দাবি করা যাচ্ছে না, আর তাতেই আরও প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছে মানুষের ভুলের খতিয়ান রক্ষার জন্য ব্ল্যাক বক্স তৈরির এই পরিকল্পনা।


নির্মাতারা জানাচ্ছেন, খবরের কাগজ, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে ‘কী-ওয়ার্ড’-এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবে ওই ব্ল্যাক বক্স। পরিবেশ রক্ষায় নেতাদের কার্যকলাপ, ভূপৃষ্ঠ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ, বায়োডাইভার্সিটি লস– পরিবেশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সম্পর্কিত প্রত্যেকটি বিষয়ের তথ্য থাকবে ব্ল্যাক বক্সে। তেত্রিশ ফুট লম্বা ও তিন ইঞ্চি পুরু লোহার পাত দিয়ে বানানো এই ডিভাইস তৈরির কাজ চলছে। ডেটা কালেকশন-এর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিশালাকার একটা সৌরশক্তি চালিত ও স্বয়ংক্রিয় হার্ড-ড্রাইভ থাকবে ওই ব্ল্যাক বক্সে, যার ভেতর অন্তত আগামী পঞ্চাশ বছরের সব ডেটা ধরা থাকবে। তাসমানিয়ার পশ্চিম উপকূলে, যেখানে স্থাপন করা হবে এই ব্ল্যাক বক্স, সেখানকার কাউন্সিলের জেনারেল ম্যানেজার ডেভিড মিডসন বলছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এখন থেকেই এই ব্ল্যাক বক্স নিয়ে যথেষ্ট কৌতুহল তৈরি হয়েছে। তবে, ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর ফলাফল মানবসভ্যতার উপর ভয়াবহ হতে পারে এটা মেনে নিলেও, মানুষের অস্তিত্বটাই এর ফলে বিলুপ্ত হতে পারে এটা অনেক বিজ্ঞানী মানতে নারাজ। অতিবৃষ্টি, খরা, খাদ্য-সংকট, সমুদ্রতল বেড়ে গিয়ে পৃথিবীর বেশ কিছু অংশের জলের তলায় চলে যাওয়া– এই গুলোকে সম্ভাব্য ঘটনা বলে মানলেও, অনেক বিজ্ঞানী আবার এই ব্ল্যাক বক্সের পরিকল্পনাকে সমালোচনাও করছেন।


ভবিষ্যতে, যদি কখনও দরকার পড়ে, কী ভাবে খোলা হবে ওই ব্ল্যাক বক্স? ভেতরে রক্ষিত তথ্যই বা কী ভাবে পড়বে ভবিষ্যতের মানুষ? এর উত্তরে নির্মাতারা জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে কাজ চলছে। বাইনারির মতো প্রচলিত কোনও পদ্ধতিকে ব্যবহার করা হতে পারে এ ক্ষেত্রে। সিডনি-র যে প্রোডাকশন কোম্পানি এই প্রোজেক্টটা করছে, তার কর্ণধার মাইকেল রিচি বলছেন, ব্ল্যাক বক্সের ইন্টারনাল রানিং এর জন্য ‘বেটা’ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, একমাত্র পৃথিবী খুব বড়োসড়ো বিপদের মুখে না পড়লে কোনও ভাবেই ব্ল্যাক বক্স খোলা যাবে না। কারণ, একমাত্র সে রকম ক্ষেত্রেই বক্স খোলার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ ফুটে উঠবে ব্ল্যাক বক্সের গায়ে। অনভিপ্রেত কেউ যেন ইচ্ছেমত ব্ল্যাক বক্স খুলে ডেটা ব্যবহার না করতে পারে, তাই এই সতর্কতা। সব মিলিয়ে, সমবেত প্রার্থনা একটাই, যেন কখনও না আসে পৃথিবীর ব্ল্যাক বক্স খোলার দিন!

সৌজন্যেঃ- এই সময়

#ভূগোলিকা_Bhugolika

No comments:

Post a Comment