আমার সকলেই জানি ২৫শে ডিসেম্বর বড় দিন। এই পবিত্র দিনে যিশু খ্রিস্টের জন্ম দিন পালন করা হয়। ২৫শে ডিসেম্বর সত্যি কি বড় দিন? না আদতে তা নয়।আমরা ছোটবেলায় পাঠ্যবইতে দীর্ঘতম দিন এবং দীর্ঘতম রাতের কথা কমবেশি সবাই পড়েছি। দিনের দৈর্ঘ্যের বিচারে ২১শে জুন, বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন। আর ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব।
২৫শে ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন বা ক্রিসমাস উৎসব পালিত হয়। এই পবিত্র দিনে যিশু খ্রিস্টের জন্ম দিন পালন করা হয়। এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা যায় না। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। প্রকৃতিগতভাবে একটি খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠান হলেও অ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও মহাসমারোহে বড়দিন উত্সব পালন করে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্সবের আয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ভাবনার সমাবেশও দেখা যায়। উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, এবং বড়দিনের বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উত্সব উদযাপনের অঙ্গ।
২১শে জুন, হল বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন। সৌরজগতের নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার সময় একদিকে একটু হেলে থাকে। ফলে কখনো উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছে আসে, কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ।
[এখানে জেনে রাখা দরকার উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধ বলতে কোন অঞ্চলকে বোঝায়। উত্তর গোলার্ধ হল- সমগ্র উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান (বিদেশী শাসিত অঞ্চলগুলো ব্যতীত)। পূর্ব তিমুর এবং ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ গোলার্ধের অংশ ব্যতীত এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ। আফ্রিকা মহাদেশের দুইতৃতীয়াংশ। দক্ষিণ আমেরিকার এক-দশমাংশ।
এবং এন্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার নয়-দশমাংশ, আফ্রিকার দক্ষিণভাগের একাংশ, এবং এশিয়ার কিছু দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ, চারটি মহাসাগর (ভারত, দক্ষিণ আটলান্টিক, দক্ষিণ মহাসাগর, এবং দক্ষিণ প্রশান্ত) এবং ওশেনিয়ার অধিকাংশ। এশিয়া মহাদেশের কিছু মহাদেশীয় দ্বীপও দক্ষিণ গোলার্ধের অন্তর্ভুক্ত।]
মূলত ঋতু পরিবর্তনের পাশাপাশি দিন ও রাতের সময়কালও বদলে যায়। বছরের ৩৬৫ দিন কখনো সমান থাকে না। কখনো দিন ছোট হয় এবং রাত বড় হয়, আবার কখনো দিন বড় হয় এবং রাত ছোট হয়। ঠিক এমনভাবেই, বছরে এমন একটি দিন আসে, যাকে সবচেয়ে বড় দিন এবং রাত সবচেয়ে ছোট হিসেবে ধরা হয়। ২১শে জুন, উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে বড় দিন। ভূগোলের পরিভাষায় একে বলা হয় Summer Solstice বা উত্তরায়ণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিরক্ষরেখার উত্তর অংশে যেসব দেশ রয়েছে, সেখানে এখন গ্রীষ্মকাল বা সামার সিজন। আর ২১ জুন এই সামার সিজনের সবচেয়ে বড় দিন। এই নির্দিষ্ট দিনে সূর্যরশ্মি সরাসরি ট্রপিক অফ ক্যানসার বা ক্রান্তীয় কর্কটরেখার উপর পড়ে। আরও ভাল ভাবে বললে বলা যায়, উত্তর অক্ষাংশের উপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে এসে সূর্যরশ্মি পড়ে।
Summer Solstice- এর সময় পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর প্রদক্ষিণকালে সূর্যের দিকে যে হেলে থাকে, এই কৌণিক পরিমাণ ২৩.৫ ডিগ্রি। নাসার মতে, এই বিশেষ দিন অর্থাৎ ২১ জুন যে পরিমাণ সূর্যালোক নিরক্ষরেখায় পৌঁছয়, তার থেকে ৩০ শতাংশ বেশি এনার্জি বা সূর্যালোক উত্তর গোলার্ধে পৌঁছয়। তার ফলেই এই নির্দিষ্ট দিনে উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন দেখা যায়।
No comments:
Post a Comment