Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Saturday 12 September 2020

‘ভারতের মিনি সুইজারল্যান্ড’ খাজিয়ার

                    হিমাচল প্রদেশ গেলেই সিমলা, কুলু, মানালি হয়েই সাধারণত বাড়ি ফেরেন ভ্রমণ পিপাষুরা৷ কিন্তু পাহাড়ে সাজানো এক টুকরো স্বর্গ দর্শন বাকিই থেকে যায়৷



ডালহৌসি ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের চাম্বা জেলায় অবস্থিত একটি মনোরম শৈলশহর। ১৮৫৪ সালে সেনাবাহিনী ও সরকারি পদাধিকারিকদের গ্রীষ্মাবকাশ যাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকার এই শহরের পত্তন ঘটান। শহরটি ভারতের তৎকালীন গভর্নর লর্ড ডালহৌসির নামাঙ্কিত। শহরটি পাঁচটি শৈলশিখর নিয়ে গঠিত। হিমালয়ের ধৌলাধর পর্বতশ্রেণির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই শহর চতুর্দিকে মনোরম তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,০০০-৯,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ডালহৌসি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট শহর খাজিয়ার। খাজিয়ারের সবুজে ঢাকা সারি সারি পাহাড় এই স্থানকে করে তুলেছে ‘পাহাড়ো কি মালিকা’৷

                   খাজিয়ার হিমাচল প্রদেশ, চাম্বা জেলার একটি হিল স্টেশন, ডালহৌসির থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার (১৫ মাইল) এবং কালাতোপ থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। শহরটির ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক: ৩২.৫৪৬২৩৪৪° উত্তর  ৭৬.০৫৮০৯২১° পূর্ব। এটি পশ্চিম হিমালয়ের ধৌলধর রেঞ্জের পাদদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,০০০ মিটার (৫০০ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত এবং দূরত্বে শৃঙ্গগুলি দেখা যায়। এটি কালাটোপ খাজিয়ার অভয়ারণ্যের অংশ। হিমাচলের প্রকৃতির কোলে সাজানো এক বাগানের নাম খাজিয়ার। তরঙ্গায়িত পাহাড়ের বুকে মখমলের সবুজ বাগিচা বিছানো রয়েছে মনে হবে দেখে। ঢেউ খেলানো পাহাড়ের বুকে পাইনের সারি সারি বন যেন আকাশকে আলিঙ্গন করে আছে। 

                    এই পাহাড়ি শহরের বুক চিরে তৈরি হয়েছে একটি লেকও৷ সেই ঝিলকে ঘিরেই রয়েছে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি৷ পাহাড়ি উপত্যকার সমস্ত সৌন্দর্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে খাজিয়ার। বারো শতকের মতো জায়গা জুড়ে রয়েছে খাজিয়ার নাগ মন্দির। সবুজের বুকে রয়েছে জগদম্বা মন্দির‌ও। নির্মল হ্রদ, অত্যাশ্চর্য চারণভূমি ও অরণ্য পর্যটকদের প্রলুব্দ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট। পর্যটকদের জন্য সেখানে প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে৷ চাইলে আপনি ঘোড়ায় চেপে প্রকৃতির কোলে ঘুরে বেড়াতেও পারেন৷ শীতকালে গেলে মনে হবে সুইজারল্যান্ডেই এসে পড়েছেন৷ কারণ তুষারপাতে মাঝে মধ্যেই এখানকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়৷ এই কারণে হয়তো স্থানটি “ভারতের ক্ষু্দ্র সুইজারল্যান্ড” বা “মিনি সুইজারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া”- ডাকনামটি অর্জন করেছে।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে খাজিয়ারের সদৃশের আলঙ্কারিক তকমা পরে ১৯৯২ সালে ৭ই জুলাই। ওই বছর জুলাইতে ভারতবর্ষে সুইস দূত উইলি পি ব্লেজার, সুইজারল্যান্ডের ভাইস কাউন্সেলর এবং হেড অফ চ্যানসারি হেড খাজিয়রকে  দেখে বলেছিলেন `মিনি সুইজারল্যান্ড`। তিনি খাজিয়ারের রাস্তায় সুইস ভ্রমণের ছবি সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড-ও টাঙিয়ে দেন। যেখানে নির্দেশ করা ছিল খাজিয়ার থেকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নের দূরত্ব ৬১৯৪ কিলোমিটার। পৃথিবীর ১৬০ খানা অঞ্চলের মধ্যে খাজিয়ার একটা যার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক মিল লক্ষ্য করা যায়। ব্লেজার, খাজিয়ার থেকে একটি পাথরও নিয়ে গেছিলেন নিজের দেশে। যা পরে ব্যবহৃত হয়েছিল সুইজ পার্লামেন্ট তৈরিতে, মিনি সুইজারল্যান্ডের প্রতীক হিসেবে তা দিয়ে সুইস পার্লামেন্টের চারপাশে একটি পাথর কোলাজ তৈরি করা হয়। ভারতের সেই মিনি সুইজারল্যান্ড, খাজিয়ার। ভারতবর্ষের ঊষ্ণ রোমান্টিকতা ঘেরা এক নন্দন কানন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ অনেকখানি উপরে এই অপরূপ অরণ্য ঘেরা অঞ্চলকে অনেকে হিমাচল প্রদেশের গুলমার্গও বলেন। তরঙ্গায়িত মখমলি সবুজের চাদর বিছানো। মাথায় নীল আকাশের সুবিশাল শামিয়ানা। ঢেউখেলানো সবুজের ঢালে সুদীর্ঘ পাইনের আকাশ ছোঁয়া আস্ফালন। তৃণভূমির ঠিক মাঝখানে এক ছোট্ট লেক। তাতে এক ভাসমান দ্বীপ। এটিতে তিনটি বাস্তুতন্ত্রের বিরল সংমিশ্রণ রয়েছে: হ্রদ, চারণভূমি এবং বন।
 
            পাহাড়ি উপত্যকার সমস্ত সৌন্দর্য শুষে নিয়ে নিজের স্বচ্ছ শরীরে ধারণ করেছে এই স্বপ্নপুরী খাজিয়ার। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতই মনোমুগ্ধকর যে মুঘল বা রাজপুতদের মতো বিভিন্ন রাজবংশকে আকৃষ্ট করত। এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে আপনি ঘুরে আসতেই পারেন ভারতের এই সুইজারল্যান্ড থেকে। খাজিয়ারের দৃশ্যপট এতটাই মনোমুগ্ধকর যে তা ফটোগ্রাফারদের কাছে হয়ে উঠেছে এক স্বর্গরাজ্য। ঘন দেবদারু ও পাইনের এবং সবুজ সবুজ ঘাসগুলি খাজিয়ার বৈশিষ্ট্যযুক্ত। যেহেতু খাজিয়ার দৌলধর পর্বতের (Dauladhar Mountains) গোড়ায় অবস্থিত তাই এখানকার পর্যটকরা পাহাড়ের প্যানোরামিক দৃশ্য পেতে পারেন।
            খাজিয়ারের সেরা বিনোদন হল হ্রদটিতে (Khajjiar Lake) ঘুরে বেড়ানো বা ঘন পাইনের বনাঞ্চলে দীর্ঘ পদচারণা করা। শীতকালে তুষার ঢাকা থাকে যা উচ্চতা ৯১০ মিমি (৩ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। খাজিয়ার হ্রদ একটি ছোট হ্রদ, এর চারদিকে ঘন সবুজ ঘাট এবং ভাসমান দ্বীপ রয়েছে। ভ্যাকা নামক আগাছার ঘন বৃদ্ধি তার পৃথিবীকে স্পঞ্জযুক্ত করেছে। চলাচলের স্বাধীনতা এবং ঢালু ভূখণ্ডের কারণে শিশুরা এই জায়গাটি উপভোগ করে যা তাদের আঘাত না পেয়ে লেকে নামতে দেয়। আরেকটি আকর্ষণ হ'ল ঘোড়ায় চড়া। এখানে রয়েছে বিশাল একটি হনুমান স্ট্যাচু এবং একটি পার্ক।
            হ্রদ থেকে কিছুটা দূরে খাঁজি নাগের মন্দির (Khajji Nag Temple)। মন্দিরটি খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর চম্ব রাজা পৃথ্বী সিংহের তৈরি করেন। মন্দিরটির একটি সোনার গম্বুজ রয়েছে যার কারণে এটি সুবর্ণ দেবী মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরের দেওয়াল ও ছাদের গায়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে জয়ী পাণ্ডব এবং বিজিত কৌরবদের ছবি খোদাই করা। মন্দিরের গর্ভগৃহটি কাঠ থেকে খোদাই করে করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে অপূর্ব খোদাই করা মন্দিরের বহির্ভাগটিও। এই মন্দিরটি সাপের (নাগা) উপাসনায় উত্সর্গীকৃত এবং ভিতরে কিছু সাপ মূর্তি রয়েছে। মন্দিরে শিব (Shiv) ও দেবী হাদিম্বার (Hadimba) প্রতিমাও রয়েছে। সবুজের মাঝে পায়ে হাঁটাপথে ঘুরে আসুন জগদম্বা(Jagadamba) মন্দিরে। একটি গল্ফ কোর্সও আছে এখানে।

            এখান থেকেও কালাটপ স্যাংচুয়ারি(Kalatop Khajjiar Sanctuary) দেখে নিতে পারেন। কালাটোপ খাজিয়ার অভয়ারণ্য একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য যা বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ এবং প্রাণীজন্তু রয়েছে। এটি দেওদার এবং ফির বন দ্বারা ঘনভাবে আচ্ছাদিত। এই জায়গাটি পিকনিক এবং ট্রেকিংয়ের জন্য একটি প্রিয় জায়গা। খাজিয়ার অসংখ্য ট্রেকিংয়ের সুযোগ দেয়। খাজিয়ার থেকে ডেইনকুন্ড একটি ৩.৫ কিলোমিটার (২.২ মাইল) থেকে মাঝারি সহজ ট্রেক। ট্রেকটি ডালহৌসি-খাজিয়ার রাস্তা খাজিয়ার থেকে ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মাইল) থেকে শুরু হয়ে ডেইনকুন্ডের ফোলাণী দেবী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। একটি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত ট্রেইল এবং মাঝারি উত্সাহ সহ এই ট্রেক শুরু করা বাচ্চাদের জন্য একটি দুর্দান্ত ট্রেক। ট্রেকটি দুর্দান্ত দর্শন এবং একটি সুন্দর ক্যাম্পিং সাইট সরবরাহ করে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা পাখির চোখে খাজিয়ারকে দেখে নিতে ভেসে পড়ুন রোমাঞ্চকর প্যারাগ্লাইডিং-এ। শীতে সবুজ উধাও হয়ে গিয়ে বরফের বাগানে পরিণত হয় খাজিয়ার।


তথ্যসূত্র:
1. Wikipedia,
2. adarbepari.com,
3. Zee 24 ঘন্টা, 
4. আনন্দবাজার পত্রিকা,
5. সংবাদ প্রতিদিন, 
6. এইসময়।



লেখক:

অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Saturday 22 August 2020

মরুভূমির গোলাপ (Desart Rose)

                 জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী স্ট্রিংয়ের ‘ডেজার্ট রোজ’ গানটি হয়তো অনেকেরই শোনা। তবে শুধু এই গানেই নয়, বরং বাস্তবেও কিন্তু মরুভূমির গোলাপ বা ‘ডেজার্ট রোজ’ রয়েছে। ডেজার্ট রোজ আসলে কোনো গোলাপ ফুল নয়। মরুভূমি অঞ্চলের অনুর্বর বালুরাশি আর জিপসামের মিশ্রণে যে পাথর তৈরি হয় সে পাথরগুলো পাশাপাশি মিলে গিয়ে গোলাপের পাপড়ির আকার ধারণ করে। আর সব পাপড়ি মিলে যে আকার দাঁড়ায় তা দেখতে গোলাপ ফুলের মতো। পুরো ব্যাপারটিই ঘটে প্রাকৃতিকভাবে। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এর পাপড়ি। যেহেতু বালিতে পাওয়া যায় তাই পাপড়িগুলোর চারপাশও বালুকাময় থাকে। বালি সরালে এর প্রকৃত সৌন্দর্য চোখে পড়ে। পাপড়িগুলো আলো প্রতিফলিত করে এবং বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোজ বেশ চড়া দামে বিক্রি হয়।



            গোলাপের মতো দেখতে এই বস্তুটি আসলে জিপসামের তৈরী একটি প্রাকৃতিক স্ফটিক। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালির কণা নিয়ে গঠিত হয় এই মরুভূমির গোলাপ। সাইপ্রাস, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মরোক্কো, আলজেরিয়া, জর্ডান, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন (ফুয়ের্তেভেন্টুরা, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ; ক্যানেট ডি মার, কাতালোনিয়া; লা আলমারচা, কুয়েঙ্কা), মঙ্গোলিয়ায় গোলাপ শিলা পাওয়া যায় ( গোবি), জার্মানি (রোকেনবার্গ), আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র (মধ্য ওকলাহোমা; কোচিস কাউন্টি, অ্যারিজোনা; টেক্সাস), মেক্সিকো (সিউদাদ জুরেজ, চিহুহুয়া), অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়াতে এই স্যান্ড রোজ দেখা যায়।

গোলাপের মতো দেখতে প্রচুর বালুকণাসমৃদ্ধ জিপসাম বা ব্যারাইটের স্ফটিকগুচ্ছের প্রচলিত নাম হল মরুগোলাপ। স্ফটিকলেখচিত্রের অক্ষের উপর সামতলিকভাবে বিস্তৃত পানপাত্রের মতো খোলামুখের চারপাশে বিকীর্ণ সামতলিক স্ফটিকগুচ্ছ এর পাঁপড়িগুলো তৈরি করেছে।  শুষ্ক বালুকণা দিয়ে স্ফটিকের কৃত্রিম গোলাপ তৈরি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় যেমন অগভীর লবণ উপত্যকায় বাষ্পীভবনের ফলে লবণ তৈরি হয়। স্ফটিকগুলি সামতলিক প্লেটের বৃত্তাকার বিন্যাস তৈরি করে পাহাড়টিকে গোলাপ ফুলের মতো আকৃতি দিয়েছে। জিপসাম দিয়ে তৈরি গোলাপগুলো ব্যারাইট দিয়ে তৈরি গোলাপগুলোর চেয়ে বেশি সুন্দর এবং তীক্ষ্ণধারযুক্ত। সেলেস্টাইন এবং অন্যান্য বাষ্পীভূত তীক্ষ্ণধারযুক্ত খনিজ পদার্থগুলিও এইরকম কৃত্রিম গোলাপগুচ্ছ তৈরি করতে পারে। তারা একটি অথবা একগুচ্ছ কৃত্রিম গোলাপ তৈরি করতে পারে যেগুলির অধিকাংশের ব্যাস মটরদানার ব্যাস থেকে শুরু করে চার ইঞ্চি বা ১০সেমি দৈর্ঘ্যের হতে পারে। 

             পরিবেষ্টক বালি যা স্ফটিক গঠনের সময় একত্রে মিশ্রণ দ্বারা অঙ্গীভূত হয় অথবা অন্যভাবে স্ফটিকগুলির আবরণ তৈরি করে তা স্থানীয় পরিবেশ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।এক্ষেত্রে যদি আয়রনের অক্সাইডগুলি উপস্থিত থাকে তাহলে কৃত্রিম গোলাপগুলির উপর মরচের আস্তরণ পড়ে। মরুগোলাপ বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন--বালি গোলাপ, সেলেনাইট গোলাপ, জিপসাম গোলাপ এবং ব্যারাইট গোলাপ।
 
            মরুভূমির গোলাপ গঠনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে দেখা দেয়। বৃষ্টিপাত যখন মরুভূমিতে পড়ে তখন জল তত্ক্ষণাত বালিতে মিশে যায়। বালিতে উপস্থিত প্রচুর সংখক জিপসাম বৃষ্টির জলের দ্বারা গভীরে পৌঁছায়। তীব্র উত্তাপে, জল আবার পৃষ্ঠতলের স্তরে উঠে যায় এবং এর সম্পূর্ণ বাষ্পীভবন নতুন জিপসাম স্ফটিক গঠনের দিকে পরিচালিত করে। তখন নতুন জিপসাম স্ফটিকগুলি এক অদ্ভুত বাঁকা এবং কিছুটা বাঁকানো আকারে তৈরি হয়। স্ফটিকগুলি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। স্ফটিকগুলির রঙ পুরোপুরি নির্ভর করে সেগুলি যে বালিতে তৈরি হয়েছে তার রঙের উপর। তিউনিসিয়ান সাহারায় সাদা মরু গোলাপ পাওয়া যায়। তবে কালো মরু গোলাপ গুলি আর্জেন্টিনার মরুভূমিতে রয়েছে।

                প্রাচীন কাল থেকেই সাহারা মরুভূমির বাসিন্দারা এই ফুলের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেন। যাযাবররা প্রকৃতির এই অলৌকিক ঘটনাটি প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন। তারা ধরে নিয়েছিল যে মরুভূমির গোলাপটি উটের মূত্র থেকে তৈরি হয়েছিল। সাহারার যাযাবর উপজাতিরা যখন ওসিসে পৌঁছায় এবং মানুষ ও উট তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে বিশ্রাম নেয় তখন উটের প্রস্রাব দ্বারা বালি ধুয়ে "মরুভূমির গোলাপ" পৃষ্ঠের উপরে উপস্থিত হয়। পুরানো দিনগুলিতে, এটি বিশ্বাস করা হত যে এই "ফুলগুলি" উটের মূত্র থেকে সঠিকভাবে গঠিত হয়েছিল।

            তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মিশর এবং আরও কিছু দেশ, যেখানে প্রচুর বালুকাময় মরুভূমি রয়েছে, সেখানে পর্যটকদের মধ্যে একটি খুব জনপ্রিয় স্যুভেনির হ'ল "মরুভূমির গোলাপ" নামক একটি অস্বাভাবিক খনিজ। খনিজটির রূপ বৈচিত্র্যই হ'ল জিপসাম। না ... সুন্দর এবং কাব্যিক নাম ছাড়া এটি কিছু নয় এটি "মরুভূমির গোলাপ"।

             অপূর্ব প্রাকৃতিক সৃষ্টি এই "মরুভূমির গোলাপ" সংগ্রাহক এবং গহনা প্রেমীদের দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান। ডেজার্ট রোজ গুলি সাধারণ কী রিং, স্যুভেনির, দুল এবং অন্যান্য গহনা আকারে বিক্রি হয়। কিছু কিছু দেশে ভালোবাসা দিবসের প্রেমের প্রতীক হিসাবে "মরুভূমির গোলাপ" দেওয়ার রীতি আছে। এটি একটি বিশেষ উপহার, কারণ অনেকে বিশ্বাস করেন যে এই পাথর গভীর ভালবাসার প্রতীক। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের বাসিন্দারা একটি নির্দিষ্ট ঐতিহ্য অনুসরণ করে এবং বিয়ের দিন, কনের বাবা-মা তাকে যথাযথভাবে এই জাতীয় পাথর দেয় কারণ এটির প্রতীক গভীর ভালবাসা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই অনন্য প্রাকৃতিক সৃষ্টির ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও আলজেরিয়ান সরকার এর রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। মরুভূমি গোলাপ বিশ্বের শুকনো অঞ্চলের বেশিরভাগের প্রতীক। অনেকের বিশ্বাস যে মরুভূমির গোলাপ পাথরের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে তাহল ঔষধি বৈশিষ্ট্য... ভাঙা হাড়গুলির দ্রুত নিরাময়ের জন্য মরু গোলাপ বেশ উপকারী, তবে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের চিকিত্সা ক্ষেত্রে জিপসাম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

             ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে পারমিয়ান যুগে যখন  রোজ রক বা গোলাপি পাহাড়  তৈরি হয়েছিল তখন পশ্চিম এবং মধ্য ওকলাহমা অগভীর সমুদ্র দ্বারা আবৃত ছিল। এরপর সমুদ্র সরে গিয়ে জলবিহীন ব্যারাইট অধঃক্ষিপ্ত হয়ে কোয়ার্টজ বালুকণার চারধারে জমা হল। এভাবেই বিরাটাকারে তৈরি লালাভ বালিপাথরের মাধ্যমে তৈরি হল রোজ রক বা গোলাপি পাহাড়।

             পাথরের এই গোলাপ ছোট থেকে শুরু করে বিশাল আকারের হতে পারে। গোলাপ শিলাগুলির গড় আকার ০.৫  ইঞ্চি (১.৩ সেন্টিমিটার) থেকে ৪ ইঞ্চি (১০ সেমি) ব্যাসের হয়ে থাকে। ওকলাহোমা ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ কর্তৃক খুঁজে পাওয়া বৃহত্তম  গোলাপটি ছিল ১৭ ইঞ্চি (৪৩ সেমি) লম্বা এবং ১০ ইঞ্চি (২৫ সেমি) উচ্চতা, ওজন ১২৫ পাউন্ড (৫৭ কেজি)৷ তবে গোলাপ শৈলগুলি সর্বাধিক ৩৯ ইঞ্চি ( ৯৯ সেন্টিমিটার) লম্বা ও ওজনে প্রায় ৪৫৪ কিলোগ্রাম হতে পারে। এর কঠোরতা খুব কম - ২ ।আপেক্ষিক গুরুত্ব - ২.৩-২.৪ । নিখুঁত বিভাজন বৈশিষ্ট্যযুক্ত। ফ্র্যাকচারটি অসম।


            এপ্রঙ্গে জানিয়ে রাখি, কাতার শুধুমাত্র তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য সারা পৃথিবীতে পরিচিত তা নয়। কাতারের আরো একটি মূল্যবান সম্পদের নাম হচ্ছে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা ‘মরুভূমির গোলাপ’।মরুভূমির এরকম গোলাপের আদলে একটি  জাদুঘরটি তৈরি করা হয়েছে বলে একে ‘ডেজার্ট রোজ’ বা ‘মরুভূমির গোলাপ’ বলা হয়। এই ডেজার্ট রোজের জন্যও কাতারকে আলাদাভাবে চেনে পৃথিবী।


তথ্যসূত্র: 

1. Wikipedia, 
2. roar.media, 
3. domsireni.com



লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

'ভারতের রূঢ়’ - দুর্গাপুর

                     দুর্গাপুর (প্রকারান্তরে দূর্গাপুর), ভারতের  পশ্চিমবঙ্গ  রাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান  জেলার একটি শহর ও পৌর কর্পোরেশনাধীন এলাকা। এটি পশ্চিমবঙ্গের চতুর্থ বৃহৎ মহানগর বা নগরাঞ্চল। ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মানসপুত্র বলে পরিচিত এই শহর বিশ্বখ্যাত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানাটির  জন্য। 


                দুর্গাপুর রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত। শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩.৪৮° উত্তর ৮৭.৩২° পূর্ব । সমূদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৬৫ মিটার (২১৩ ফুট)।শহরটি দামোদর ও অজয় নদের অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থিত। দুর্গাপুরের দক্ষিণ সীমান্তে একদা বাংলার দুঃখ বলে পরিচিত দামোদর ও উত্তর সীমান্তে অজয় নদ প্রবাহমান। দুর্গাপুর শহরাঞ্চলের ভৌগোলিক আয়তন ১২৭.১ বর্গ কিঃমিঃ। পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর (পূর্বে পানাগড় থেকে পশ্চিমে অন্ডাল পর্যন্ত) শহরের বিস্তৃতি প্রায় ৪০ কিঃমিঃ। উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর (উত্তরে শিবপুর-অজয়ঘাট থেকে দক্ষিণে ন'ডিহা পর্যন্ত) শহরের বিস্তৃতি প্রায় ২২ কিঃমিঃ। ভৌগলিক বিস্তৃতি ও আয়তনের বিচারে দুর্গাপুর শহরাঞ্চল হল পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় ও পূর্বোত্তর ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম শহরাঞ্চল।

                দুর্গাপুরের পানাগড় থেকে ক্রমশ পূর্বমুখে, ১৯ নং জাতীয় সড়ক (পুরাতন ২) ধরে বর্ধমান অভিমুখে যাত্রা করলে গাঙ্গেয় বাংলার উর্বর সমভূমি অঞ্চল পরবে যা গঙ্গা ও তার শাখানদী দ্বারা বয়ে আনা পলিমাটি দ্বারা পরিবেষ্টিত। অন্যদিকে, পশ্চিমদিকটি ছোটোনাগপুর মালভূমির পাদদেশ সন্নিবেষ্ট অঞ্চল যেখানকার মাটি তুলনামূলক ভাবে অনুর্বর, রুক্ষ, অসম ও তার রঙ হল লাল। গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলটি বহুফসলি এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধান-উৎপাদনকারী অঞ্চল। পশ্চিমের মাটি তুলনামূলক ভাবে অনুর্বর হওয়ায়ে, অঞ্চলটি মূলতঃ একফসলি। সম্ভবতঃ এই কারণেই, এই অঞ্চলটি শিল্পপ্রধান অঞ্চল। এই শিল্পাঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহত্তম শিল্পাঞ্চল। লৌহ ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে অধিকাঅংশ ইস্পাত কারখানা দুর্গাপুরে গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ইস্পাত শিল্পের উন্নতি ঘটানোর জন্য একটি ব্রিটিশ কোম্পানির সাহায্যে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দামোদর নদের তীরে দুর্গাপুরে ইস্পাত কারখানাটি [DSP]  প্রতিষ্ঠা করা হয় ।


                দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রিভবন এর অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান গুলি হল :- (১) রানিগঞ্জ, ঝরিয়ার, বোকারো, আসানসোল ও গিরিডির কয়লা  (২) সিংভূম, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, নোয়ামুণ্ডি, দুর্গ ও বাইলাডিলার উচ্চমানের  লৌহ আকরিক (৩) বীরমিত্রপুর, বোনাই, গাঅংপুর, বালাঘাট ও জব্বলপুরের চুনাপাথর, ডলোমাইট,  ম্যাঙ্গানীজ, নিকেল (৪) দামোদর, সুবর্ণরেখা, বরাকর, মহানদী, ব্রাহ্মণী নদীর জল  (৫) স্থানীয় দক্ষ শ্রমিক,  (৬) তিলাইয়া, মাইথন, পাঞ্চেত ও হীরাকুদের  জলবিদ্যুৎ এবং বোকারো, চন্দ্রপুরা ও দুর্গাপুরের তাপবিদ্যুৎ (৭) রেলপথ, সড়কপথ ও কলকাতা বন্দরের নৈকট্য (৮) দুর্গাপুর, হলদিয়া, আসানসোল, ঝরিয়া, জামশেদপুরে ইস্পাতের ব্যাপক চাহিদা (৯) সরকার, বিভিন্ন কোম্পানি, সরকারি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও বীমা কোম্পানির মূলধন বিনিয়োগ এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্র স্থাপনে সাহায্য করেছে। সেকারণে দুর্গাপুরে ইস্পাত ও সংকর ইস্পাত শিল্পের পাশাপাশি অসংখ্য মিনি স্টিল প্ল্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমেন্ট ও সার শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে।


                জার্মানির রূঢ়ের মত ভারতের দুর্গাপুর রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত। রূঢ় শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নানা বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে -
১) অবস্থান: ইউরোপে জার্মানির রাইন নদী ও তার দুই উপনদী রূঢ় ও লিপের সংযোগস্থলে রূঢ় শিল্পাঞ্চলের মত ভারতের দামোদর নদের তীরে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে।
২) শিল্প: রূঢ় অঞ্চলের লোহা ও ইস্পাত,ইঞ্জিনিয়ারিং, রাসায়নিক শিল্প কেন্দ্রের মত দুর্গাপুরে ইস্পাত ও সংকর ইস্পাত শিল্প এবং অসংখ্য মিনি স্টিল প্ল্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমেন্ট ও সার শিল্প গড়ে উঠেছে।
৩) কয়লা: রূঢ় অঞ্চলের রাইন উপত্যকার উন্নত বিটুমিনাস কয়লার মত দুর্গাপুরে, দামোদর উপত্যকার উৎকৃষ্ট গন্ডায়ানা কয়লার  ভিত্তিতে শিল্পাঞ্চল দুটির উন্নতি ঘটে।
৪) পরিবহণ: পরিবহনের দোলক নীতি অনুসারে রাইন উপত্যকার কয়লা ভর্তি রেল ফিরতি পথে ফ্রান্সের লোরেন অঞ্চলের আকরিক লোহা আমদানি করে। একইভাবে দামোদর উপত্যকার রানিগঞ্জ ও ঝরিযারা কয়লা বোঝায় রেল ফিরতি পথে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ ও কেওনঝড়ের লোহা বহন করে আনে।
৫) জল: রূঢ়, রাইন নদীর পর্যাপ্ত মৃদু জলের মত দামোদর নদের জল দুর্গাপুর ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

                উক্ত সাদৃশ্যের কারণেই জার্মানির রূঢ় (Rhur) শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে দুর্গাপুরকে ‘ভারতের রূঢ়’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে।


তথ্যসূত্র :

1. bengalstudents.com, 
2. https://wikipedia.org
3. আনন্দবাজার পত্রিকা, 
4. অর্থনৈতিক ভূগোল ও সম্পদ শাস্ত্রের পরিচয় - অনিশ চট্টোপাধ্যায়, 
5. উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল - অসিতেন্দু রায়চৌধুরী ও শঙ্কর হাজরা, 
6. উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল - সমরেন্দ্রনাথ মোদক।


লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলার 'হোয়াং হো' দামোদর

                    প্রকৃতি তার অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে রেখেছে বর্ধমান জেলাকে, আর সেই সৌন্দর্যের হাতছানিতে যেখানে রয়েছে দামোদর নদের বিস্তীর্ণ বালির চর, কোথাও স্বচ্ছ নদের জল আর আশে পাশে সবুজের সমারোহ। ছোটোবেলায় পাঠ্য বইতে তাকে জেনেছিলাম “বাংলার দুঃখ” বলে।



                দামোদর নদ ভারতের ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া একটি নদী। এই নদীগর্ভ সমৃদ্ধ সম্পদে পরিপূর্ণ, এই নদী যে বিরাট অববাহিকা তৈরি করেছে যেখানে বড় বড় খনি ও শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। আগে এই নদকে বলা হত 'বাংলার দুঃখ' (Sorrow of Bengal)। গঙ্গার শাখা হুগলীর উপনদী হল দামোদর।  ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমিতে, পালামৌ জেলার টোরির নিকট উচ্চগিরি শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে কলকাতার ৫০কি.মি. দক্ষিণে উলুবেড়িয়ার কাছে হুগলী নদীতে মিলিত হয়েছে। যাত্রা পথে অতিক্রম করেছে ৫৯২ কি.মি. পথ। দামোদর নদের প্রধান উপনদী গুলি হল বরাকর নদী,কোনার নদ, উশ্রী, বোকারো নদী ইত্যাদি।

                সর্পিল গতিতে বয়ে চলা দামোদরের ২৪,২৩৫ বর্গ কি.মি. বিস্তীর্ণ অববাহিকা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পালামৌ, হাজারীবাগ, কোডার্মা, গিরিডি, ধানবাদ, বোকারো, চাতরা জেলা, এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান ও হুগলী জেলার অধিকাংশ জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, রাঁচি, লোহারডগা, ও দুমকা জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা, ও হাওড়া জেলার স্বল্প কিছু অংশও দামোদর উপত্যকার অংশ। এই নদ মালভূমির মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হতে হতে হঠাৎ করেই সমভুমিতে পরেছে। এই নদীর উৎপত্তি স্থল সমুদ্র সমতল থেকে ৫১০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এবং মিলনস্থল মাত্র ৩০ মিটার অবস্থিত। নদীটি যেখানে মালভুমি ছেরে সমভুমিতে প্রবেশ করেছে বর্ধমান জেলার কাছে এর উচ্চতা ১৫০ মিটার। প্রবাাহপথে ঢালের পার্থক্য নদটিকে অধীক বন্যাপ্রবন করে তুলেছে। 

                এই নদের প্রবাহ অঞ্চলের জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য বন্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী।এই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ১২৫ সেমি । মুলত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বেশির ভাগ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। নিম্নগতির তুলনায় উচ্চগতিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশী। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে  জল ধরে রাখতে পারে না ফলে বন্যা  দেখা যায়। মালভুমির উচ্চভাগে বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ভুমিক্ষয় হয় ও নদীগর্ভ ভরাট হয়ে বন্যা পরিস্থিতিকে আরও  কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলে। এবং আসানসোলের কাছে সংকীর্ণ পথের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাবার সময় বর্ধমান সমভুমির একটা বিশাল অংশ প্লাবিত করে। প্রতি বর্ষায় দামোদরের বন্যায় দু'কূল ছাপিয়ে উঠে সবকিছু বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনেক প্রাণ ও সম্পত্তি হানি ঘটে। প্রত্যেকবারই জনগণের জীবনে নেমে আসে  এক অবর্ণনীয় দুঃখদুদর্শা।সেই কারণে দামোদর নদকে "বাংলার দুঃখ" (sorrow of bengal) নামে আখ্যায়িত করা হয়। "চিনের দুঃখ - হুয়াংহো" এর মত ঘন ঘন বন্যার জন্য দামোদরের সঙ্গে এহেন  মিল থাকার কারনেই এমন নামকরণ।


সত্যিই কি  দামোদর আজও দুঃখের কারণ ?
 
                দামোদর যে এক সময় বাংলার দুঃখ ছিল তা সবাই জানি৷ দামোদরের বন্যার জল বাংলার মাঠ ঘাট ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, কত মানুষ গৃহ-হীণ হয়েছিল তাও জানা। ১৭৩০ , ১৮২০ , ১৮৪৮ , ১৮৫৬ , ১৮৮২ , ১৮৯৮ , ১৯০১ , ১৯২৩ , ১৯৩৫ , ১৯৪৩ , ১৯৫৮ , ১৯৭৮ এই বছরগুলিতে দামোদর তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছিল বাংলার জনজীবনে৷ এর মধ্যে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯৪৩ সালের বন্যাতে৷ বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার জন্য দামোদর ফ্লাড এনকোয়ারি কমিটি বসানো হয় ১৯৪৩ সালে৷ টেনেসি ভ্যালি অথোরিটির অনুরূপে ১৯৪৮ সালের ৭ জুলাই স্বাধীন ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী পরিকল্পনার রূপকার হিসেবে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) -এর জন্ম হয়। ভরদুইনের নকশা অনুযায়ী মূল প্রস্তাবে ৭টি স্টোরেজ ড্যাম ও একটা ডাইভারশন ড্যাম তৈরি করার প্রস্তাব ছিল। এই বাঁধগুলি তৈরি হওয়ার কথা ছিল তিলাইয়া, কোনার, মাইথন, পাঞ্চেত, বোকারো, আইয়ার, বলপাহাড়ি ও বেরমোতে (ডাইভারশন ড্যাম)। সেই অনুযায়ী দ্রুত নির্মীত হল তিলাইয়া (১৯৫৩), কোনার (১৯৫৫), মাইথন (১৯৫৭) ও পাঞ্চেত (১৯৫৯)— ও দুর্গাপুর ব্যারাজ। বন্যাপ্রবণ দামোদরকে বেঁধে ফেলল ডি.ভি.সি৷ দুর্গাপুর ব্যারাজের জল নিয়ন্ত্রণ করে চাষের কাজে দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল৷ ঠান্ডা ঘরে বসে নেওয়া সিদ্ধান্ত যে প্রায়শই বাস্তব থেকে দূরে অবস্থান করে তা ডি.ভি.সি হাতেনাতে প্রমাণ করে দিল৷ বর্তমান ঝাড়খণ্ডের চারটি ড্যাম আর পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত দুর্গাপুর ব্যারাজের যৌথ পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হল ঠিকই কিন্ত্ত মৃত্যু হল দামোদরের৷ প্রথম আঘাতটা এল নদী গর্ভেই৷



                যদিও বর্ষার জলে পুষ্ট দামোদরে সারা বছর জল থাকার কথা নয় তবুও তিরতির করে হলেও সারা বছর একটা প্রবাহ থাকতই৷ কিন্ত্ত প্রথমেই চারটে ড্যামে জলকে বেঁধে ফেলে ও দুর্গাপুর ব্যারাজে জল আটকে সেচ খালের মাধ্যমে সেই জল পাঠানোয় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ স্তব্ধ হয়ে গেল৷ পুরনো নদীচরের দৈর্ঘ্যে বাড়তে লাগল৷ গজিয়ে উঠতে লাগল নতুন নতুন চর৷ শুরু হল অবৈধ বালি কারবারি দের দৈরত্য, চর দখল করে গড়ে উঠল বাসস্থান। যে উদ্দেশ্যে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন মূলত তৈরি করা হয় তা ডাহা ফেল করে৷ বন্যা নিয়ন্ত্রণের বদলে ডেকে আনল বন্যাকে৷ আগে বন্যা হত প্রাকৃতিক কারণে আর এখন ম্যান মেড বন্যা৷ বন্যা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনার অভাব দামোদরকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে৷ দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে চাষিদের প্রয়োজনের সময়ে জল ছাড়ার কথা ভাবা হলেও বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা৷ প্রতি বছর দামোদর থেকে জল ছাড়া হয় তবে   বর্ষার সময় যখন মাঠঘাট  জলে ডুবে থাকে৷ ফলে বন্যা কবলিত হচ্ছে বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা৷ 


তথ্যসূত্র: 

1. etravelguru, 
2. Quora, 
3. Wikipedia, 
4. আনন্দবাজার পত্রিকা, 
5. এইসময় ।

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডেড ম্যানস ফিঙ্গারস' (Dead Man's Fingers)

 

                    মাঝে-মধ্যেই বিচিত্র সব ঘটনা পৃথিবীর মানুষকে বিস্মিত করে। তখন কল্পনাতেও আসে না কি রহস্য এই পৃথিবীতে লুকিয়ে রয়েছে। এমনই এক রহস্য হলো ‘ডেড ম্যানস ফিঙ্গার’।



                     মানুষের পায়ের আকৃতির মতো একটা কিছু, যার পাঁচটা আঙুল রয়েছে ও রয়েছে নখ আকৃতির বস্তু। দেখে প্রায় সবাই একমত হবে যে এগুলো আঙুল। তবে সেটা যে মানুষের পা নয়, তবে রঙটা তো মানুষ মানুষ নয় তা দেখেই বোঝা যায়। কার আঙুল এগুলো? শিম্পাঞ্জি, গোরিলা, এলিয়েন.... আসল উত্তর জানলে তাজ্জব হবেন!

                    এটি মানুষ বা কোনো পশুর পা নয়, এটি এক ধরনের ছত্রাক, যার নাম জাইলারিয়া পলিমরফা। চলতি ভাষায় একে বলা হয় মৃত মানুষের পা বা ‘ডেড ম্যানস ফিঙ্গারস' (Dead Man's Fingers) বা জাইলারিয়া পলিমোরফা (Xylaria polymorpha)।


                    জাইলারিয়া পলিমর্ফা, সাধারণত মৃত ব্যক্তির আঙ্গুল হিসাবে পরিচিত, এটি একটি স্যাপ্রোবিক ছত্রাক। এটি বন এবং কাঠের জমির একটি সাধারণ বাসিন্দা, সাধারণত পচা বা আহত গাছের স্টাম্প এবং ক্ষয়ে যাওয়া কাঠের গোড়া থেকে বেড়ে ওঠে। এটি উডি লেগিউম পোড, পেটিওলস এবং হার্বেসিয়াস স্টেমের মতো সাবস্ট্রেটগুলি উপনিবেশ স্থাপন হিসাবেও পরিচিত এটি। এর দীর্ঘায়িত সোজা, ক্লাভেট বা স্ট্র্যাপের মতো স্ট্রোমাটা আঙুলের মতো বেশিরভাগ স্থল দিয়ে পোকার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। জাইলারিয়া জেনাসে প্রায় ১০০ প্রজাতির মহাজাগতিক ছত্রাক রয়েছে। পলিমোরফা অর্থ "বহু রূপ"। এর নাম অনুসারে, এর বেশ পরিবর্তনশীল তবে প্রায়শই পোড়া কাঠের সাথে মিলিত ক্লাব-আকৃতির ফলের দেহ (স্ট্রোমা) রয়েছে। বসন্তকালে এই ছত্রাকটি প্রায়শই কনিডিয়া নামক সাদা বা নীল বর্ণযুক্ত স্পোরের স্তর তৈরি করে যা এর পৃষ্ঠ এবং আশেপাশের অঞ্চলে বৃদ্ধি পায়।

                সায়েন্স ফ্রাইডের মতে, ছত্রাকটার এমন ভুতুড়ে নাম কারণ এক ঝটকায় দেখে মনে হচ্ছে যেন জঙ্গলের মধ্যে পাথরের ফাঁক দিয়ে মানুষের আঙুল বেরিয়ে রয়েছে। ডেড ম্যানস ফিঙ্গার সাধারণত দুই থেকে পাঁচটি শাখা একসঙ্গে ক্লাস্টার করে বৃদ্ধি পায়। বন এবং কাঠের অঞ্চলে এটি পাওয়া যায়। এটি সাধারণত ক্ষয়ে যাওয়া কাঠ এবং পচা গাছের কাণ্ড থেকে বৃদ্ধি পায়।


তথ্যসূত্র:

1. Wikipedia, 
2. ndtv, 
3. kolkata24x7,
4. dainikamadershomoy,  
5. thedhakatimes.



লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sunday 26 July 2020

বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গনগনি


        'ক্যানিয়ন' বললে প্রথমেই মনে পড়ে যায় ভূগোলের বইতে পড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভুক্ত 'অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের' কথা, নদীর স্রোতের শিল্পকর্মের নিদর্শন হল এই ক্যানিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দেখতে সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক যান। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, খোদ বাংলাতেই রয়েছে অবিকল এমনই একটি জায়গা যা বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম  মেদিনীপুর জেলার গড়বেতার গনগনিকে বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বলা হয়। এর স্থানাঙ্ক ২২ ডিগ্রি ৫১মিনিট ২৪ সেকেন্ড উত্তর , ৮৭ ডিগ্রি ২০ মিনিট ৩০ সেকেন্ড পূর্ব।
           শীলাবতী নদীর পাশে অবস্থিত এই অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনও অংশেই কম নয়। সপ্তাহান্তে ভ্রমণের আদর্শ জায়গা।শিলাবতী নদীর তীরে গড়বেতার অন্যতম পর্যটনস্থল গনগনি। মেদিনীপুর শহর থেকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। কানায় কানায় ভরা প্রকৃতি। পাথুরে খাদের উপর আকাশের ডাকাডাকি। গায়ে গেরুয়া ওড়না জড়িয়ে দাঁড়িয়ে গনগনি। বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। 

         প্রকৃতিই এখানে শিল্পী। তার আপন খেয়ালেই সেজে উঠেছে নিসর্গের এলাকাটি।একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী। পাশে ক্ষয়িষ্ণু ভূমি। সূর্য হেলে যখন নদীজলে খেলা করে তখন সেই ভূমি আরও লাল হয়ে ওঠে। অপরূপ সৌন্দর্য্য।  নদীপাড় ক্ষয়ে মাঝে মাঝে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত পাথুরে ভূমি। ক্ষয়িষ্ণু এই প্রস্তরেই সৌন্দর্য্য ঝলসে ওঠে। অনেকটা আমেরিকার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’- এর মতোই দেখতে রূপসী বাংলার এই গনগনি।
আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মিনিয়েচার ভার্সন খুঁজে পাবেন আমাদের রাজ্যেই। অ্যারিজোনার জায়গায় গনগনি। আর কলোরাডোর জায়গায় শিলাই নদী!
মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে গনগনিতে নদীপাড় ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত র‌্যাভাইন। ছোটখাটো ক্যানিয়ন বললেও ভুল হবে না। শিলাবতী নদী, যার ডাক নাম শিলাই এঁকেবেঁকে চলেছে এখানে। শিলাবতীর চরে প্রকৃতিই তৈরি করেছে এই ক্যানিয়ন। এখানে ভূমিক্ষয়ের প্রবণতা একটু বেশি। নদীর ক্ষয়ের ফলে ল্যাটেরাইটে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ।

        শিলাবতী, আদরের নাম শিলাই। দৈর্ঘ্যে খুব বড় নয় সে। ছোটনাগপুরের মালভূমিতে তার জন্ম, পুরুলিয়ার পুঞ্চা শহরের কাছে। তার পর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দিয়ে বয়ে গেছে। ঘাটালের কাছে দ্বারকেশ্বর নদের সঙ্গে মিশেছে। এই ছোট্ট শিলাই প্রায় সারা বছর শুয়ে থাকে, অত্যন্ত রুগ্ন, শীর্ণ চেহারা তার। কিন্তু বর্ষা এলেই তার রুদ্র রূপ, ভাসিয়ে দেয় চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই আর ঘাটাল। এ হেন শিলাবতীর কেরামতিতে সৃষ্টি এই গনগনির ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’।

        গনগনি আজ থেকে প্রায় ২ মিলিয়ন থেকে দশ হাজার বছরের মধ্যবর্তী সময়ের সঞ্চিত কাঁকুরে পলল স্তরের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমান্বয়ে ঋতুগত ভৌমজলস্তরের ওঠানামার ফলে আদ্রতা ও শুষ্কতার প্রভাবে তৈরি হওয়া ল্যাটেরাইটের প্রকাশ। শিলাবতী নদীর ডানদিকের পাড় বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০ মিটার উঁচু এই ডাঙার খাড়া ঢাল বরাবর গভীর ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট অজস্র ছোট ছোট নালা এবং নালাগুলির সংযুক্তির ফলে সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য গালির সমন্বয়ে এই ক্ষয়িষ্ণু ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

        এত গেল ভৌগলিক ব্যাখা,এই গনগনিকে ঘিরে রয়েছে এই অঞ্চলের লোককাহিনি, রয়েছে ইতিহাস। যে ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এক টুকরো মহাভারত। সেই ইতিহাসের শিকড় পৌরাণিক যুগে মহাভারত অব্দি বিস্তৃত। অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় পঞ্চপাণ্ডব এখানে নাকি কিছু দিন কাটিয়েছিলেন।পাণ্ডবরা বনবাসে থাকাকালীন একদিন এসে পড়েছিলেন এই গনগনি তে। এই তল্লাটে তখন দাপিয়ে বেড়াত বকাসুর নামের রাক্ষস। কোনো একজন গ্রামবাসীকে রোজ তার হাতে তুলে দিতে হত নৈবেদ্য হিসেবে। এর অন্যথা হলে, সমস্ত গ্রাম তছনছ করে ছাড়তো বকাসুর। পাণ্ডবরা এইখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। বকাসুরের খাদ্য হিসেবে উৎসর্গ হওয়ার জন্য একদিন সময় এলো এই পরিবারের। মাতা কুন্তীর নির্দেশে ভীম এই পরিবারের সদস্য হয়ে নিবেদিত হলো বকাসুরের কাছে। শুরু হলো প্রবল যুদ্ধ বকাসুরের সাথে শক্তিশালী ভীমের। অবশেষে ভীমের হাতেই বধ হলো বকাসুর। তাদের যুদ্ধের প্রতাপে এখানকার মাটি কেঁপে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, শিলাবতীর এই গিরিখাত আসলে বকরাক্ষস আর ভীমের মধ্যে যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হয়েছিল তার ফলেই তৈরি হয়েছিল।লোককথা অনুযায়ী, এই জায়গাতেই নাকি বকাসুরকে বধ করেছিলেন ভীম। আর ক্যানিয়নের গুহার মতো অংশগুলো জনশ্রুতিতে হয়ে গিয়েছে পাণ্ডবদের গুহা! 

        কল্পকাহিনী ছেড়ে এবারের আসি ইতিহাসে পাতায়। চূয়াড়-লায়েক বিদ্রোহ তো বেশি দিনের কথা নয়। মোটামুটি দু’শো বছর আগের কথা। ১৭৯৮ - ৯৯ সালে চূয়াড় বিদ্রোহ চড়িয়ে পড়েছিল মেদিনীপুর জেলায়। বহু চূয়াড় নেতা সদলবলে আত্মগোপন করেছিলেন গনগনিতে।বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক অচল সিংহ তাঁর দলবল নিয়ে আস্তানা গেড়েছিলেন গনগনির গভীর শালবনে, রপ্ত করেছিলেন গেরিলা লড়াইয়ের কলাকৌশল। ইংরেজদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলেন। ইংরেজ বাহিনী নাকি কামান দেগে গোটা শালবন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তবু দমানো যায়নি অচলকে। চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে যান তিনি। অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেননি। বগড়ির শেষ রাজা ছত্র সিংহ ধরিয়ে দেন অচলদের। এই গনগনির মাঠেই নাকি অচল ও তাঁর সঙ্গীদের ফাঁসি দিয়েছিল ইংরেজ। 

         ইতিহাস , ভূগোল , পুরান বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই প্রতি বছরই অনেক পর্যটক এখানে আসেন। প্রকৃতির এই সৃষ্টির কাছে যেন মাথা নোয়ায় মানুষের সৃষ্টি। সেই দিক থেকে গনগনি আর পাঁচটা পর্যটনস্থলের থেকে একেবারে আলাদা। একেবারে অন্য রকম।

         বর্ষায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা নদী গিয়ে আছড়ে পড়ে পাশের উঁচু টিলায়। পাশাপাশি বৃষ্টিতেও ভূমিক্ষয় হয়। সেই ভূমিক্ষয় থেকেই তৈরি হয়েছে ছোট ছোট টিলা, গর্ত, খাল। তাতে আবার রঙের বৈচিত্র্য। কোথাও সাদা, কোথাও লালচে বা ধূসর। কোনও অংশ দেখে আবার মনে হবে যেন মন্দির, আবার কোনও অংশ মনুষ্য আকৃতির, কোথাও বা টিলা গুহার আকার নিয়েছে। ভূগোলের ছাত্রছাত্রী থেকে গবেষক, ভূমিক্ষয় নিয়ে গবেষণার জন্য অনেকেই এখানে আসেন। আর ভ্রমণ-পিপাসু মানুষ আসেন ভূমিক্ষয়ের ফলে তৈরি প্রকৃতির শিল্পকর্ম দেখতে। শীতের  দুপুরে গনগনি যেন সত্যিই রঙের লাবণ্যে গনগন করে ওঠে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময় গনগনির রূপ সবচেয়ে সুন্দর। গনগনি-র রূপ যেন মোহময়ী। এই সময়ে জায়গাটাকে ফোটোগ্রাফারদের স্বর্গরাজ্য বললেও অত্যুক্তি হবে না।

তথ্যসূত্র :
1. www.bongodorshon.com
2. https://ebela.in 
3. https://www.anandabazar.com
4.https://www.jiyobangla.com
5. https://wikipedia.org

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভারতের নায়াগ্রা চিত্রকূট জলপ্রপাত


         চিত্রকূট বা চিত্রকোট জলপ্রপাত ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের বাস্তার জেলায় জগদলপুরের পশ্চিমে অবস্থিত। অবস্থান হল ১৯°১২'২৩" উত্তর ৮১°৪২'০০" পূর্ব। এটি একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। এটি ইন্দ্রবতী নদীর তীরে অবস্থিত একটি সুন্দর নয়নাভিরাম  জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতের উচ্চতা প্রায় ২৯ মিটার (৯৫ ফুট)। এই জলপ্রপাতের বৈশিষ্ট্যটি হ'ল বর্ষার দিনে এই জলটি লালচে বর্ণের হয়, গ্রীষ্মের চাঁদনি রাতে এটি একেবারে সাদা দেখায়। জলপ্রপাতটি জগদলপুরের পশ্চিমে ৩৮ কিলোমিটার (২৪ মাইল) এবং রায়পুর থেকে ২৭৩ কিমি দূরে অবস্থিত। চিত্রকোট জলপ্রপাতটি ছত্তিসগড়ের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জলমগ্ন বা জল বহনকারী জলপ্রপাত। এটি বাস্তার বিভাগের প্রধান জলপ্রপাত হিসাবে বিবেচিত হয়। 

         অশ্বখুরাকৃতির এই জলপ্রপাতটি ভারতের সর্ববৃহৎ খাড়া পতন। বর্ষা মৌসুমে এটির প্রস্থ এবং বিস্তৃত বিস্তারের কারণে এটি প্রায়ই ভারতের নায়াগ্রা জলপ্রপাত বলে পরিচিত। কমপক্ষে তিনটি এবং সর্বাধিক সাতটি ধারা প্রবাহিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে।
 
        এমনিতে ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলা মাওবাদী হামলার জন্য কুখ্যাত। কিন্তু এখানকার চিত্রকূট জলপ্রপাত পর্যটকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। জগদলপুর সংলগ্ন হওয়ার কারণে এটি একটি বড় পিকনিক স্পট হিসাবে খ্যাতিও অর্জন করেছে। আর তা অবশ্যই এর সৌন্দর্যের জন্য। চিত্রকুট জলপ্রপাতটি খুব সুন্দর এবং পর্যটকরা এটি খুব পছন্দ করেন।  আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই জলপ্রপাতকে দেখতে লাগবে ‘পিকচার পারফেক্ট’। জলপ্রপাতের নিজস্ব সৌন্দর্য তো আছেই, এর চারপাশে সবুজও চোখ টানে পর্যটকদের। শক্তিশালী গাছ এবং বিন্ধ্য রেঞ্জের মাঝখানে পড়ে একটি বৃহত জলের দেহ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিখ্যাত চিত্রকোট জলপ্রপাত, "ভারতের নায়াগ্রা" প্রতি মরসুমে দৃশ্যমান হয়, তবে বর্ষাকালে এটি দেখতে আরও উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা। বৃষ্টিপাতের উচ্চতা থেকে বিশাল জলের গর্জন শিহরণ এবং কাঁপুনি তৈরি করে বর্ষাকালীন এই ঝর্ণার সৌন্দর্য খুব বেশি। জুলাই-অক্টোবর সময়কালে দর্শকদের এখানে আসার উপযুক্ত সময়। ঘন অরণ্য চারদিকে মনোরম জলপ্রপাত, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই জলপ্রপাতের কোণে আপনি বহু সুন্দর পাখি দেখতে পাবেন যা এই স্থানের সৌন্দর্যকে যোগ করে। এই জলপ্রপাত দ্বারা সৃষ্ট শব্দ এতটাই তীব্র যে এর পাশে সৃষ্ট অন্য কোন আওয়াজ শোনা প্রায় অসম্ভব। এই জলপ্রপাত বর্ষাকালে অত্যন্ত সুন্দর দেখায় যখন মাটি ক্ষয়ের কারণে জলের রং বাদামী বর্ণ লাভ করে। 

তথ্যসূত্র:
1. https://bastar.gov.in
2. bengali.mapsofindia.com
3. Wikipedia
4. www.sangbadpratidin.in

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Friday 24 July 2020

ভারতের জাতীয় পতাকা



        ভারতের জাতীয় পতাকা হলো কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল "অশোকচক্র" সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে এই পতাকার বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীকালে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকার মর্যাদা লাভ করে। ভারতে এই পতাকাটিকে সাধারণত "ত্রিরঙ্গা পতাকা" বা "ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা" বলা হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের "স্বরাজ" পতাকার ভিত্তিতে এই পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল।

        আইনত, কেবলমাত্র খাদিবস্ত্রেই জাতীয় পতাকা প্রস্তুত করার নিয়ম রয়েছে। ভারতীয় মানক ব্যুরো এই পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন স্থির করে দেয়। উৎপাদনের অধিকার খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের হাতে ন্যস্ত। এই কমিশন বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে উৎপাদনের অধিকার দিয়ে থাকে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ জাতীয় পতাকার একমাত্র উৎপাদক।

        পতাকার ব্যবহারবিধি "ভারতীয় পতাকাবিধি" ও জাতীয় প্রতীকাদি সংক্রান্ত অন্যান্য আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয়। পুরনো বিধি অনুযায়ী, স্বাধীনতা দিবসসাধারণতন্ত্র দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবস ছাড়া সাধারণ নাগরিকেরা পতাকা উত্তোলন করতে পারতেন না। ২০০২ সালে, এক নাগরিকের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ নাগরিকদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে পতাকাবিধি সংস্কারের নির্দেশ দেন। সেই মতো ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট পতাকাবিধি সংস্কার করে কয়েকটি সীমিত ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার ব্যবহার অনুমোদিত করে। ২০০৫ সালে পতাকাবিধি পুনরায় সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ধরনের বস্ত্র ব্যবহারের অতিরিক্ত ব্যবস্থা করা হয়।

নকশা:

        নিচে বিভিন্ন বর্ণ মডেল অনুসারে ভারতীয় পতাকার সম্ভাব্য রংগুলির বর্ণনা দেওয়া হল। গেরুয়া, সাদা, সবুজ ও নীল – এই চারটি রং পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এটিকে সিএমওয়াইকে বর্ণ মডেল; ডাই রং ও প্যান্টন সমসংখ্যা অনুযায়ী এইচটিএমএল আরজিবি ওয়েব রং (হেক্সাডেসিম্যাল নোটেশন) অনুযায়ী বিভক্ত করা হল।


        সর্বোচ্চ ব্যান্ডের সরকারি (সিএমওয়াইকে) মূল্য হল (0,50,90,0) – এটি কমলা রঙের অনুরূপ – যার সিএমওয়াইকে = (0,54,90,0)। প্রকৃত গাঢ় গেরুয়ার সিএমওয়াইকে মূল্য যথাক্রমে (4, 23, 81, 5)) ও (0, 24, 85, 15))। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া

প্রতীক:


        স্বাধীনতাপ্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে বিশেষভাবে গঠিত গণপরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকাকে সব দল ও সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য করে হতে হবে। এই কারণে, অশোকচক্র সম্বলিত গেরুয়া, সাদা ও সবুজ ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, যিনি পরবর্তীকালে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, তিনি গৃহীত পতাকার প্রতীকতত্ত্বটি ব্যাখ্যা করে নিম্নলিখিত ভাষায় তার গুরুত্ব বর্ণনা করেন:


পতাকার সম্মান:

        ভারতীয় আইন অনুসারে জাতীয় পতাকার ব্যবহার সর্বদা "মর্যাদা, আনুগত্য ও সম্মান" ("dignity, loyalty and respect") সহকারে হওয়া উচিত। "প্রতীক ও নাম (অপব্যবহার রোধ) আইন, ১৯৫০" ("The Emblems and Names (Prevention of Improper Use) Act, 1950") অনুসারে জারি করা "ভারতীয় পতাকা বিধি – ২০০২" ("Flag Code of India – 2002") পতাকার প্রদর্শনী ও ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশিকা বহন করে। সরকারি বিধিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকা কখনই মাটি বা জল স্পর্শ করবে না; এটিকে টেবিলক্লথ হিসেবে বা কোনো প্লাটফর্মের সম্মুখে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না; জাতীয় পতাকা দিয়ে কোনো মূর্তি, নামলিপি বা শিলান্যাস প্রস্তর আবরিত করা যাবে না ইত্যাদি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা বস্ত্র, উর্দি বা সাজপোষাক হিসেবে ব্যবহার করা যেত না। ২০০৫ সালের ৫ জুলাই সরকার পতাকাবিধি সংশোধন করে বস্ত্র বা উর্দি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করেন। যদিও নিম্নাবরণ বা অন্তর্বাস হিসেবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এছাড়াও বালিশের কভার বা গলায় বাঁধার রুমালে জাতীয় পতাকা বা অন্য কোনো প্রতীকচিহ্ন অঙ্কণ করা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে উলটো অবস্থায় পতাকা উত্তোলন, কোনো তরলে ডোবানো বা উত্তোলনের আগে ফুলের পাপড়ি ছাড়া অন্য কিছু তাতে বাঁধা বা পতাকাগাত্রে কোনো কিছু লেখাও নিষিদ্ধ।

পতাকার ব্যবহার:

        জাতীয় পতাকার ব্যবহার ও প্রদর্শনী সংক্রান্ত একাধিক প্রথা অনুসৃত হয়ে থাকে। বহির্দ্বারে আবহাওয়া ব্যতিরেকে সূর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্যাস্তের সময় তা নামিয়ে ফেলা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি ভবনে রাতেও জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের রীতি আছে।


        জাতীয় পতাকা কখনই উলটো অবস্থায় বর্ণনা করা, প্রদর্শিত করা, বা উত্তোলন করা অনুচিত। প্রথা অনুসারে পতাকাটিকে ৯০ ডিগ্রির বেশি আবর্তিত করা যায় না। কোনো ব্যক্তি যেন পতাকাকে উপর থেকে নিচে ও বাঁদিক থেকে ডান দিকে বইয়ের পাতার মতো "পড়তে" পারেন এবং আবর্তিত হওয়ার পরও যেন এই বৈশিষ্ট্যের ব্যতয় না হয়। ছেঁড়া বা নোংরা অবস্থায় পতাকার প্রদর্শনী অপমানজনক। পতাকাদণ্ড বা উত্তোলন রজ্জুর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য; এগুলিকেও যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়।


তথ্যসূত্র:

1. www.wikipedia.org

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়



করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯ নভেম্বর, ১৮৭৭ - ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫) একজন বাঙালী রোমান্টিক রবীন্দ্রানুসারী জাতীয়তাবাদী কবি।

প্রারম্ভিক জীবন:

        তিনি নদিয়া জেলার  শান্তিপুরের  কাছে বাগআঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম নৃসিংহ বন্দ্যোপাধ্যায়। করুণানিধান শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ১৮৯৬ সালে এন্ট্রান্স ও কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে এফ.এ পাস করে কলকাতা জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে বি.এ পড়া শুরু করেন। ১৯০২ সালে বি.এ পাশ করে শিক্ষকতা করতেন।

কাব্যপ্রতিভা:

        ছাত্র জীবন থেকে কবিতা লিখতেন। তার প্রথম লেখা দেশাত্মবোধক কাব্য বঙ্গমঙ্গল প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালে। এটি রাজরোষে পড়ার আশঙ্কায় বিনা নামে বের হয়। অন্যান্য কাবগ্রন্থের মধ্যে প্রসাদী, ঝরাফুল, শান্তিজল, শতনরী, রবীন্দ্র আরতি, গীতায়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার দ্বারা পরবর্তীতে মোহিতলাল মজুমদার  প্রমুখ অনেক কবি প্রভাবিত হন।

সম্মান:

        সাহিত্যে অবদানের কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়  তাকে জগত্তারিণী স্বর্নপদক প্রদান করে ১৯৫১ সালে।

তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।