হিমাচল প্রদেশ গেলেই সিমলা, কুলু, মানালি হয়েই সাধারণত বাড়ি ফেরেন ভ্রমণ পিপাষুরা৷ কিন্তু পাহাড়ে সাজানো এক টুকরো স্বর্গ দর্শন বাকিই থেকে যায়৷
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে খাজিয়ারের সদৃশের আলঙ্কারিক তকমা পরে ১৯৯২ সালে ৭ই জুলাই। ওই বছর জুলাইতে ভারতবর্ষে সুইস দূত উইলি পি ব্লেজার, সুইজারল্যান্ডের ভাইস কাউন্সেলর এবং হেড অফ চ্যানসারি হেড খাজিয়রকে দেখে বলেছিলেন `মিনি সুইজারল্যান্ড`। তিনি খাজিয়ারের রাস্তায় সুইস ভ্রমণের ছবি সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড-ও টাঙিয়ে দেন। যেখানে নির্দেশ করা ছিল খাজিয়ার থেকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নের দূরত্ব ৬১৯৪ কিলোমিটার। পৃথিবীর ১৬০ খানা অঞ্চলের মধ্যে খাজিয়ার একটা যার সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের ভৌগোলিক মিল লক্ষ্য করা যায়। ব্লেজার, খাজিয়ার থেকে একটি পাথরও নিয়ে গেছিলেন নিজের দেশে। যা পরে ব্যবহৃত হয়েছিল সুইজ পার্লামেন্ট তৈরিতে, মিনি সুইজারল্যান্ডের প্রতীক হিসেবে তা দিয়ে সুইস পার্লামেন্টের চারপাশে একটি পাথর কোলাজ তৈরি করা হয়। ভারতের সেই মিনি সুইজারল্যান্ড, খাজিয়ার। ভারতবর্ষের ঊষ্ণ রোমান্টিকতা ঘেরা এক নন্দন কানন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ অনেকখানি উপরে এই অপরূপ অরণ্য ঘেরা অঞ্চলকে অনেকে হিমাচল প্রদেশের গুলমার্গও বলেন। তরঙ্গায়িত মখমলি সবুজের চাদর বিছানো। মাথায় নীল আকাশের সুবিশাল শামিয়ানা। ঢেউখেলানো সবুজের ঢালে সুদীর্ঘ পাইনের আকাশ ছোঁয়া আস্ফালন। তৃণভূমির ঠিক মাঝখানে এক ছোট্ট লেক। তাতে এক ভাসমান দ্বীপ। এটিতে তিনটি বাস্তুতন্ত্রের বিরল সংমিশ্রণ রয়েছে: হ্রদ, চারণভূমি এবং বন।
খাজিয়ারের সেরা বিনোদন হল হ্রদটিতে (Khajjiar Lake) ঘুরে বেড়ানো বা ঘন পাইনের বনাঞ্চলে দীর্ঘ পদচারণা করা। শীতকালে তুষার ঢাকা থাকে যা উচ্চতা ৯১০ মিমি (৩ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। খাজিয়ার হ্রদ একটি ছোট হ্রদ, এর চারদিকে ঘন সবুজ ঘাট এবং ভাসমান দ্বীপ রয়েছে। ভ্যাকা নামক আগাছার ঘন বৃদ্ধি তার পৃথিবীকে স্পঞ্জযুক্ত করেছে। চলাচলের স্বাধীনতা এবং ঢালু ভূখণ্ডের কারণে শিশুরা এই জায়গাটি উপভোগ করে যা তাদের আঘাত না পেয়ে লেকে নামতে দেয়। আরেকটি আকর্ষণ হ'ল ঘোড়ায় চড়া। এখানে রয়েছে বিশাল একটি হনুমান স্ট্যাচু এবং একটি পার্ক।
হ্রদ থেকে কিছুটা দূরে খাঁজি নাগের মন্দির (Khajji Nag Temple)। মন্দিরটি খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর চম্ব রাজা পৃথ্বী সিংহের তৈরি করেন। মন্দিরটির একটি সোনার গম্বুজ রয়েছে যার কারণে এটি সুবর্ণ দেবী মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরের দেওয়াল ও ছাদের গায়ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে জয়ী পাণ্ডব এবং বিজিত কৌরবদের ছবি খোদাই করা। মন্দিরের গর্ভগৃহটি কাঠ থেকে খোদাই করে করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে অপূর্ব খোদাই করা মন্দিরের বহির্ভাগটিও। এই মন্দিরটি সাপের (নাগা) উপাসনায় উত্সর্গীকৃত এবং ভিতরে কিছু সাপ মূর্তি রয়েছে। মন্দিরে শিব (Shiv) ও দেবী হাদিম্বার (Hadimba) প্রতিমাও রয়েছে। সবুজের মাঝে পায়ে হাঁটাপথে ঘুরে আসুন জগদম্বা(Jagadamba) মন্দিরে। একটি গল্ফ কোর্সও আছে এখানে।
এখান থেকেও কালাটপ স্যাংচুয়ারি(Kalatop Khajjiar Sanctuary) দেখে নিতে পারেন। কালাটোপ খাজিয়ার অভয়ারণ্য একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য যা বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ এবং প্রাণীজন্তু রয়েছে। এটি দেওদার এবং ফির বন দ্বারা ঘনভাবে আচ্ছাদিত। এই জায়গাটি পিকনিক এবং ট্রেকিংয়ের জন্য একটি প্রিয় জায়গা। খাজিয়ার অসংখ্য ট্রেকিংয়ের সুযোগ দেয়। খাজিয়ার থেকে ডেইনকুন্ড একটি ৩.৫ কিলোমিটার (২.২ মাইল) থেকে মাঝারি সহজ ট্রেক। ট্রেকটি ডালহৌসি-খাজিয়ার রাস্তা খাজিয়ার থেকে ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মাইল) থেকে শুরু হয়ে ডেইনকুন্ডের ফোলাণী দেবী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। একটি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত ট্রেইল এবং মাঝারি উত্সাহ সহ এই ট্রেক শুরু করা বাচ্চাদের জন্য একটি দুর্দান্ত ট্রেক। ট্রেকটি দুর্দান্ত দর্শন এবং একটি সুন্দর ক্যাম্পিং সাইট সরবরাহ করে। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা পাখির চোখে খাজিয়ারকে দেখে নিতে ভেসে পড়ুন রোমাঞ্চকর প্যারাগ্লাইডিং-এ। শীতে সবুজ উধাও হয়ে গিয়ে বরফের বাগানে পরিণত হয় খাজিয়ার।
1. Wikipedia,
2. adarbepari.com,
3. Zee 24 ঘন্টা,
4. আনন্দবাজার পত্রিকা,
5. সংবাদ প্রতিদিন,
লেখক:
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।