Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Friday, 5 August 2022

বর্ষায় অমঙ্গল বজ্রপাত

বর্ষাকাল মানেই চারিদিকে মেঘের গর্জন। মিশকালো মেঘের বুক চিরে নামছে আলোর ঝলকানি। ‘বর্ষামঙ্গল’-এ অমঙ্গলের বজ্রপাত। প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণ হারান অনেক মানুষ। এই বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকে সঞ্চয় করে রাখার কোনও কৌশল বিজ্ঞানীরা এখনও রপ্ত করতে পারেননি। যদি সেটা সম্ভব হয়, তাহলে আর দেশ তথা বিশ্বের বুকে আঁধার নেমে আসবে না। মিটে যাবে বিদ্যুতের যাবতীয় চাহিদা। ঠিক যেভাবে সৌরশক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কিন্তু, বজ্রপাত কী? ছোটবেলা থেকে ধারণা, মেঘে মেঘে সংঘর্ষের কারণে বজ্রপাত হয়। না, এই তত্ত্ব একেবারেই ভুল।


★ বজ্রপাত কী?

মেঘের বৈদ্যুতিক চার্জ যুক্ত অঞ্চল থেকে হঠাৎ চার্জ নিঃসরণ। এই চার্জ নিঃসরণ মূলত মেঘ ও ভূমির মধ্যে বা পাশাপাশি, দুই মেঘের মধ্যে চার্জের তারতম্যের কারণেও হয়। তবে বেশিরভাগ সময়েই বজ্রপাত মেঘে মেঘে ঘটে থাকে। আসলে মেঘে থাকে জলের ছোট ছোট কণা। আর উপরে উঠতে উঠতে জলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এই জলরাশির পরিমাণ যখন ৫ মিলিমিটারের বেশি হয়, তখন আর জলের অণুগুলো পারস্পরিক বন্ধন ধরে রাখতে পারে না। ক্রমশ পরস্পরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের সৃষ্টি হয়। এই আধানের মান নীচের অংশের তুলনায় উপরের অংশে বেশি থাকে। উপরের অংশে পজিটিভ এবং নীচের অংশে নেগেটিভ চার্জ থাকে। আমরা জানি, চার্জ বা আধান সবসময় উচ্চ থেকে নিম্ন বিভবের স্থানে প্রবাহিত হয়। এই কারণেই উপর হতে নীচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমণ হয়। ফলে প্রথমে আমরা আলোর ঝলকানি দেখতে পাই। পৃথিবীর আধান যেহেতু শূন্য, তাই মেঘে পুঞ্জীভূত চার্জ নিস্তড়িৎ হওয়ার জন্য ভূমির দিকে ধেয়ে আসে। চার্জগুলো যখন প্রচণ্ড গতিতে ভূমির দিকে আসতে থাকে, তখন বৃষ্টির জল ও বায়ুর কণার সঙ্গে প্রচণ্ড সংঘর্ষ ঘটে। এতে বিপুল তাপ উৎপন্ন হয়, যা উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি তৈরি করে। এই উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিই হল বজ্রপাত।



★ শব্দ কেন হয়?

আধান নিস্তড়িৎ হওয়ার সময় প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। আর এই প্রবল সংঘর্ষের কারণেই সৃষ্টি বিকট শব্দ।


★ বজ্রপাতের তাপমাত্রা কত? 

শুনলে আশ্চর্য হবেন, একটি বজ্রপাতের সময় প্রায় ২৭ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সৃষ্টি হতে পারে। এই তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার থেকে কয়েক গুণ বেশি। 


★ কত শক্তি? 

ভূমি থেকে তিন মাইল দূরত্বের বজ্রপাত ১০০ কোটি থেকে এক হাজার কোটি জুল শক্তি উৎপন্ন করে। বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপের একক কিলোওয়াট/ আওয়ার। এই হিসেবে বজ্রপাতের শক্তি প্রায় ২৭ হাজার ৮৪০ কিলোওয়াট/আওয়ার।


★ কত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়? 

একটি বজ্রপাতের ফ্ল্যাশ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ভোল্ট এবং প্রায় ৩০ হাজার অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। যেখানে নিত্যজীবনে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়।


★ বজ্রপাত কোথায় বেশি হয়?

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে ভেনিজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মতে, প্রতি বছর হ্রদটির প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকার উপর গড়ে ২৩৩টি বজ্রপাত হয়। 


তবে, বজ্রপাত শুধু অমঙ্গলই সাধন করে না। ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে এর অবদান রয়েছে। শুধু আমাদের জীবনহানি রোধ করতে হবে। আর সেজন্য যা যা করণীয় : (১) কোনও গাছের নীচে আশ্রয় না নেওয়া। কেননা, গাছের উপরই বেশি বাজ পড়ে। (২) জলাশয়ের কাছাকাছি না থাকা। জল বিদ্যুতের সুপরিবাহী। (৩) রাস্তায় সাইকেল কিংবা মোটর না থাকা। (৪) কংক্রিটের জায়গা বা বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া দরকার। কখনওই জানলার কাছে থাকা চলবে না। (৫) গাড়ির ভিতর থাকলে পায়ে জুতো পরে নিতে হবে। পা সিটের উপর তুলে বসলে বেশি ভালো। কোনওভাবেই যেন শরীর গাড়ির বডি বা ধাতব কোন কিছু স্পর্শ না করে। (৬) বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করা এবং বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করে রাখা উচিত। (৭) বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ বা ধানখেতে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে। (৮) যদি অনেকে একসঙ্গে থাকে, তাহলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যাওয়া উচিত। (৯) অনেকসময় বজ্রপাতের আগে বিদ্যুতের প্রভাবে চুল খাড়া হয়ে যেতে পারে। ত্বক শিরশির করা বা বিদ্যুৎ অনুভূত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমন কোনও লক্ষণ প্রকাশ পেলে বুঝতে হবে, কাছাকাছি বজ্রপাত হবে। এক্ষেত্রে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া উচিত। (১০) বজ্রাহত ব্যক্তিকে খালি হাতে স্পর্শ করা উচিত নয়। তাঁর শরীর কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুতের আধারে পরিণত হয়ে যায়।

তথ্যসূত্রঃ- বর্তমান পত্রিকা


No comments:

Post a Comment