বিজ্ঞান জগতের বৈজ্ঞানিক বা গবেষকরা অনেক বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে থাকে। প্রতিদিন বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করতে থাকে এবং সেই আবিষ্কার গুলি হয়ে ওঠে আলোচনার বিষয়। যেমন অনেক বছর ধরে গবেষকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে যে পৃথিবীতে জল কিভাবে এলো ?
পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। ছোটবেলা থেকে এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু পৃথিবীতে এত জল এল কোথা থেকে! জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবীতে প্রথম জল বয়ে এনেছিল কোনও উল্কাই! যদিও, এই তত্ত্বটি প্রমাণ করা বেশ কঠিন। কারণ, এর আগে পর্যন্ত পৃথিবীতে পৌঁছানো উল্কাগুলিতে জলের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। তবে সাম্প্রতিক কালে পৃথিবীতে আছড়ে পড়া উল্কাখণ্ডে জল প্রবাহের প্রমাণ অবাক করেছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি Phys.org-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশ পৃথিবীতে প্রথম জল নিয়ে আসার ক্ষেত্রে উল্কাখণ্ড বা উল্কাবৃষ্টির ভূমিকা থাকার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছেন। সিডনির ম্যাককুয়েরি বিশ্ববিদ্যালয়ে (Macquarie University) জ্যোতির্বিজ্ঞানী সাইমন টার্নার ও তাঁর সহকারী বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর জানিয়েছেন, যেটুকু তথ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাতে এটা প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়, কোনও এক বা একাধিক উল্কাই পৃথিবীতে জল এনেছিল। আজ থেকে প্রায় ৪৪০ কোটি বছর আগেই পৃথিবীতে জল এনেছিল এক বা একাধিক উল্কাখণ্ড।
গ্রহের জন্মলগ্নে এটি অসম্ভব রকমের গরম ছিল। জলে ভরা উল্কাখণ্ডগুলি প্রচণ্ড উত্তপ্ত পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে। এর ফলে উল্কাখণ্ডগুলির ভেতরে থাকা জলের পুরোটাই বাষ্পীভূত হয়ে গিয়ে ঘন মেঘের বিশাল স্তরের সৃষ্টি করেছিল। ওই মেঘের কারণেই পৃথিবীতে প্রবল ঝড়, বৃষ্টি হয় এবং জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এই গ্রহ।
কিন্তু কী ভাবে অত জল এল ওই উল্কাখণ্ডগুলিতে ?
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ওই বিশেষ ধরনের উল্কাগুলিতে মিশে থাকা খনিজ আর জৈব পদার্থ থেকেই এই জলের জন্ম হয়েছিল। এই উল্কাগুলিতে থাকা প্রচুর জল আর জৈব যৌগগুলিতে ছিল অফুরন্ত হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ‘ডয়টেরিয়াম’, যাকে আমরা ‘ভারি জল’ বলে থাকি। সবচেয়ে মজার বিষয় হল, পৃথিবীর তিন ভাগ জলে হাইড্রোজেন আর ডয়টেরিয়ামের অনুপাত যতটা, ওই উল্কাগুলিতেও এর অনুপাত ঠিক ততটাই।
বছর খানেক আগে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৪১০ কিলোমিটার থেকে ৬৬০ কিলোমিটার নীচে একটা সুবিশাল জলাধারের হদিশ পেয়েছেন মার্কিন ভূতাত্ত্বিকরা। এই নীল গ্রহের সমস্ত সমুদ্র, মহাসমুদ্র মিলিয়ে যে পরিমাণ জল রয়েছে, তার প্রায় তিন গুণ বেশি পরিমাণ জল রয়েছে ভূগর্ভস্ত প্রাকৃতিক জলাধারে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, রিংউডাইট (Ringwoodite) নামের এক বিশেষ ধরনের শিলার ভাঁজে প্রচণ্ড চাপে আটকে রয়েছে ওই বিপুল পরিমাণ জল। এই জল অবশ্য তরল অবস্থায় নেই, রয়েছে হাইড্রক্সিল আয়ন ও হাইড্রক্সাইড হিসেবে।
বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক গবেষণায় ধারণা হয়েছে, বেশির ভাগ না হলেও কার্বনাসিয়াস কনড্রাইট (সিসি) - কমপক্ষে ৮টি পরিচিত শ্রেণি এবং অনেক শ্রেণিহীন উল্কাখণ্ডের সমন্বয়ে বৃহত্তর গ্রহাণুর অংশ হিসাবে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল।
No comments:
Post a Comment