Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Monday, 28 April 2025

"গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান" ইউক্যালিপটাস বর্জন করুন

 "গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান" প্রাণ বাঁচাতে পরিবেশের ক্ষতি করছেন না তো। বর্তমানে গাছ লাগানোর হিড়িক পড়ে গেছে আমাদের দেশে। কম দামের কারণে এখন অনেকেই ইউক্যালিপটাস (আকাশমনি) গাছ লাগাতে চাচ্ছেন । কিন্তু আপনি কি জানেন এই গাছ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর ?

ইউক্যালিপ্টাস গাছ আশপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকার ও ভূগর্ভের প্রায় ৫০ফুট নিচের জল শোষণ করে আকাশে উড়িয়ে দেয়। এই গাছ রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই জল শোষণ করে বাতাসে ছাড়ে। এর ফলে মাটিতে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এই গাছ শুষ্ক বা মৌসুমী জলবায়ু যুক্ত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই গাছের আশপাশে অন্য প্রজাতির গাছ জন্মাতে পারে না কারন এই গাছের পাতায় প্রচুর টক্সিন থাকে যা গাছের গোড়ায় পড়ে আশেপাশের মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে। এ গাছ মাটিকে শুষ্ক করার ফলে মাটিতে অবস্থিত খনিজ আয়ন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে যার ফলে দেশীয় গাছের বাঁচার ক্ষমতা কমে যায়। কারন দেশীয় যে গাছগুলি আমরা দেখি সেগুলি মাটির খনিজ গুলোকে আয়ন হিসাবে গ্রহণ করে। মাটিতে খনিজ গুলো আয়ন হিসাবে থাকলে আমরা তাকে উর্বর জমি বলি। ইউক্যালিপ্টাস গাছ কেটে ফেললেও মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। ইউক্যালিপ্টাস গাছ বর্জন করা উচিত। ফলে যে জায়গায় গাছটি লাগানো হয়, সে স্থানটি হয়ে পড়ে জলশূন্য ও কমে যায় উর্বরতা শক্তি। এতে জলের স্তর নিচে নামাসহ অন্য প্রজাতির গাছের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। এসব জানার পরও ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর হিড়িক পড়েছে। ফলে ইউক্যালিপটাস সমৃদ্ধ অঞ্চল একদিন মরু অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।



জমির আইল, কৃষিজমি ও পতিত জমিতে লাগানো এ গাছ উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিই বেশি করে। ইউক্যালিপটাসের পাতা ও ডালপালা অজৈব পদার্থের মতো কাজ করে কৃষিজমিকে অনুর্বর করে। ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। এত কিছু জানার পরও কেন এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?

অন্যান্য গাছের তুলনায় ইউক্যালিপটাস গাছ দ্রুত বড় হয়। এ কাঠের চাহিদা বেশি, কাঠে ঘুণ ধরে না, দামও বেশি। তাই ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়ে থাকে।তবে আবাদি জমির আইলে ইউক্যালিপটাস রোপণ করায় দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

গাছ হলো পরিবেশের বন্ধু।অথচ ইউক্যালিপটাস গাছ এর বিপরীত। আমার মতে, এটির উপকারিতা অপেক্ষা অপকারিতাই বেশি। অনেকেই অজ্ঞতার কারণে ভূল জায়গায় ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান করে থাকে যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।এর ক্ষতিকর দিকগুলো হলো:-

১) দৈনিক একটি পূর্ণবয়স্ক এই গাছ ৪০ থেকে ৫০ লিটার পানি শোষণ করে মাটিকে নিরস ও শুষ্ক করে ফেলে।১০-১২ ফুট সীমানার জল শোষণ করার কারণে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর দ্রুত নেমে যায়। যা কিনা বিরাট সেচ সমস্যার সৃষ্টি করে।

২) এর আশেপাশে অন্য প্রজাতির গাছ লাগালে তা অপুষ্টির কারণে জন্মাতে পারেনা। শুধু তাই নয়, এই গাছের শেকড় মাটির গভীরে সর্বোচ্চ ৩০-৩৬ ফুট পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

৩) এর পাতা এবং রেণু আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।

৪) এই গাছগুলি পাখি বাসা বাঁধার উপযোগী নয়।

৫) বেশি জল শোষণের ফলে আশপাশের জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়। যার কারণে ২০-৩০ বছর পরও আশেপাশে অন্য কোনো প্রজাতির গাছ জন্মাতে পারে না।

৬) কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

৭) পাতা সহজে পঁচে মাটিতে মেশে না। এই কারণে দাবানল সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকট, কাঠেও খুব দ্রুত আগুন ধরে যায়।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণ গাছ প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষার পাশাপাশি প্রাণিকুলের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে আর অক্সিজেন সরবরাহ করে সহায়তা করে। কিন্তু ইউক্যালিপটাস তা করে না। বরং এ গাছ অক্সিজেন গ্রহণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ এবং নাইট্রোজেন নির্গমন করে। আবাদি জমির আইলে এ গাছ থাকলে খেতে পোকামাকড় ও রোগবালাই বেড়ে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছ জমির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেওয়াসহ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। 

পরিবেশবিদ ও পরিবেশ কর্মীরা মাঠপর্যায়ে এ গাছ না লাগাতে এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের নিরৎসাহিত করে যাচ্ছেন।


সুতরাং #ইউক্যালিপটাস গাছ, রেইন ট্রি এর মত ক্ষতিকারক গাছ না লাগিয়ে ফল গাছ লাগান, বট,পাকুর এর মত ছায়া দেয় এমন গাছও বাড়তে দিন। সবরকম গাছ সব জায়গায় লাগানোর জন্য উপযুক্ত নয়। ধরুন এমন গাছ রাস্তার divider এ লাগালেন যেগুলোর শিকড় অনেক বড় হয় বা গভীরে যায়,তাহলে হবে না। খুব বেশি শাখা প্রশাখা হয় এমন গাছ লাগালেও দেখা যাবে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হবে। বৃক্ষ রোপনের জন্য উপযুক্ত একটি লিস্ট দেওয়া হল, এতে পরিবেশের পক্ষে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা রাখা করা যায়।


রাস্তার ধার (Roadside):🌳

    1. নিম 

    2. রেইন ট্রি 

    3. জারুল 

    4. কদম

    5. সিলভার ওক 

    6.সোনালু

    7.কৃষ্ণচূড়া

    8.জাকারান্ডা

 


রাস্তার বিভাজক (Road Divider):🪴

    1. জবা 

    2. কান্টিকারা 

    3. রতনগাছ 

    4.রাধাচূড়া  

   5.দেবদারু

    6.কৃষ্ণচূড়া

    7.জাকারন্ডা


পার্ক (Park):🌲

    1. বটগাছ 

    2. কদম 

    3. চাপালিশ 

    4. কনক চাঁপা 

    5. অশোক 


ফুটপাথ (Footpath): 🌱

    1. পারুল 

    2. সিঙ্গাপুরের চেরি

    3. ক্রিসমাস ট্রি

   4.দেবদারু

    


খোলা জায়গা (Open Space): 🌳

    1. মেহগনি 

    2. কৃষ্ণচূড়া 

    3. শিমুল 

    4. অর্জুন গাছ 


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (Institutional Areas): 🌳

    1. আম 

    2. কাঁঠাল 

    3. জামরুল 

    4. বেল 

    5. পাকুড় 


বাড়ির উঠোন (Homestead): 🪴🌳


ফলের গাছ 

    1. আম 

    2. কাঁঠাল 

    3. লিচু 

    4. পেয়ারা 

    5. নারিকেল 

    6. কলা গাছ 

    7. পপাই 

    8. জামরুল 

    9. কামরাঙ্গা 

    10. বেল 

চলুন সবাই অন্তত ৫-১০ টি গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নি। তাহলে যদি ভবিষ্যত প্রজন্ম একটু স্বস্তিতে বাঁচে। তাতে যদি প্রকৃতির দবদাহ একটু কমে। 



No comments:

Post a Comment