শান্তিপুরের আনাচ কানাচে কান পাতলেই তাই শোনা যায় ইতিহাসের ফিসফাস শব্দ। শান্তিপুর শুধু চৈতন্যতীর্থই নয়, সব ধর্মেরই সহাবস্থান ঘটেছে এখানে। তার মূল আকর্ষণের কেন্দ্রে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে তৈরি এই তোপখানা মসজিদ। বয়স আনুমানিক ৪০০ বছর। ইদের দিন তো বটেই নানা মুসলিম পরব যেমন ইদ-উল-ফিতর, ইদ-উদ-জোহা, ফতেয়া-দোয়াজ-দাহাম উপলক্ষ্যেও প্রার্থণার জন্য এই মসজিদে জমায়েত হয় বিপুল। শতাব্দী প্রাচীন তোপখানা মসজিদ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। শোনা যায়, মুসলিম শাসকদের সময় এখানে পাঠান সৈন্যদের একটি সেনা ছাউনি ও অস্ত্রাগার ছিল। সেই অস্ত্রাগার থেকেই নাম হয় 'তোপখানা'। মসজিদের পাশাপাশি অনেকগুলি মুসলিম সৌধ নির্মিত হয়েছিল সেই সময়। কালের নিয়মে তার সবকটিই প্রায় ভগ্নপ্রায়। বেশ কিছু বিলুপ্তও হয়ে গেছে।
তোপখানা মসজিদের নির্মাণকাল এবং নির্মাণপর্ব নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। ইতিহাস বলে, তোপখানা মসজিদের নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালের শেষ দিকে। শান্তিপুরের তৎকালীন ফৌজদার গাজী মোহাম্মদ ইয়ার খান ১৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই সুদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করেন। আবার এমনও শোনা গেছে, পাঠান আমলে এখানে সন্ত হজরত শাহ সৈয়দ মেহবুব আলম নামের একজন কাজী থাকতেন। জনশ্রুতি তাঁর অনেক রকমের ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল, যার মাধ্যমে তিনি ধর্ম নির্বিশেষে সবার সেবা করতেন। এখানে তিনি এক মাজার তৈরি করেন। সেই মাজার থেকেই পরবর্তীকালে গড়ে ওঠে এই মসজিদ। আবার পাঠান সৈন্যরা প্রার্থনার জন্য এমন মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এমন কথাও শোনা যায়।
ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন ধর্মপরায়ণ ফৌজদারী গাজী মহম্মদ ইয়ার খাঁ এর উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আকবর বাদশাহের আমলে শান্তিপুরে এক সেনানিবাস স্থাপিত হয়। ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে সৈয়দ মহবুব আলম আসেন শান্তিপুরে। তিনি নাকি ছিলেন আদি পুরুষ।
স্থানীয় সেনা নিবাসের ব্যয়ভার বহন করার জন্য বাদশাহ আলমকে প্রচুর সম্পত্তি দান করেন। আর তার আদেশেই ইয়ার খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করান। এই ইমরতটি পুবমুখী। সামনের দিকে ত্রিখিলান প্রবেশপথ। উপরের দেওয়াল গুলোতে আরবি এবং ফারসি হরফে পাশাপাশি নিবন্ধগুলি চোখে পড়ার মতো। এ মসজিদ স্থাপিত ভিত্তি বেদীর ওপর। এই বেদী একটা বিরাট গম্বুজ আর আটটা ছোট বড় মিনারের সমন্বয়ে তৈরি। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে গাজী এয়ার মহম্মদ এবং তাঁর পুত্রের সমাধিও আছে। তোপখানা মসজিদ শান্তিপুরের এক প্রাচীনতার সাক্ষী।
No comments:
Post a Comment