কৃষ্ণনগর গভর্ণমেন্ট কলেজের ভিত্তিস্থাপন, বিধবাদের পুনরায় বিবাহের ব্যবস্থা, শিক্ষার বিস্তার, একাধিক সমাজ সংস্কার আন্দোলনে নদিয়া জেলার ব্রাহ্মসমাজ নিজেদের ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন কৃষ্ণনগরে, শান্তিপুরে, কুমারখালিতে (বর্তমানে বাংলাদেশে), তেহট্টে, চাকদহে, শিবনিবাসে। শান্তিপুর অঞ্চলে ব্রাহ্মসমাজের সামাজিক সংস্কারমূলক আন্দোলনের ধারা অনুকূল পরিবেশ পেয়েছিল ভিন্ন একটি কারণে। যাঁকে কেন্দ্র করে শান্তিপুরের এই কর্মকাণ্ড ফলদায়ী হয়ে উঠতে পেরেছিল, তিনি শিক্ষিত ও উদারমনা ব্যক্তিত্ব শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। তিনি সদস্য হয়ে গেলেন ব্রাহ্মসমাজের। দায়িত্ব পেলেন ব্রাহ্মধর্মের অন্যতম প্রচারকের। শান্তিপুরে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা ও সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকেই পাখির চোখ করে তুললেন তিনি। যাত্রা হল শুরু।
বিজয়কৃষ্ণের মতো উচ্চশিক্ষিত মানুষকে ব্রাহ্মধর্মে যুক্ত হতে দেখে সাহস করে একে একে এগিয়ে এলেন শান্তিপুরের একাধিক কৃতবিদ্য মানুষ। দীর্ঘ তালিকার কয়েক জন, ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, অঘোরনাথ গুপ্ত, ভুবনমোহন গুপ্ত, রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ডাক্তার অভয়চরণ বাগচী, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, বীরেশ্বর প্রামাণিক, হরেন্দ্রনাথ মৈত্র, পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়, প্রাণনাথ মল্লিক, যোগানন্দ প্রামাণিক প্রমুখ।
1898 সালে শান্তিপুরে ব্রাহ্ম সমাজ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৩০৪ বঙ্গাব্দে ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বীরেশ্বর ব্রহ্মচারী ও যোগানন্দ ব্রহ্মচারী র সহযোগিতায় শান্তিপুর মতিগঞ্জের কাছে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা হয়। ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার সময় প্রথম আচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হল রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশকে। এর পর ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ব্রহ্মসমাজের আচার্য হন। এক ঝাঁক শিক্ষিত মুক্তমনা যুবাপুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়লেন ঘুণধরা সমাজকে অশিক্ষা, কুসংস্কার ও জাতপাতের সঙ্কীর্ণতা থেকে তুলে আনার কাজে।
শান্তিপুরে ব্রাহ্মসমাজ গড়ে ওঠার পর থেকে যে সমাজসংস্কার মূলক কাজগুলি মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রেখেছে, সেগুলি হল অনাথ আশ্রম স্থাপন, ব্রাহ্মমিশন বিদ্যালয় স্থাপন, ডায়মন্ড জুবিলি ইনস্টিটিউশন (আজকের শান্তিপুর ওরিয়েন্টাল একাডেমি), শান্তিপুর শিক্ষয়িত্রী বিদ্যালয়, আত্মোৎকর্ষ বিধায়িনী সভা, বালবিদ্যোৎসাহিনী সভা ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment