শান্তিপুরের বড়বাজারের শ্যামচাঁদ পাড়ায় অবস্থিত পাঁচ খিলানবিশিষ্ট, অলিন্দযুক্ত, দক্ষিণমুখী, বাংলা আটচালা শ্রেণীর শ্যামচাঁদ মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের এ শ্রেণীর বৃহতম মন্দিরগুলির অন্যতম। উঁচু পাদপীঠের উপর নির্মিত এ মন্দিরের দৈর্ঘ্য, প্রস্ত, ও উচ্চতা যথাক্রমে ৫২ ফুট ( ১৫.৮ মি. ), ৩৬ ফুট ( ১১ মি. ) ও আনুমানিক ৭০ ফুট ( ২১.৩ মি. )।
মন্দিরটির টেরাকোটা-সজ্জা যৎসামান্য। খিলানগুলির উপরের চারিদিকে বাংলা আটচালা শ্রেণীর প্রতীক শিবালয় এবং তার মধ্যে শিবলিঙ্গ। উপরের কার্নিসের নিচে দুই প্রস্থে পোড়ামাটির ফুল এবং দু পাশের উপরে-নিচেও একই রকমের ফুল মন্দিরটির অঙ্গ সজ্জারূপে বিন্যস্ত হয়েছে। খিলানগুলির উপরের প্রস্থে পঙ্খের কাজ ছাড়া কোন পোড়ামাটির কাজ নেই। শ্যামচাঁদের এই মন্দিরটির সঙ্গে নদিয়া জেলার কাঞ্চনপল্লীতে অবস্থিত কৃষ্ণরায়ের আটচালা মন্দিরটির আকার ও আয়তনের দিক থেকে অনেক সাদৃশ্য আছে। শ্যামচাঁদের এই মন্দিরটির অবস্থা এখনও বেশ ভাল। মন্দিরের গর্ভগৃহের দরজার কাঠের কাজও খুব সুন্দর। যদিও অযত্নে ও রঙের প্রলেপে তা অনেকটাই ম্লান।
শ্রী শ্রী শ্যামচাঁদ বিগ্রহ প্রতিদিন পূজিত হন।খাঁচৌধুরীদের পারিবারিক বিগ্রহ রাধাকান্তও এখানে উপাসিত। মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতে বাঁ দিকে একটি ছোট মন্দিরে একটি শিবলিঙ্গ এবং অপর একটি ছোট মন্দিরে শ্রীগৌরাঙ্গ, শ্রীনিত্যানন্দ ও শ্রীঅদ্বৈতের মূর্তি আছে। মন্দিরের ডান দিকে একটি ছোট্ট ঘরে মাধবেন্দ্রপুরীর মূর্তি আছে। মন্দিরের সামনে একটি বড় নাটমন্দির আছে। মন্দির প্রাঙ্গণ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে এই মন্দিরে চার দিন ব্যাপী ভক্তবৃন্দ দ্বারা হরিনাম সংকীর্তন হয় কিন্তু ভাঙ্গারাসের শোভাযাত্রায় এই বিগ্রহ অংশ নেন না। দোল পূর্ণিমার পরদিন অর্থাৎ, প্রতিপদে হয় শ্যামচাঁদের দোল। সেদিন শ্যামচাঁদ মন্দিরে হয় বিশেষ পূজা, ভোগ। চলে নাম সংকীর্তন। সন্ধ্যায় শ্যামচাঁদ জিউ নগর ভ্রমণে বেরিয়ে গুরু-গৃহ উড়িয়া গোস্বামী বাড়িতে যান। তাঁর নগর পরিক্রমা দেখতে রাস্তার দু'দিকে ভিড় উপচে পড়ে। উড়িয়া গোস্বামী বাড়ি পৌঁছে শ্যামচাঁদ জিউ 'ডালিধরা' অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
পথনির্দেশ: শান্তিপুরের শ্রী শ্যামচাঁদ মন্দিরে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে শান্তিপুর লোকাল ধরুন । রেলপথে শান্তিপুরের দূরত্ব ৯৩ কি. মি. ; ট্রেনে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা । স্টেশন থেকে রিকশায় বা টোটোতে পৌঁছে যান বড়বাজারে অবস্থিত শ্রী শ্যামচাঁদ মন্দির।
তথ্য সূত্র:
No comments:
Post a Comment