Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Sunday 26 July 2020

বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গনগনি


        'ক্যানিয়ন' বললে প্রথমেই মনে পড়ে যায় ভূগোলের বইতে পড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভুক্ত 'অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের' কথা, নদীর স্রোতের শিল্পকর্মের নিদর্শন হল এই ক্যানিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দেখতে সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক যান। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, খোদ বাংলাতেই রয়েছে অবিকল এমনই একটি জায়গা যা বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম  মেদিনীপুর জেলার গড়বেতার গনগনিকে বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বলা হয়। এর স্থানাঙ্ক ২২ ডিগ্রি ৫১মিনিট ২৪ সেকেন্ড উত্তর , ৮৭ ডিগ্রি ২০ মিনিট ৩০ সেকেন্ড পূর্ব।
           শীলাবতী নদীর পাশে অবস্থিত এই অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কোনও অংশেই কম নয়। সপ্তাহান্তে ভ্রমণের আদর্শ জায়গা।শিলাবতী নদীর তীরে গড়বেতার অন্যতম পর্যটনস্থল গনগনি। মেদিনীপুর শহর থেকে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। কানায় কানায় ভরা প্রকৃতি। পাথুরে খাদের উপর আকাশের ডাকাডাকি। গায়ে গেরুয়া ওড়না জড়িয়ে দাঁড়িয়ে গনগনি। বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। 

         প্রকৃতিই এখানে শিল্পী। তার আপন খেয়ালেই সেজে উঠেছে নিসর্গের এলাকাটি।একেবারে গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে শিলাবতী। পাশে ক্ষয়িষ্ণু ভূমি। সূর্য হেলে যখন নদীজলে খেলা করে তখন সেই ভূমি আরও লাল হয়ে ওঠে। অপরূপ সৌন্দর্য্য।  নদীপাড় ক্ষয়ে মাঝে মাঝে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত পাথুরে ভূমি। ক্ষয়িষ্ণু এই প্রস্তরেই সৌন্দর্য্য ঝলসে ওঠে। অনেকটা আমেরিকার ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’- এর মতোই দেখতে রূপসী বাংলার এই গনগনি।
আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মিনিয়েচার ভার্সন খুঁজে পাবেন আমাদের রাজ্যেই। অ্যারিজোনার জায়গায় গনগনি। আর কলোরাডোর জায়গায় শিলাই নদী!
মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে গনগনিতে নদীপাড় ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত র‌্যাভাইন। ছোটখাটো ক্যানিয়ন বললেও ভুল হবে না। শিলাবতী নদী, যার ডাক নাম শিলাই এঁকেবেঁকে চলেছে এখানে। শিলাবতীর চরে প্রকৃতিই তৈরি করেছে এই ক্যানিয়ন। এখানে ভূমিক্ষয়ের প্রবণতা একটু বেশি। নদীর ক্ষয়ের ফলে ল্যাটেরাইটে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ।

        শিলাবতী, আদরের নাম শিলাই। দৈর্ঘ্যে খুব বড় নয় সে। ছোটনাগপুরের মালভূমিতে তার জন্ম, পুরুলিয়ার পুঞ্চা শহরের কাছে। তার পর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দিয়ে বয়ে গেছে। ঘাটালের কাছে দ্বারকেশ্বর নদের সঙ্গে মিশেছে। এই ছোট্ট শিলাই প্রায় সারা বছর শুয়ে থাকে, অত্যন্ত রুগ্ন, শীর্ণ চেহারা তার। কিন্তু বর্ষা এলেই তার রুদ্র রূপ, ভাসিয়ে দেয় চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই আর ঘাটাল। এ হেন শিলাবতীর কেরামতিতে সৃষ্টি এই গনগনির ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’।

        গনগনি আজ থেকে প্রায় ২ মিলিয়ন থেকে দশ হাজার বছরের মধ্যবর্তী সময়ের সঞ্চিত কাঁকুরে পলল স্তরের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে ক্রমান্বয়ে ঋতুগত ভৌমজলস্তরের ওঠানামার ফলে আদ্রতা ও শুষ্কতার প্রভাবে তৈরি হওয়া ল্যাটেরাইটের প্রকাশ। শিলাবতী নদীর ডানদিকের পাড় বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০ মিটার উঁচু এই ডাঙার খাড়া ঢাল বরাবর গভীর ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট অজস্র ছোট ছোট নালা এবং নালাগুলির সংযুক্তির ফলে সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য গালির সমন্বয়ে এই ক্ষয়িষ্ণু ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।

        এত গেল ভৌগলিক ব্যাখা,এই গনগনিকে ঘিরে রয়েছে এই অঞ্চলের লোককাহিনি, রয়েছে ইতিহাস। যে ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে এক টুকরো মহাভারত। সেই ইতিহাসের শিকড় পৌরাণিক যুগে মহাভারত অব্দি বিস্তৃত। অজ্ঞাতবাসে থাকার সময় পঞ্চপাণ্ডব এখানে নাকি কিছু দিন কাটিয়েছিলেন।পাণ্ডবরা বনবাসে থাকাকালীন একদিন এসে পড়েছিলেন এই গনগনি তে। এই তল্লাটে তখন দাপিয়ে বেড়াত বকাসুর নামের রাক্ষস। কোনো একজন গ্রামবাসীকে রোজ তার হাতে তুলে দিতে হত নৈবেদ্য হিসেবে। এর অন্যথা হলে, সমস্ত গ্রাম তছনছ করে ছাড়তো বকাসুর। পাণ্ডবরা এইখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। বকাসুরের খাদ্য হিসেবে উৎসর্গ হওয়ার জন্য একদিন সময় এলো এই পরিবারের। মাতা কুন্তীর নির্দেশে ভীম এই পরিবারের সদস্য হয়ে নিবেদিত হলো বকাসুরের কাছে। শুরু হলো প্রবল যুদ্ধ বকাসুরের সাথে শক্তিশালী ভীমের। অবশেষে ভীমের হাতেই বধ হলো বকাসুর। তাদের যুদ্ধের প্রতাপে এখানকার মাটি কেঁপে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, শিলাবতীর এই গিরিখাত আসলে বকরাক্ষস আর ভীমের মধ্যে যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হয়েছিল তার ফলেই তৈরি হয়েছিল।লোককথা অনুযায়ী, এই জায়গাতেই নাকি বকাসুরকে বধ করেছিলেন ভীম। আর ক্যানিয়নের গুহার মতো অংশগুলো জনশ্রুতিতে হয়ে গিয়েছে পাণ্ডবদের গুহা! 

        কল্পকাহিনী ছেড়ে এবারের আসি ইতিহাসে পাতায়। চূয়াড়-লায়েক বিদ্রোহ তো বেশি দিনের কথা নয়। মোটামুটি দু’শো বছর আগের কথা। ১৭৯৮ - ৯৯ সালে চূয়াড় বিদ্রোহ চড়িয়ে পড়েছিল মেদিনীপুর জেলায়। বহু চূয়াড় নেতা সদলবলে আত্মগোপন করেছিলেন গনগনিতে।বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক অচল সিংহ তাঁর দলবল নিয়ে আস্তানা গেড়েছিলেন গনগনির গভীর শালবনে, রপ্ত করেছিলেন গেরিলা লড়াইয়ের কলাকৌশল। ইংরেজদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিলেন। ইংরেজ বাহিনী নাকি কামান দেগে গোটা শালবন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তবু দমানো যায়নি অচলকে। চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়ে যান তিনি। অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেননি। বগড়ির শেষ রাজা ছত্র সিংহ ধরিয়ে দেন অচলদের। এই গনগনির মাঠেই নাকি অচল ও তাঁর সঙ্গীদের ফাঁসি দিয়েছিল ইংরেজ। 

         ইতিহাস , ভূগোল , পুরান বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানেই প্রতি বছরই অনেক পর্যটক এখানে আসেন। প্রকৃতির এই সৃষ্টির কাছে যেন মাথা নোয়ায় মানুষের সৃষ্টি। সেই দিক থেকে গনগনি আর পাঁচটা পর্যটনস্থলের থেকে একেবারে আলাদা। একেবারে অন্য রকম।

         বর্ষায় ফুলে-ফেঁপে ওঠা নদী গিয়ে আছড়ে পড়ে পাশের উঁচু টিলায়। পাশাপাশি বৃষ্টিতেও ভূমিক্ষয় হয়। সেই ভূমিক্ষয় থেকেই তৈরি হয়েছে ছোট ছোট টিলা, গর্ত, খাল। তাতে আবার রঙের বৈচিত্র্য। কোথাও সাদা, কোথাও লালচে বা ধূসর। কোনও অংশ দেখে আবার মনে হবে যেন মন্দির, আবার কোনও অংশ মনুষ্য আকৃতির, কোথাও বা টিলা গুহার আকার নিয়েছে। ভূগোলের ছাত্রছাত্রী থেকে গবেষক, ভূমিক্ষয় নিয়ে গবেষণার জন্য অনেকেই এখানে আসেন। আর ভ্রমণ-পিপাসু মানুষ আসেন ভূমিক্ষয়ের ফলে তৈরি প্রকৃতির শিল্পকর্ম দেখতে। শীতের  দুপুরে গনগনি যেন সত্যিই রঙের লাবণ্যে গনগন করে ওঠে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সময় গনগনির রূপ সবচেয়ে সুন্দর। গনগনি-র রূপ যেন মোহময়ী। এই সময়ে জায়গাটাকে ফোটোগ্রাফারদের স্বর্গরাজ্য বললেও অত্যুক্তি হবে না।

তথ্যসূত্র :
1. www.bongodorshon.com
2. https://ebela.in 
3. https://www.anandabazar.com
4.https://www.jiyobangla.com
5. https://wikipedia.org

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভারতের নায়াগ্রা চিত্রকূট জলপ্রপাত


         চিত্রকূট বা চিত্রকোট জলপ্রপাত ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের বাস্তার জেলায় জগদলপুরের পশ্চিমে অবস্থিত। অবস্থান হল ১৯°১২'২৩" উত্তর ৮১°৪২'০০" পূর্ব। এটি একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। এটি ইন্দ্রবতী নদীর তীরে অবস্থিত একটি সুন্দর নয়নাভিরাম  জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতের উচ্চতা প্রায় ২৯ মিটার (৯৫ ফুট)। এই জলপ্রপাতের বৈশিষ্ট্যটি হ'ল বর্ষার দিনে এই জলটি লালচে বর্ণের হয়, গ্রীষ্মের চাঁদনি রাতে এটি একেবারে সাদা দেখায়। জলপ্রপাতটি জগদলপুরের পশ্চিমে ৩৮ কিলোমিটার (২৪ মাইল) এবং রায়পুর থেকে ২৭৩ কিমি দূরে অবস্থিত। চিত্রকোট জলপ্রপাতটি ছত্তিসগড়ের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক জলমগ্ন বা জল বহনকারী জলপ্রপাত। এটি বাস্তার বিভাগের প্রধান জলপ্রপাত হিসাবে বিবেচিত হয়। 

         অশ্বখুরাকৃতির এই জলপ্রপাতটি ভারতের সর্ববৃহৎ খাড়া পতন। বর্ষা মৌসুমে এটির প্রস্থ এবং বিস্তৃত বিস্তারের কারণে এটি প্রায়ই ভারতের নায়াগ্রা জলপ্রপাত বলে পরিচিত। কমপক্ষে তিনটি এবং সর্বাধিক সাতটি ধারা প্রবাহিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে বছরের বিভিন্ন সময়ে।
 
        এমনিতে ছত্তিশগড়ের বস্তার জেলা মাওবাদী হামলার জন্য কুখ্যাত। কিন্তু এখানকার চিত্রকূট জলপ্রপাত পর্যটকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। জগদলপুর সংলগ্ন হওয়ার কারণে এটি একটি বড় পিকনিক স্পট হিসাবে খ্যাতিও অর্জন করেছে। আর তা অবশ্যই এর সৌন্দর্যের জন্য। চিত্রকুট জলপ্রপাতটি খুব সুন্দর এবং পর্যটকরা এটি খুব পছন্দ করেন।  আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই জলপ্রপাতকে দেখতে লাগবে ‘পিকচার পারফেক্ট’। জলপ্রপাতের নিজস্ব সৌন্দর্য তো আছেই, এর চারপাশে সবুজও চোখ টানে পর্যটকদের। শক্তিশালী গাছ এবং বিন্ধ্য রেঞ্জের মাঝখানে পড়ে একটি বৃহত জলের দেহ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিখ্যাত চিত্রকোট জলপ্রপাত, "ভারতের নায়াগ্রা" প্রতি মরসুমে দৃশ্যমান হয়, তবে বর্ষাকালে এটি দেখতে আরও উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা। বৃষ্টিপাতের উচ্চতা থেকে বিশাল জলের গর্জন শিহরণ এবং কাঁপুনি তৈরি করে বর্ষাকালীন এই ঝর্ণার সৌন্দর্য খুব বেশি। জুলাই-অক্টোবর সময়কালে দর্শকদের এখানে আসার উপযুক্ত সময়। ঘন অরণ্য চারদিকে মনোরম জলপ্রপাত, যা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই জলপ্রপাতের কোণে আপনি বহু সুন্দর পাখি দেখতে পাবেন যা এই স্থানের সৌন্দর্যকে যোগ করে। এই জলপ্রপাত দ্বারা সৃষ্ট শব্দ এতটাই তীব্র যে এর পাশে সৃষ্ট অন্য কোন আওয়াজ শোনা প্রায় অসম্ভব। এই জলপ্রপাত বর্ষাকালে অত্যন্ত সুন্দর দেখায় যখন মাটি ক্ষয়ের কারণে জলের রং বাদামী বর্ণ লাভ করে। 

তথ্যসূত্র:
1. https://bastar.gov.in
2. bengali.mapsofindia.com
3. Wikipedia
4. www.sangbadpratidin.in

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Friday 24 July 2020

ভারতের জাতীয় পতাকা



        ভারতের জাতীয় পতাকা হলো কেন্দ্রে চব্বিশটি দণ্ডযুক্ত নীল "অশোকচক্র" সহ গেরুয়া, সাদা ও সবুজ আনুভূমিক আয়তাকার ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদের একটি অধিবেশনে এই পতাকার বর্তমান রূপটি ভারত অধিরাজ্যের সরকারি পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীকালে এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকার মর্যাদা লাভ করে। ভারতে এই পতাকাটিকে সাধারণত "ত্রিরঙ্গা পতাকা" বা "ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা" বলা হয়। পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া কৃত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের "স্বরাজ" পতাকার ভিত্তিতে এই পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করা হয়েছিল।

        আইনত, কেবলমাত্র খাদিবস্ত্রেই জাতীয় পতাকা প্রস্তুত করার নিয়ম রয়েছে। ভারতীয় মানক ব্যুরো এই পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন স্থির করে দেয়। উৎপাদনের অধিকার খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের হাতে ন্যস্ত। এই কমিশন বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে উৎপাদনের অধিকার দিয়ে থাকে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ জাতীয় পতাকার একমাত্র উৎপাদক।

        পতাকার ব্যবহারবিধি "ভারতীয় পতাকাবিধি" ও জাতীয় প্রতীকাদি সংক্রান্ত অন্যান্য আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয়। পুরনো বিধি অনুযায়ী, স্বাধীনতা দিবসসাধারণতন্ত্র দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবস ছাড়া সাধারণ নাগরিকেরা পতাকা উত্তোলন করতে পারতেন না। ২০০২ সালে, এক নাগরিকের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ নাগরিকদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে পতাকাবিধি সংস্কারের নির্দেশ দেন। সেই মতো ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট পতাকাবিধি সংস্কার করে কয়েকটি সীমিত ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার ব্যবহার অনুমোদিত করে। ২০০৫ সালে পতাকাবিধি পুনরায় সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ধরনের বস্ত্র ব্যবহারের অতিরিক্ত ব্যবস্থা করা হয়।

নকশা:

        নিচে বিভিন্ন বর্ণ মডেল অনুসারে ভারতীয় পতাকার সম্ভাব্য রংগুলির বর্ণনা দেওয়া হল। গেরুয়া, সাদা, সবুজ ও নীল – এই চারটি রং পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এটিকে সিএমওয়াইকে বর্ণ মডেল; ডাই রং ও প্যান্টন সমসংখ্যা অনুযায়ী এইচটিএমএল আরজিবি ওয়েব রং (হেক্সাডেসিম্যাল নোটেশন) অনুযায়ী বিভক্ত করা হল।


        সর্বোচ্চ ব্যান্ডের সরকারি (সিএমওয়াইকে) মূল্য হল (0,50,90,0) – এটি কমলা রঙের অনুরূপ – যার সিএমওয়াইকে = (0,54,90,0)। প্রকৃত গাঢ় গেরুয়ার সিএমওয়াইকে মূল্য যথাক্রমে (4, 23, 81, 5)) ও (0, 24, 85, 15))। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া

প্রতীক:


        স্বাধীনতাপ্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে বিশেষভাবে গঠিত গণপরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকাকে সব দল ও সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য করে হতে হবে। এই কারণে, অশোকচক্র সম্বলিত গেরুয়া, সাদা ও সবুজ ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, যিনি পরবর্তীকালে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, তিনি গৃহীত পতাকার প্রতীকতত্ত্বটি ব্যাখ্যা করে নিম্নলিখিত ভাষায় তার গুরুত্ব বর্ণনা করেন:


পতাকার সম্মান:

        ভারতীয় আইন অনুসারে জাতীয় পতাকার ব্যবহার সর্বদা "মর্যাদা, আনুগত্য ও সম্মান" ("dignity, loyalty and respect") সহকারে হওয়া উচিত। "প্রতীক ও নাম (অপব্যবহার রোধ) আইন, ১৯৫০" ("The Emblems and Names (Prevention of Improper Use) Act, 1950") অনুসারে জারি করা "ভারতীয় পতাকা বিধি – ২০০২" ("Flag Code of India – 2002") পতাকার প্রদর্শনী ও ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশিকা বহন করে। সরকারি বিধিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকা কখনই মাটি বা জল স্পর্শ করবে না; এটিকে টেবিলক্লথ হিসেবে বা কোনো প্লাটফর্মের সম্মুখে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না; জাতীয় পতাকা দিয়ে কোনো মূর্তি, নামলিপি বা শিলান্যাস প্রস্তর আবরিত করা যাবে না ইত্যাদি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা বস্ত্র, উর্দি বা সাজপোষাক হিসেবে ব্যবহার করা যেত না। ২০০৫ সালের ৫ জুলাই সরকার পতাকাবিধি সংশোধন করে বস্ত্র বা উর্দি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করেন। যদিও নিম্নাবরণ বা অন্তর্বাস হিসেবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এছাড়াও বালিশের কভার বা গলায় বাঁধার রুমালে জাতীয় পতাকা বা অন্য কোনো প্রতীকচিহ্ন অঙ্কণ করা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে উলটো অবস্থায় পতাকা উত্তোলন, কোনো তরলে ডোবানো বা উত্তোলনের আগে ফুলের পাপড়ি ছাড়া অন্য কিছু তাতে বাঁধা বা পতাকাগাত্রে কোনো কিছু লেখাও নিষিদ্ধ।

পতাকার ব্যবহার:

        জাতীয় পতাকার ব্যবহার ও প্রদর্শনী সংক্রান্ত একাধিক প্রথা অনুসৃত হয়ে থাকে। বহির্দ্বারে আবহাওয়া ব্যতিরেকে সূর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্যাস্তের সময় তা নামিয়ে ফেলা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি ভবনে রাতেও জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের রীতি আছে।


        জাতীয় পতাকা কখনই উলটো অবস্থায় বর্ণনা করা, প্রদর্শিত করা, বা উত্তোলন করা অনুচিত। প্রথা অনুসারে পতাকাটিকে ৯০ ডিগ্রির বেশি আবর্তিত করা যায় না। কোনো ব্যক্তি যেন পতাকাকে উপর থেকে নিচে ও বাঁদিক থেকে ডান দিকে বইয়ের পাতার মতো "পড়তে" পারেন এবং আবর্তিত হওয়ার পরও যেন এই বৈশিষ্ট্যের ব্যতয় না হয়। ছেঁড়া বা নোংরা অবস্থায় পতাকার প্রদর্শনী অপমানজনক। পতাকাদণ্ড বা উত্তোলন রজ্জুর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য; এগুলিকেও যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়।


তথ্যসূত্র:

1. www.wikipedia.org

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়



করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯ নভেম্বর, ১৮৭৭ - ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫) একজন বাঙালী রোমান্টিক রবীন্দ্রানুসারী জাতীয়তাবাদী কবি।

প্রারম্ভিক জীবন:

        তিনি নদিয়া জেলার  শান্তিপুরের  কাছে বাগআঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম নৃসিংহ বন্দ্যোপাধ্যায়। করুণানিধান শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ১৮৯৬ সালে এন্ট্রান্স ও কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে এফ.এ পাস করে কলকাতা জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে বি.এ পড়া শুরু করেন। ১৯০২ সালে বি.এ পাশ করে শিক্ষকতা করতেন।

কাব্যপ্রতিভা:

        ছাত্র জীবন থেকে কবিতা লিখতেন। তার প্রথম লেখা দেশাত্মবোধক কাব্য বঙ্গমঙ্গল প্রকাশিত হয় ১৯০১ সালে। এটি রাজরোষে পড়ার আশঙ্কায় বিনা নামে বের হয়। অন্যান্য কাবগ্রন্থের মধ্যে প্রসাদী, ঝরাফুল, শান্তিজল, শতনরী, রবীন্দ্র আরতি, গীতায়ন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার দ্বারা পরবর্তীতে মোহিতলাল মজুমদার  প্রমুখ অনেক কবি প্রভাবিত হন।

সম্মান:

        সাহিত্যে অবদানের কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়  তাকে জগত্তারিণী স্বর্নপদক প্রদান করে ১৯৫১ সালে।

তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (Jatindranath Sengupta)



যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (Jatindranath Sengupta) (জন্ম: ২৬ জুন, ১৮৮৭ - মৃত্যু: ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪) বাংলা ভাষার কবি।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন:

        তার জন্ম নদিয়া জেলার  শান্তিপুরে। পৈতৃক নিবাস নদীয়ার হরিপুর গ্রামে।তিনি ১৯১১ সালে হাওড়ার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন।

কর্মজীবন:

        ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে নদীয়া জেলা বোর্ড ও পরে কাশিমবাজার রাজ স্টেটে কাজ করেন।

সাহিত্যজীবন:

        পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন প্রকৌশলী এবং নদীয়া জেলা বোর্ড ও কাশিমবাজার স্টেটে তিনি ওভারসীয়ার হিসেবে কাজ করেন। বাংলা কাব্যকে তিনি সনাতন ভাবালুতা ও রহস্যময়তার নিগড় থেকে মুক্ত করতে যত্নবান ছিলেন। সে-জন্য বাংলা কাব্যকে অবাস্তব কল্পনার জগৎ থেকে কঠোর বাস্তবে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাকে একজন পথিকৃৎ বলা চলে। বোধগম্য কারণেই তার কাব্যে ব্যাঙ্গের সুর তীব্র এবং কাব্যের নামকরণও তাই ভিন্নধর্মী। অনুপূর্বা(১৯৪৬), মরুমায়া (১৯৩০), সায়ম (১৯৪০), ত্রিযামা (১৯৪৮), কাব্য পরিমিতি(১৯৩১), মরীচিকা (১৯২৩), মরুশিখা (১৯২৭), নিশান্তিকা (১৯৫৭) প্রভৃতি তার কাব্যগ্রন্থ।
শেষ বয়সে  ম্যাকবেথ, হ্যামলেট, ওথেলো, শ্রীমদ্ভগবদগীতা, কুমারসম্ভব ইত্যাদির অনুবাদকাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Thursday 23 July 2020

দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (২৫ জুন ১৯৩৪ - ২ জুন ২০১১)


        দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন। পিতার নাম নন্দদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীহারবালা। 

        সাত বৎসর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন স্কুলের পড়াশোনার পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। কিন্তু সংসারের অর্থকষ্ট মেটাতে তিনি বন্ধ করেছিলেন পড়াশুনা। তাতে বিষম চটে গিয়েছিলেন তাঁর পিতা। তিনি তখনই তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করেন। কলকাতায় ঘরছাড়া হয়ে উঠলেন হ্যারিসন রোডের একটি মেসে। ওই মেসে তখন থাকতেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। রোজগারের জন্য তখন যা পেতেন তাই করতেন। কখনো গৃহশিক্ষকতা, টাইপিস্ট স্টোরকিপার এবং চায়ের দোকানেও কাজ করতে হয়েছে। অর্থকষ্ট এতটাই ভয়াবহ ছিল। কিন্তু এসবের মধ্যেও সৃজনী মনটা কিন্তু উধাও হয়ে যায় নি। সময় পেলেই শুনতেন জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ও বাচনভঙ্গি। তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন কাজী সব্যসাচী  আবৃত্তিচর্চার সূত্রপাত তখনই। সারাদিন চায়ের দোকানে কাজ করতেন, রাতে ফিরে কলম-খাতা নিয়ে বসে যেতেন , কবিতাও লিখতেন। এমনই একটা সময় সঙ্গীত পরিচালক সুধীন দাশগুপ্ত  এবং সুবীর হাজরার (সত্যজিৎ রায়ের সহকারী) একটি ছবিতেও প্রোডাকশনের কাজ করেছিলেন তিনি। যদিও সে ছবি মুক্তি পায়নি। সুধীন দাশগুপ্তই তাঁকে আকাশবাণীর  ‘অনুষ্ঠান ঘোষক’-এর পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে বলেন। অতঃপর ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঘোষক হিসাবে আকাশবাণীর চাকরিতে প্রবেশ করেন। তারপর একটানা বত্রিশ বছর আকাশবাণীতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। অচিরেই কুশলতায় হয়ে ওঠেন আকাশবাণীর সংবাদ ও ভাষ্যপাঠক। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি দিল্লীতে বাংলা বিভাগে সংবাদ পাঠক রূপে নির্বাচিত হন। তারপর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শেষদিকে ফিরে আসেন কলকাতার বেতার কেন্দ্রে। তাঁর কণ্ঠে ' কলকাতার আকাশবাণীতে '‘আকাশবাণী কলকাতা, খবর পড়ছি দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়’'—ভরাট কণ্ঠের এই সম্ভাষণ যে কি প্রভাবে মানুষকে আচ্ছন্ন করত তা বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে। আর সংবাদ পাঠকে তিনি এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে, ঘরে ঘরে সংবাদ পরিক্রমা শোনার জন্য রেডিও খোলা হতো। তাঁর অনেক আবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে রেকর্ড ও ক্যাসেটে। 

        বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রণবেশ সেনের লেখা 'সংবাদ পরিক্রমা' তাঁর ভাবগম্ভীর কণ্ঠে শোনার জন্য অপেক্ষা করে থাকত দুই বাংলার মানুষ। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তা প্রেরণার কাজ করত।
তাঁর এই ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ গঠিত হওয়ার পর তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ১০ ই জানুয়ারি বাংলাদেশে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেন ও সংবর্ধনা জানান।

        বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে "পদ্মশ্রী" সম্মানে ভূষিত করে।

        আকাশবাণী কলকাতার বেতার কেন্দ্র হতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে অবসরের পর যৌথ বা একক ভাবে সম্পাদনা করেছেন বিভিন্ন বিষয়ের বই। সেগুলি হল- আবৃত্তি, বাংলাদেশের গল্প, একাত্তরের যুদ্ধে ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশ প্রভৃতি।

        তাঁর স্ত্রী ছিলেন কত্থক নৃত্যশিল্পী রুবি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে শুরু করেছিলেন 'রসকলি' নামে একটি আবৃত্তি ও নৃত্যচর্চা কেন্দ্র। কিন্তু ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর স্ত্রীর অকাল প্রয়াণে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে হঠাৎ সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন অসুস্থ হয়ে স্মৃতিভংশ হয়েছিল তাঁর। দক্ষিণ কলকাতার ল্যাসডাউনে নিজের বাসভবনে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২ রা জুন ৭৭ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org

©
GEO HUB
(Enhance Your Geo Knowledge)
Ghoralia, Santipur, Nadia.
..............................
GEO HUB এর লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Saturday 18 July 2020

সাইক্লোন কী? কেন? কিভাবে?


        সাইক্লোন সমার্থক শব্দ : ঘূর্ণিঝড়। ইংরেজি  Cyclone। নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক kyklos শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন শব্দ হলো kykloun। এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে kyklōma । এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ বিষয়ক গ্রন্থ, The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে Cyclone শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইংরেজি থেকে।



        সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট যে কোন  ঘূর্ণিঝড়কেই সাধারণভাবে সাইক্লোন বলা হয়। ভারত মহাসাগরীয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়কে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়। এর ভিতরে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট  ঘূর্ণিঝড়কেই বিশেষভাবে সাইক্লোন বলা হয়। এই ঝড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড-এর উপকূলীয় অঞ্চল।

        অন্যদিকে  আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় টাইফুন।

        অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই−  এই ঝড়ের সময় বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। উল্লেখ্য কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল বাতাস  ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়। এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয় ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ (Wizard's Eye)। মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে 'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক গোলার্ধের বিচারে দুই রকম হয়। এই জাতীয় ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই ঝড়ে পরিণত হয় না। ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে তখন ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় তিন রকমের হতে পারে। এই রকম তিনটি হলো− সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এবং সাইক্লোন। স্থলভূমিতে  সাধারণ ঘূর্ণিঝড়  ও টর্নেডো হয়। কিন্তু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় সমূদ্রপৃষ্ঠে।

        সাইক্লোনের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ মূখ্য ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ উন্নীত হলে এবং তা সমুদ্রের উপরিতল থেকে প্রায় ৫০ মিটার তা বজায় থাকলে, সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই সময় এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আর্দ্র বায়ু উপরে দিকে উঠে যায়। আর এই শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য উভয় মেরু অঞ্চল থেকে বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে, এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট বায়ু প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা  ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন  ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।

        সাইক্লোনের কেন্দ্রস্থলকে চোখ বলা হয়। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসের গতি থাকে ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার ভিতরে। কিন্তু এর বাইরে যে ঝড়ো দেওয়াল তৈরি হয়। তাতে ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে বাতাসের গতি ২৫০-৩০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। এই বাতাসের সাথে থাকে অবিরাম প্রচুর বৃষ্টিপাত। একই সাথে সমুদ্র থেকে উত্থিত দেওয়াল সদৃশ্য জলোচ্ছ্বাস। এই জলোচ্ছ্বাস ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্রের জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাস হলে, তা ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করে।

        সাইক্লোন স্থলভাগে আঘাত না হানা পর্যন্ত ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। স্থলভাগে আঘাত হানার পর অল্প সময়ের ভিতর সাইক্লোন দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের দ্বারা আক্রান্ত স্থানটি একটি বিশাল বিধ্বংস অঞ্চলে পরিণত হয়।


ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অঞ্চল ও সময়কাল:
        ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন অঞ্চল হিসেবে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলিকে সাতটি বেসিন বা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও হুঁশিয়ারী প্রদানের জন্য বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগ কাজ করছে। নিচে সাতটি বেসিনের নাম দেয়া হলঃ

1.উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
2.উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর
3.উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর
4.উত্তর ভারত মহাসাগর (প্যানেল দেশসমূহঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা,মায়ানমার ও থাইল্যান্ড আবহাওয়া বিভাগ)
5.দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর
6.দক্ষিণ পূর্ব ভারত মহাসাগর
7.দক্ষিণ পশ্চিম ভারত মহাসাগর

        প্রতিটি বেসিনে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মৌসুম ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম শুরু হয় জুনের ১ তারিখ এবং শেষ হয় নভেম্বর ৩০ তারিখে। বাংলাদেশ উপকূলে মূলতঃ বর্ষাকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে বর্ষাকালেও বিক্ষিপ্তভাবে ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায়।

ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণীবিভাগ:
        সাতটি বেসিনেই বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়কে কতগুলো শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আটলান্টিক এলাকার জন্য, প্রাথমিক অবস্থায় বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-র নিচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ (Tropical depression) বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে এটিকে একটি নাম দেয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি. ব্যবধানে এটিকে একটি ঝড় বা Tropical storm বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন এটি হারিকেন পর্যায়ে উন্নীত হয়। বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী হারিকেনকে আবার এক থেকে পাঁচ মাত্রার ৫ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আবিষ্কারকের নামানুসারে এটি সাফির-সিম্পসন স্কেল নামে পরিচিত।

        বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

তথ্যসূত্র:

1. www.wikipedia.org



লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sunday 12 July 2020

বক্রেশ্বর উষ্ণ প্রস্রবণ (Bakreshwar Hot Water Spring)


         বক্রেশ্বর পশ্চিমবঙ্গের  বীরভূম জেলার  সিউড়ি সদর মহকুমার দুবরাজপুরে অবস্থিত। বক্রেশ্বর হ'ল গরম জলের ঝর্ণার অর্থাত উষ্ণ প্রস্রবণগুলির জন্য বিখ্যাত। বক্রেশ্বরের স্থানাংক ২৩.২৮° উত্তর ৮৭.৩৭° পূর্ব । বীরভূমের শুষ্ক পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা ৮৪ মিটার। এটি বক্রেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত।

        বক্রেশ্বর শব্দটি এসেছে স্থানীয় বক্রেশ্বর শিবের নামানুসারে। বক্র শব্দটির অর্থ বাঁকা; ঈশ্বর অর্থে ভগবান। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সত্যযুগে লক্ষ্মী  ও নারায়ণের  বিবাহ অনুষ্ঠানে সুব্রত মুণি দেবরাজ ইন্দ্র কর্তৃক অপমানিত হন। ক্রুদ্ধ ঋষির দেহ আটটি বাঁকে বেঁকে যায়। তিনি অষ্টবক্র ঋষি নামে পরিচিত হন। বহুবছর শিবির  তপস্যা করে ঋষি সুস্থ হয়ে ওঠেন। বক্রেশ্বর ৫১টি শক্তিপীঠের  অন্যতম এবং হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ। একারণে অজস্র মন্দির গড়ে উঠেছে বক্রেশ্বরে। কথিত আছে এখানের পড়েছে দেবীর ত্রিনয়ন। দেবী এখানে দশভূজা রূপে পুজিতা হন।

        মন্দিরের পাশেই রয়েছে একাধিক প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে উষ্ণ প্রস্রবণের জল পবিত্র এবং যথাযথভাবে ভক্তরা উপাসনা করেন। মনে করা হর এই  উষ্ণ প্রস্রবণের জলে নাকি রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। প্রায়শই রোগ নিরাময় ও ঈশ্বরিক শক্তি গ্রহণ করার জন্য লোকেদের হাত এবং পা ডুবিয়ে রাখতে দেখা যায়।

        বক্রেশ্বরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এর উষ্ণ প্রস্রবণ গুলি। এই শহরে মোট দশটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে। আশ্চর্যের বিষয় কুণ্ডগুলি পাশাপাশি অবস্থান করলেও বিভিন্ন কুণ্ডের জলের তাপমাত্রা ভিন্ন ভিন্ন।

এখানে যে দশটি উষ্ণ প্রস্রবণ  রয়েছে সেগুলি হ'ল:
১] পাপহরা গঙ্গা (Paphara ganga)
২] বৈতারিণী গঙ্গা (Baitarini ganga)
৩] খার কুণ্ড(Khar kunda): এই উষ্ণ প্রস্রবণের জলের তাপমাত্রা ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৪] ভৈরব কুণ্ড(Bhairav kunda): এই উষ্ণ প্রস্রবণের জলের ৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৫] অগ্নি কুণ্ড(Agni kunda): অগ্নি মানে আগুন। এই উষ্ণ প্রস্রবণের  জলের উষ্ণতা ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এটি সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকেটস, ক্লোরাইডস, বাইকার্বোনেটস এবং সালফেটসের মত অনেক খনিজ সমৃদ্ধ, যার ঔষধি গুণ রয়েছে বলে জানা যায়। এটিতে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলিও উপস্থিত  থাকতে পারে।
৬] দুধ কুণ্ড(Dudh kunda): ওজোন ঘন হওয়ার কারণে সম্ভবত এই প্রস্রাবের জল খুব ভোরের দিকে  নিস্তেজ সাদা বর্ণ ধারণ করে। এই উষ্ণ প্রস্রবণের জলের  উষ্ণতা ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
৭] সূর্য কুন্ড (Surya kunda):  এই উষ্ণ প্রস্রবণের জলের উষ্ণতা ৬১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়।
৮] শ্বেত গঙ্গা (Shwet ganga)
৯] ব্রহ্ম কুন্ডা (Brahma kunda)
৯] অমৃত কুন্ড (Amrita kunda)

         অগ্নিকুণ্ডটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, এর জলে অনবরত হিলিয়াম গ্যাস বেরোচ্ছে। চারিদিকে ডিম সেদ্ধর মতো গন্ধ। বর্তমানে ভারত সরকারের আণবিক পরীক্ষা বিভাগ এখান থেকে হিলিয়াম গ্যাস সংগ্রহ করছে। কুণ্ডটি তাদের তত্ত্বাবধানে সুন্দরভাবে রক্ষিত। কাউকে জলের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয় না। ওপর থেকে দড়িতে ঘটি বা বালতি ঝুলিয়ে জল তুলে নিয়ে বোতলে ভরে ‘তীর্থসলিল’ নামে বিক্রি হয়। বহু রোগ, বাত-ব্যাধি, হাঁপানি এমনকি অম্বলও নাকি ভাল হয়ে যায় এই জল খেলে।

        কুণ্ডগুলির জল কাচের মতো পরিষ্কার, গভীরতা দেড়-দু’হাতের বেশি নয়। শীতল সরোবরের ঘাট বাঁধানো–- মকরমুখ থেকে গরমজল ঝরে পড়ছে। মহিলা ও পুরুষদের আলাদাভাবে স্নানের ব্যবস্থা রয়েছে। তেল ও সাবান মাখা নিষিদ্ধ। কুণ্ডসমূহের জল পাপহরা নদীতে পড়ে বক্রেশ্বর নদের সঙ্গে মিশে গেছে।

        একাধিক উষ্ণ জলের কুণ্ডু, উষ্ণ প্রস্রবণ আর বক্রেশ্বর শিবকে ঘিরেই মূলত বক্রেশ্বরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেছে।

        প্রসঙ্গত, জানিয়ে রাখি  পানাগড়-মোরগ্রাম জাতীয় সড়ক থেকে মল্লারপুর লাগোয়া মেটেলডাঙা গ্রাম যাওয়ার পথে বছর ন’য়েক আগে উষ্ণ জলের ওই উৎসের সন্ধান মেলে। ২০০৯ সালে ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’ ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জলের অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধান শেষে তারা মেটেলডাঙা গ্রামের কাছে একটি পাইপ পোঁতা অবস্থায় রেখে চলে যায়। পরবর্তী কালে গ্রামবাসীরা দেখেন, ওই পাইপ থেকে অবিরাম ধারায় গরম জল উপচে পড়ছে। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দূর-দূরান্তের মানুষজনও গরমজল হাতে নিয়ে পরখ করার জন্য হাজির হন। শুধু মেটেলডাঙা নয় খরাসিনপুরে আবিষ্কৃত হয়েছে আরও একটি উষ্ণ জলের ধারা। অনুসন্ধান চালালে বক্রেশ্বরের মতোই এখানেও আরও গরম জলের কুণ্ডু কিংবা প্রস্রবণের ইঙ্গিত দিচ্ছে খরাসিনপুরের ওই গরম জলের ধারাটি। ময়ূরেশ্বর - ১ বিডিও  পঞ্চায়েত সমিতির দেওয়া তথ্য অনুসারে জানা গেছে ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোজোন ডিপার্টমেন্ট মেটেলডাঙা এবং খরাসিনপুরের গরম জলের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়েছিল বক্রেশ্বরের তুলনায় তাতে হিলিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে।

*************************************
তথ্যসূত্র:
1. https://wikipedia.org
2. www.thewall.in
3. www.anandabazar.com


লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Saturday 11 July 2020

শান্তিপুরের স্বাধীনতার ইতিহাস


               ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিল শান্তিপুর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নদিয়া জেলার এইরকম একটি প্রাচীন শহর, সংস্কৃতির পীঠস্থান ও হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র দেশভাগের সময় চলে গিয়েছিল পাকিস্তানে। আমরা সবাই জানি ব্রিটিশরা যাওয়ার সময় আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে  দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছিল।


                ১২ অগাস্ট, ১৯৪৭ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করলেন, ১৫ অগাস্ট থেকে স্বাধীন হয়ে যাবে ভারত।
১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট শান্তিপুরবাসীও জানতো যে রানাঘাট মহকুমার অন্তর্গত শান্তিপুর স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে সেই ধারণা অনুসারে ১৪ ই আগস্ট শান্তিপুরের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলনের এবং উৎসব এর প্রস্তুতি চলে এবং অনেক জায়গায় তোরণও নির্মাণ করা হয়। পথঘাট সাজানো হয়। কিন্তু ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাত্রে বেতার খবরের প্রকাশ পাই শান্তিপুর সহ নদীয়া জেলা পাকিস্তানের অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিনামেঘে বজ্রপাতের মত শান্তিপুরবাসীর অন্তরে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরদিন ১৫ ই আগস্টের সকালে শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায় , ফলে শান্তিপুর অঘোষিত ভাবেই পাকিস্তান হয়ে যায়।

           গোল বাঁধে বাংলাকে নিয়ে। তার কারণ, দেশভাগ-পরবর্তী মানচিত্র তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন যে সিরিল র‍্যাডক্লিফ, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অন্তরভুক্ত করেছিলেন মালদা এবং নদীয়ার মতো বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত জেলা। এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের বৈচিত্র্য এবং জটিল সামাজিক ও ধর্মীয় সমীকরণ সম্বন্ধে তাঁর অজ্ঞতা, এবং কিছুটা দায়ী ছিল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ইংল্যান্ডে ফেরার তাড়া, যার ফলে তিনি ক্রমাগত দ্রুত দেশভাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছিলেন র‍্যাডক্লিফের ওপর। ফলস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের শিকার হতে হয়  শান্তিপুরকে।

         এই ভাবে শোকের আবহে শান্তিপুরবাসীর তিনটে দিন কাটে যায়। কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন শান্তিপুরবাসী। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক নেতা এবং নদীয়ার রাজপরিবারের সদস্যরা  নদিয়া জেলার  পূর্ব পাকিস্তানের অন্তরভুক্তির প্রতিবাদ নিয়ে হাজির হন কলকাতায় ব্রিটিশ প্রশাসনের দরবারে। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কানে সে খবর পৌঁছয়। তড়িঘড়ি তিনি মানচিত্র বদলের আদেশ দেন ভাইসরয়কে, যাতে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি ভারতেই থাকে, এবং মুসলমান অধ্যুষিত জেলা যায় পূর্ব পাকিস্তানে। এই প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৭ অগাস্ট গভীর রাতে।


          পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র মহাশয়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও জওহরলাল  মহাশয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় নদীয়ার শান্তিপুর ওপার বাংলা থেকে বাদ দিয়ে ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়।


        অবশেষে ১৭ই আগস্ট মধ্যরাত্রে এক বেতার বার্তার মাধ্যমে জানা যায় যে শান্তিপুর স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৮ ই আগস্ট নদিয়ার শান্তিপুর পুরোপুরিভাবে পরাধীন মুক্ত হয়। ঐ দিন সকালে শান্তিপুরের কবি শ্রী করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় নেতৃত্বে শান্তিপুর ডাকঘর মোড়ে (যেটি বর্তমানে নেতাজি মোড় হিসেবে পরিচিত) সেখানে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে 1947 সালের ওই জাতীয় পতাকাটি আজও।

        এখানে জেনে রাখা প্রয়োজন যে , ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে জেলা হিসেবে নদীয়ার প্রথম আত্মপ্রকাশ সে সময় বর্তমান হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলার পাঁচটি মহকুমা : – কুষ্টিয়া, মেহেরপুর,চুয়াডাঙ্গা,কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ আগস্ট ওই প্রথম তিনটি মহকুমা বাদে বাকি দুই মহকুমা কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট “নবদ্বীপ জেলা” নামে পুনরায় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে সাময়িকভাবে জেলার নামকরণ নবদ্বীপ করা হলেও অনতিবিলম্বেই সেই নামকরণ বাতিল হয়।





*****************************************
তথ্য সূত্র :
1. http://bengali.indianexpress.com
2. http://abnnews.org
3. http://thekhaskhabor.in
4. সমাজের প্রতিচ্ছবি  

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। 

ভারতীয় জ্যোতির্বিদ : আর্যভট্ট(Aryabhatta) (476– 550)


            র্যভট্ট ছিলেন প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতিরবিদদের মধ্যে একজন। উনার অবদানের জন্য সারা পৃথিবী চিরকাল স্মরণ করবে। উনি গণিত, মহাকাশ নিয়ে গভীর চর্চা করেছিলেন।

     
         আর্যভট্ট ৪৭৬ খিষ্টাব্দে ভারতবর্ষের পাটালিপুএের কুসুমপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তবে তাঁর জন্মস্থান নিয়ে অনেক মতভেদ আছে।

            ঐ সময় ভারতে গুপ্ত যুগের শাসন চলছিল (৩২০-৫৫০খ্রীঃ)। সম্রাট ছিলেন বুদ্বগুপ্ত (শাসন কাল ৪৭৬-৪৯৫ খ্রীঃ)। যেহেতু ঐ সময় সারা দেশে একটা যুগের পরিবর্তন হচ্ছিল, হয়তো সে কারণে আর্যভট্টের জন্মস্থান বা উনার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে একেবারে সঠিক কোন তথ্য আমরা পাই না। হয়তো উনি লিখে গেছেন কিন্তু আমরা তা এখনো খুঁজে পাইনি, কিংবা তা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। যেমন হারিয়ে গেছে উনার লেখা অর্ধ-রাত্রিকা (মধ্যরাত্রি)।

           আর্যভট্টের অন্যতম ভাষ্যকার প্রথম ভাস্করের ভাষ্য অনুযায়ী তার জন্ম হয়েছিল অশ্মকা নামের একটি জায়গায়। প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু রীতিতে এই জায়গাটিকে নর্মদা এবং গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ গুজরাট এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের আশেপাশের একটি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

        যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তা বিশ্লেষণ করে আবার কেউ বলছেন কুসুমপুরা, যা বর্তমানে পাটনা। কেউ বলছেন উনি প্রাচীন কেরালার কডুনগলুর এ জন্ম গ্রহণ করেন। তবে উনি কুসুমপুরাতে ( বর্তমান পাটনা) উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই।


        কিছু তথ্যমতে জানা যায় যে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কুসুমপুরায় গিয়েছিলেন। তিনি কুসুমপুরায়ই বসবাস করতেন, তার ভাষ্যকার প্রথম ভাস্কর এই স্থানকে পাটলিপুত্র  নগরী অভিহিত করেছেন। তিনি কুসুমপুরের আর্যভ নামে খ্যাত ছিলেন। তাঁর কাজের অধিকাংশই তিনি করেছিলেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানেই তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন। শিক্ষাশেষে তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। কেউ কেউ বলেছেন, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবেও আর্যভট্ট দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সে সময়ে নালন্দাতে মহাকাশ বিজ্ঞান পড়ানো হত।

        পৃথিবীর বর্তুলতা ও আহ্নিক গতির কথা তিনিই প্রথম বলেন এবং তার গণিত দিয়ে প্রমাণ করেন। চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমরা সর্বপ্রথম উনার কাছ থেকেই পাই। যখন উনার বয়স মাত্র ২৩ বছর তখন উনার বিখ্যাত বই আর্যভটিয়া প্রকাশিত হয়। বইটি ছিল কবিতার ছন্দে। পরে ১৩ শতাব্দীতে এই বইটি ল্যাটিন ভাষাতে অনুবাদ করা হয়।

         আর্যভট্টের রচিত আর্যভটিয়া। এটি রচিত চার খণ্ডে, মোট ১১৮টি স্তোত্রে। বইটিতে মোট চারটি অধ্যায় ছিল। এই চারটি অধ্যায়‌ হল  দশগীতিকা, গণিতপাদ, কালক্রিয়াপদ ও গোলপাদ। দশগীতিকা, কালক্রিয়া ও গোলপাদ অধ্যায়ে গোলীয় ত্রিকোণমিতি ও জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়াবলী রয়েছে। অন্যদিকে গণিত পাদে আছে পাটীগণিত, বীজগণিত, সমতল ত্রিকোণমিতি, দ্বিঘাত সমীকরণ, প্রথম n সংখ্যক স্বাভাবিক সংখ্যার ঘাতবিশিষ্ট পদ সমূহের বর্গ ও ঘনের সমষ্টি এবং একটি সাইন অণুপাতের সারণি রয়েছ। তাছাড়া এই অধ্যায়ে সে সময়কার জনপ্রিয় জ্যোতিষচর্চার প্রয়োজনীয় ৩৩টি গাণিতিক প্রক্রিয়ার বর্ণনা রয়েছে। গণিতপাদে আর্যভট্ট পাই-এর মান তথা বৃত্তের পরিধির সঙ্গে এর ব্যাসের মান ৩.১৪১৬ হিসাবে চিহ্নিত করেন। তিনি ভারতবর্ষে শূন্যের প্রচলন করেন।


১ম অধ্যায়ঃ দশগিতিকপডা (Gitikapada)
এই অধ্যায়ে উনি সময়ের বিশাল একক নিয়ে আলোচনা করেন। যেমন কল্প, মনবন্ত্রা , যুগ ইত্যাদি।
কল্পঃ হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে ৪৩২ কোটি বছরে ১ কল্প।
মনবন্ত্রাঃ এটি একটি যুগ্ম শব্দ। মনু এবং অন্তরা একত্রে মনবন্ত্রা। ইহা আসলে এক মনু রাজার জীবন কাল। ১৪ মনবন্ত্রা মিলে এক কল্প।
যুগঃ হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে সত্যযুগ ১,৭২৮,০০০ বছর, ত্রেতা যুগ ১,২৯৬,০০০ বছর , দ্বাপর ৮৬৪,০০০ বছর আর কলি যুগ ৪৩২,০০০ বছর। বিন্দু বিন্দু সময় জমে এক মহাকাল তৈরী হয়েছে, ইহাই এই প্রথম অধ্যায়ের বিষয়। মহাকালকে পরিমাপ করার বর্ণনা এখানে পাওয়া যায়।

২য় অধ্যায়ঃ গনিতপডা (Ganitapada)
এই অধ্যায়ে আছে গণিত, পরিমাপ বিদ্যা, ভূগোল , গণিতের সূত্র ইত্যাদি।

৩য় অধ্যায়ঃ কালক্রিয়পডা (Kalakriyapada)
এই অধ্যায়ে সময়ের ক্ষুদ্র হিসাব নিয়ে ব্যাখ্যা আছে। যেমন দিন, সপ্তাহ, বছর ইত্যাদি।
৪র্থ অধ্যায়ঃ গোলপডা(Golapada)
এই অধ্যায়ে আছে গণিত, জ্যামিতি, গ্রহাদির কক্ষপথ, গ্রহণ , পৃথিবীর আকৃতি ইত্যাদির বর্ণনা।

        এই বইটিতে আর্যভট্ট যা ব্যাখ্যা করেন তাইই পশ্চিমী বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০০০ বছর পরে ব্যাখ্যা করেন। আমরা বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় যেহেতু পশ্চিমকেই অনুকরণ করি তাই আমরা পশ্চিমকেই বেশী জানি। তবে গ্রীকরা ঐ সময়ও আর্যভট্টকে খুব কদর করত এমন অনেক তথ্য পাওয়া যায়।


জ্যোতির্বিদ্যায় আর্যভট্টের অবদান:
             আর্যভট্টীয় বইটির গোলপাদ অংশে আর্যভট্ট উদাহরণের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন যে পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। তিনি পৃথিবীর আক্ষিক গতির হিসাবও করেছিলেন। তার হিসেবে পৃথিবীর পরিধি ছিল ৩৯,৯৬৮ কিলোমিটার, যেটা সে সময় পর্যন্ত বের করা যেকোন পরিমাপের চেয়ে শুদ্ধতর (ভুল মাত্র ০.২%)। সৌর জগৎে গ্রহগুলোর কক্ষপথের আকৃতি তার ভাষ্যে ছিল উপবৃত্তাকৃতির, এক বছর সময়কালের প্রায় সঠিক একটি পরিমাপ করেছিলেন, সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সঠিক কারণ উল্লেখ করা এবং তার সময় নির্ধারণ করা। তিনি সৌরজগতের পৃথিবীকেন্দ্রিক নাকি সূর্যকেন্দ্রিক মডেল ব্যবহার করেছিলেন সেটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। B.L. van der Waerden, Hugh Thurston এর লেখায় আর্যভট্টের জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত হিসাব নিকাশের পদ্ধতিকে সরাসরি সূর্যকেন্দ্রিক বলে দাবি করা হয়েছে। Noel Swerdlow অবশ্য এ জন্য B.L. van der Waerden এর প্রত্যক্ষ সমালোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যাখ্যার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে আর্যভট্টের ধারণায় সৌরজগত পৃথিবীকেন্দ্রিকই ছিল। অপর দিকে Dennis Duke এর মতে, আর্যভট্টের কাজের পদ্ধতি সূর্যকেন্দ্রিক ছিল, তবে সেটি আর্যভট্ট লক্ষ করেননি কিংবা জানতেন না।

        আর্যভট্ট সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের হিন্দু পৌরাণিক ধারণার পরিবর্তে প্রকৃত কারণগুলো ব্যাখ্যা করে গেছেন। সেই সাথে তিনি সূর্য গ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়কাল নির্ণয়ের পদ্ধতিও বের করেছিলেন। আর্যভট্ট বলেছিলেন যে চাঁদের আলো আসলে সূর্যের আলোর প্রতিফলনেরই ফলাফল। জ্যোতিষবিদ্যায় তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান হলো বিভিন্ন গ্রহের গতিবিধি, গ্রহনের কারন, পৃথিবীর আহ্নিকগতি ব্যাখ্যা এবং পৃথিবীর গোলকত্বের প্রমাণ করা।

        ভাবতে আশ্চর্য লাগে কপারনিকাসের জন্মের হাজার বছর আগে আর্যভট্ট প্রথম সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্বের অবতারনা করেন। সেই সময় কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই তিনি ধারনা করতে পেরেছিলেন পৃথিবী গোলাকৃতি ও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। চন্দ্র সম্পর্কেও তিনি সঠিক ধারনা দেন।

        আকাশের জ্যোতিষ্ক সমূহের পশ্চিমাভিমুখে গমন সম্পর্কে তিনি একটি চমৎকার বাস্তব উদাহারণ দেন, " পূর্বদিকে গতিযুক্ত কোন নৌকারোহী নদীর দুই তীরের স্থির বৃক্ষরাজিকে যেমন পশ্চিমাভিমুখে যেতে দেখে তদ্রুপ পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে পৃথিবীর আবর্তনের ফলেই একজন পযর্বেক্ষক আকাশের জ্যোতিষ্কসমূহকে পূর্বদিকে উদিত হতে এবং পশ্চিম দিকে অস্তমিত হতে দেখে"।

        গণিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান হলো পাই এর মান বের করা। তিনি চার দশমিক পযর্ন্ত পাই এর মান বের করে। আমরা জানি যে, পাই এর মান এমন একটি সংখ্যা যা আর্কিমিডিসের সময় হতে বর্তমান কম্পিউটার যুগেও সঠিক ভাবে নিণর্য় করা যায় নি। গণিতে তার আরেক অবদান হলো এিকোণমিতির ব্যবহার, এমনকি তাঁর হাতেই বীজগণিতের সূএপাত হয়। প্রচুরক এর গাণিতিক ধারণা তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত। তাঁর যুগে তিনি সমসাময়িক গ্রিক গণিতবিদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন। বর্গমূল, ঘনমূল নির্ণয় প্রণালি, দ্বিঘাত সমীকরনের সমাধান,  সমান্তর শ্রেণীর যোগফল বের করার পদ্ধতি তিনি বের করেন। পরে এসব বিদেশি গণিতবিদের দ্বারা নবরুপ লাভ করে। এিভুজের ক্ষেএফল বের করার পদ্ধতিও তিনিই আবিষ্কার করেন।


 আর্যভট্টের মহান অবদানের জন্য আমরা উনার কাছে চির ঋণী। তাঁর অবদান গুলি এক নজরে :

ক) উনি আমাদের ০ (zero ) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। যদিও ইতিহাসে ভারতীয় মহান গণিতজ্ঞ ব্রহ্মগুপের (জীবনকাল ৫৯৮ – ৬৭০ খ্রীঃ) লেখা বই ব্রহ্মস্পুতসিদ্বান্তে (Brahmasphuṭasiddhanta) প্রথম শূন্যের লেখা পাওয়া যায় , অনেক গণিতজ্ঞ এবং ইতিহাসকার মনে করেন যে আর্যভট্ট উনার ২৩ বছর বয়সে যে বই প্রকাশ করেন তা ব্রহ্মগুপের জীবনকালের আগে আর সেই বইতে বর্ণিত গণিত সূত্র শূন্যের সুন্দর প্রয়োগ আছে।যদিও এটা ঠিক যে অতি প্রাচীন মুনি-ঋষিরা ও শূন্য সম্পর্কে জানতেন। তেমনি ব্যাবলীয়ান সভ্যতা ও শূন্য সম্পর্কে ধারনা রাখতেন।

খ ) আর্যভট্ট ৫ম শতকে পাই (Pie, π ) এর সঠিক মান নির্ধারণ করেন এবং তার সাহায্যে বৃত্ত, ত্রিভুজ এর মান বের করেন। মনে রাখতে হবে তার ১২০০ বছর পর ১৭০৬ খ্রীঃ গণিতবিদ উইলিয়াম জোন্স π এর মান ব্যবহার করেন আর তাকেই π এর জন্মদাতা বলা হয়। কিভাবে আর্যভট্ট ‘পাই’ এর মান বের করে ছিলেন বা বৃত্তের পরিধি মেপে ছিলেন? উনার সূত্র অনুসারে ১০০ এর সাথে ৪ যোগ কর। তাকে ৮ দিয়ে গুন কর। এর সাথে ৬২০০০ যোগ কর। এবার তাকে ২০০০০ দিয়ে ভাগ কর। যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তার সাথে বৃত্তের ব্যাস গুন করলে সদাই বৃত্তের পরিধি পাওয়া যাবে। আর এই সংখ্যাটি হল ৩.১৪১৬। যা বর্তমানে ‘পাই’ এর মান। তেমনি তিনি ত্রিভুজ, বৃত্তের ক্ষেত্রফল বের করার সূত্র বর্ণনা করেন। যা আধুনিক বিজ্ঞান প্রায় ১০০০ বছর পরে বের করে।

গ ) মনে রাখতে হবে তিনি ঐ সময়ে নিজের সূত্র অনুসারে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করে ছিলেন ২৪৮৩৫ মাইল। আধুনিক বিজ্ঞানে পৃথিবীর পরিধি ২৪৯০২ মাইল। অর্থাৎ আর্যভট্টের সংখ্যা থেকে মাত্র ৬৭ মাইল বেশী।

ঘ ) তিনি তাঁর সূত্রের সাহায্যে ৫ম শতকে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারিদিকে ঘুরে এবং ৩৬৫ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আবার নিজের জায়গায় ফিরে আসে। এর প্রায় ৯০০ বছর পর বিখ্যাত নিকোলাস
কোপারনিকাসের সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। শাসক ও ধর্মগুরুদের সিদ্ধান্ত ছিল উল্টা। ফলে উনাকে কারাগারে বন্দী করা হয় এবং তাকে তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন ভাবে সাজা দেওয়া হয়। তিনি তার সিদ্ধান্ত পাল্টান নি। শেষে তাকে বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়।

ঙ ) আর্যভট্ট তার বইতে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে গ্রহরা সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। সূর্যগ্রহণ আর চন্দ্রগ্রহণ শুধু আলো-ছায়ার খেলা।

চ ) তিনি তার সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করেছিলেন যে গ্রহের কক্ষপথ হচ্ছে ডিম্বাকার। যা আধুনিক বিজ্ঞান অনেক পরে জানতে পারে।

ছ ) যখন ত্রিগোনমিতির নাম-গন্ধ ছিল না, তখন তিনি তার সূত্রের সাহায্যে sine, cos এর মান বের করেছিলেন। যাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন অর্ধ-জ্যা(half-chord)। অনেক পরে আধুনিক বিজ্ঞানে ত্রিগোনমিতি আসে।

জ ) আজকেও আমরা যে পঞ্জিকা বা পঞ্চগ্রাম ব্যাবহার করি, তার সূত্র এবং সিদ্ধান্ত আর্যভট্টেরই দান। এমনকি ইরান এবং আফগানিস্তানের জাতীয় ক্যালেন্ডারে আজো আর্যভট্টের সূত্র ব্যবহৃত হয়।

ঝ) এছাড়া ও উনার অনেক সূত্র, সিদ্ধান্ত বর্তমান যুগে বিভিন্ন মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত হয়।

         আর্যভট্টের সুখ্যাতি শুধু ভারতেই নয়, প্রতিটি সভ্য দেশে সম্মানের সাথে তার নাম উচ্চারিত হত।

        এই মহান ভারতীয়কে সম্মান জানাতে ভারতের প্রথম উপগ্রহের নাম রাখা হয় আর্যভট্ট। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এপ্রিল তারিখে কাপুস্টিন ইয়ার থেকে কসমস-3এম লঞ্চ ভেহিকলের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক উৎক্ষেপিত হয় এই যানটি। বিহার সরকার এনাকে সম্মান জানাতে, পাটনাতে উনার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করেন ‘The Aryabhata Knowledge University (AKU)’ । এই মহান ব্যক্তির অনেক লেখা আজো খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তো তা কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তা না হলে আমরা হয়তো আরো অনেক রহস্য জানতে পারতাম। তিনি  ৫৫০ সালে আমাদের ছেড়ে পরলোকগমন করেন।

*****************************************
তথ্যসূত্র:
1. http://riyabutu.com
2. https://ritambangla.com
3. https://bigyan.org.in
4. https://ebela.in
5. https://voboghurekotha.com
6. https://bn.m.wikipedia.org

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।