লেখক:
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।
আইনত, কেবলমাত্র খাদিবস্ত্রেই জাতীয় পতাকা প্রস্তুত করার নিয়ম রয়েছে। ভারতীয় মানক ব্যুরো এই পতাকা উৎপাদনের পদ্ধতি ও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন স্থির করে দেয়। উৎপাদনের অধিকার খাদি উন্নয়ন ও গ্রামীণ শিল্প কমিশনের হাতে ন্যস্ত। এই কমিশন বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীকে উৎপাদনের অধিকার দিয়ে থাকে। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটক খাদি গ্রামোদ্যোগ সংযুক্ত সংঘ জাতীয় পতাকার একমাত্র উৎপাদক।
পতাকার ব্যবহারবিধি "ভারতীয় পতাকাবিধি" ও জাতীয় প্রতীকাদি সংক্রান্ত অন্যান্য আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হয়। পুরনো বিধি অনুযায়ী, স্বাধীনতা দিবস, সাধারণতন্ত্র দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবস ছাড়া সাধারণ নাগরিকেরা পতাকা উত্তোলন করতে পারতেন না। ২০০২ সালে, এক নাগরিকের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ নাগরিকদের জাতীয় পতাকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে পতাকাবিধি সংস্কারের নির্দেশ দেন। সেই মতো ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট পতাকাবিধি সংস্কার করে কয়েকটি সীমিত ক্ষেত্রে জাতীয় পতাকার ব্যবহার অনুমোদিত করে। ২০০৫ সালে পতাকাবিধি পুনরায় সংশোধন করে কয়েকটি বিশেষ ধরনের বস্ত্র ব্যবহারের অতিরিক্ত ব্যবস্থা করা হয়।
নকশা:
নিচে বিভিন্ন বর্ণ মডেল অনুসারে ভারতীয় পতাকার সম্ভাব্য রংগুলির বর্ণনা দেওয়া হল। গেরুয়া, সাদা, সবুজ ও নীল – এই চারটি রং পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এটিকে সিএমওয়াইকে বর্ণ মডেল; ডাই রং ও প্যান্টন সমসংখ্যা অনুযায়ী এইচটিএমএল আরজিবি ওয়েব রং (হেক্সাডেসিম্যাল নোটেশন) অনুযায়ী বিভক্ত করা হল।
সর্বোচ্চ ব্যান্ডের সরকারি (সিএমওয়াইকে) মূল্য হল (0,50,90,0) – এটি কমলা রঙের অনুরূপ – যার সিএমওয়াইকে = (0,54,90,0)। প্রকৃত গাঢ় গেরুয়ার সিএমওয়াইকে মূল্য যথাক্রমে (4, 23, 81, 5)) ও (0, 24, 85, 15))। পতাকাটির নকশা প্রস্তুত করেন পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়া।
প্রতীক:
স্বাধীনতাপ্রাপ্তির কয়েকদিন পূর্বে বিশেষভাবে গঠিত গণপরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে ভারতের জাতীয় পতাকাকে সব দল ও সম্প্রদায়ের নিকট গ্রহণযোগ্য করে হতে হবে। এই কারণে, অশোকচক্র সম্বলিত গেরুয়া, সাদা ও সবুজ ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয়। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, যিনি পরবর্তীকালে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, তিনি গৃহীত পতাকার প্রতীকতত্ত্বটি ব্যাখ্যা করে নিম্নলিখিত ভাষায় তার গুরুত্ব বর্ণনা করেন:
“ | ভাগোয়া বা গেরুয়া রঙ ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতীক। আমাদের নেতৃবৃন্দকে পার্থিব লাভের প্রতি উদাসীন ও আপন আপন কাজে যত্নবান হইতে হইবে। মধ্যস্থলে সাদা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বভাবের পথপ্রদর্শক সত্যপথ আলোর প্রতীক। সবুজ মৃত্তিকা তথা সকল প্রাণের প্রাণ উদ্ভিজ্জ জগতের সহিত আমাদের সম্বন্ধটি ব্যক্ত করিতেছে। সাদা অংশের কেন্দ্রস্থলে অশোকচক্র ধর্ম অনুশাসনের প্রতীক। সত্য ও ধর্ম এই পতাকাতলে কর্মরত সকলের নিয়ন্ত্রণনীতি হইবে। এতদ্ভিন্ন, চক্রটি গতিরও প্রতীক। স্থবিরতায় আসে মৃত্যু। জীবন গতিরই মধ্যে। পরিবর্তনকে বাধাদান ভারতের আর উচিত হইবে না, তাহাকে সম্মুখে অগ্রসর হইতে হইবেই। এই চক্রটি শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের গতিশীলতার প্রতীক। | ” |
পতাকার সম্মান:
ভারতীয় আইন অনুসারে জাতীয় পতাকার ব্যবহার সর্বদা "মর্যাদা, আনুগত্য ও সম্মান" ("dignity, loyalty and respect") সহকারে হওয়া উচিত। "প্রতীক ও নাম (অপব্যবহার রোধ) আইন, ১৯৫০" ("The Emblems and Names (Prevention of Improper Use) Act, 1950") অনুসারে জারি করা "ভারতীয় পতাকা বিধি – ২০০২" ("Flag Code of India – 2002") পতাকার প্রদর্শনী ও ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশিকা বহন করে। সরকারি বিধিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকা কখনই মাটি বা জল স্পর্শ করবে না; এটিকে টেবিলক্লথ হিসেবে বা কোনো প্লাটফর্মের সম্মুখে আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না; জাতীয় পতাকা দিয়ে কোনো মূর্তি, নামলিপি বা শিলান্যাস প্রস্তর আবরিত করা যাবে না ইত্যাদি। ২০০৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা বস্ত্র, উর্দি বা সাজপোষাক হিসেবে ব্যবহার করা যেত না। ২০০৫ সালের ৫ জুলাই সরকার পতাকাবিধি সংশোধন করে বস্ত্র বা উর্দি হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করেন। যদিও নিম্নাবরণ বা অন্তর্বাস হিসেবে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এছাড়াও বালিশের কভার বা গলায় বাঁধার রুমালে জাতীয় পতাকা বা অন্য কোনো প্রতীকচিহ্ন অঙ্কণ করা নিষিদ্ধ। ইচ্ছাকৃতভাবে উলটো অবস্থায় পতাকা উত্তোলন, কোনো তরলে ডোবানো বা উত্তোলনের আগে ফুলের পাপড়ি ছাড়া অন্য কিছু তাতে বাঁধা বা পতাকাগাত্রে কোনো কিছু লেখাও নিষিদ্ধ।
পতাকার ব্যবহার:
জাতীয় পতাকার ব্যবহার ও প্রদর্শনী সংক্রান্ত একাধিক প্রথা অনুসৃত হয়ে থাকে। বহির্দ্বারে আবহাওয়া ব্যতিরেকে সূর্যোদয়ের সময় পতাকা উত্তোলিত হয় এবং সূর্যাস্তের সময় তা নামিয়ে ফেলা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি ভবনে রাতেও জাতীয় পতাকা উড্ডয়নের রীতি আছে।
জাতীয় পতাকা কখনই উলটো অবস্থায় বর্ণনা করা, প্রদর্শিত করা, বা উত্তোলন করা অনুচিত। প্রথা অনুসারে পতাকাটিকে ৯০ ডিগ্রির বেশি আবর্তিত করা যায় না। কোনো ব্যক্তি যেন পতাকাকে উপর থেকে নিচে ও বাঁদিক থেকে ডান দিকে বইয়ের পাতার মতো "পড়তে" পারেন এবং আবর্তিত হওয়ার পরও যেন এই বৈশিষ্ট্যের ব্যতয় না হয়। ছেঁড়া বা নোংরা অবস্থায় পতাকার প্রদর্শনী অপমানজনক। পতাকাদণ্ড বা উত্তোলন রজ্জুর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য; এগুলিকেও যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়।
তথ্যসূত্র:
1. www.wikipedia.org
তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org
তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org
তথ্যসূত্র: www.wikipedia.org
তথ্যসূত্র:
1. www.wikipedia.org