Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Saturday 11 July 2020

শান্তিপুরের স্বাধীনতার ইতিহাস


               ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিল শান্তিপুর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নদিয়া জেলার এইরকম একটি প্রাচীন শহর, সংস্কৃতির পীঠস্থান ও হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র দেশভাগের সময় চলে গিয়েছিল পাকিস্তানে। আমরা সবাই জানি ব্রিটিশরা যাওয়ার সময় আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে  দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছিল।


                ১২ অগাস্ট, ১৯৪৭ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ঘোষণা করলেন, ১৫ অগাস্ট থেকে স্বাধীন হয়ে যাবে ভারত।
১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট শান্তিপুরবাসীও জানতো যে রানাঘাট মহকুমার অন্তর্গত শান্তিপুর স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে সেই ধারণা অনুসারে ১৪ ই আগস্ট শান্তিপুরের বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলনের এবং উৎসব এর প্রস্তুতি চলে এবং অনেক জায়গায় তোরণও নির্মাণ করা হয়। পথঘাট সাজানো হয়। কিন্তু ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাত্রে বেতার খবরের প্রকাশ পাই শান্তিপুর সহ নদীয়া জেলা পাকিস্তানের অংশে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিনামেঘে বজ্রপাতের মত শান্তিপুরবাসীর অন্তরে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরদিন ১৫ ই আগস্টের সকালে শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যায় , ফলে শান্তিপুর অঘোষিত ভাবেই পাকিস্তান হয়ে যায়।

           গোল বাঁধে বাংলাকে নিয়ে। তার কারণ, দেশভাগ-পরবর্তী মানচিত্র তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন যে সিরিল র‍্যাডক্লিফ, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অন্তরভুক্ত করেছিলেন মালদা এবং নদীয়ার মতো বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত জেলা। এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের বৈচিত্র্য এবং জটিল সামাজিক ও ধর্মীয় সমীকরণ সম্বন্ধে তাঁর অজ্ঞতা, এবং কিছুটা দায়ী ছিল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ইংল্যান্ডে ফেরার তাড়া, যার ফলে তিনি ক্রমাগত দ্রুত দেশভাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছিলেন র‍্যাডক্লিফের ওপর। ফলস্বরূপ ব্রিটিশ সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের শিকার হতে হয়  শান্তিপুরকে।

         এই ভাবে শোকের আবহে শান্তিপুরবাসীর তিনটে দিন কাটে যায়। কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হন শান্তিপুরবাসী। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনৈতিক নেতা এবং নদীয়ার রাজপরিবারের সদস্যরা  নদিয়া জেলার  পূর্ব পাকিস্তানের অন্তরভুক্তির প্রতিবাদ নিয়ে হাজির হন কলকাতায় ব্রিটিশ প্রশাসনের দরবারে। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কানে সে খবর পৌঁছয়। তড়িঘড়ি তিনি মানচিত্র বদলের আদেশ দেন ভাইসরয়কে, যাতে হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি ভারতেই থাকে, এবং মুসলমান অধ্যুষিত জেলা যায় পূর্ব পাকিস্তানে। এই প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৭ অগাস্ট গভীর রাতে।


          পন্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র মহাশয়, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও জওহরলাল  মহাশয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় নদীয়ার শান্তিপুর ওপার বাংলা থেকে বাদ দিয়ে ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়।


        অবশেষে ১৭ই আগস্ট মধ্যরাত্রে এক বেতার বার্তার মাধ্যমে জানা যায় যে শান্তিপুর স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৮ ই আগস্ট নদিয়ার শান্তিপুর পুরোপুরিভাবে পরাধীন মুক্ত হয়। ঐ দিন সকালে শান্তিপুরের কবি শ্রী করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় নেতৃত্বে শান্তিপুর ডাকঘর মোড়ে (যেটি বর্তমানে নেতাজি মোড় হিসেবে পরিচিত) সেখানে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে 1947 সালের ওই জাতীয় পতাকাটি আজও।

        এখানে জেনে রাখা প্রয়োজন যে , ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে জেলা হিসেবে নদীয়ার প্রথম আত্মপ্রকাশ সে সময় বর্তমান হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলার পাঁচটি মহকুমা : – কুষ্টিয়া, মেহেরপুর,চুয়াডাঙ্গা,কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট পূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ আগস্ট ওই প্রথম তিনটি মহকুমা বাদে বাকি দুই মহকুমা কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট “নবদ্বীপ জেলা” নামে পুনরায় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে সাময়িকভাবে জেলার নামকরণ নবদ্বীপ করা হলেও অনতিবিলম্বেই সেই নামকরণ বাতিল হয়।





*****************************************
তথ্য সূত্র :
1. http://bengali.indianexpress.com
2. http://abnnews.org
3. http://thekhaskhabor.in
4. সমাজের প্রতিচ্ছবি  

লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। 

No comments:

Post a Comment