Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Friday, 10 July 2020

বজ্রপাত(Lightning)

          জ্রপাত প্রকৃতির সবচেয়ে ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্য গুলোর মধ্যে একটি। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার প্রায় সমান মাত্রার স্ফুলিঙ্গ আর ভয়াবহ গর্জন বহুকাল ধরেই মানুষের পিলে চমকানোর কাজটি দায়িত্বের সাথে পালন করে আসছে।

      বজ্রপাতের এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের মনে বিজ্ঞানের আরেকটি চিরন্তন রহস্যের জন্ম দেয়, বজ্রপাতের কারণ কি? ছোটবেলায় এই প্রশ্নের আমরা উত্তর পেয়েছি এভাবে মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাত নিয়ে নানা ধরনের ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, এটা সম্পূর্ণই প্রাকৃতিক ব্যাপারে। যেখানে মানুষের কোন হাত নেই।

         আর্দ্র ও উত্তপ্ত আবহাওয়ায় বায়ু যখন দ্রুতগতিতে ঠান্ডা হয় তখন বাতাসের জলীয় বাষ্পে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। বজ্রমেঘের মধ্যে বাতাসের দ্রুতগতির আলোড়নের ফলে জলীয়বাষ্পে একই সময়ে একই সাথে শিশির বিন্দু, বৃষ্টিকণা ও তুষারকণার সৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টিকণা ও তুষারকণার দ্রুত সংঘর্ষে স্থির বিদ্যুতের সৃষ্টি হয়। তবে ঘটনাটি যেহেতু বিশাল মেঘমালার মধ্যে ঘটে, তাই এর ফ্রিকোয়েন্সি, পরিমাণ এবং সংঘর্ষে সৃষ্ট শব্দের পরিমাণও অনেক বেশি হয়। এই বিদ্যুৎ প্রায় ৩০ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপ উৎপন্ন করে। তাই এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এত বেশি হয়।


বজ্রপাতের কারণঃ

            বায়ুমন্ডলের উপরের অংশে নিচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, নিচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়। এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড বলে। অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট  জলকনা থাকে। আর উপরে উঠতে উঠতে জলের  পরিমান বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ ভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে জলের  পরিমান যখন ৫ মিঃমিঃ এর বেশি হয়, তখন জলের  অণুগুলো আর পারস্পারিক বন্ধন ধরে রাখতে পাড়ে না। তখন এরা আলাদা হয়ে যায়। ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের এর সৃষ্টি হয়। আর এ আধানের মান নিচের অংশের চেয়ে বেশি হয়। এরকম বিভব পার্থক্যের কারণেই ওপর হতে নিচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন হয়। এ সময় আমরা আলোর ঝলকানি বা ব্রজপাত দেখতে পাই।


            জলচক্রের নিয়মে জলাধারের জল বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘ আকারে আকাশে জমা হয়। এই মেঘ-ই হল বজ্রপাতের ব্যাটারি। বজ্রপাতের জন্য দায়ী মেঘ বৈদ্যুতিক চার্জের আধারের মত আচরণ কর। যার উপরের অংশ পজিটিভ এবং নিচের অংশ নেগেটিভ চার্জে চার্জিত থাকে। মেঘ কিভাবে চার্জিত হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে বেশ মতভেদ থাকলেও সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মতবাদ হচ্ছে, জলচক্রে জলকণা যখন ক্রমশ উর্ধ্বাকাশে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচের দিকের বেশি ঘনীভূত বৃষ্টি বা তুষার কণার সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়।

        যার ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা অনেক বাষ্প কণা বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায়। এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের তলদেশে জমা হয় এবং ইলেকট্রন হারানো পজিটিভ চার্জিত বাষ্পকণা মেঘের একেবারে উপরপৃষ্ঠে চলে যায়। যার ফলশ্রুতিতে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটর এর বৈশিষ্ট্য লাভ করে। মেঘের দুই স্তরে চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের শক্তি মেঘে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।

        এভাবে বাষ্পকণা ও মেঘে সংঘর্ষ চলতে চলতে মেঘের উপরে এবং নিচে যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটাই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে তার বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থানরত ইলেকট্রন গুলো ভূপৃষ্ঠের আরো গভীরে চলে যায়। ফলাফলস্বরূপ ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এখন বজ্রপাতের জন্য শুধু যা প্রয়োজন তা হল বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য সামান্য একটু বাহক বা কন্ডাক্টর। কিন্তু আমরা জানি বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী, তাহলে বজ্রপাত কিভাবে হবে?


        মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয়। যাকে বলে Dielectric Breakdown। মেঘে অবস্থিত বিদ্যুতক্ষেত্র যখন যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয়(প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০,০০০ ভোল্ট), তখন তার আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায়। এই আয়নিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত। বাতাস আয়নিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যুৎ চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়।

বজ্রপাতের সময় শব্দ উৎপন্ন হয় কেন?
            Discharge হওয়ার সময় বাতাসের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, একে বলা হয় Air breakdown । এসময় বাতাসের যে চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তার তাপমাত্রা প্রায় 27000°c (যা সূর্যের তাপমাত্রার থেকেও বেশি) এ উন্নতি হয় এবং বাতাসের চাপ স্বাভাবিক চাপ থেকে ১০-১০০ গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ চাপ ও তাপমাত্রায় পৌছাতে সময় লাগে মাত্র এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের এক ভাগ। এত কম সময়ে তাপমাত্রা ও চাপের এত ব্যাপক পরিবর্তন চারপাশে বায়ু মণ্ডলকে প্রচণ্ড গতিতে (বিষ্ফোরণের মত) সম্প্রসারিত করে। এ সময়ে যে শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন হয় সেটাই আমার শুনতে পাই।


বজ্রপাতে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ :
            ভূমি থেকে 3 মাইল দূরত্বে বজ্রপাত গড়ে এক বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন করে। একটি ১০০ ওয়াট বাল্ব ১ সেকেন্ড জ্বালাতে শক্তি খরচ হয় ১০০ জুল। সে হিসেবে, ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি দিয়ে ওই ঐ বাল্বকে 1160 দিন বা প্রায় 39 মাস অবিরাম জ্বালানো যাবে । বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপক  একক "কিলোওয়াট-আওয়ার" হিসেবে এ শক্তি 27840 কিলোওয়াট-আওয়ার। ধরা যাক একটি  পরিবার প্রতি মাসে গড়ে প্রায় 100-150 ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তার মানে একটি বজ্রবিদ্যুৎ এর শক্তি জমা করতে পারলে একটি  পরিবার 185 মাস বা প্রায় 15 বছর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।

কেন বাজ পড়ে

• কোনও এলাকায় তাপমাত্রা বেশই থাকলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়।
• এই মেঘ উচ্চতায় অনেক বেশি হয়।
• মেঘের ভিতর জলীয়বাস্প তথা জলাকনার তীব্রবেগে ঘুরতে থাকায় তড়িতকণা তৈরি হয়।
• দুটি বিপরীত তড়িতকণা মিলে গেলেই বজ্রপাত এবং বিদ্যুত ঝলকানি তৈরি হয়।

আসুন জেনে নেওয়া যাক  বজ্রপাতের সময় আমরা কি ভাবে বাঁচতে পারি। বজ্রপাতের আমাদের বাঁচার উপায়গুলো:

৹ বজ্রপাতের সময় উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পর্শের আশঙ্কা বেশি থাকে। এসময় গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। ফাঁকা জায়গায় যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। তাই এসব স্থান এড়িয়ে চলুন।

৹ ঘন ঘন বজ্রপাতের সময় খোলা বা উঁচু জায়গায় না থেকে  দালানের নিচে আশ্রয় নিন। বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছে উঁকিঝুঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।

৹ বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ, জানালার গ্রিলসহ যেকোন ধাতব পদার্থ সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। এ সময় মোবাইল ও ল্যান্ডফোন ব্যবহার থেকেও বিরত থাকুন।

৹ বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব ধরনের যন্ত্রপাতি এড়িয়ে চলুন। বজ্রপাতের আভাস পেলে যন্ত্রপাতির প্লাগ খুলে রাখুন। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও স্পর্শ করা ঠিক হবে না।

৹ বজ্রপাতের সময় গাড়িতে থাকলে দ্রুত বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করুন। যদি প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়, তাহলে গাড়ি কোনও গাড়িবারান্দা বা পাকা ছাউনির নিচে রেখে অপেক্ষা করুন।

৹ প্রতিটি বাড়ি বা বিল্ডিং এ বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন। খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান।

৹ কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সাবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান। ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে অতি জরুরী প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন এবং প্লাষ্টিক বা কাঠের হাতলযক্ত ছাড়া ব্যবহার করুন।

৹ বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন। বজ্রপাতে আহতদের বৈদ্যুতিক শকের মত করেই চিকিৎসা করতে হবে।

৹ কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন। নৌকা নিয়ে মাছ ধরার ক্ষেত্রে বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকায় ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।

৹ বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়ীটিকে নিয়ে কোন কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন অথবা গাড়ীতে থেকে নেমে নিরাপদ আশ্রয়ে যান।

৹ অনাকাঙ্খিত বজ্রপাত থেকে বাড়িঘর রক্ষার জন্য বজ্র নিরোধক দন্ড ব্যবহার করতে হবে। বাড়ির ছাদের চেয়ে উঁচু করে ধাতব দন্ডের সাহায্যে মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত পুতে রাখা হয় এবং এই দন্ডকেই বজ্র নিরোধক বলে।

            এছাড়া বজ্রপাতের সময় রাস্তায় চলাচলেও খেয়াল রাখতে হবে। কেউ আহত হয়ে থাকলে দেরি না করে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট কাউকে ঘটনার সময় খালি হাতে স্পর্শ করলে নিজেও ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। যদি একান্ত বের হতেই হয়, রাবারের গামবুট এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে।

            কীভাবে বোঝা যাবে বাজ পড়ে কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন কিনা? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সাধারণত আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন অংশে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন থাকে। এমনকী পোশাকও জ্বলে যেতে পারে। বাজ পড়ে মূলত মানুষ কার্ডিয়াক বা রেসপিরেটরি অ্যারেস্ট হয়ে মারা যান বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফলে কেউ বাজ পড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নাড়িস্পন্দন পরীক্ষা করে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু করার চেষ্টা করতে হবে।

            বজ্রপাত এর কোন পূর্বাভাস বিজ্ঞান আজও দিতে পারেনি। তবে আবহওয়াবিদরা বলেন, বেশি গাছপালা থাকলে বজ্র গাছের মধ্যে পড়লে জনমানুষের ক্ষতি কম হয়। বিষয়টি যে পরিবেশ বিপর্যয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কালবৈশাখীর সময় বজ্রপাতে প্রতি বছরই অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। তবে ইদানিং এর মাত্রা চরম আকারে পৌঁছেছে। বজ্রপাতকে এখনো আলাদা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। আশঙ্কার বিষয় এই যে, বজ্রপাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। প্রতি বছর অন্তত ২০০০ মৃত্যু হয় বজ্রপাতের কারণে। ২০০৫ সাল থেকে বজ্রপাতে ভারতে প্রাণহানির  পরিসংখ্যান অন্তত তাই বলছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য তুলে ধরে একটি প্রতিবেদনে এমনই দাবি করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সরকারি হিসেবই বলছে, অন্য কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তুলনায় প্রতি বছর এ দেশে বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হয়।

            আতঙ্কের কারণ অবশ্য আরও রয়েছে। জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। তার জন্য অবশ্য মানুষই অনেকটা দায়ী। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা সায়েন্স-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়, আগামী দিনে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বজ্রপাতের সংখ্যাও। পৃথিবীর তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে বাজ পড়ার সম্ভাবনা ১২ শতাংশ হারে বেড়ে যাবে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

        ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহকারী অধ্যাপক ও লরেন্স বার্কলে জাতীয় গবেষণাগারের ফ্যাকাল্টি বিজ্ঞানী ডেভিড রম্প বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স’ এ প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি সম্পর্কযুক্ত। ২০০০ সালে যেখানে বছরের একটি নির্ধারিত সময়ে দুইবার বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছে, সেখানে এখন ওই একই সময়ে তিনবার বজ্রপাত হচ্ছে। তাঁর হিসেবে, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১২ শতাংশ। জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অত্যধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধির কারণে গোটা বিশ্বেই বজ্রপাত বাড়ছে।

        বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বায়ুদূষণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন, মোবাইল-ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছেন। তাছাড়া গ্রামে অধিকাংশ বাড়ি টিনের তৈরি হওয়ায় বজ্রপাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ইদানীং ভবন নির্মাণের সময় বজ্রপাত-সহায়ক স্থাপনার ব্যবহারও কমে এসেছে।

*****************************************
তথ্যসূত্র:
1. https://ebela.in
2. বাংলাদেশ প্রতিদিন
3. https://dailyhunt.in
4. https://www.anandabazar.com
5. www.eisamay.indiatimes.com
6. https://bn.m.wikipedia.org
7. কালের কণ্ঠ


লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

No comments:

Post a Comment