সাইক্লোন সমার্থক শব্দ : ঘূর্ণিঝড়। ইংরেজি Cyclone। নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বিশেষ। এই জাতীয় ঘূর্ণিঝড়কে সাধারণভাবে বলা হয় সাইক্লোন (Cyclone)। গ্রিক kyklos শব্দের অর্থ হলো বৃ্ত্ত। এই শব্দটি থেকে উৎপন্ন শব্দ হলো kykloun। এর অর্থ হলো- আবর্তিত হওয়া। এই শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয়েছে kyklōma । এই শব্দের অর্থ হলো- চক্র বা কুণ্ডলিত। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ-ভারতীয় আবহাওয়াবিদ হেনরী পিডিংটন তাঁর সামুদ্রিক দুর্যোগ বিষয়ক গ্রন্থ, The Sailor's Horn-book for the Law of Storms-এতে Cyclone শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। বাংলায় সাইক্লোন শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইংরেজি থেকে।
সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্ট যে কোন ঘূর্ণিঝড়কেই সাধারণভাবে সাইক্লোন বলা হয়। ভারত মহাসাগরীয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং আটলান্টিক মহাসাগরীয় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়কে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়। এর ভিতরে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কেই বিশেষভাবে সাইক্লোন বলা হয়। এই ঝড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড-এর উপকূলীয় অঞ্চল।
অন্যদিকে আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় টাইফুন।
অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই− এই ঝড়ের সময় বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। উল্লেখ্য কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল বাতাস ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়। এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয় ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ (Wizard's Eye)। মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে 'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক গোলার্ধের বিচারে দুই রকম হয়। এই জাতীয় ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই ঝড়ে পরিণত হয় না। ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে তখন ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় তিন রকমের হতে পারে। এই রকম তিনটি হলো− সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এবং সাইক্লোন। স্থলভূমিতে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডো হয়। কিন্তু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় সমূদ্রপৃষ্ঠে।
সাইক্লোনের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ মূখ্য ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ উন্নীত হলে এবং তা সমুদ্রের উপরিতল থেকে প্রায় ৫০ মিটার তা বজায় থাকলে, সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই সময় এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আর্দ্র বায়ু উপরে দিকে উঠে যায়। আর এই শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য উভয় মেরু অঞ্চল থেকে বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে, এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট বায়ু প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
সাইক্লোনের কেন্দ্রস্থলকে চোখ বলা হয়। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসের গতি থাকে ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার ভিতরে। কিন্তু এর বাইরে যে ঝড়ো দেওয়াল তৈরি হয়। তাতে ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে বাতাসের গতি ২৫০-৩০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। এই বাতাসের সাথে থাকে অবিরাম প্রচুর বৃষ্টিপাত। একই সাথে সমুদ্র থেকে উত্থিত দেওয়াল সদৃশ্য জলোচ্ছ্বাস। এই জলোচ্ছ্বাস ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্রের জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাস হলে, তা ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করে।
সাইক্লোন স্থলভাগে আঘাত না হানা পর্যন্ত ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। স্থলভাগে আঘাত হানার পর অল্প সময়ের ভিতর সাইক্লোন দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের দ্বারা আক্রান্ত স্থানটি একটি বিশাল বিধ্বংস অঞ্চলে পরিণত হয়।
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অঞ্চল ও সময়কাল:
ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন অঞ্চল হিসেবে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলিকে সাতটি বেসিন বা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও হুঁশিয়ারী প্রদানের জন্য বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগ কাজ করছে। নিচে সাতটি বেসিনের নাম দেয়া হলঃ
1.উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
2.উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর
3.উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর
4.উত্তর ভারত মহাসাগর (প্যানেল দেশসমূহঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা,মায়ানমার ও থাইল্যান্ড আবহাওয়া বিভাগ)
5.দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর
6.দক্ষিণ পূর্ব ভারত মহাসাগর
7.দক্ষিণ পশ্চিম ভারত মহাসাগর
প্রতিটি বেসিনে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মৌসুম ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম শুরু হয় জুনের ১ তারিখ এবং শেষ হয় নভেম্বর ৩০ তারিখে। বাংলাদেশ উপকূলে মূলতঃ বর্ষাকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে বর্ষাকালেও বিক্ষিপ্তভাবে ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণীবিভাগ:
সাতটি বেসিনেই বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়কে কতগুলো শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আটলান্টিক এলাকার জন্য, প্রাথমিক অবস্থায় বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-র নিচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ (Tropical depression) বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে এটিকে একটি নাম দেয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি. ব্যবধানে এটিকে একটি ঝড় বা Tropical storm বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন এটি হারিকেন পর্যায়ে উন্নীত হয়। বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী হারিকেনকে আবার এক থেকে পাঁচ মাত্রার ৫ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আবিষ্কারকের নামানুসারে এটি সাফির-সিম্পসন স্কেল নামে পরিচিত।
বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।
অন্যদিকে আটলান্টিক মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়কে বলা হয় টাইফুন।
অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতোই− এই ঝড়ের সময় বাতাস একটি কেন্দ্র তৈরি করে প্রবল বেগে আবর্তিত হয়। উল্লেখ্য কোনো অঞ্চলের বাতাস অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, ওই অঞ্চলের বাতাস উষ্ণ এবং আর্দ্র অবস্থায় উপরের দিকে উঠে যায়। ফলে ওই স্থানে বায়ুর শূন্যতার সৃষ্টি। এই শূন্যস্থান পূর্ণের জন্য পার্শ্বর্তী অঞ্চল থেকে শীতল বাতাস ছুটে আসে। এর ফলে ওই অঞ্চলে একটি বায়ুর ঘূর্ণি তৈরি হয়। এই বিচারে পৃথিবী এবং বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহেও ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। নেপচুনের এই জাতীয় ঝড়কে বলা হয় জাদুকরের চোখ (Wizard's Eye)। মঙ্গল গ্রহের ঘূর্ণিঝড়কে 'গ্রেট রেড স্পট' বলা হয়। পৃথিবীতে এই ঝড়ের ঘূর্ণন-দিক গোলার্ধের বিচারে দুই রকম হয়। এই জাতীয় ঘটনা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বৎসরেই ঘটে। কিন্তু তার অধিকাংশই ঝড়ে পরিণত হয় না। ঘূর্ণিবায়ুর কেন্দ্রের যখন বাতাসের গতির যখন ২৫-থেকে বেশি থাকে তখন ঝড়ের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় তিন রকমের হতে পারে। এই রকম তিনটি হলো− সাধারণ ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো এবং সাইক্লোন। স্থলভূমিতে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডো হয়। কিন্তু সাইক্লোন সৃষ্টি হয় সমূদ্রপৃষ্ঠে।
সাইক্লোনের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিম্নচাপ মূখ্য ভূমিকা রাখে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২৬-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস-এ উন্নীত হলে এবং তা সমুদ্রের উপরিতল থেকে প্রায় ৫০ মিটার তা বজায় থাকলে, সাইক্লোন তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই সময় এই অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ আর্দ্র বায়ু উপরে দিকে উঠে যায়। আর এই শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য উভয় মেরু অঞ্চল থেকে বাতাস নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রভাবে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির (coriolis force) কারণে, এ বায়ু সোজাসুজি প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধে সৃষ্ট বায়ু প্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। নিরক্ষরেখার উপর এ শক্তির প্রভাব শূন্য। কাজেই, এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূলে থাকলেও নিরক্ষরেখার ০ ডিগ্রী থেকে ৫ ডিগ্রীর মধ্যে কোন ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায় না। সাধারণত, নিরক্ষরেখার ১০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রীর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
সাইক্লোনের কেন্দ্রস্থলকে চোখ বলা হয়। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও বাতাসের গতি থাকে ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার ভিতরে। কিন্তু এর বাইরে যে ঝড়ো দেওয়াল তৈরি হয়। তাতে ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে বাতাসের গতি ২৫০-৩০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। এই বাতাসের সাথে থাকে অবিরাম প্রচুর বৃষ্টিপাত। একই সাথে সমুদ্র থেকে উত্থিত দেওয়াল সদৃশ্য জলোচ্ছ্বাস। এই জলোচ্ছ্বাস ঝড়ের ক্ষমতা অনুসারে প্রায় ১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সমুদ্রের জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাস হলে, তা ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করে।
সাইক্লোন স্থলভাগে আঘাত না হানা পর্যন্ত ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। স্থলভাগে আঘাত হানার পর অল্প সময়ের ভিতর সাইক্লোন দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের দ্বারা আক্রান্ত স্থানটি একটি বিশাল বিধ্বংস অঞ্চলে পরিণত হয়।
ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অঞ্চল ও সময়কাল:
ঘূর্ণিঝড় উৎপন্ন অঞ্চল হিসেবে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলিকে সাতটি বেসিন বা অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও হুঁশিয়ারী প্রদানের জন্য বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগ কাজ করছে। নিচে সাতটি বেসিনের নাম দেয়া হলঃ
1.উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর
2.উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর
3.উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর
4.উত্তর ভারত মহাসাগর (প্যানেল দেশসমূহঃ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা,মায়ানমার ও থাইল্যান্ড আবহাওয়া বিভাগ)
5.দক্ষিণ পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর
6.দক্ষিণ পূর্ব ভারত মহাসাগর
7.দক্ষিণ পশ্চিম ভারত মহাসাগর
প্রতিটি বেসিনে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মৌসুম ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর আটলান্টিকে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম শুরু হয় জুনের ১ তারিখ এবং শেষ হয় নভেম্বর ৩০ তারিখে। বাংলাদেশ উপকূলে মূলতঃ বর্ষাকালের শুরুতে এপ্রিল-মে মাসে এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা দেয়। তবে বর্ষাকালেও বিক্ষিপ্তভাবে ঘূর্ণিঝড় হতে দেখা যায়।
ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণীবিভাগ:
সাতটি বেসিনেই বাতাসের গতিবেগ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়কে কতগুলো শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। আটলান্টিক এলাকার জন্য, প্রাথমিক অবস্থায় বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-র নিচে থাকে, তখন একে শুধু নিম্নচাপ (Tropical depression) বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি.-এ উন্নীত হলে এটিকে একটি নাম দেয়া হয় এবং ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. থেকে ১১৭ কি.মি. ব্যবধানে এটিকে একটি ঝড় বা Tropical storm বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন এটি হারিকেন পর্যায়ে উন্নীত হয়। বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী হারিকেনকে আবার এক থেকে পাঁচ মাত্রার ৫ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আবিষ্কারকের নামানুসারে এটি সাফির-সিম্পসন স্কেল নামে পরিচিত।
বাতাসের তীব্রতা এবং ধ্বংসক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতে ঘূর্ণিঝড়কে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।
তথ্যসূত্র:
1. www.wikipedia.org
লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।
© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি
করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা
যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা
নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।
No comments:
Post a Comment