Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Wednesday 1 March 2023

 

ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। কারণ ভারত বহুভাষাভাষীর দেশ। সংবিধানে সমস্ত ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে সমান অধিকার এবং সম্মান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই শুধু একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সকল ভারতবাসীর ভাষা বলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সকল ভারতবাসী একি ভাষার মানুষ নন। আর একজনের ভাষাকে আর একজনের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা সংবিধান পরিপন্থী। কাজেই ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। এ প্রসঙ্গে বলি, অনেকেই হয়তো জানেন না যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেরও কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই।

কিন্তু একটা দেশ চালাতে হলে তো একটা ভাষা দরকার। স্বাধীনতার সময় গান্ধিজীর কথায় শেষ কথা ছিল, তিনি হিন্দি ভাষাকে সবার উপর চাপানোর পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু সবাই মিলে এটাই ঠিক হয়েছিল যে একটা দেশীয় ভাষাকে কেন্দ্র সরকারের ভাষা বলে গ্রহণ করা হবে এবং যতদিন না সমস্ত ভারতবাসী হিন্দি ভাষাকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছে, ততদিন ইংরেজি ভাষা অহিন্দি ভাষীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হবে। যে কারণে সরকার টিভি রেডিও এবং সিনেমার মাধ্যমে হিন্দি ভাষার প্রচার এবং প্রসারের চেষ্টা করে এসেছে। বর্তামানে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হিন্দি ভাষীরা অহিন্দি ভাষীদের তুলনায় নিজেদের বেশি কিছু ভাবতে শুরু করে এবং অজ্ঞতা বা অহঙ্কারের কারণে সবার উপর হিন্দি চাপানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু মানুষ শিক্ষিত হয়েছে। ফলে এখন আর কোনো অহিন্দি ভাষীরা নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে বিশর্জন দিয়ে হিন্দি ভাষা গ্রহণ করতে রাজী নয়। হিন্দি ভাষীদের ঔদ্ধত্যের কারণে এখন আর কেও হিন্দিকে সমস্ত ভারতবাসীর ভাষা বলে মানতে চায় না। আর মানুষ স্বেচ্ছায় না করলে সরকার জোর জোর করে চাপাতে পারবে না। তাহলে সেটা শুধু সংবিধান লঙ্ঘন হবে তাই না, দেশটাও ভেঙ্গে যাবে। তাছাড়া বর্তমানে প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে এবং ইংরেজি ভাষা বিশ্বভাষায় পরিণত হওয়ায় হিন্দির প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। সমস্ত ভাষারই উন্নতি হয়েছে।

ফলে ভারতে কেন্দ্র সরকার হিন্দি এবং ইংরেজি দুটো ভাষাতেই কাজ চালায়। অর্থাৎ হিন্দি এবং ইংরেজি হল ভারতের কেন্দ্র সরকারের ভাষা। সমস্ত রাজ্য সরকারের ভাষা নয়। আর সংসদে কোনো সাংসদ ওই ২২টা ভাষার যে কোনো একটা ভাষায় বক্তব্য রাখতে পারেন। সাংসদদের হিন্দি বা ইংরেজিতেই বক্তব্য রাখতে হবে এমন নয়। তবে দুটি ভিন্ন ভাষার মানুষ যেভাবে উভয়েই জানে এমন একটা ভাষা ব্যবহার করে কথা বলে, সেরকমি ভারতীয়রা ভিন্নভাষী কারো সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলে।

মনে রাখা দরকার ভারতের সংবিধানে ২২ টা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভারতবাসীরা নিজেদের এলাকার যে সরকারি ভাষা সেটা শেখে, আর ইংরেজি শেখে নিজ রাজ্যের বাইরে বা দেশের বাইরের মানুৃষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। ভারত এটা বিশাল বড় দেশ। ৮০% মানুষ জীবনে কোনোদিন নিজের রাজ্যের বাইরো বেরোয় না। ফলে ২২টা'র মধ্যে যেকোনো একটা সরকারি ভাষা জানলেই সাধারন মানুষের জীবন কেটে যাবে।

যারা কেন্দ্র সরকারের চাকরি করে তারা ইংরেজি জানলেই হবে। যদি হিন্দি ভাষী এলাকায় বাস করতে চান বা সে এলাকায় চাকরি করতে চান তাহলে সেখানকার স্থানীয় ভাষা তো শিখতেই হবে।

ভারতের “আই এ এস” এবং “আই পি এস” অফিসাররা কেন্দ্র সরকারের কর্মচারী হলেও তাদের যে রাজ্যে পাঠানো হয় সে রাজ্যের ভাষা শেখানো হয়। কারণ তাদের সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে উত্তর প্রদেশের একজন হিন্দিভাষী ব্যক্তি মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক হয়ে এলেন, তাহলে তাকে বাংলা শেখানো হবে।


ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারত সরকারের দাপ্তরিক ভাষা দেবনাগরী অক্ষরে হিন্দি এবং ইংরেজি। সংবিধানে কোনো জাতীয় ভাষা নেই। হিন্দি এবং ইংরাজি বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হয়; যেমন, সংসদের কাজে, আইন ও বিচার বিষয়ক কাজে, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের মধ্যে বার্তা প্রেরণে ইত্যাদিতে। রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা আছে তাদের নিজেস্ব সরকারি ভাষা ঠিক করার। মূলত ১৪.৫-২৪.৫% মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন, তবে মোটামুটি ৪৫% ভারতীয় হিন্দিভাষী অথবা এর কাছাকাছি ভাষায়। এই ৪৫% জনগণ হিন্দি ভাষা ভাষী রাজ্যে বসবাস করেন। বাকি ভারতীয় ভাষাগুলিতে কমবেশি ১০% করে জনগণ কথা বলেন।

রাজ্যগুলি আইন মোতাবেক তাদের সরকারি ভাষা ঠিক করতে পারে। সংবিধানের এই ধারায় রাজ্যগুলি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে তাই নয়, রাজ্যের নিজেস্ব বিভিন্ন সরকারি কাজেও তারা সেই ভাষা গুলি ব্যবহার করতে পারবে এবং এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে রাজ্য দেশের সাথেও সংযোগ স্থাপন করে।

ভারতের ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ইংরাজি তাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে ব্যবহার হত। ১৯৫০ সালে সংবিধান গ্রহণের সময় পরিকল্পনা নেওয়া হয় ১৫ বছরের মধ্যে ধিরে ধিরে ইংরাজির বদলে হিন্দিকে বসানো হবে, কিন্তু পরবর্তীকালে আইন প্রনয়ন করে ইংরাজির ব্যবহার বহাল রাখা হয়। পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী হিন্দিকে একক ভাবে সরকারি ভাষা করতে গেলে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাধা আসতে থাকে। অন্যান্য রাজ্যের সরকারি ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দি আজও সরকারি ভাষা হিসাবে চলে আসছে। কিন্তু সংবিধানে কোনো রাষ্ট্র ভাষা নেই।


 ভারতবর্ষে সুপ্রাচীন কাল থেকে বিবিধ ভাষা প্রচলিত রয়েছে। আসুন একনজরে দেখা যাক -- ভারতের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে-

★ ভারতের প্রধান ভাষাগোষ্ঠী হল মূল ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের শাখাগোষ্ঠী ইন্দো-আর্য। ভারতের ৭৮.০৫% মানুষ ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

★ ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশের দেশীয় ভাষাগোষ্ঠী হল -- দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠী। ভারতের ১৯.৬৪% মানুষ দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

★ ইন্দো-আর্য এবং দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠী ছাড়াও ভারতে আরও কয়েকটি ভাষাগোষ্ঠী রয়েছে। যেমন -- অস্ট্রো-এশিয়াটিক, সিনো-তিব্বতীয়, তাই-কদাই প্রভৃতি। ভারতের ২.৩১% মানুষ এইসব ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

★ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সরকারি ভাষা বৈচিত্র্য সমীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৮-১৯২৮ সালে, স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের নেতৃত্বে।

★ ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভারতের বৃহত্তম (ভাষার জনসংখ্যা অনুসারে) ভাষা হল -- হিন্দি। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৫৭.১০% হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেন। 

★ ভারতে প্রচলিত ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান ভাষাগুলি হল -- হিন্দি, বাংলা, কোঙ্কনি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, কাশ্মীরি, রাজস্থানি, সিন্ধি, অসমীয়া, মৈথিলি, ওড়িয়া। ভারতে প্রচলিত দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান ভাষাগুলি হল -- তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালাম। 

★ ভারতের কোনো সরকারি ভাষা নেই। সংবিধানের অষ্টম তপশীলে ২২ টি ভাষাকে সরকারি রূপে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল -- অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো, ডোগরি, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কনি, মৈথিলি, মালয়ালাম, মেইতেই, মারাঠি, নেপালি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, সাঁওতালি, সিন্ধি, তামিল, তেলেগু, ও উর্দু।

★ ২০০৪ সালে ভারত সরকার 'Classical Language' মর্যাদা চালু করে। এই তালিকায় বর্তমানে রয়েছে -- তামিল (২০০৪), সংস্কৃত (২০০৫), কন্নড় (২০০৮), তেলেগু (২০০৮), মালয়ালাম (২০১৩), ওড়িয়া (২০১৪)।

★ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন (০১/০৭/২০১৮) অনুসারে, ২০১১ জনগণনাতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ভারতে ১৯,৫৬৯ টি বাচিক ভাষা / উপভাষা (Dialect) রয়েছে। ভারতে ১০ হাজার বেশি লোক ব্যবহার করেন, এরূপ ১২১ টি ভাষা রয়েছে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯৬.৭১% মানুষ সংবিধানের অষ্টম তপশীলে স্বীকৃত ২২ টি ভাষার অন্তর্গত।

******************************************

তথ্যসূত্রঃ- 

1. Wikipedia 

2. The Indian Express

3. Census of India 2011

4. Quora media

No comments:

Post a Comment