জয়পুর ভারতের রাজস্থান রাজ্যের সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী। এর ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক: ২৬.৯২৬০° উত্তর ৭৫.৮২৩৫° পূর্ব। জয়পুর গোলাপী শহব় নামে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্ণে গোলাপী এবং স্পন্দনে গোলাপী, জয়পুর শহরটি ভারতের অন্যতম সুন্দর এবং আকৰ্ষণীয় শহর। জয়পুরের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ঐতিহ্য, শিল্প, গহনা এবং টেক্সটাইল সবসময়ই ভ্রমণকারীদের কাছে মনোরম করে তুলেছে । এটি এমন একটি শহর যা আধুনিকীকরণের পরেও এখনও এর মূল এবং মূল্যবোধকে ধারণ করে চলেছে আজও।
১৭২৭ সালে আমের রাজ দ্বিতীয় জয় সিং-এর-এর আমলে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। জয়পুর যে একটি সুপরিকল্পিত শহর তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। এছাড়া সওয়াই জয় সিংকে শহরের স্থাপত্য নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন বাংলার একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বিদ্যাধর ভট্টাচার্য। বর্ধিত জনগোষ্ঠী ও পানীয় জলের সহজলভ্যতার সুবিধার্থে রাজার নির্দেশে বিদ্যাধর ভট্টাচার্য শহরের স্থাপত্যনকশা করেন। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, শহরের প্রধান স্থানগুলি-রাস্তা, চত্বর, প্রাসাদ এবং সীমানাগুলির দুর্গ গঠনের জন্য সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পনা কৌশল তৈরি হতে ৪ বছর সময় লেগেছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বাস্তুশাস্ত্রের কৌশলগুলিকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল এই সুন্দর সাজানো শহর। ১৭২৭ সালের ১৮ই নভেম্বর জয় সিং নিজেই শহরটির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
জয়পুর গোলাপী শহব় নামে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে কাব়ণ প্ৰায় সবগুলো কাঠামো নির্মাণের জন্য একচেটিয়াভাবে ব্যবহৃত কব়া হয়েছে গোলাপী ব়ঙেব় পাঁথব়। যে এই শহরটি প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি জয়পুরের সমস্ত ভবন গোলাপী তাব় প্রমাণ পাবেন। এই গোলাপী রঙের শহব়টিব় রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। যেহেতু গোলাপী ব়ঙ আতিথেয়তার রঙ বোঝায়, তাই জয়পুরের মহারাজা রাম সিংহ অতিথিদের স্বাগত জানাতে পুরো শহরটিকে গোলাপী রঙে এঁকেছিলেন। এই ঐতিহ্যটি এখনও সেখানকাব় বাসিন্দারা আন্তরিকভাবে অনুসরণ করে এবং এখন আইন অনুসারে গোলাপী রঙ বজায় রাখতে বাধ্য।
১৮৭৬ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস এবং রানি ভিক্টোরিয়া ভারত সফরে আসার কথা ছিল। তাঁদেরকে স্বাগত জানাতে ‘পাধারো মাহেরে দেশ’–এর সারমর্ম জীবন্ত করে তুলতে মহারাজা গোটা শহরকে টেরাকোটা গোলাপী রঙে সাজিয়ে তুলেছিলেন। তৎকালীন সময়ে গোলাপী রঙ বা Pink ছিল আত্মীয়তার প্রতীক। সেখান থেকেই জয়পুর “Pink City”নামে পরিচিতি লাভ করে। লর্ড অ্যালবার্ট ‘Pink City’ নামটি প্রথম ব্যবহার করেন। আজ পর্যন্ত জয়পুরের সেই ঐতিহ্যকে বজায় রাখা হয়েছে। আজও জয়পুরের ঐতিহাসিক গেট ও স্কোয়ারগুলিতে আতিথেয়তার রঙ হিসেবে গোলাপী রঙ ধারণ করে রয়েছে। জয়পুরের ইতিহাসে নিজেকে বুনতে পারদর্শী এই গোলাপি শহর। পুরানো ঐতিহ্যকে বজায় রাখাতে শহরের সমস্ত বাড়ি-ঘর যেন গোলাপী রঙের হয় তার জন্য আইন পাশ করা হয়। তাই জয়পুরের কোন বাড়িঘর গোলাপি ছাড়া অন্য কোন রঙ দিয়ে পেইন্ট করা দেখতে পাওয়া যায় না।
১৯২২ সালে দ্বিতীয় মান সিং সিংহাসন দখল করলে তিনি শহরে স্কুল, হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর যোধপুর, জয়সালমীর এবং বিকানেরের সঙ্গে এক হয়ে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য জয়পুর ও রাজস্থানের রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর ‘পিঙ্ক সিটি’ তথা ‘গোলাপী শহর’ হিসাবে খ্যাত এবং খুবই জনপ্রিয় গন্তব্য। যার টানে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক ছুটে আসেন বছরভর। এখানকার বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলি হল : যন্তর মন্তর, সিটি প্যালেস, হাওয়া মহল, বিড়লা মন্দির এবং বেশ কয়েকটি প্রাচীন কেল্লা। প্রাচীন জয়পুরের প্রধান কেল্লাগুলো শহরের উত্তর-পূর্বে আরাবল্লী পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। আমের কেল্লা (১৫৯২), সবচেয়ে প্রাচীন কেল্লা ও উত্তরভাগে অবস্থিত। জয়গড় কেল্লা (১৭২৬), আমের কেল্লার পাশেই অবস্থিত, মূলত এটি প্রতিরক্ষামূলক কেল্লা। নাহারগড় কেল্লা (১৭৩৪), দক্ষিণভাগে অবস্থিত, বর্তমান শহরের সুউচ্চ দর্শন পেতে আদর্শস্থান।
No comments:
Post a Comment