মহাবিশ্বের জন্ম নিয়ে অনেক তত্ত্ব থাকলেও মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব (Big Bang Theory) সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি এখনও পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তত্ত্বও বটে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন বেলজিয়ান বিজ্ঞানী জর্জ লেমেত্রে, তিনি ১৯২৭ সালে তত্ত্বটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেন। এডুইন হাবল সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেন।
পরবর্তী সময়ে অনেক বিজ্ঞানী এই তত্ত্বকে এগিয়ে নিয়ে যান। সাম্প্রতিক কালে, এই তত্ত্বটিকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যান প্রয়াত জনপ্রিয় পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। এই তত্ত্বের পক্ষে অন্যতম যুক্তি বা নিদর্শন হল মহাবিশ্বের প্রসারণ ও কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন। অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও এই তত্ত্বই এখনও পর্যন্ত মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বলে, মহাবিশ্বের জন্ম আজ থেকে প্রায় ১৩.৭৮ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি) বছর আগে একটি অতি ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে। ওই বিন্দুটি প্রথমে বিস্ফোরিত হয়ে এবং পরে প্রসারিত ও ঠান্ডা হয়েই আজকের এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। মহাবিশ্বের সব কটি বল একীভূত ছিল। কিন্তু প্রসারণের কারণে মহাবিশ্ব ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে শুরু করে। প্রাকৃতিক বলগুলোও আলাদা হয়ে ৪টি পৃথক বল প্রতিষ্ঠা করে। মহাবিশ্বের জন্মের ১০-১২ সেকেন্ডে সক্রিয় হয় হিগস ফিল্ড, যার ফলে সব পদার্থকণা ভর অর্জন করে। ১০-০৬ সেকেন্ডে গ্লুয়নের সাহায্যে দুই ধরনের কোয়ার্ক জুড়ে তৈরি হয় প্রোটন ও নিউট্রন। মহাবিশ্বের বয়স যখন ১ থেকে ১০ সেকেন্ড, মহাবিশ্বের সব কণা ও প্রতিকণা একে অপরকে ধ্বংস করে বিপুল পরিমাণ শক্তি উদ্গিরণ করে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে প্রতিকণার চেয়ে সাধারণ কণার পরিমাণ একটু বেশি ছিল। তাই কিছু সাধারণ পদার্থকণা অবশিষ্ট থেকে যায়। সেই অবশিষ্ট কণাগুলো দিয়েই আমাদের বিশাল মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১৭ মিনিট পর মহাবিশ্বের তাপমাত্রা এমন পর্যায় আসে যে অবশেষে প্রোটন ও নিউট্রন মিলে পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠন করতে সক্ষম হয়। এর প্রায় ৩৭৯,০০০ বছর পর প্রথম চার্জনিরপেক্ষ পরমাণু তৈরি হয় এবং CMB–এর জন্ম হয়। প্রথম নক্ষত্রের জন্ম মহাবিস্ফোরণের কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন বছর পর। আজ থেকে ১৩.৬১ বিলিয়ন বছর আগে জন্ম হয় আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার। আমাদের সূর্যের জন্ম আজ থেকে মাত্র ৪৬০ কোটি বছর আগে। পৃথিবীর বয়সও সূর্যের প্রায় কাছাকাছি, ৪৫৪ কোটি বছর।
তথ্যসূত্রঃ- প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment