প্রতিদিন পৃথিবীর ঘুম ভাঙে সূর্যের সোনালী আলোর স্পর্শে। একটু বেলা হতে না হতেই আলোর সোনালী আভা দূর হয়ে উজ্জ্বল সাদা আলোতে ভেসে যায় চারপাশ। দুপুরটা গড়িয়ে গেলেই আবার সোনালী আভা। সন্ধ্যায় অস্ত যাবার আগে সূর্য যেন টকটকে লাল! সূর্যের এই বহুরূপের পিছনের কারণ কী? উত্তর আমাদের বায়ুমণ্ডল। কিন্তু বায়ুমণ্ডল ছাড়া সূর্য আসলে দেখতে কেমন? এর রঙটা কী আগুনে লাল, নাকি নীলাভ, সাদা? সূর্যের আসল রঙ কী?
কোনো বস্তুর রঙ কেমন হবে সেটা নির্ভর করে তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর। অর্থাৎ ওই বস্তু থেকে কোনো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে তার রঙ। কোনো বস্তু লাল রংয়ের হলে, তার অর্থ—ওই বস্তু থেকে কেবল লাল রঙের জন্য নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো এসে আমাদের চোখে পড়ে। এখন যদি বস্তুটি নিজে আলোর তরঙ্গ উৎপন্ন করে, তাহলে সেটা আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে করবে। তা না হলে, অন্য কোনো উৎস থেকে আসা আলো প্রতিফলিত করবে। নির্দিষ্ট রঙের বস্তু অন্য উৎস থেকে আসা আলোক রশ্মির সব আলো শোষণ কেবল একটি তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত করে। সূর্য নিজেই আলোকরশ্মি তৈরি করে। সত্যি কথা বলতে শুধু আলো নয়, গামারশ্মি ছাড়া বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের সব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিই সূর্য থেকে বেরিয়ে আসে। সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনো বস্তু থেকে বেরিয়ে আসা শীর্ষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য কত হবে, সেটা নির্ভর করে এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর। অর্থাৎ নক্ষত্রের তাপমাত্রার ওপর এর রঙ নির্ভরশীল। এই কারণে অপেক্ষাকৃত শীতল তারাগুলো লাল দেখায়। প্রচণ্ড উত্তপ্ত তারাগুলো দেখায় নীল। মাঝখানে অন্যান্য তাপমাত্রার নক্ষত্রগুলো কমলা, হলুদ এবং সাদা রঙের হয়। সূর্যের বেলায় যে শীর্ষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হয়েছে সেটাকে সাধারণত সবুজ হিসেবে বর্ণনা করা যায়।
দৃশ্যমান বর্ণালীর পরিসীমা বেশ ছোট। বিভিন্ন রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মাঝে পার্থক্য সামান্য। মানুষের চোখ একই উৎস থেকে নির্গত অনেক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো আলাদা করে দেখতে পায় না। সবগুলো মিলে একটি সম্মিলিত রঙ দেখে। সূর্য যদি শুধু সবুজ আলো নির্গত করত, তাহলে আমরা একে সবুজ দেখতাম। কিন্তু সূর্য যেহেতু সকল তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো নির্গত করে, তাই একে সাদা দেখায়। অর্থাৎ মানুষের চোখে সূর্যের প্রকৃত রঙ হচ্ছে সাদা। এই সবগুলো রঙ আলাদাভাবে দেখার চমৎকার একটি ঘটনা হচ্ছে রামধনু। এছাড়া প্রিজমের মাধ্যমেও সূর্যের সবগুলো রঙ দেখা যায়।
তথ্যসূত্রঃ- প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment