সৌরজগতের সূর্যসহ আরও প্রায় ১০-৪০ হাজার কোটি বেশি নক্ষত্র নিয়ে গঠিত আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি।
সর্পিল এই ছায়াপথটি প্রায় ১ লক্ষ আলোকবর্ষ জুড়ে। একটা সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, এর বয়স প্রায় ১ হাজার কোটি বছর। আসলে কি তাই? ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গ্লোবাল অ্যাস্ট্রোমেট্রিক ইন্টারফেরোমিটার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা গাইয়া টেলিস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছিলেন। দেখা গেল, বিজ্ঞানীরা যতটা ভেবেছিলেন, আকাশগঙ্গার বয়স তার চেয়েও বেশি। প্রায় সাড়ে ১৩০০ কোটি বছর আগে গঠিত হয় আমাদের এই ছায়াপথের কিছু অঞ্চল। সেদিক থেকে বলা যেতে পারে, আকাশগঙ্গার বয়স প্রায় সাড়ে ১৩০০ কোটি বছর। কিন্তু সেটাও পুরোপুরি সঠিক বলা যাবে না। কারণ নক্ষত্রের বেলায় যেমন সার্বিক বয়স বলা যায়, ছায়াপথের মতো বিশাল এলাকার বেলায় তা বলা যায় না। আকাশগঙ্গার বয়স নির্ণয়ের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জীবন চক্রের প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে এমন নক্ষত্র খুঁজছিলেন। এই ধরনের নক্ষত্রকে বলা হয় সাবজায়ান্ট নক্ষত্র। সাবজায়ান্ট নক্ষত্রে বিভিন্ন ধরনের উপাদানের প্রাচুর্য্য থাকায় এদের বয়স নির্ণয় করা কিছুটা সহজ। অপেক্ষাকৃত নিখুঁতভাবে এসব নক্ষত্রের বয়স বের করা যায়। তবে আকাশগঙ্গাতে সাবজায়ান্ট নক্ষত্র কিছুটা বিরল। এইখানেই কাজে লাগে গাইয়া টেলিস্কোপ। এর সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ২ লাখেরও বেশি সাবজায়ান্ট নক্ষত্র খুঁজে বের করেন। হিসেব করে দেখা গেছে, এদের কোনো কোনোটির বয়স প্রায় ১৩০০ কোটি বছর। আকাশগঙ্গার বয়স বের করার পাশাপাশি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তৈরি করেন ছায়াপথের নানা বয়সী বিভিন্ন অংশের ম্যাপ। বোঝার চেষ্টা করেছেন, ছায়াপথের বিবর্তন। এতে দেখা গেছে, ছায়াপথের থিন ডিস্ক বা পাতলা চাকতি নামের অংশটি মাত্র প্রায় ৬ বিলিয়ন (৬০০ কোটি) বছর আগে তৈরি হয়েছিল। এটাই এখন পর্যন্ত আকাশগঙ্গার সবচেয়ে নবীন অঞ্চল। অন্যদিকে থিক ডিস্ক বা পুরু চাকতি নামে পরিচিত অঞ্চলটি সবচেয়ে প্রাচীন। এখানকার বয়স প্রায় ১৩০০ কোটি বছর। তাই এবার বোঝা গেল, কেন ছায়াপথের একক বয়স সহজে বলা যায় না। তাই, ছায়াপথের বয়স কতো, এই প্রশ্নের উত্তরে আরেকটা প্রশ্নই চলে আসে। তা হল : ছায়াপথের কোন অংশের বয়স জানতে চাইছেন আপনি?
তথ্যসূত্রঃ- প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment