১৯৯২ সালের ৯ ই জানুয়ারী। সৌরজগতের বাইরে প্রথম কোন গ্রহ (Exoplanet) -এর দেখা পান পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারপর থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার এক্সোপ্ল্যানেট বা সৌরজগতের বাইরের গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। বাংলায় এক্সোপ্ল্যানেটকে 'বহির্গ্রহ' বলা যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে আমাদের সূর্যের মতো একক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরা গ্রহ যেমন আছে, তেমনি আছে বাইনারি স্টার বা দুইটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহ। এমনকি ঠান্ডা লাল বামন তারা বা অতি ঘনত্বের নিউট্রন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করেও ঘুরছে গ্রহ। এখন প্রশ্ন হল, মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্রেরই কি গ্রহ থাকে?
নক্ষত্র থেকে আলো নির্গত হয়। খালি চোখেই লক্ষ-কোটি আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র আমরা দেখতে পারি। গ্রহের বেলায় সে সুযোগ নেই। গ্রহ থেকে আলো বের না হওয়ার কারণে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও অন্য নক্ষত্র ব্যবস্থার গ্রহ দেখতে পাওয়া মুশকিল। কোন গ্রহ তার নক্ষত্রকে অতিক্রম করার সময়, ওই নক্ষত্র থেকে আসা আলোর পরিমাণ সামান্য কমে যায়। বিজ্ঞানীরা মূলত সেই আলো বিশ্লেষণ করে গ্রহটি সম্পর্কে জানতে পারেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য মতে, এখনও পর্যন্ত (১লা সেপ্টেম্বর,২০২২) বিজ্ঞানীরা ৫১৫৭ টি এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্ত করেছেন। অন্যদিকে খালি চোখেই আমরা কোটি কোটি নক্ষত্রের দেখা পাই। তাই খুব সামান্য সংখ্যক নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহের দেখা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তার মানে কিন্তু এই নয় যে বাকি সব নক্ষত্র গ্রহশূন্য। আসলে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা এখনও তাদের শনাক্ত করতে পারিনি। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যপক জোনাথন লুনিন এই প্রসঙ্গে বলেন, বিজ্ঞানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনকিছু প্রমাণ করা খুবই জরুরী। যতক্ষণ পর্যন্ত শনাক্ত করতে না পারছি, ততক্ষণ সব নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ আছে—এটা আমরা বলতে পারি না। অর্থাৎ, মহাকাশে নিঃসঙ্গ নক্ষত্র থাকার সম্ভাবনা আছে।
সুপারনোভা বিস্ফোরণের কারণে বিশাল স্থানজুড়ে গ্যাস ও ধূলিকণা আকারে ছড়িয়ে পড়ে নক্ষত্রের উপাদান। একে নীহারিকা (Nebula) বলে। মহাকর্ষ বলের কারণে নীহারিকার এসব গ্যাস ও ধূলিকণা একত্রিত হয়ে জন্ম নেয় নক্ষত্র। নক্ষত্র জন্মের সময়ে গ্রহ তৈরি হয় এর চারপাশের ঘুরতে থাকা ধূলিমেঘ থেকে। সব নক্ষত্রের বেলায় এই ধূলিমেঘের পরিমাণ সমান থাকে না। কারণ, নীহারিকার সব স্থানের ঘনত্ব সমান হয় না। তাই, নক্ষত্র তৈরির সময় চারপাশের অবস্থার কারণে গ্রহের সংখ্যার তারতম্য দেখা যায়। এ সংখ্যা শূন্যও হতে পারে। অর্থাৎ, তাত্ত্বিকভাবেও গ্রহ ছাড়া নক্ষত্র থাকারও সম্ভাবনা বেশ প্রবল। মজার বিষয় হল, গ্রহবিহীন নক্ষত্রের ব্যাপারটা সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া না গেলেও, নক্ষত্র ছাড়াও গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোকে ভবঘুরে গ্রহ (Rogue Planet/Wandering Planet) বলে।
তথ্যসূত্রঃ- প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment