Under Construction
প্রকৃতির অন্যতম একটি উপাদান উদ্ভিদ। উদ্ভিদ যেমন আমাদের উপকারে আসে তেমনই কোনো কোনো উদ্ভিদ ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমন ক্ষতিকর একটি উদ্ভিদের নাম পার্থেনিয়াম। প্রকৃত অর্থে পার্থেনিয়াম এক ধরনের বিষাক্ত আগাছা, যা মানুষ ও প্রাণীদের নানা ক্ষতি করে থাকে।
উদ্ভিদ পরিচিতি :
পার্থেনিয়ামের ইংরেজি নাম
Perthenium. পার্থেনিয়ামের বিজ্ঞানসম্মত নাম Parthenium Hysterophorus. এই পার্থেনিয়ামে রয়েছে Sesquiterpene Lactones নামক বিষ। অনেকটা ধনে গাছের মতো দেখতে
ঝোপের মতো হয়ে
থাকে। এগুলো একধরনের বিষাক্ত আগাছা,পাতা সবুজ এবং
ফুল গুলিসাদা।
এই বিষাক্ত উদ্ভিদটি সাধারণত উচ্চতায় ১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পার্থেনিয়াম শাখা বিস্তারের মাধ্যমে গম্বুজ আকৃতির অথবা ঝোপ আকারের হয়। পাতা শাখাযুক্ত ত্রিভুজের মতো। নির্দিষ্ট বয়সে ফুল ফোটে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। গোলাকার, সাদা, আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে এর ফুল। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে।
স্থানীয় ভাবে একে
গাজর ঘাসও বলে।
বাসস্থান ও বিস্তার:
পার্থেনিয়ামের মূল উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো। সেখান থেকে এই বিষাক্ত আগাছা ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশেসহ বিভিন্ন দেশে। বাড়ির আশপাশে, রাস্তার ধারে, বন-জঙ্গলে বা ফসলের ক্ষেতে পার্থেনিয়াম জন্ম ও বিস্তার লাভ করে। এই বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর, গাড়ির চাকার কাদামাটি, পথচারীদের জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে।
রাসায়নিক উপাদান:
পার্থেনিয়ামে রয়েছে Sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ, যা গঠিত হয় Caffeic acid, Vanillic acid, Ansic acid, P-anisic acid,
Chlorogenic acid, Ges Parahydroxy benzoic acid দ্বারা। এই বিষ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়াও এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কীটপতঙ্গ ও ফসল উভয়েরই ক্ষতি করে। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারে। খারাপ খবর হল ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছে।
পার্থেনিয়াম ক্ষতিকর হলেও এর রয়েছে কিছু ঔষধিগুণ। বর্তমানে এই আগাছা থেকে মানুষের আমাশয়, প্রচণ্ড জ্বর, বদহজম, টিউমার, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল রোগের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে।
ক্ষতিকর প্রভাব
1.
পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাতপা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
2.
পার্থেনিয়ামে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চরক্তচাপে ভুগতে পারে।
3.
দশ মিটার দূর থেকেও এই আগাছাটির ফুলের রেণু মানুষের এলার্জি, হাঁপানি রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
4.
পার্থেনিয়াম আগাছা যুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর,বদহজমসহ
নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
5.
এই গাছ খেলে গাভীর দুধ তিতা হয়, যা দীর্ঘদিন পান করলে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
6.
এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কীটপতঙ্গ ও ফসলউভয়ের ক্ষতি করে।
7.
পার্থেনিয়াম আগাছা জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমে যায়।
8.
পার্থেনিয়ামের রেণু বাতাসে মিশে টমেটো, মরিচ ও বেগুনের ফুল ঝরিয়ে দেয়।
9.
এই গাছ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের ফলে ডাল জাতীয় ফসলের গাছের
নাইট্রোজেন তৈরিতে সহায়তাকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দেয়।
10. এই আগাছা ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে ভূট্টার ক্ষেত্রে এ আগাছা ফল ধরার পর প্রাথমিক অবস্থায় মোচার ফল ধারণ ক্ষমতা ত্রিশ শতাংশ হ্রাস করে। এছাড়া ধান, ছোলা, সরিষা, গম, বেগুন, এবং লঙ্কার ক্ষেত্রে বীজের অঙ্কুরোদগম ও বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়।
পার্থেনিয়াম দমন
1. এই আগাছার পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে।
2. ঐ গাছ কেটে গভীরগর্তে পুতে ফেলা যেতে পারে।
3. কীটনাশক ব্যবহার করেও আগাছা দমন করা যেতে পারে।
4. চারা অবস্থায় গাছগুলোকে উপড়ে ফেলা যেতে পারে।
5. পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।
© GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) # Ghoralia, Santipur, Nadia, Pin- 741404.
.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি
করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা
যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা
নিষিদ্ধ। এই শর্ত লঙ্খন করা হলে আইনের সাহায্য নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।