Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Wednesday, 1 March 2023

মঙ্গলদীপ ইকো ট্যুরিজম পার্ক

 নদীয়া জেলার রানাঘাট-১ ব্লকের পায়রাডাঙ্গা শিবপুরে ভাগীরথী এবং চূর্ণীর সঙ্গমস্থলে উদ্ভূত চর যা মঙ্গলদ্বীপ নামে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত একটি স্থান । অঞ্চলটির ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক 23°7'39" উত্তর, 88°29'57" পূর্ব। এটি ভাগীরথী নদী ক্রুজ বরাবর একটি ট্যুরিস্ট ট্রানজিট পয়েন্ট-কাম-রিসর্ট হিসাবে গড়ে উঠেছে। 


 চলে আসুন কলকাতার এক্কেবারে কাছেই মঙ্গল দ্বীপে। হুগলি নদীর উপরে তৈরি হয়েছে এই মঙ্গলদ্বীপ। মাঠ-ফাগুনের দুপুরে জমিয়ে চড়ুইভাতি করে নেওয়া যেতে পারে। আবার নিছক বেড়াতেও বেশ মন্দ লাগবে না। নদীর মাঝে বিশাল এই দ্বীপ এখন পর্যটকদের নতুন ডেস্টিনেশন বললে ভুল হবে না। সেখানে তৈরি করা হয়েছে একটা পার্কের মত।

পায়রাডাঙ্গা রেল স্টেশন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পায়রাডাঙ্গা শিবপুরঘাট থেকে নৌকায় ভাগীরথী পার হয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টুরিস্ট স্পট মঙ্গল দ্বীপের সুন্দর মনোরম পরিবেশে পৌঁছে যেতে পারেন। চারিদিকে  নদী বেষ্টিত এই দ্বীপ। জনবসতী নেই এই নদীর চড়ায় কেবল গাছ গাছালি রয়েেছ। বড় বড় বৃক্ষেরও দেখা মিলবে এখানে। আপনি যদি নদীর মাঝখানে একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট খুঁজছেন তবে হ্যাঁ এই জায়গাটি আপনার পূর্বের পছন্দ হওয়া উচিত। সুন্দর এই দ্বীপে গড়ে উঠেছে একটি ইকো ট্যুরিজম পার্ক। বিস্ময়কর ল্যান্ডস্কেপ, মনোরম আবহাওয়া, মৃদুমন্দ বাতাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই জায়গাটিকে একটি নিখুঁত পর্যটক ও পিকনিক স্পট বানিয়েছে। 


নদীর তীরে অবস্থিত, এটি একটি পার্ক, বাগান এবং দুটি কটেজ নিয়ে গঠিত একটি পিকনিক স্পট। এইরকম পরিবেশে শীতের মরসুমে বনভোজন অর্থাৎ চড়ুইভাতির আমেজটাই আলাদা। সন্ধ্যায় হুগলি বরাবর একটি বোটিং ভ্রমণ অবশ্যই স্মরণীয় হবে এবং আপনাকে সেই জায়গায় ফিরিয়ে আনবে। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা অবশ্য এখানে নেই। এখানে পিকনিক করতে হলে নিজেদের খাবার নিয়ে যেতে হবে অথবা রান্নার সব সরঞ্জাম নিয়ে যেতে হবে। তবে জলের পর্যাপ্ত সুবিধা রয়েছে। পার্কের মধ্যেই পরিশ্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত রয়েছে। আপনি স্থানীয় ক্যাটারিংয়ের মাধ্যমে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন বা সেখানে খাবার নিজেরাই রান্না করতে পারেন। এখানে রান্না ও পরিবেশনের ব্যবস্থাও রয়েছে। পার্কিং সুবিধা রয়েছে।  

মঙ্গলদ্বীপের কাছেই রয়েছে গোয়াইয়ের চড়। গঙ্গা আর চূর্ণি নদীর সঙ্গমস্থলে তৈরি হয়েছে এই গোসাইয়ের চর। সেখানে আবার নোকার হাল বেয়ে চলে না। এপার ওপারে দড়ি টাঙানো রয়েছে। সেই দড়িই বেয়েই যায় নৌকা। হাল টানতে হয় না মাঝিকে। গোসাইয়ের চরে মূলচ চাষবাস হয়ে থাকে । প্রচুর কলা গাছের বাগান রয়েছে। রয়েছে বড় আম বাগান। মঙ্গলদ্বীপে ঘুরতে এসে অনেকেই চলে আসেন এই গোসাইয়ের চর দেখতে। 

কিভাবে পৌঁছবেন? শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আপনাকে পেয়ারাডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে আসতে হবে। শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, গেদে গামী যেকোনো লোকাল  ট্রেনে আসতে পারেন। তারপর, টোটো  বা অটোতে শিবপুরঘাট এখনথেকে নৌকায় ভাগীরথী পার হয়ে পৌঁছে যান মঙ্গলদীপ ইকো ট্যুরিজম পার্কে। 




দক্ষিণের ডুয়ার্স ঝালুয়ারবেড় (Jhaluarber)

 ডুয়ার্স! তাও আবার দক্ষিণে।! হ্যাঁ দক্ষিণে। দক্ষিণের ডুয়ার্স ‘ঝালুয়ারবেড়’। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার ডোমজুর মহকুমায় অবস্থিত মকরদহ-২ (Makardah- ii) গ্রাম পঞ্চায়েত একটি গ্রাম হল ঝালুয়ারবেড় (Jhaluarber)। অঞ্চল টির ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক হল: ২২°৩৭′৪০″ উত্তর, ৮৮°১৫′১০″ পূর্ব। একটা সময় গোটা এলাকাটাই জঙ্গলে ঘেরা ছিল। বর্তমানে বেশ কিছু জায়গা বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেই ঝালুয়ারবেড়ের মানুষ দিনযাপন করেন এখানে।

 দক্ষিণের ডুয়ার্স নামে পরিচিত এই অঞ্চলটি প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একপ্রকার স্বর্গ বলা যেতে পারে। ঝালুয়ারবেড়ও ডুয়ার্সের মতো মুহূর্তে মুহূর্তে চমকে দিতে প্রকৃতিকে ঢেলে সাজিয়ে রেখে দিয়েছে অকৃত্রিমভাবে। সেখানে একটিই মাত্র রেললাইন। তার পাশে পটে আঁকা একটি প্ল্যাটফর্ম। তার পাশ ঘেঁষে ঘন জঙ্গল। সেখানে এক শীতদুপুরে...শর্ট টাইম আউটিং’ (স্বল্প সময় ভ্রমণ) বেড়িয়েই পডুন  ঝালুয়ারবেড় দক্ষিণের ডুয়ার্সের উদ্দেশ্যে। 

 জনমানবহীন এই নিরিবিলি জায়গাটিতে ঘোর দুপুরেও শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক। স্টেশনে দাঁড়িয়েই মনে হবে কোনো গহীন জঙ্গলে বোধহয় দাড়িয়ে আছেন। সুন্দর এই স্টেশনের মোহ কাটিয়ে কিছুটা এগোলেই দেখবেন একটা কালী মন্দির। এই মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটির দুপাশ জুড়ে ঘন বাঁশ বন। শুধু তাই নয়, বাঁশ গাছগুলো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রাস্তাটিকে ঢেকে রেখেছে। মাঝখান দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হবে যেন আস্ত এক বাঁশ গাছের গুহা। দুপুরে সূর্যের আলোটুকুও ভালো ভাবে মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। আবার শীতের দিনে কুয়াশা ঘেরা এই রাস্তাটি অপরূপ এক মায়াবি দৃশ্যের সৃষ্টি করে। জীর্ণ সেতুর গায়ে গা এলিয়ে দিয়েছে তার হলুদ শরীর, রোদ পোয়াচ্ছে বুড়ো গো সাপ। সেতু এখানে নির্জন। অচেনা পায়ের আওয়াজ পেয়ে চকিতে খালের জলে গিয়ে নামে সাপ। হয়ত মন খারাপ হয় বকটার, নুইয়ে পড়া গাছের ডাল থেকে নিমেষে উড়ে পালায় চোখের আড়ালে। এই জঙ্গলের পাহারাদার বুনো কুকুর আর বুনো বেড়াল। দাঁত বের করে ফ্যাঁসস করে আপনার পায়ের আওয়াজকে  আমন্ত্রণ জানাবে। ফ্যাঁসসটা হয়ত চলে যাওয়ার আদেশ। দুর থেকে সামান্য বিরতি দিয়ে তক্ষক ডেকে উঠছে। ঘোর দুপুরেও কানে তালা ধরায় ঝিঁঝিঁ। এখানে দিগন্তে তারা দেখা যায় সন্ধ্যার আগে আগেই। ঝালুয়ারবেড়কে বাস্তবিকই গরীবের ডুয়ার্স হয়ে মনের শান্তি হতে পারে।  

অন্য দিকে জঙ্গল যেখানে কম সেখানে উপভোগ করার মত রয়েছে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি। খেত জুড়ে বিভিন্ন ফসলের চাষ এবং খেতের মাঝখান দিয়ে রয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। জংলি গাছে ফুটে থাকা সাদা-হলুদ ফুল আর রঙিন প্রজাপতি পলকে মন আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। রাস্তার ধারের খালটা পুরো সবুজ। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কচুরিপানায় ঢাকা। সেই খালের শেষ দেখা যায় না। দু’পাশের গাছপালার ডাল খালের জলের উত্তাপ মেপে নিতেই যেন ঝুঁকে থাকে। শীতের সূর্য আর কুয়াশা বিকেলের সময়টা সেখানে লুকোচুরি খেলে। সন্ধ্যে নামলে অনেক সময় শিয়াল ও অন্যান্য বন্য জন্তুও বেরোয়। তাই সেসময় রাস্তাটি বেশ বিপজ্জনকও বটে। রাত গাঢ় হওয়ার আগেই এখানে শোনা যায় পেঁচার ডাক। এখানে মুহূর্তে যযেন মনটা কেমন হয়ে ওঠে। 

হাওড়া থেকে আমতাগামী ট্রেনে মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা।হাওড়া থেকে জঙ্গলে যাওয়ার ট্রেনের টিকিটের দাম ১০ টাকা। সন্ধ্যার পর সেটি বলার জন্য কাউকেই আর পাবেন না। শীতের রাত গড়ানোর আগেই জঙ্গলে ঘেরা স্টেশনে দাঁড়ালে গা ছমছম করে। রাত গাঢ় হওয়ার আগে পেঁচা ডাকে। তার ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভেসে আসে লাস্ট ট্রেনের ভোঁ। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত কৃত্রিমভাবে ডুয়ার্সের স্বাদ পেতে এই শীতেই না হয় একবার ঘুরে আসুন দক্ষিণের ডুয়ার্সে। বিশাল এই কংক্রিটের শহরে এক টুকরো বন্যপ্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তি জোগাবেই!


প্রাচ্যের প্যারিস পুদুচেরি

 


ভারতের সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম পুদুচেরি। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নতুন নামকরণ হয়েছিল 'পুদুচেরি'। প্রায় ৭১১,৯৩৪ জনসংখ্যা সহ এই ৪৯২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার পুদুচেরি ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি আধুনিক শহর। শহরটি 'পন্ডি' (Pondi) নামেও পরিচিত। এ যেন ভারতে বিদ্যমান ফ্রান্সের একটি অংশ। আর এই শহরকেই বলা হয় প্রাচ্যের প্যারিস।


'পুদুচেরি' শব্দের তামিল অনুবাদের অর্থ 'নিউ টাউন' বা নতুন নগর। এই নাম রেখেছিলেন ফরাসি তামিলিয়ানরা।অতীতে ফরাসিদের উপনিবেশ থাকায় পুদুচেরিতে তার রেশ আজও রয়ে গেছে। 


ফ্রান্সের প্যারিস ভ্রমণের স্বপ্ন সবার মনেই থাকে। বেশিরভাগ মানুষ ছুটেন সেখানে প্যারিসের বিভিন্ন স্থাপনা এমনকি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মুগ্ধ করে সবাইকে।  তবে প্যারিস ভ্রমণ তো আর মুখের কথা নয়। আপনি যদি প্যারিস ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন তাহলে ঘুরে আসতেই পারেন ভারতের ‘প্রাচ্যের প্যারিস থেকে’। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হই চই করতে যেমন ভালো লাগে, তেমনই তাঁদের সঙ্গে নিরিবিলিতে সময় কাটাতেও ভালো লাগে। আর তার জন্য আদর্শ জায়গা পুদুচেরি। শীতকালে এখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম থাকে। পুদুচেরিতে ফরাসি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপস্থিত অত্যন্ত প্রকট। পুদুচেরি যেন ফ্রান্সের একটি অংশ। এখানকার ফ্রেঞ্চ কলোনিগুলিতে গেলে মনে হবে যেন প্যারিসের অলিগলিতে ঘুরছেন। সেই কারণেই পুদুচেরিকে বলা হয় 'প্রাচ্যের প্যারিস'।


পুদুচেরি ভ্রমণে যা যা দেখবেন


সমুদ্র সৈকত

পুদুচেরির সমুদ্র সৈকত দারুণ সুন্দর। সেখানকার সরকারি ভবনগুলোর বেশিরভাগই সমুদ্রের ধারে অবস্থিত। সৈকতসংলগ্ন রাস্তাগুলোও অত্যন্ত পরিষ্কার। চাইলে আপনি খালি পায়েও হাঁটতে পারবেন। এই অঞ্চলের চারপাশে ১০টিরও বেশি সৈকত আছে। তবে সার্ফিংয়ের জন্য অরোভিল বিচ জনপ্রিয়। ব্যাক ওয়াটার বোটিং উপভোগ করারও দারুণ জায়গা প্যারাডাইস বিচ।যোগাসনের জন্য শান্তিপূর্ণ জায়গা পেতে চাইলে যেতে পারেন প্রমেনেড বিচে। সান বাথ ও মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত মাহে বিচ। ক্যানোয়িংয়ের জন্য আদর্শ কারাইকাল সমুদ্র সৈকত।


ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার

ইন্দো-ফরাসি নিদর্শনের সেরা উদাহরণ হলো ফ্রেঞ্চ কলোনির ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার্স ও সেখানকার রাস্তাগুলো। ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারগুলো হোয়াইট টাউন নামে পরিচিত।ক্যাথেড্রালের ঐতিহ্য ও স্থাপত্য অনুসারে ফ্রেঞ্চ ভিলাগুলো ধূসর, সাদা, পিচ ও হলুদ রঙে রাঙা। সেখানকার ভারতি পার্ক, অরবিন্দ আশ্রম, লা মেসন রোজ, কিউরিও সেন্টার ও নটরডেম অ্যাঞ্জেস ঘুরে দেখতে দারুণ লাগে।


অরোভিল কমিউন

পুদুচেরি ভ্রমণে যাবেন অথচ অরোভিলে যাবেন না, তা কি হয়! সেখানকার উন্নতমানের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল, ধূপকাঠি ও সূক্ষ্ম হস্তশিল্প বিখ্যাত। এছাড়া লাল বালির পাথরের অ্যাম্ফিথিয়েটারের নাম মাতৃমন্দির, বুটিক ডি অরোভিল, মন্ত্র পটারি, লা ফার্ম চিজ ও অরোভিল বেকারির সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারবেন।


তামিল কোয়ার্টার ব্ল্যাকটাউন

ফরাসিদের জন্য যেমন হোয়াইট টাউন, তেমনই তামিল ব্রাহ্মণ ও বণিকদের জন্য আছে ব্ল্যাকটাউন। সেখানকার ঘরবাড়ি ইমারতগুলোতে তামিল সংস্কৃতি স্পষ্ট। সেখানে আরও আছে মইসন তামোলে ও মেসন পেরুমলের মতো জনপ্রিয় তামিল ভবন। এটি তার অ্যাকুয়ারেলাস গ্যালারিতে আছে অমূল্য সব শিল্প সম্পদ।





গোলাপী শহব় জয়পুর (Pink City Jaypur)

 

জয়পুর ভারতের রাজস্থান রাজ্যের সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী। এর ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক: ২৬.৯২৬০° উত্তর ৭৫.৮২৩৫° পূর্ব। জয়পুর গোলাপী শহব় নামে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্ণে গোলাপী এবং স্পন্দনে গোলাপী, জয়পুর শহরটি ভারতের অন্যতম সুন্দর এবং আকৰ্ষণীয় শহর। জয়পুরের সংস্কৃতি, স্থাপত্য, ঐতিহ্য, শিল্প, গহনা এবং টেক্সটাইল সবসময়ই ভ্রমণকারীদের কাছে মনোরম করে তুলেছে । এটি এমন একটি শহর যা আধুনিকীকরণের পরেও এখনও এর মূল এবং মূল্যবোধকে ধারণ করে চলেছে আজও।

১৭২৭ সালে আমের রাজ দ্বিতীয় জয় সিং-এর-এর আমলে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। জয়পুর যে একটি সুপরিকল্পিত শহর তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন বিখ্যাত গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। এছাড়া সওয়াই জয় সিংকে শহরের স্থাপত্য নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন বাংলার একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বিদ্যাধর ভট্টাচার্য। বর্ধিত জনগোষ্ঠী ও পানীয় জলের সহজলভ্যতার সুবিধার্থে রাজার নির্দেশে বিদ্যাধর ভট্টাচার্য শহরের স্থাপত্যনকশা করেন। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, শহরের প্রধান স্থানগুলি-রাস্তা, চত্বর, প্রাসাদ এবং সীমানাগুলির দুর্গ গঠনের জন্য সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পনা কৌশল তৈরি হতে ৪ বছর সময় লেগেছিল। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বাস্তুশাস্ত্রের কৌশলগুলিকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছিল এই সুন্দর সাজানো শহর। ১৭২৭ সালের ১৮ই নভেম্বর জয় সিং নিজেই শহরটির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।

জয়পুর গোলাপী শহব় নামে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে কাব়ণ প্ৰায় সবগুলো কাঠামো নির্মাণের জন্য একচেটিয়াভাবে ব্যবহৃত কব়া হয়েছে গোলাপী ব়ঙেব় পাঁথব়। যে এই শহরটি প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি জয়পুরের সমস্ত ভবন গোলাপী তাব় প্রমাণ পাবেন। এই গোলাপী রঙের শহব়টিব় রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। যেহেতু গোলাপী ব়ঙ আতিথেয়তার রঙ বোঝায়, তাই জয়পুরের মহারাজা রাম সিংহ অতিথিদের স্বাগত জানাতে পুরো শহরটিকে গোলাপী রঙে এঁকেছিলেন। এই ঐতিহ্যটি এখনও সেখানকাব় বাসিন্দারা আন্তরিকভাবে অনুসরণ করে এবং এখন আইন অনুসারে গোলাপী রঙ বজায় রাখতে বাধ্য।

১৮৭৬ সালে প্রিন্স অফ ওয়েলস এবং রানি ভিক্টোরিয়া ভারত সফরে আসার কথা ছিল। তাঁদেরকে স্বাগত জানাতে ‘পাধারো মাহেরে দেশ’–এর সারমর্ম জীবন্ত করে তুলতে মহারাজা গোটা শহরকে টেরাকোটা গোলাপী রঙে সাজিয়ে তুলেছিলেন। তৎকালীন সময়ে গোলাপী রঙ  বা Pink ছিল আত্মীয়তার প্রতীক। সেখান থেকেই জয়পুর “Pink City”নামে পরিচিতি লাভ করে। লর্ড অ্যালবার্ট  ‘Pink City’ নামটি প্রথম ব্যবহার করেন। আজ পর্যন্ত জয়পুরের সেই ঐতিহ্যকে বজায় রাখা হয়েছে। আজও জয়পুরের ঐতিহাসিক গেট ও স্কোয়ারগুলিতে আতিথেয়তার রঙ হিসেবে গোলাপী রঙ ধারণ করে রয়েছে। জয়পুরের ইতিহাসে নিজেকে বুনতে পারদর্শী এই গোলাপি শহর। পুরানো ঐতিহ্যকে বজায় রাখাতে শহরের সমস্ত বাড়ি-ঘর যেন গোলাপী রঙের হয় তার জন্য আইন পাশ করা হয়। তাই জয়পুরের কোন বাড়িঘর গোলাপি ছাড়া অন্য কোন রঙ দিয়ে পেইন্ট করা দেখতে পাওয়া যায় না।
১৯২২ সালে দ্বিতীয় মান সিং সিংহাসন দখল করলে তিনি শহরে স্কুল, হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর যোধপুর, জয়সালমীর এবং বিকানেরের সঙ্গে এক হয়ে ভারতের বৃহত্তম রাজ্য জয়পুর ও রাজস্থানের রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর ‘পিঙ্ক সিটি’ তথা ‘গোলাপী শহর’ হিসাবে খ্যাত এবং খুবই জনপ্রিয় গন্তব্য। যার টানে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক  ছুটে আসেন বছরভর। এখানকার বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলি হল : যন্তর মন্তর, সিটি প্যালেস, হাওয়া মহল, বিড়লা মন্দির এবং বেশ কয়েকটি প্রাচীন কেল্লা। প্রাচীন জয়পুরের প্রধান কেল্লাগুলো শহরের উত্তর-পূর্বে আরাবল্লী পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। আমের কেল্লা (১৫৯২), সবচেয়ে প্রাচীন কেল্লা ও উত্তরভাগে অবস্থিত। জয়গড় কেল্লা (১৭২৬), আমের কেল্লার পাশেই অবস্থিত, মূলত এটি প্রতিরক্ষামূলক কেল্লা। নাহারগড় কেল্লা (১৭৩৪), দক্ষিণভাগে অবস্থিত, বর্তমান শহরের সুউচ্চ দর্শন পেতে আদর্শস্থান।

বাহাদুরপুর বনাঞ্চল(শান্তিপুর) (Bahadurpur Forest Santipur)

 

নদিয়া (Nadia) জেলার শান্তিপুর (Shantipur) ব্লকের বাবলা পঞ্চায়েতের অধীন বাহাদুরপুর গ্রামে (Bahadurpur Village) বাহাদুরপুর বনাঞ্চল অবস্থিত। অঞ্চলটির GPS স্থানাঙ্ক 23.25, 88.4667 । এটি বন দফতর (West Bengal Forest Department) এর অধীনে নদীয়া-মুর্শিদাবাদ ফরেস্ট ডিভিশনের (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) অন্তর্গত একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় পর্ণমোচী অরন্য। অবসর যাপনে সরাসরি প্রকৃতির স্পর্শ অনুভব করার জন্য  ভাল জায়গা। ছোট কিন্তু বেশ ও শান্তিপূর্ণ বন।
বাহাদুরপুর বনে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায়। এটি এই এলাকার মানুষ এবং অনেক প্রাণীর জন্য  সহায়ক। এটি আংশিক পর্ণমোচী ও আংশিক চিরহরিৎ শ্রেণীর সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ দেখতে পারেন। জঙ্গলটি বেশ ঘন। এখানে বট, অশ্বথ, সেগুন,শিশু, বাবলা, নিম, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, অর্জুন এছাড়াও অনেক মূল্যবান গাছ আর হরেক প্রজাতির গুল্ম মিলে সবুজ করে দেবে আপনার অবসরযাপন। ভিতরে পশুপাখি বলতে তেমন কিছুই নেই।তবে কিছু হনুমান ও সাপ দেখা যায়। বন্যপ্রাণী বলতে বেজী, খরগোশ, হনুমান দেখা যায়। সরীসৃপদের ভেতরে দেখা যায় গোখরা, দাঁড়াস গুই সাপ প্রভৃতি। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্থানীয় পাখি দেখতে পারেন, যেমন- দোয়েল, ফিঙে, ডাহুক, শালিক, বাদুড়, বাজ, বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ি ও নাম না জানা হরেক প্রজাতির পাখি। প্রকৃতির সরাসরি স্পর্শ অনুভব করার জন্য প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য ভাল জায়গা।

শান্তিপুর স্টেশন থেকে বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায় এখানে আসতে হলে স্টেশন থেকেই টোটো বুক করতে হবে। অথবা আপনি গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন তবে হ্যাঁ জঙ্গলের একেবারে ভিতরে কোন গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। পুরোটা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করতে পারেন। চারপাশে সবুজ গাছপালা, এই সবুজ পাতা এবং মুক্ত বাতাস ও অক্সিজেন আপনাকে সতেজ করে তুলবে। অবসর কাটানোর জন্য দারুণ জায়গা। আর খুব ভালো পিকনিক স্পট।
জঙ্গলটির ভিতরে বছরে একবার একটা মেলা বসে মাত্র একদিনের জন্য। শুধুমাত্র দোলের দিন এই মেলাটি বসে। বন্ধুরা মিলে একবার ঘুরে আসতে পারেন। সুন্দর শান্ত ছিমছাম পরিবেশ ঘিরে রেখেছে বনটিকে। স্বর্গের মত সুন্দর জায়গা। আপনি যদি প্রকৃতিকে অনুভব করতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এই জায়গায় আসতে হবে। ছোট অ্যাডভেঞ্চারের জন্য দুর্দান্ত জায়গা। ফটোগ্রাফারদের জন্য স্বর্গরাজ্য।  কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে চারিদিকে রাসেল ভাইপার এ ভর্তি। আর এখানে এলে অবশ্যই মশার সাথে যুদ্ধ করার সাহস নিয়ে আসবেন। এই জায়গাটিতে খুব বেশি পর্যটকদের সমাগম ঘটে দেখা যায় না। সুতরাং, কেউ যদি নিঃসঙ্গ জায়গাগুলি দেখতে পছন্দ করেন তবে এই জায়গাটি তার। তবে সন্ধ্যার পর সেখানে থাকবেন না। এটি রাতে নিরাপদ নয়।

লেখক:-
অয়ন বিশ্বাস
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদীয়া।

শান্তিপুর রাষ্ট্রীয় উদ্যান

 


নদীয়া জেলার শান্তিপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে শান্তিপুর কলেজের ঠিক পাশে শান্তিপুর রাষ্ট্রীয় উদ্যানের অবস্থিত। এই রাষ্ট্রীয় উদ্যান বন অধিদপ্তর, আরবান রিক্রিয়েশন ফরেস্ট্রি ডিভিশন, কল্যাণী রেঞ্জের অধীনে। এটি অনেক শোভাময় গাছপালা এবং গাছ দিয়ে সজ্জিত। এখানে একটি সুন্দর পুকুর আছে এবং এখানে বোটিং এর ব্যবস্থাও আছে। অনেক মূল্যবান ও পুরাতন গাছ আছে।

প্রায় পাঁচ দশক আগে তৈরি হয় এই উদ্যানটি ৷ বনদপ্তরের উদ্যোগে  ফুল ও বাহারি পাতার গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে ৷ উদ্যানের ভিতরের একটি পুকুর রয়েছে ৷ পুকুরটি  চারপাশ বাঁধানো, পুকুরের পাশে বসার ব্যবস্থা ৷ ভিতরে রয়েছে একটি নতুন শিশু উদ্যান ৷ সেখানে আছে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থাও । 

আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন সুন্দর নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে। এখানে যে কোন উপলক্ষ উদযাপন করতে পারেন, পিকনিক স্পটের ও ব্যবস্থা আছে। পর্যটকদের টানতে তৈরি করা হচ্ছে ক্যাফেটেরিয়া। উদ্যানটি নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য উদ্যানের ভেতর একটি ট্রেন ও একটি পাখিরালয় তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। আশা সৌন্দার্যায়ন বৃদ্ধির ফলে পর্যটকদের উৎসাহ বাড়বে, মানুষ ভিড় জমাবে শান্তিপুর রাষ্ট্রীয় উদ্যানে। 

এই জায়গাটি সাধারণত বাগানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত কিন্তু বসন্ত ঋতুতে এটি নদীয়া জেলার সবচেয়ে বড় বসন্ত উৎসবের জন্য শান্তিপুরের মানুষের কাছে প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ ও  তরুণ প্রজন্ম অংশ নেয় পবিত্র বা দোল উৎসবের পাশাপাশি বসন্ত উৎসব উদযাপন করতে।

ফুল ও বাহারি পাতার গাছ দিয়ে সাজানো, সুন্দর বাঁধানো পুকুর,মূল্যবান ও পুরাতন শোভাময় গাছপালা দিয়ে সজ্জিত স্থানটি আপনি ফটোগ্রাফি ও শুটিং এর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে শুটিং এর জন্য অনুমতি প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় উদ্যানে প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ২০/- টাকা।

 সহজ সড়ক ও রেল যোগাযোগ এর মাধ্যমে আপনি চলে আসুন শান্তিপুর। শান্তিপুর স্টেশন থেকে টোটোতে পৌঁছাতে পারেন শান্তিপুর রাষ্ট্রীয় উদ্যানে। 

 

ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। কারণ ভারত বহুভাষাভাষীর দেশ। সংবিধানে সমস্ত ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে সমান অধিকার এবং সম্মান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাই শুধু একটি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সকল ভারতবাসীর ভাষা বলে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সকল ভারতবাসী একি ভাষার মানুষ নন। আর একজনের ভাষাকে আর একজনের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা সংবিধান পরিপন্থী। কাজেই ভারতের কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই। এ প্রসঙ্গে বলি, অনেকেই হয়তো জানেন না যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেরও কোনো রাষ্ট্রভাষা নেই।

কিন্তু একটা দেশ চালাতে হলে তো একটা ভাষা দরকার। স্বাধীনতার সময় গান্ধিজীর কথায় শেষ কথা ছিল, তিনি হিন্দি ভাষাকে সবার উপর চাপানোর পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু সবাই মিলে এটাই ঠিক হয়েছিল যে একটা দেশীয় ভাষাকে কেন্দ্র সরকারের ভাষা বলে গ্রহণ করা হবে এবং যতদিন না সমস্ত ভারতবাসী হিন্দি ভাষাকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছে, ততদিন ইংরেজি ভাষা অহিন্দি ভাষীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হবে। যে কারণে সরকার টিভি রেডিও এবং সিনেমার মাধ্যমে হিন্দি ভাষার প্রচার এবং প্রসারের চেষ্টা করে এসেছে। বর্তামানে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হিন্দি ভাষীরা অহিন্দি ভাষীদের তুলনায় নিজেদের বেশি কিছু ভাবতে শুরু করে এবং অজ্ঞতা বা অহঙ্কারের কারণে সবার উপর হিন্দি চাপানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু মানুষ শিক্ষিত হয়েছে। ফলে এখন আর কোনো অহিন্দি ভাষীরা নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে বিশর্জন দিয়ে হিন্দি ভাষা গ্রহণ করতে রাজী নয়। হিন্দি ভাষীদের ঔদ্ধত্যের কারণে এখন আর কেও হিন্দিকে সমস্ত ভারতবাসীর ভাষা বলে মানতে চায় না। আর মানুষ স্বেচ্ছায় না করলে সরকার জোর জোর করে চাপাতে পারবে না। তাহলে সেটা শুধু সংবিধান লঙ্ঘন হবে তাই না, দেশটাও ভেঙ্গে যাবে। তাছাড়া বর্তমানে প্রযুক্তির আবিষ্কারের ফলে এবং ইংরেজি ভাষা বিশ্বভাষায় পরিণত হওয়ায় হিন্দির প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। সমস্ত ভাষারই উন্নতি হয়েছে।

ফলে ভারতে কেন্দ্র সরকার হিন্দি এবং ইংরেজি দুটো ভাষাতেই কাজ চালায়। অর্থাৎ হিন্দি এবং ইংরেজি হল ভারতের কেন্দ্র সরকারের ভাষা। সমস্ত রাজ্য সরকারের ভাষা নয়। আর সংসদে কোনো সাংসদ ওই ২২টা ভাষার যে কোনো একটা ভাষায় বক্তব্য রাখতে পারেন। সাংসদদের হিন্দি বা ইংরেজিতেই বক্তব্য রাখতে হবে এমন নয়। তবে দুটি ভিন্ন ভাষার মানুষ যেভাবে উভয়েই জানে এমন একটা ভাষা ব্যবহার করে কথা বলে, সেরকমি ভারতীয়রা ভিন্নভাষী কারো সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলে।

মনে রাখা দরকার ভারতের সংবিধানে ২২ টা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ভারতবাসীরা নিজেদের এলাকার যে সরকারি ভাষা সেটা শেখে, আর ইংরেজি শেখে নিজ রাজ্যের বাইরে বা দেশের বাইরের মানুৃষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। ভারত এটা বিশাল বড় দেশ। ৮০% মানুষ জীবনে কোনোদিন নিজের রাজ্যের বাইরো বেরোয় না। ফলে ২২টা'র মধ্যে যেকোনো একটা সরকারি ভাষা জানলেই সাধারন মানুষের জীবন কেটে যাবে।

যারা কেন্দ্র সরকারের চাকরি করে তারা ইংরেজি জানলেই হবে। যদি হিন্দি ভাষী এলাকায় বাস করতে চান বা সে এলাকায় চাকরি করতে চান তাহলে সেখানকার স্থানীয় ভাষা তো শিখতেই হবে।

ভারতের “আই এ এস” এবং “আই পি এস” অফিসাররা কেন্দ্র সরকারের কর্মচারী হলেও তাদের যে রাজ্যে পাঠানো হয় সে রাজ্যের ভাষা শেখানো হয়। কারণ তাদের সাধারন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে উত্তর প্রদেশের একজন হিন্দিভাষী ব্যক্তি মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক হয়ে এলেন, তাহলে তাকে বাংলা শেখানো হবে।


ভারতের সংবিধান অনুযায়ী ভারত সরকারের দাপ্তরিক ভাষা দেবনাগরী অক্ষরে হিন্দি এবং ইংরেজি। সংবিধানে কোনো জাতীয় ভাষা নেই। হিন্দি এবং ইংরাজি বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করা হয়; যেমন, সংসদের কাজে, আইন ও বিচার বিষয়ক কাজে, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের মধ্যে বার্তা প্রেরণে ইত্যাদিতে। রাজ্যগুলোর স্বাধীনতা আছে তাদের নিজেস্ব সরকারি ভাষা ঠিক করার। মূলত ১৪.৫-২৪.৫% মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন, তবে মোটামুটি ৪৫% ভারতীয় হিন্দিভাষী অথবা এর কাছাকাছি ভাষায়। এই ৪৫% জনগণ হিন্দি ভাষা ভাষী রাজ্যে বসবাস করেন। বাকি ভারতীয় ভাষাগুলিতে কমবেশি ১০% করে জনগণ কথা বলেন।

রাজ্যগুলি আইন মোতাবেক তাদের সরকারি ভাষা ঠিক করতে পারে। সংবিধানের এই ধারায় রাজ্যগুলি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবে তাই নয়, রাজ্যের নিজেস্ব বিভিন্ন সরকারি কাজেও তারা সেই ভাষা গুলি ব্যবহার করতে পারবে এবং এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে রাজ্য দেশের সাথেও সংযোগ স্থাপন করে।

ভারতের ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ইংরাজি তাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় স্তরে ব্যবহার হত। ১৯৫০ সালে সংবিধান গ্রহণের সময় পরিকল্পনা নেওয়া হয় ১৫ বছরের মধ্যে ধিরে ধিরে ইংরাজির বদলে হিন্দিকে বসানো হবে, কিন্তু পরবর্তীকালে আইন প্রনয়ন করে ইংরাজির ব্যবহার বহাল রাখা হয়। পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী হিন্দিকে একক ভাবে সরকারি ভাষা করতে গেলে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাধা আসতে থাকে। অন্যান্য রাজ্যের সরকারি ভাষাকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দি আজও সরকারি ভাষা হিসাবে চলে আসছে। কিন্তু সংবিধানে কোনো রাষ্ট্র ভাষা নেই।


 ভারতবর্ষে সুপ্রাচীন কাল থেকে বিবিধ ভাষা প্রচলিত রয়েছে। আসুন একনজরে দেখা যাক -- ভারতের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে-

★ ভারতের প্রধান ভাষাগোষ্ঠী হল মূল ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের শাখাগোষ্ঠী ইন্দো-আর্য। ভারতের ৭৮.০৫% মানুষ ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

★ ভারত তথা ভারতীয় উপমহাদেশের দেশীয় ভাষাগোষ্ঠী হল -- দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠী। ভারতের ১৯.৬৪% মানুষ দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

★ ইন্দো-আর্য এবং দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠী ছাড়াও ভারতে আরও কয়েকটি ভাষাগোষ্ঠী রয়েছে। যেমন -- অস্ট্রো-এশিয়াটিক, সিনো-তিব্বতীয়, তাই-কদাই প্রভৃতি। ভারতের ২.৩১% মানুষ এইসব ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।

★ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সরকারি ভাষা বৈচিত্র্য সমীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৯৮-১৯২৮ সালে, স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের নেতৃত্বে।

★ ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, ভারতের বৃহত্তম (ভাষার জনসংখ্যা অনুসারে) ভাষা হল -- হিন্দি। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৫৭.১০% হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেন। 

★ ভারতে প্রচলিত ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান ভাষাগুলি হল -- হিন্দি, বাংলা, কোঙ্কনি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, কাশ্মীরি, রাজস্থানি, সিন্ধি, অসমীয়া, মৈথিলি, ওড়িয়া। ভারতে প্রচলিত দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান ভাষাগুলি হল -- তামিল, তেলেগু, কন্নড়, মালয়ালাম। 

★ ভারতের কোনো সরকারি ভাষা নেই। সংবিধানের অষ্টম তপশীলে ২২ টি ভাষাকে সরকারি রূপে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল -- অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো, ডোগরি, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কনি, মৈথিলি, মালয়ালাম, মেইতেই, মারাঠি, নেপালি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, সাঁওতালি, সিন্ধি, তামিল, তেলেগু, ও উর্দু।

★ ২০০৪ সালে ভারত সরকার 'Classical Language' মর্যাদা চালু করে। এই তালিকায় বর্তমানে রয়েছে -- তামিল (২০০৪), সংস্কৃত (২০০৫), কন্নড় (২০০৮), তেলেগু (২০০৮), মালয়ালাম (২০১৩), ওড়িয়া (২০১৪)।

★ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন (০১/০৭/২০১৮) অনুসারে, ২০১১ জনগণনাতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ভারতে ১৯,৫৬৯ টি বাচিক ভাষা / উপভাষা (Dialect) রয়েছে। ভারতে ১০ হাজার বেশি লোক ব্যবহার করেন, এরূপ ১২১ টি ভাষা রয়েছে। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯৬.৭১% মানুষ সংবিধানের অষ্টম তপশীলে স্বীকৃত ২২ টি ভাষার অন্তর্গত।

******************************************

তথ্যসূত্রঃ- 

1. Wikipedia 

2. The Indian Express

3. Census of India 2011

4. Quora media