Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Thursday, 26 January 2023

সরস্বতী পুজোর দিন জোড়া ইলিশ মাছ পুজো করা হয় কেন?

 

ভোজনপ্রিয় বাঙালিদের বারো মাসে তের পার্বণ। যে কোনও উৎসব, আনন্দ-উদযাপনের একটা 'কমন ফ্যাক্টর' হল খাওয়া - দাওয়া। সেরকমই প্রতিটা পুজো -পার্বণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হরেক রকম পদ। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami) বা সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) হয়। এদিন বহু বাঙালি বাড়িতে নিয়ম আছে জোড়া ইলিস বরণ (Jora Ilish Boron)। অনেকেই সারা বছর মুখিয়ে থাকেন সরস্বতী পুজোর দিন ইলিশ মাছ ( Hilsa Fish) খাওয়ার জন্য। হিন্দু ধর্মে, জোড়া ইলিশ কেনা খুব শুভ বলে মনে করা হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি। তবে এই রীতি, পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা পালন করেন না। এটি পূর্ববঙ্গীয়দের রীতি। শোনা যায়, জোড়া ইলিশ মাছ বরণ পূর্ববঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলিতেই বেশি প্রচলিত ছিল। তার মধ্যে বিক্রমপুর অঞ্চলেই এই প্রথার উদ্ভব বলে মনে করা হয়।
এটি মূলত পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির সঙ্গে সরাসরি সরস্বতী পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই পদটি মূলত শ্রীপঞ্চমীর দিনে খাওয়ার রেওয়াজ। ওই একই দিনে সরস্বতী পুজো হয় বলে একই দিনে দু’টি পালিত হয়।

সরস্বতী পুজোর দিন জোড়া ইলিশ মাছ বরণ পূর্ববঙ্গীয়দের এক অন্যতম লোকাচার। কিছু বাড়িতে আবার এদিন, ইলিশ মাছের বিয়ে দেওয়ার রীতি আছে। যদিও মনে করা হয়, সরস্বতী পুজোর সঙ্গে এই রীতির সরাসরি কোনও যোগ নেই। তবে একই চান্দ্র তিথিতে হয়, দুই অনুষ্ঠান। বসন্ত পঞ্চমীর দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্নান করে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ইলিশ কিনতে যেতেন। এরপর ধান, দূর্বা, তেল, সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ সহযোগে মাছটি উলু ও শঙ্খ ধ্বনি দিয়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে, কুলোর উপর সাজিয়ে রাখা হয়।


 
 কিছু পরিবারে, জোড়া ইলিশ মাছ বরণের সময়, দুটি গোটা বেগুন ও লাউ ডগাও রাখা হয়। অনেক পরিবারের নিয়ম, দুটির জায়গায় একটি ইলিশ মাছা বরণ করা। সেখানে ইলিশের সঙ্গে নোড়া রাখা হয়, যাকে নোড়া দিয়ে জোড়া বা ইলশার বিয়ে বলে। নোড়াটি পুরুষ এবং মাছটিকে নারীর রূপে ধরা হয় এবং উলু- শঙ্খ ধ্বনি, ধান- দূর্বা, তেল, সিঁদুর, কাঁচা হলুদ দেওয়া হয় তখন।  
বহু পরিবারে জোড়া ইলিশ বরণের সময় মুখে টাকা গুঁজে দেওয়া হয়। যিনি মাছ কাটবেন, সাধারণত এই টাকাটি তার প্রাপ্য। তবে মাছা কাটার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। আঁশ এদিক ওদিক যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। কলাপাতার উপর রেখে অনেকে আঁশ ছাড়ান। পরে সেটি মুড়ে যে কোনও পরিষ্কার স্থানে তা পুঁতে দিতে হয়। 



কেন সরস্বতী পুজোয় এই নিয়ম? (Saraswati Puja Rituals) 

এই নিয়ে নানা মতভেদ আছে। তবে মনে করা হয়, পূর্ববঙ্গের মৎসজীবি সম্প্রদায়রা এক সময়, বিজয়া দশমীর পর আর ইলিশ মাছ ধরতেন না। বসন্ত পঞ্চমীর সময় থেকে আবার মাছ ধরতেন তারা। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সময় থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়কালে অপরিণত ইলিশ ধরা পড়ে। আসলে এটাই শিশু ইলিশদের সমুদ্রে ফেরার সময়। শোনা যায়, বহু যুগ আগে পূর্ব বাংলার মৎসজীবিরা এদিন বিশেষ মঙ্গলাচরণের মধ্যে দিয়ে ইলিশ ধরার সূচনা করতেন। 


আবার লোক মুখে শোনা যায়, ব্রাক্ষণরা আগে কট্টর নিরামিষাশী থাকার ফলে মাছ খেতেন না। এরপর ধীরে ধীরে প্রচলন হল শাস্ত্রে বলা আছে যে, মাছেরা আসলে সমুদ্রের ফল বা জল তরু তাই অনায়াসে মাছকে শাক সব্জির মধ্যে ফেলা যায়।

এই ইলিশ রান্নার বিশেষ পদ্ধতিও আছে। কীভাবে রান্না হয় সরস্বতী পুজোর ইলিশ? জোড়া ইলিশ বরণ করার পর এই মাছ রান্নার ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ রীতি। এক ফোড়ন দিয়ে এই রান্না হয়। অর্থাত্‍ ফোঁড়ন এবং সমস্ত তরকারি একসঙ্গেই দিতে হয় কড়াইতে। তার পরে জল দিতে হয়। হলুদ বাটার ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলি কাঁচা অবস্থায়ই ঝোলে দিতে হয়।এই রান্নায় কোনও গুঁড়ো মশলা যেমন গুঁড়ো হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, ইত্যাদি ব্যবহার করার নিয়ম নেই। কাঁচা হলুদ এবং কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করে এই পদ রান্না করা হয়। 

বর্তমানে উৎসবের এই মেজাজ ও রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে কর্ম ব্যস্ততার জন্য। তবে শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। সরস্বতী পুজোয় অনেকেই বাড়িতেই জোড়া ইলিশ খাওয়ার চল রয়েছে এখনও।

Wednesday, 25 January 2023

সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই কেন?

 

ছোটবেলা থেকেই আমরা সকলেই শুনে আসছি সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা, ছোটদের বলেন পুজোর আগে কুল খেলে দেবী সরস্বতী খুব রেগে যান। তবে এর কারণ অনেকেরই অজানা।
মূলত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যা বসন্ত পঞ্চমী নামে পরিচিত। সারা বছর ধরে সকলেই বিশেষ করে কচি কাঁচা ও শিক্ষার্থীরা অপেক্ষা করে থাকেন এই বিশেষ দিনটির জন্য। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যে নামটা খুবই পরিচিত তা হল কুল (Jujube Fruit)। ছোট্ট এই ফল এই পুজোয় বিশেষভাবে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। টক- মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট ফল- কুল প্রায় সকলেরই খুব প্রিয়। কুলের সঙ্গে সরস্বতী পুজোর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা সকলেরই জানা। শুধু ঘরে ঘরে নয় স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠা করে হয় বাগদেবীর আরাধনা। দেবীর সামনে দোয়াতের উপরও একটি নারকেল কুল রাখার নিয়ম রয়েছে। সকাল থেকে উপোস করে অঞ্জলী দিয়ে তার পরেই প্রসাদে কুল খাওয়ার রীতি বহুদিন ধরে। 



পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে মূলত বাজারে কুল পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা, ছোটদের বলেন পুজোর আগে কুল খেলে দেবী সরস্বতী খুব রেগে যান। পরীক্ষায় পাশ করা কিংবা ভাল নম্বর পাওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তবে এর কারণ অনেকেরই অজানা। সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়র পিছনে রয়েছে বহুপ্রচলিত  লোকাচার, শাস্ত্রীয় ও স্বাস্থ্যগত কারণ। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই কারণ গুলি সম্পর্কে।



শাস্ত্র মতে দেবী সরস্বতীকে তুষ্টক রার জন্য মহামুনি ব্যাসদেব বদ্রিকাশ্রমে দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন। শোনা যায়, সে তপস্যার আগে দেবী সরস্বতী তাঁর তপস্যাস্থলের পাশেই একটি কুল বীজ রেখে একটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তানুযায়ী বলা ছিল, যতদিন না কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল পেকে ব্যাসদেবের মাথার উপর পড়বে। ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করতে হবে। তারপরেই দেবী, তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হবেন। সেই শর্তানুযায়ী, ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন এবং যেদিন গাছের নতুন ফল তাঁর মাথায় পড়ে, তিনি বুঝতে পারেন দেবী তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হয়েছেন। বিশেষ দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন দেবীকে বদ্রী/কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন। সেইজন্যই শ্রীপঞ্চমীর দিনই সরস্বতী দেবীকে নিবেদন করার পর কুল খাওয়া হয়। তবে শাস্ত্রে সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া নিষিদ্ধ, এ রকম কোনও কথা নেই।


সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়ার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচলিত রীতি। তার মধ্যে কৃষি প্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। হিন্দু ধর্মে কোনও মরসুমের প্রথম ফলই দেবতাদের উৎসর্গ করে খাওয়ার রীতি রয়েছে। পৌষ-মাঘ এই সময়টাতে বাজারে খুব সহজে এবং ভাল বিভিন্ন রকমের কুল মেলে। আর সেই সময়ই পঞ্চমী তিথিতে হয় সরস্বতী পুজো। তাই বসন্ত পঞ্চমীতেই উৎসর্গ করে তা প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার রীতি। 
প্রচলিত এই লোকাচারের পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। বসন্তকালে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয় চারিদিকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা এই সময়ে ঘরে ঘরে লেগে থাকে। আধ পাকা বা কাঁচা কুল বসন্তকালে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এই ফল মারাত্মক টক হয় যা দাঁতের জন্যে ক্ষতিকারক। তাই এটি খাওয়ার নিয়ম নেই সেই সময়ে।

স্বাস্থ্যগত কারণেও সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া ঠিক নয়। কারণ মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে কুল কাঁচা বা কশযুক্ত থাকে। কাঁচা বা কশযুক্ত কুল থেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।



তথ্যসূত্র: 

১) আনন্দবাজার পত্রিকা

২) নিউজ 18 বাংলা

৩) আজতক বাংলা।

Monday, 2 January 2023

২১ জুন, উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন উত্তরায়ণ (Summer Solstice)




 ২১ জুন, উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন। ভূগোলের পরিভাষায় একে বলা হয় Summer Solstice বা উত্তরায়ণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিরক্ষরেখার উত্তর অংশে যেসব দেশ রয়েছে, সেখানে এখন গ্রীষ্মকাল বা সামার সিজন। আর ২১ জুন এই সামার সিজনের সবচেয়ে বড় দিন। এই নির্দিষ্ট দিনে সূর্যরশ্মি সরাসরি ট্রপিক অফ ক্যানসার বা ক্রান্তীয় কর্কটরেখার উপর পড়ে। আরও ভাল ভাবে বললে বলা যায়, উত্তর অক্ষাংশের উপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে এসে সূর্যরশ্মি পড়ে।


Summer Solstice বা উত্তরায়ণ কীভাবে হয়?

মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দেশগুলিতে বেশি পরিমাণ সূর্যালোক পৌঁছয়। এর ফলে এই সময়কালে এখানে সামার সিজন বা গ্রীষ্মকাল থাকে। একেই বলে Summer Solstice। এই Solstice- এর সময়কালে পৃথিবী যখন তার অক্ষের উপর প্রদক্ষিণ করে, তখন উত্তর গোলার্ধে অংশ সূর্যের দিকে বেশি হেলে থাকে। আর দক্ষিণ গোলার্ধ থাকে কিছুটা দূরে। এই পরিস্থিতিতে ২১ জুন তারিখে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সূর্যালোক এসে পৌঁছয় উত্তর গোলার্ধে। কারণ এইদিনই অক্ষের উপর প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে সবচেয়ে বেশি হেলে থাকে।

Summer Solstice- এর সময় পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর প্রদক্ষিণকালে সূর্যের দিকে যে হেলে থাকে, এই কৌণিক পরিমাণ ২৩.৫ ডিগ্রি। নাসার মতে, এই বিশেষ দিন অর্থাৎ ২১ জুন যে পরিমাণ সূর্যালোক নিরক্ষরেখায় পৌঁছয়, তার থেকে ৩০ শতাংশ বেশি এনার্জি বা সূর্যালোক উত্তর গোলার্ধে পৌঁছয়। তার ফলেই এই নির্দিষ্ট দিনে উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন দেখা যায়। মূলত ২০, ২১ এবং ২২ জুন— এই তিনদিনই বেশি সূর্যালোক পৌঁছয় উত্তর গোলার্ধে। তার মধ্যে ২১ জুন সবচেয়ে বেশি সূর্যরশ্মি পৌঁছয় উত্তর গোলার্ধে।

তবে Summer Solstice বা উত্তরায়ণ অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন মানে কিন্তু তাড়াতাড়ি সূর্যোদয় আর দেরি করে সূর্যস্ত— এই ঘটনা বোঝায় না। এমনকি উত্তর গোলার্ধের সর্বত্রই কিন্তু এই অধিক পরিমাণ সূর্যরশ্মি পৌঁছয় না। সবটাই নির্ভর করে অক্ষাংশগত অবস্থানের উপর।

২৫শে ডিসেম্বর সত্যি কি বড় দিন?

 


আমার সকলেই জানি ২৫শে ডিসেম্বর বড় দিন। এই পবিত্র দিনে যিশু খ্রিস্টের জন্ম দিন পালন করা হয়। ২৫শে ডিসেম্বর সত্যি কি বড় দিন? না আদতে তা নয়।আমরা ছোটবেলায় পাঠ্যবইতে দীর্ঘতম দিন এবং দীর্ঘতম রাতের কথা কমবেশি সবাই পড়েছি। দিনের দৈর্ঘ্যের বিচারে ২১শে জুন, বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন। আর ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিন বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব।

২৫শে ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন বা ক্রিসমাস উৎসব পালিত হয়। এই পবিত্র দিনে যিশু খ্রিস্টের জন্ম দিন পালন করা হয়। এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা যায় না। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। প্রকৃতিগতভাবে একটি খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠান হলেও অ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও মহাসমারোহে বড়দিন উত্‍সব পালন করে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে উত্‍সবের আয়োজনে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ভাবনার সমাবেশও দেখা যায়। উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, এবং বড়দিনের বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উত্‍সব উদযাপনের অঙ্গ।

২১শে জুন, হল বছরের সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন। সৌরজগতের নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার সময় একদিকে একটু হেলে থাকে। ফলে কখনো উত্তর গোলার্ধ সূর্যের কাছে আসে, কখনো দক্ষিণ গোলার্ধ।

[এখানে জেনে রাখা দরকার উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধ বলতে কোন অঞ্চলকে বোঝায়। উত্তর গোলার্ধ হল- সমগ্র উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান (বিদেশী শাসিত অঞ্চলগুলো ব্যতীত)। পূর্ব তিমুর এবং ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ গোলার্ধের অংশ ব্যতীত এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ। আফ্রিকা মহাদেশের দুইতৃতীয়াংশ। দক্ষিণ আমেরিকার এক-দশমাংশ।
এবং এন্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার নয়-দশমাংশ, আফ্রিকার দক্ষিণভাগের একাংশ, এবং এশিয়ার কিছু দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ, চারটি মহাসাগর (ভারত, দক্ষিণ আটলান্টিক, দক্ষিণ মহাসাগর, এবং দক্ষিণ প্রশান্ত) এবং ওশেনিয়ার অধিকাংশ। এশিয়া মহাদেশের কিছু মহাদেশীয় দ্বীপও দক্ষিণ গোলার্ধের অন্তর্ভুক্ত।]
মূলত ঋতু পরিবর্তনের পাশাপাশি দিন ও রাতের সময়কালও বদলে যায়। বছরের ৩৬৫ দিন কখনো সমান থাকে না। কখনো দিন ছোট হয় এবং রাত বড় হয়, আবার কখনো দিন বড় হয় এবং রাত ছোট হয়। ঠিক এমনভাবেই, বছরে এমন একটি দিন আসে, যাকে সবচেয়ে বড় দিন এবং রাত সবচেয়ে ছোট হিসেবে ধরা হয়। ২১শে জুন, উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে বড় দিন। ভূগোলের পরিভাষায় একে বলা হয় Summer Solstice বা উত্তরায়ণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিরক্ষরেখার উত্তর অংশে যেসব দেশ রয়েছে, সেখানে এখন গ্রীষ্মকাল বা সামার সিজন। আর ২১ জুন এই সামার সিজনের সবচেয়ে বড় দিন। এই নির্দিষ্ট দিনে সূর্যরশ্মি সরাসরি ট্রপিক অফ ক্যানসার বা ক্রান্তীয় কর্কটরেখার উপর পড়ে। আরও ভাল ভাবে বললে বলা যায়, উত্তর অক্ষাংশের উপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে এসে সূর্যরশ্মি পড়ে।

Summer Solstice- এর সময় পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর প্রদক্ষিণকালে সূর্যের দিকে যে হেলে থাকে, এই কৌণিক পরিমাণ ২৩.৫ ডিগ্রি। নাসার মতে, এই বিশেষ দিন অর্থাৎ ২১ জুন যে পরিমাণ সূর্যালোক নিরক্ষরেখায় পৌঁছয়, তার থেকে ৩০ শতাংশ বেশি এনার্জি বা সূর্যালোক উত্তর গোলার্ধে পৌঁছয়। তার ফলেই এই নির্দিষ্ট দিনে উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন দেখা যায়। 

Sunday, 1 January 2023

কর্কটক্রান্তি রেখা স্থান পরিবর্তন




পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সাড়ে তেইশ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত পূর্ণবৃত্ত কাল্পনিক রেখাটি হলো কর্কটক্রান্তি রেখা। কিন্তু জানেন কি এই কর্কটক্রান্তি রেখাটি প্রতি বছর সরে যাচ্ছে। আমরা জানি যে, কর্কটক্রান্তি রেখা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে। আমরা কৃষ্ণনগরের কাছে বাহাদুরপুর গেলে দেখতে পাব যে, এক জায়গায় খুঁটিতে লেখা আছে – “YOU ARE NOW CROSSING TROPIC OF CANCER”।

আপনারা কি জানেন, সেই কর্কটক্রান্তি রেখার সূচক খুঁটির অবস্থান প্রতিবছর পরিবর্তন ঘটছে।
আমরা যদি আজ সেই খুঁটি দেখে আসি তাহলে আমরা যে স্থানে দেখব, পরের বছর দেখব সেই স্থানে আর নেই, একটু সরে গেছে। অনেক সময় ভূগোলের ছাত্রছাত্রী সেখানে গিয়ে GPS গ্রাহক যন্ত্রের সাহায্যে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ মেপে আবার সঠিক জায়গায় খুঁটিটি পুঁতে দিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল – কেন খুঁটিটির অবস্থান পরিবর্তন ঘটছে ?
আসলে প্রতিবছর কর্কটক্রান্তি রেখা একটু একটু করে সরে যাচ্ছে। পৃথিবী তার উল্লম্বরেখা অর্থাৎ অক্ষের সাথে সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে। আসলে এটি গড় অবস্থান। একচল্লিশ হাজার বছর অন্তর এটি ২২.১-২৪.৫ ডিগ্রি ব্যবধানে থাকে।
পৃথিবীর উল্লম্বরেখার পরিবর্তন হয় বলেই কর্কটক্রান্তি, মকরক্রান্তি, সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত রেখা একটু একটু করে সরে যায়।
২৩ ডিগ্রী ২৬ মিনিট ২২ সেকেন্ড অক্ষাংশ রেখাটিকে কর্কটক্রান্তি রেখা বলা হলেও লম্ব আলোকপাতে আসল অবস্থান নির্ভর করে পৃথিবীর হেলে থাকার কৌণিক পরিমাণের উপর। আর সেই কোণটি প্রতি ৪১,০০০ বছরের একটি চক্রাকার পর্যায়ক্রমে ২১.৫ থেকে ২৪.৫ ডিগ্রীর মধ্যে বদলাতে থাকে। সেই হিসাবে বর্তমান পর্যায়ে কর্কটক্রান্তি রেখার অবস্থান প্রতি বছর আধ সেকেন্ড করে কমে আসছে। এছাড়া ধীর পরিবর্তন ছাড়াও আহ্নিক অক্ষটি ঘুর্ণনরত লাট্টুর মতই স্থায়ী না থেকে প্রিসেশন নামে একটি বলয়াকার গতি এবং ন্যুটেশন নামে একটি দোদুল্যমান গতি পরিদর্শন করে। ন্যুটেশনের পর্যায়কাল পৃথিবীর ক্ষেত্রে ১৮.৬ বছর এবং কৌণিক পরিমাণ প্রায় সাড়ে নয় সেকেন্ড। রেখাটি নির্দিষ্ট নয় এবং এটি প্রত্যেক বছর ১৫ মিটার(০.৪৮৬″) করে দক্ষিণদিকে সরে যাচ্ছে। রেখাটি ১৯১৭ সালে ছিল ২৩°২৭′ এবং ২০৪৫ সালে ২৩°২৬'অক্ষাংশে পৌঁছাবে।