জাতীয় তাঁত দিবস। প্রতি বছর ৭ আগস্ট পালিত হয় জাতীয় তাঁত দিবস।১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউন হলে এই দিনেই স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, বিদেশি পণ্য বর্জন করে স্বদেশী পণ্য গ্রহণ। তার স্মরণে ৭ই অগাস্ট জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে থাকে।
দেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে তুলে ধরতে এবং তাঁতিদের সম্মানের উদ্দেশ্যেই ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি বছর এই দিনটিকে জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালের ৭ই অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবসের সূচনা করেছিলেন।
তাঁত হচ্ছে এক ধরনের যন্ত্র যা দিয়ে তুলো বা তুলো থেকে উৎপন্ন সুতো থেকে কাপড় তৈরি হয়। সাধারণত তাঁত নামক যন্ত্রটিতে সুতো কুণ্ডলী আকারে টানটান করে ঢুকিয়ে দেওয়া থাকে । লম্বালম্বি সুতাগুলিকে টানা এবং আড়াআড়ি সুতাগুলিকে পোড়েন বলা হয়। যখন তাঁত চালু করা হয় তখন নির্দিষ্ট সাজ অনুসারে সুতা টেনে নেয়া হয়। তাঁতের আকার এবং এর ভেতরের কলা কৌশল বিভিন্ন রকমের হতে পারে। বাংলা তাঁত যন্ত্রে ঝোলানো হাতল টেনে সুতো জড়ানো মাকু (spindle) আড়াআড়ি ছোটানো হয়। মাকু ছাড়াও তাঁতযন্ত্রের অন্যান্য প্রধান অঙ্গগুলি হল - শানা, দক্তি ও নরাজ । শানার কাজ হল টানা সুতার খেইগুলিকে পরস্পর পাশাপাশি নিজ নিজ স্থানে রেখে টানাকে নির্দিষ্ট প্রস্থ বরাবর ছড়িয়ে রাখা। শানার সাহায্যেই কাপড় বোনার সময় প্রত্যেকটি পোড়েনকে ঘা দিয়ে পরপর বসানো হয়। শানাকে শক্ত করে রাখার কাঠামো হল দক্তি। একখানি ভারী ও সোজা চওড়া কাঠে নালী কেটে শানা বসানো হয় আর তার পাশ দিয়ে কাঠের উপর দিয়ে মাকু যাতায়াত করে। শানাটিকে ঠিক জায়গায় রাখার জন্য তার উপরে চাপা দেওয়ার জন্য যে নালা-কাটা কাঠ বসানো হয় তার নাম মুঠ-কাঠ। শানা ধরে রাখার এই দুখানি কাঠ একটি কাঠামোতে আটকে ঝুলিয়ে রাখা হয় । এই সমগ্র ব্যবস্থাযুক্ত যন্ত্রটির নাম দক্তি ।
শানায় গাঁথা আবশ্যকমত প্রস্থ অনুযায়ী টানাটিকে একটি গোলাকার কাঠের উপর জড়িয়ে রাখা হয়, একে বলে টানার নরাজ । আর তাঁতি যেখানে বসে তাঁত বোনে , সেখানে তার কোলেও একটি নরাজ থাকে- তার নাম কোল-নরাজ । টানার নরাজের কাজ হল টানার সুতাকে টেনে ধরে রাখা আর কোল-নরাজের কাজ হল কাপড় বোনার পর কাপড়কে গুটিয়ে রাখা । "তাঁত বোনা" শব্দ কটি এসেছে "তন্তু বয়ন" থেকে। তাঁত বোনা যার পেশা সে হল তন্তুবায় বা তাঁতী।
তাঁত শিল্প মূলত কুটির শিল্প। দিনের পর দিন আমাদের দেশে ঐতিহ্যময় কুটির শিল্পগুলি ধ্বংসপ্রায় । তাই তাঁত ও হ্যান্ডলুম ব্যবসায়ীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকার তৎপর হয়ে উঠেছে। এই বিশেষ দিনটিতে তাঁতিদের কারুশিল্প এবং কারুকার্যর জন্য ‘সন্তু কবি’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁত শিল্পীরা এইজন্য তাঁদের শৈল্পিক কাজে আরো বেশি উৎসাহী হন।
তবে এই হাতে বোনা সুতির কাপড় বহুদিন আগে থেকে ভারতে প্রচলিত। প্রাচীনে রাজা এবং রানিরা যে সমস্ত হাতে বোনা পোশাক পরতেন তা অত্যন্ত ঐশ্বর্য এবং সৌর্যের পরিচয় বাহক। তাঁত শিল্প আসলে কুটির শিল্প হলেও, তা আমাদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে রেখেছে আষ্টেপৃষ্ঠে।
তথ্যসূত্র: Editorji বাংলা, Calcatanews, প্রতিবেদন, Wikipedia.
লেখক:
অয়ন বিশ্বাস
ঘোড়ালিয়া,শান্তিপুর,নদিয়া।