Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Monday, 28 April 2025

জোনাকির আলো!

 

জোনাকি সত্যিই রহস্যময়। সমুদ্রের তলদেশে অনেক প্রাণীই আলো জ্বালতে পারে। কিন্তু স্থলভাগে শুধু জোনাকি। জোনাকি পোকা এই আলো পেল কোথায়? কীভাবেই বা জ্বলে ওই আলো? আলো মানেই তাপ, জোনাকি কীভাবে সেই তাপ সহ্য করে? কিংবা আলো জ্বালাতে গিয়ে জোনাকি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায় না কেন? জোনাকির দেহের পেছন দিকে বক্স লাইটের মতো একটা জিনিস আছে। তার ভেতরে থাকে দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। লুসিফেরাস ও লুসিফেরিন। লুসিফেরাস আলো উৎপন্ন করে। যখন কোনও বস্তু থেকে আলো উৎপন্ন হয়, সেখানে তাপ উৎপন্ন হয়। বৈদ্যুতিক বাল্বের জ্বালানোর আধঘণ্টার মধ্যে বাল্বটা ভীষণ গরম হয় ওঠে। তবে সাধারণ বাল্বের তুলনায় এনার্জি সেভিং লাইটগুলো কম তাপ উৎপন্ন করে। এগুলো গরমও কম হয়। এজন্যই এদেরকে এনার্জি সেভার বলে। সাধারণ বৈদ্যুতিক বাল্ব যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি নেয়, তার ৯০ ভাগ তাপ উৎপাদনে ব্যয় হয়। বাকি ১০ ভাগ থেকে আসে আলো। এনার্জি সেভার তাপ উৎপন্ন করে। তুলনায় আলো উৎপন্ন করে অনেক বেশি। জোনাকি পোকার ক্ষেত্রেও এনার্জি সেভের ঘটনা ঘটে। তবে জোনাকি পোকার এনার্জি সেভিং ক্ষমতা টিউব লাইটের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আসলে জোনাকির আলো একেবারে ঠান্ডা। তাই নিজের আলোয় জোনাকি জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায় না। লুসিফেরাসের কাজ হচ্ছে জোনাকি পোকার খাদ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আলো ও তাপশক্তি উৎপন্ন করা। লুসিফেরিন উৎপন্ন তাপকে ঠান্ডা করে সেগুলোকেও আলোতে পরিণত করে। আবার উৎপন্ন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটানো কাজটাও করে লুসিফেরিন। সুতরাং জোনাকি পোকা হল পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট আলো উৎপন্নকারী প্রাণী। 


তবে, অন্ধকারে পথ দেখার জন্য জোনাকি আলো জ্বালে না। জোনাকির আলো আসলে তার ভাষা। মানুষ ভাব বিনিময়ের জন্য কথা বলে। কিন্তু বেশির ভাগ কীট-পতঙ্গই মুখ দিয়ে শব্দ করতে পারে না। কেউ ডানা ঝাপটে, কেউ পা দিয়ে শব্দ করে ভাবের আদান-প্রদান করে। জোনাকি সেটাও করতে পারে না। তার ভাব বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম হলো তার আলো। জোনাকির আলো একটানা জ্বলে না। একবার জ্বলে এবং নেভে। সাধারণত সমুদ্রের সিগন্যাল লাইটগুলোও এভাবে জ্বলে আরে নেভে। তাই বলাই যায়, জোনাকি এভাবে আলো জ্বালিয়ে নিভিয়ে অন্যদের কাছে সিগন্যাল পাঠায়। মানে ভাব বিনিময় করে। প্রজননের জন্যই জোনাকি মূলত আলো জ্বালে। পুরুষ জোনাকিগুলো উড়তে উড়তে আলো জ্বালে। অর্থাৎ সিগন্যাল পাঠায়। সিগন্যাল পাঠায় স্ত্রী জোনাকির উদ্দেশ্যে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন ঝোপের আগায় কিংবা ঘাসের ওপর বসে থাকে। পুরুষ জোনাকির সিগন্যাল বা সঙ্কেত এসে ধরা পড়ে তাদের মস্তিষ্কে। স্ত্রী জোনাকিরা তখন সেই সঙ্কেতে সাড়া দেয়। নিজেরাও সঙ্কেত পাঠায়। সঙ্কেত লক্ষ্য করে ছুটে যায় পুরুষ জোনাকির কাছে। তারপর তাদের বন্ধুত্ব হয়। তারপর মিলন। শত শত জোনাকির সঙ্কেত থেকে সঠিক সঙ্কেতটা স্ত্রী জোনাকি চিনতে পারে কীভাবে? আসলে প্রত্যেক জোনাকির সঙ্কেতের ধরণ আলাদা আলাদা। স্ত্রী জোনাকির যে সঙ্কেতটা পছন্দ হয়, ঠিক সেই পুরুষটাকে খুঁজে বের করে। পৃথিবীতে নানা প্রজাতির জোনাকি আছে। শুধু মাত্র নিজের প্রজাতির মধ্যেই জোড়া বাঁধে জোনাকিরা। প্রত্যেক জোনাকিই আলোর সঙ্কেতের ধরণ দেখে বুঝতে পারে সেটা তার স্বজাতির না অন্য প্রজাতির। অন্য প্রজাতির আলোর সঙ্কেতে সাড়া দেয় না কোন স্ত্রী বা পুরুষ জোনাকি।



তথ্যসূত্রঃ- কালের কন্ঠ 

শান্তিপুর বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ

 শান্তিপুরে রয়েছে বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ, যেটির স্থাপনকাল ১৩১৬ বঙ্গাব্দ। এর একপাশের অংশ পরিচিত শ্রী লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি মন্দির (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ) নামে, এবং অন্যপাশের অংশ পরিচিত কুমার প্রমথনাথ রায় স্মৃতি মন্দির (১৩৭৫ বঙ্গাব্দ) নামে। সেযুগে ধর্ম ও নীতির শিক্ষা দেওয়াই ছিল এই “বালক সমাজ” এর মূল উদ্দেশ্য। এখানে এখনো রাখা আছে ১২০০ টি দুষ্প্রাপ্য পুঁথি। বর্তমানে একশোর কাছাকাছি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এখানে এখনো পৌরাণিক সাহিত্যের পঠনপাঠন ও পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।



তোপখানা মসজিদ : শান্তিপুর


 শান্তিপুরের আনাচ কানাচে কান পাতলেই তাই শোনা যায় ইতিহাসের ফিসফাস শব্দ। শান্তিপুর শুধু চৈতন্যতীর্থই নয়, সব ধর্মেরই সহাবস্থান ঘটেছে এখানে। তার মূল আকর্ষণের কেন্দ্রে  মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে তৈরি এই তোপখানা মসজিদ। বয়স আনুমানিক ৪০০ বছর। ইদের দিন তো বটেই নানা মুসলিম পরব যেমন ইদ-উল-ফিতর, ইদ-উদ-জোহা, ফতেয়া-দোয়াজ-দাহাম উপলক্ষ্যেও প্রার্থণার জন্য এই মসজিদে জমায়েত হয় বিপুল। শতাব্দী প্রাচীন তোপখানা মসজিদ নিয়ে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। শোনা যায়, মুসলিম শাসকদের সময় এখানে পাঠান সৈন্যদের একটি সেনা ছাউনি ও অস্ত্রাগার ছিল। সেই অস্ত্রাগার থেকেই নাম হয় 'তোপখানা'। মসজিদের পাশাপাশি অনেকগুলি মুসলিম সৌধ নির্মিত হয়েছিল সেই সময়। কালের নিয়মে তার সবকটিই প্রায় ভগ্নপ্রায়। বেশ কিছু বিলুপ্তও হয়ে গেছে।

তোপখানা মসজিদের নির্মাণকাল এবং নির্মাণপর্ব নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। ইতিহাস বলে, তোপখানা মসজিদের নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালের শেষ দিকে। শান্তিপুরের তৎকালীন ফৌজদার গাজী মোহাম্মদ ইয়ার খান ১৬৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই সুদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করেন। আবার এমনও শোনা গেছে, পাঠান আমলে এখানে সন্ত হজরত শাহ সৈয়দ মেহবুব আলম নামের একজন কাজী থাকতেন। জনশ্রুতি তাঁর অনেক রকমের ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল, যার মাধ্যমে তিনি ধর্ম নির্বিশেষে সবার সেবা করতেন। এখানে তিনি এক মাজার তৈরি করেন। সেই মাজার থেকেই পরবর্তীকালে গড়ে ওঠে এই মসজিদ। আবার পাঠান সৈন্যরা প্রার্থনার জন্য এমন মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এমন কথাও শোনা যায়।

ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন ধর্মপরায়ণ ফৌজদারী গাজী মহম্মদ ইয়ার খাঁ এর উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। আকবর বাদশাহের আমলে শান্তিপুরে এক সেনানিবাস স্থাপিত হয়। ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে সৈয়দ মহবুব আলম আসেন শান্তিপুরে। তিনি নাকি ছিলেন আদি পুরুষ।

স্থানীয় সেনা নিবাসের ব্যয়ভার বহন করার জন্য বাদশাহ আলমকে প্রচুর সম্পত্তি দান করেন। আর তার আদেশেই ইয়ার খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করান। এই ইমরতটি পুবমুখী। সামনের দিকে ত্রিখিলান প্রবেশপথ। উপরের দেওয়াল গুলোতে আরবি এবং ফারসি হরফে পাশাপাশি নিবন্ধগুলি চোখে পড়ার মতো। এ মসজিদ স্থাপিত ভিত্তি বেদীর ওপর। এই বেদী একটা বিরাট গম্বুজ আর আটটা ছোট বড় মিনারের সমন্বয়ে তৈরি। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে গাজী এয়ার মহম্মদ এবং তাঁর পুত্রের সমাধিও আছে। তোপখানা মসজিদ শান্তিপুরের এক প্রাচীনতার সাক্ষী।

সুভাষচন্দ্র বসু এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

 ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র বসু এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দামানেই প্রথমবার ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। সাল ১৯৪২ দেশে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। অক্ষশক্তির জাপানি সেনা পোর্ট ব্লেয়ার আক্রমণ করে এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দখল করে৷ সে সময় পুরো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ব্রিটিশদের একমাত্র ঘাঁটি ছিল পোর্ট ব্লেয়ার। এদিকে, ১৯৪৩ সালের ২১ শে অক্টোবর সিঙ্গাপুরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ সরকার (Provisional Government of Free India) গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৩ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর জাপান আজাদ হিন্দ সরকারকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হস্তান্তর করে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জই হল ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তিলাভকারী প্রথম ভারতীয় অঞ্চল। ২৯-৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৪৩ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সফরে আসেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে। ১৯৪৩ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের মাটিতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ারেই (আন্দামান ক্লাবের সামনে জিমখানা মাঠে, যা বর্তমানে নেতাজী স্টেডিয়াম নামে পরিচিত) প্রথমবার জাতীয় তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন। এই সফরকালে রস দ্বীপে অবস্থিত প্রাক্তন ব্রিটিশ মুখ্য কমিশনারের বাসভবনে অবস্থান করেছিলেন। এই সফরকালেই নেতাজী আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নতুন নামকরণ করেন, যথাক্রমে 'শহীদ' ও 'স্বরাজ'। ১৯৪৫ সালের আগস্টে ব্রিটিশরা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পুনর্দখল করে এবং আজাদ হিন্দ সরকারের পতন ঘটে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে নেতাজীর অন্তর্ধান ঘটে এবং ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর এক বিরাট শূন্যতা... 




অবশেষে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর, ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সফরে এসে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র বসু এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তিনটি দ্বীপের নতুন নামকরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রস দ্বীপ (Ross Island)-এর নামকরণ করেন ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ’ (Netaji Subhas Chandra Bose Dweep) ; নীল দ্বীপ (Neil Island)-এর নামকরণ করেন ‘শহীদ দ্বীপ’ (Shaheed Dweep) এবং হ্যাভলক দ্বীপ (Havelock Island)-এর নামকরণ করেন ‘স্বরাজ দ্বীপ’ (Swaraj Dweep)।

প্রধানমন্ত্রী নেতাজীর নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ৭৫ টাকার একটি বিশেষ মুদ্রাও প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি নেতাজীর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাসও করেন মোদী৷

এরপর এই দিনটা সারা দেশ পরাক্রম দিবস হিসাবে উদযাপন করে।


নেতাজির ১২৬ তম জন্মদিবস উপলক্ষে আন্দামানে একটি স্মৃতিস্তম্ভেরও উদ্বোধন করেন মোদি।




এবার একনজরে দেখা যাক এই তিনটি দ্বীপগুলি সম্পর্কে।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ (Netaji Subhas Chandra Bose Dweep) : নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু দ্বীপ হল আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপের পূর্বনাম ছিল রস দ্বীপ। তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামুদ্রিক সমীক্ষক ড্যানিয়েল রসের নামে নামকরন করা হয়েছিল রস দ্বীপ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বীপের নতুন নামকরণের আগে পর্যন্ত কার্যকরী ছিল। দ্বীপটি কেন্দ্রীয় পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৩ কিমি (২ মাইল) পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই দ্বীপটি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার দ্বীপপুঞ্জ উপবিভাগের অন্তর্গত এবং প্রশাসনিক ভাবে দক্ষিণ আন্দামান জেলার অন্তর্গত। অরণ্য অধ্যুষিত এই দ্বীপটি ১.২৫ কিমি লম্বা, ০.৫২ কিমি চওড়া এবং এই দ্বীপটির আয়তন ০.৩১২ বর্গকিমি। ১৯৭৯ সালে এই দ্বীপে কেন্দ্র তৈরি করে ভারতীয় নৌসেনা। এই দ্বীপের উত্তর প্রান্তে একটি লাইট হাউস রয়েছে। সমগ্র আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে এই দ্বীপেই ব্রিটিশরা প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। এই দ্বীপে তাল ও নারিকেল গাছ এবং ময়ূর ও চিতল হরিণ রয়েছে। বিশ শতকের গোড়ায় হরিণদের সেখানে রাখা হয়েছিল ব্রিটিশদের শিকার শিকার খেলার জন্য। এখন এই দ্বীপে হরিণরা মুক্ত বিচরণ করে। এই দ্বীপ জুড়ে পড়ে রয়েছে ব্রিটিশ শাসনের কঙ্কাল। বুনোলতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় কমিশনারের অতীত বাংলো, গির্জা, বেকারি এবং পরিচয়হীন অজস্র দেওয়াল। দ্বীপের ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ একটি পর্যটক আকর্ষণ।  সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় "নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ"।


শহীদ দ্বীপ (Shaheed Dweep): শহীদ দ্বীপের পূর্বনাম ছিল নীল দ্বীপ, যা ব্রিটিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন নীলের নামে নামকরণ করা হয়েছিল৷ এই দ্বীপটি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রিচি'র দ্বীপপুঞ্জ উপবিভাগের অন্তর্গত এবং প্রশাসনিক ভাবে দক্ষিণ আন্দামান জেলার অন্তর্গত। দ্বীপটি পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৩৬ কিমি (২২ মাইল) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই দ্বীপটি ৩.৭ কিমি লম্বা, ৬.৩ কিমি চওড়া এবং এই দ্বীপটির আয়তন ১৩.৭ বর্গকিমি।দ্বীপটি রিচির দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত এবং হ্যাভলক দ্বীপ এবং রোজ দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত । এটি একটি তুলনামূলক সমতল দ্বীপ, এবং বেশিরভাগ জমি ধান চাষের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়েছিল সেকারণে বেশ কিছু বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, এর ফলস্বরূপ, বনভূমির পরিমাণ কমে গেছে এবং অবশিষ্ট বনভূমি শহীদ দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম দিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। শহীদ দ্বীপ বনভূমির অভাবের ফলে হ্যাভলকের চেয়ে এক বা দুই ডিগ্রি বেশি উষ্ণ থাকে। এই দ্বীপের সৈকতে ছড়িয়ে অজস্র সাদা প্রবাল। ইতিউতি ছড়ানো নানা রঙের ঝিনুক, ছোট শাঁখ। এসব অবশ্য সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ। এই দ্বীপের উপকূলে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ দেখা যায়। এই দ্বীপে রয়েছে চারটি সৈকত ; যথা : রামনগর সৈকত, সীতাপুর সৈকত, ভরতপুর সৈকত ও লক্ষ্মণপুর সৈকত। এই দ্বীপে রয়েছে হাওড়া ব্রিজ নামে পরিচিত একটি প্রাকৃতিক সেতু (Natural Arch)। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এর নামকরণ করা হয় শহীদ দ্বীপ ।


স্বরাজ দ্বীপ (Swaraj Dweep): স্বরাজ দ্বীপের পূর্বনাম ছিল হ্যাভলক দ্বীপ, যা ব্রিটিশ জেনারেল স্যার হেনরি হ্যাভলকের নামে নামকরণ করা হয়েছিল৷ এই দ্বীপটি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের রিচি'র দ্বীপপুঞ্জ উপবিভাগের অন্তর্গত এটি পিল দ্বীপ এবং নিল দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত।এবং প্রশাসনিক ভাবে দক্ষিণ আন্দামান জেলার অন্তর্গত। দ্বীপটি রাজধানী শহর পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৪১ কিমি (২৫ মাইল) উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এই দ্বীপটি ১৮ কিমি লম্বা, ৮ কিমি চওড়া এবং এই দ্বীপটির আয়তন ৯২.২ বর্গকিমি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের একটি হল এই দ্বীপ। বাঙালি অধ্যুষিত গোবিন্দনগর হল এই দ্বীপের সবচেয়ে জমজমাট এলাকা। নারিকেল, তাল, মহুয়ার গভীর জঙ্গলে ঢাকা ছোটো ছোটো পাহাড়ি টিলা অধ্যুষিত এই দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত সৈকত হল রাধানগর সৈকত। অনেকটা আধফালি চাঁদের আকৃতি নিয়ে বেঁকে গিয়েছে রূপোলি বালির এই সৈকত। সবুজ গাছপালায় ভর্তি পাহাড়ি টিলার পাশ থেকেই যেন পান্না-সবুজ জল ঢুকে এসেছে ভিতরে। এছাড়া আরো চারটি সৈকত, যথা : এলিফ্যান্ট সৈকত, গোবিন্দনগর কালাপাথর সৈকত, বিজয়নগর সৈকত রয়েছে। এলিফ্যান্ট সৈকত প্রবাল প্রাচীরের জন্য বিখ্যাত। এই দ্বীপের উপকূলে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ দেখা যায়। গত ৩০শে ডিসেম্বর 2018 সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্বরাজ দ্বীপ হিসাবে এর নামকরণ করেছিলেন। 




পৃথিবীর চোখ (eye of earth)

 প্রতিটি প্রাণীর যেমন চোখ রয়েছে। সেই চোখ দিয়ে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করেন। চোখ হল এমন একটি অংশ যার মাধ্যমে প্রাণীজগতের জীবনযাপন হয়। তবে জানেন কী পৃথিবীর একটি চোখ রয়েছে। পৃথিবীর চোখ!! পৃথিবী দেখতে না পেলেও পৃথিবীর চোখ (eye of earth) কিন্তু ঠিকই রয়েছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। কোথায় রয়েছে এই চোখ।



 'পৃথিবীর চোখ' ('The Eye of the Earth') ক্রোয়েশিয়ার একটি অসাধারণ সুন্দর প্রাকৃতিক প্রস্রবণ। নীল এবং সবুজ রঙের বিভিন্ন শেডের চোখের মণির সঙ্গে অত্যন্ত সাদৃশ্য থাকার কারণে এই প্রস্রবণটি-কে 'পৃথিবীর চোখ' বলা হয়। প্রথম দেখায় নীল রঙের দানবীয় চোখ মনে হতে পারে!! কিন্তু এটি মূলত একটি নদী! ক্রোয়েশিয়ার দালমাটিয়া অঞ্চলে ইজবোর সেটিন (Izvor Cetine) নামক নদী দেখতে হুবুহু চোখের মত। "ইজবোর সেটিন" ক্রোয়েশিয়ান শব্দের অর্থ সেটিনা নদীর উৎস (Source of Cetina)। ইজবোর সেটিন নদীর পানি খুবই ঠান্ডা (৪ ডিগ্রী থেকে ৭ ডিগ্রী )। এমন কি গ্রীষ্মকালেও এর পানি গরম হয় না। নদীটির গভীরতা প্রায় ৫০০ফু। সুউচ্চ দিনারা পর্বতের নীচে প্রবাহিত এই নদীকে ড্রাগনের চোখও বলা হয়। এই প্রস্রবণটি ইউরোপের ডালমাসিয়া (Dalmatia) অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী সেটিনার উৎসস্থল। এই নদীটি (সেটিনা) অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে প্রবেশের আগে প্রায় ৬৫ মাইল পথ অতিক্রম করেছে। নদীটি ক্রোয়েশিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতমালা দিনারার পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে।


আন্তর্জাতিক পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই পৃথিবীর চোখ!! পৃথিবীর এই চোখ দেখতে সারাবছরই এখানে ভিড় জমান পর্যটকরা। শুধু তাই নয়, যারা সাঁতারে দক্ষ তারা পৃথিবীর চোখে নেমে স্নানও করে নিতে পারেন। তবে স্নান করার জন্য এখানে পর্যটকরা চোখের উপরেই সাঁতার কাটেন। এর মাঝখানে একটি গভীর অংশ রয়েছে সেখানে যাওয়ার সাহস কিন্তু মানুষ খুব একটা দেখান না।

এর পাশেই রয়েছে একটি ছোটো গ্রাম। রয়েছে একটি বিখ্যাত চার্চ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন নয়ের দশকে এই চার্চটি তৈরি হয়েছিল। স্থানীয় প্রবাদ অনুসারে এই চার্চ নাকি রক্ষা করে পৃথিবীর এই চোখকে। তাই যদি মনে করেন পৃথিবীর চোখ দেখতে যাবেন তাহলে এখানে যাওয়া যেতেই পারে। তবে এটা মনে রাখবেন পৃথিবীর চোখ বলে কথা, কোনও আঁচড় যেন না লাগে। তাহলেই কিন্তু সর্বনাশ। 

তথ্যসূত্র: ১. আজকাল পত্রিকা, ২. Quora

নদিয়ার একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ : রামরুদ্র

 যারা সত্যিই অবাক হচ্ছেন যে তা কি করে সম্ভব ? শ্রদ্ধার সাথে একবার বলে রাখা ভালো যে ― এটিও একটি ইতিহাস লিখিত প্রমান থেকে উদ্ধৃত হয়েছে । আমরা ভারতীয় সভ্যতার অনেক কিছুই জানি না । ইতিহাসের অনেক পন্ডিত ব্যাক্তিত্ব কে ভালোভাবে জানি না বা আমরা ভুলে গেছি । তারা ছিলেন সেযুগে এক একজন বিদগ্ধ পন্ডিত, এক এক গুনে পারদর্শী । আপনি এটিও জানলে অবাক হবেন - এই 'রামরুদ্র' তিনি কিন্তু শুধু নদিয়ার রাজদরবারে জ্যোতির্বিদ ছিলেন তা কিন্তু নয়। তার গুরুত্ব এতটাই ছিল যে তিনি একই সাথে আরো একটি রাজধানীর জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তা আমরা পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করবো ।


তথ্যসূত্র :

ক্ষিতীশ-বংশাবলি-চরিত

আনন্দবাজার পত্রিকা

জাগো বাংলা পত্রিকা




বৃহস্পতিবার কুষ্মাণ্ড ভক্ষণ পাঁজিতে নিষিদ্ধ কি না তা নিয়ে ভারি মজার গল্প আছে সুকুমার রায়ের লক্ষ্মণের শক্তিশেল-এ৷ বাঙালির পাঁজি-নির্ভরতা নিয়ে এলিট সমাজের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও কম নয়৷ কিন্তু নববর্ষ যতই নিউ ইয়ারের কাছে কোণঠাসা হোক, বঙ্গজীবনে পাঁজি মোটেই হেজিপেঁজি নয়৷


সত্যি বললে, বিয়ে-মুখেভাত থেকে সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি, আম বাঙালির জীবনযাত্রা এই একুশ শতকেও অনেকটাই পাঁজি আঁকড়ে আছে৷ পাঁজি বা পঞ্জিকা কথাটা আসলে এসেছে পঞ্চাঙ্গ থেকে৷ বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ আর করণ— এই পাঁচ অঙ্গ থাকে বলে পাঁজির ভাল নাম পঞ্চাঙ্গ৷ বাংলাদেশে পঞ্জিকা গণনার ইতিহাস খুঁজলে নবদ্বীপের নাম পাওয়া যাবে প্রথমেই৷ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে রামরুদ্র বিদ্যানিধি পঞ্জিকা গণনা করতেন৷ তার পরে ইংরেজ আমলে কৃষ্ণনগরের কালেক্টরের চেষ্টায় বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব পঞ্জিকা তৈরি চালিয়ে যান৷ এই সব পঞ্জিকা লেখা হত পুথির আকারে, অনুলিপি করা হত অনেকগুলি৷ ১৮৬৯-এ তা প্রথম ছাপা হয়, যা এখন বিখ্যাত ‘গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা’৷ ১৮৯১ থেকে প্রকাশিত হতে থাকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা৷


‘মঙ্গলে ঊষা বুধে পা,যথা ইচ্ছা তথা যা।’

প্রথমে স্মরণ করি খনার বচনঅতঃপর পঞ্জিকা পাঠে দিই মন।সংক্ষেপে এই হল আবহমান বাংলা ও বাঙালির দীর্ঘলালিত অভ্যাস। বারো মাসে তেরো পার্বণ নিয়ে মেতে থাকা উৎসবপ্রিয় বাঙালি। অবশ্য বারবেলা, কালবেলা, শুভাশুভ, কালরাত্রি, রাহু-কেতু, অমৃতযোগ, শুভদিন, শুভক্ষণ, ভ্রষ্টলগ্ন, শুভলগ্ন ইত্যাদি প্রভৃতি নিয়ে মাথাব্যথা শুধু কি বাঙালির?রকেট উৎক্ষেপণ থেকে চন্দ্রাভিযান অথবা মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান থেকে শুরু করে মহাকাশের নির্দিষ্ট কোনও এলাকা প্রদক্ষিণের প্রাক্কালে দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের একটা বড় অংশ কি আজও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন না অভিযান তথা অনুষ্ঠানের শুভসূচনা নিয়ে? পঞ্জিকা ঘেঁটে শুভদিন ও শুভলগ্ন বাছাই করে চিরাচরিত প্রথায় নারকেল ফাটিয়ে হোমযজ্ঞ সমেত সাফল্য কামনার রীতি থেকে আজও বেরোতে পেরেছে কি একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ভারতবর্ষ? দেশের যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের সূচনায় আদি সংস্কারের হাতে হাত রাখছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এ তো খুবই চেনা ছবি।


তবে হ্যাঁ, দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে গৃহপ্রবেশ, মুখেভাত, পৈতে, সাধভক্ষণ, গায়ে হলুদ হয়ে একেবারে বিবাহ পর্যন্ত শুভক্ষণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পঞ্জিকা ছাড়া বাঙালির চলে না। আজকের এই তথাকথিত আল্ট্রা মডার্ন যুগেও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের শুভসূচনায় পাঁজি ছাড়া গতি নেই বাঙালির। যতই আধুনিকতার বড়াই করা হোক না কেন, বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ পঞ্জিকা। লগ্ন, তিথি, অমৃতযোগ, রাশিফল, মলমাস, কখন কী কী নিষিদ্ধ, উচিত-অনুচিত, ভাল-মন্দ ইত্যাদি জানতে পাঁজির শরণাপন্ন হতেই হয়। প্রতিদিনের গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, চন্দ্রোদয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, সময়-অসময়, জোয়ার-ভাটা— সবই লেখা থাকে পাঁজির পাতায়। একাদশী ও অম্বুবাচী জেগে থাকে জীবনকে ভালবেসে।‘পঞ্চাঙ্গ’ শব্দ থেকে এসেছে ‘পঞ্জিকা’। বার, তিথি, নক্ষত্র, করণ ও যোগ— এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সমষ্টি হল ‘পঞ্জিকা’। নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতা ও কৃত্রিম আলোর ছটায় গুলিয়ে যায় অমাবস্যা ও পূর্ণিমা। তখন সঠিক পথ দেখায় পাঁজি। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঁজিকে বলা হয় ‘পঞ্চঙ্গম’। পঞ্জিকার বিভিন্ন প্রকার আছে।


ইতিহাস অনুযায়ী, বাংলায় প্রথম পঞ্জিকার প্রচলন করেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা রঘুনন্দন। এই ব্রাহ্মণ ছিলেন সেকালে খ্যাতনামা পণ্ডিত। শুভাশুভের সন্ধানে মানুষ দ্বারস্থ হতেন এই ব্যক্তির। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর গণনায় কিছু ভুলত্রুটি পাওয়া যায়। তখন নবদ্বীপের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামচন্দ্র বিদ্যানিধিকে দায়িত্ব দেন বাংলা পঞ্জিকা প্রকাশের।

রামচন্দ্র (মতান্তরে রামরুদ্র) বিদ্যানিধির উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করেন কৃষ্ণচন্দ্র। ১৮১৮ সালে প্রথম বাংলা হরফে ছাপা পাঁজিকা প্রকাশিত হয়। জোড়াসাঁকোর জনৈক দুর্গাপ্রসাদ বিদ্যাভূষণ ছিলেন পাঁজির সংকলক এবং প্রকাশক ছিলেন রামহরি। ১৩৫ পাতার এই পাঁজিটি জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।


ম্যাপ সাহেব মেজর জেমস রেনেল

 কা জটা যে কী ভীষণ কঠিন আর বিপজ্জনক ছিল, ভাবলে হাঁ হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। সালটা ১৭৬৪, পলাশির যুদ্ধের পর বাংলায় সবে জাঁকিয়ে বসছে ইংরেজ শাসন। কবির কল্পনায় স্নিগ্ধ মেদুর নদীমাতৃক এই বঙ্গদেশের শ্যামলবরন কোমল মূর্তি আমাদের মর্মে যে ভাবেই গাঁথা হয়ে থাক না কেন, সেই সময়ের গ্রামবাংলার বাস্তবটি মোটেও কাব্যময় ছিল না। সে ছিল এক জলা-জঙ্গলে ভরা, সাপ-বাঘ-ঠ্যাঙাড়ে-ডাকাত অধ্যুষিত, প্রায় আদিম পরিবহন ব্যবস্থার দেশ। তার উপরে শুরু হয়েছে লালমুখো সাহেবদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী-ফকিরদের বিদ্রোহ, চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা ঘন অরণ্যে যাঁদের গোপন আস্তানা। সেই জটিল আবর্তে জলঙ্গি নদীর মুখ থেকে



গঙ্গা ও মেঘনার সংযোগস্থল অবধি গঙ্গার (এ ক্ষেত্রে গঙ্গা বলতে আসলে পদ্মা) দক্ষিণ তটভূমি জরিপের দুঃসাহসিক অভিযানে রওনা দিলেন একুশ বছরের এক ইংরেজ যুবক- জেমস রেনেল। হাতে তৎকালীন ফোর্ট উইলিয়মের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির গভর্নর জেনারেল হেনরি ভ্যান্সিটার্ট- এর আদেশনামা। সদ্য কব্জায় আসা এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের উপর শাসনব্যবস্থার ভিত মজবুত করার অন্যতম শর্ত, এই তাবৎ অঞ্চলের সমস্ত জমি ও নদী জরিপ করে যত দ্রুত সম্ভব একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাপ এঁকে ফেলা। যে ম্যাপে ধরা পড়বে ভিনদেশে এসে মুঠোর মধ্যে নেওয়া রাজত্বটার পরিষ্কার একটা ছবি। খাজনা আদায়, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসাবাণিজ্য, বহিঃশত্রুর আক্রমণ মোকাবিলা ইত্যাদি নানান প্রয়োজন মেটাতে এই ম্যাপই হবে কোম্পানির অব্যর্থ হাতিয়ার।


সম্পূর্ণ অচেনা অজানা দেশ, পদে পদে ওত পেতে আছে বিপদ। মাথার উপর ক্রান্তীয় সূর্যের ক্রুর মুখ, মে মাসের তীব্র দাবদাহ। ম্যালেরিয়া, ওলাওঠার দাপট। এরই মধ্যে অল্প ক'জন সঙ্গী নিয়ে সার্ভের কাজে নামাটা জীবন নিয়ে বাজি ছাড়া আর কী! কিন্তু ভয় বলে কোনও বস্তু নেই যুবার রক্তে। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ রয়্যাল আর্মির গোলন্দাজ বাহিনীর সেনাপতি। ছেলে যখন নিতান্তই নাবালক, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেলেন এক লড়াইয়ে। মা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর ছেলের বড় হয়ে ওঠা এলাকার ভিকার রেভারেন্ড গিলবার্ট বারিংটনের বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই ভূগোল চর্চার দিকে ঝোঁক, মাত্র বারো বছর বয়সেই ছেলেটি এঁকে ফেলল নিজের ছোট শহর চাড়লের অসামান্য একটি মানচিত্র। আর চোদ্দো বছর বয়সেই নৌযাত্রার অদম্য নেশায় ক্যাপ্টেন হাইড পার্কারের অধীনে 'ব্রিলিয়ান্ট' নামের এক রণতরীতে চেপে ভেসে পড়ল অজানার উদ্দেশে।


দীর্ঘ যাত্রাপথে সমুদ্রস্রোত আর সমুদ্র জরিপের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও পাঠ নিয়ে উনিশ বছর বয়সে 'আমেরিকা' নামের এক জাহাজে রেনেল এসে পৌঁছলেন মাদ্রাজ। সেখান থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নেভি সার্ভিসে যোগ দিয়ে ফিলিপিন্সে সার্ভের কাজে রওনা দিতে হল। ফিরে যে জাহাজের দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করলেন, ভয়ানক সমুদ্রঝাড়ে সেটা গেল হারিয়ে। ভাগ্যক্রমে সে দিন সেই জাহাজে ছিলেন না রেনেল। তার পর


কোনটা পর্বত, কোনটা আকাশ


ঘটনাচক্রে এসে পৌঁছনো কলকাতায়, পুরনো বন্ধু টপহ্যামের সুপারিশে ফোর্ট উইলিয়ামে প্রবেশনারি ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি, বিরল অভিজ্ঞতা আর যোগ্যতাবলে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই বাংলার সার্ভেয়ার জেনারেল পদে নিযুক্ত হওয়া। পদ যাই হোক, কাজ তো সেই করতে হবে


খোলা আকাশের নীচে, মাটি কামড়ে পড়ে থেকে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা উপেক্ষা করে দিনের পর দিন, মাইলের পর মাইল জমি- নদী-খালবিল খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত বিবরণ তৈরি করা, আর ম্যাপ এঁকে চলা। এমন নয় যে রেনেল স্রেফ সাহেবি দুঃসাহসে ভর দিয়ে একটা সাদা পাতায় অজস্র অনুমানের আঁকিবুকি কাটছিলেন। ভারতের তৎকালীন শাসকরা আসলে সেই সময় বুঝতে চাইছিলেন, যে মুলুকগুলো তাঁরা শাসন করেন, এই বিপুল ভূখণ্ডের ঠিক কোথায় তাদের অবস্থান, তাদের আকার-আয়তনই বা কেমন, সম্ভাব্য বিপদ-বিদ্রোহের মুখে পড়লে। তাদের ভৌগোলিক অবস্থান তাদের বাঁচাতে পারবে কিনা-এই সব। কাজ শুরু করার জন্য রেনেলের হাতে কিছু গেজেটিয়ার, চার্ট, টলেমির মানচিত্র, পূর্বসূরি পর্তুগিজ ও ডাচ সাহেবদের আঁকা কিছু ম্যাপের নমুনা ছিল বটে। তবে তার সীমাবদ্ধতাও ছিল প্রচুর। যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম প্রাথমিক স্তরের, সহকারীরাও প্রশিক্ষিত ছিলেন না। তবু পিছপা হওয়ার প্রশ্ন নেই। রেনেল জানতেন, সমুদ্রে নৌকো নিয়ে দিন-মাস-বছর কাটায় 'নেটিভ' মাঝিরা, তারাও কিন্তু জল আর ডাঙাকে চেনে হাতের তালুর মতো। স্রোতের মেজাজমর্জি বুঝে কখন কোন দিকে নৌকোটি নিয়ে যেতে হবে, যুগ যুগ ধরে সেই শিক্ষা তাদের প্রকৃতিগত ভাবে আয়ত্ত। তরুণ সাহেব বুঝেছিলেন, এই 'শিক্ষা'কেই তাকে হাতে-কলমে লিপিবদ্ধ করে যেতে হবে। কাজের ক্ষেত্র ক্রমশ বেড়েই চলেছে, ভাগীরথী (রেনেলের কথায় 'কাশিমবাজার রিভার') পদ্মা মেঘনা পেরিয়ে এ বার এগোতে হবে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অর্থাৎ অসম, ভুটান সীমান্তের দিকে। মানুষটার কাজের পরিধি ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। ভারতবর্ষে তাঁর কর্মজীবনের তেরো বছরের ভেতরে উত্তরে হিমালয় থেকে শুরু করে দক্ষিণে ছোটনাগপুর মালভূমি, পূর্বে অবিভক্ত বাংলাদেশের নিম্নসীমা থেকে শুরু করে পশ্চিমে আগরা, এত বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা এই বিশাল ভূখণ্ডের সার্ভে করে তার প্রায় নিখুঁত মানচিত্র এঁকে ফেলাকে হারকিউলিস-সম কাজ ছাড়া আর কী-ই বা বলা যেতে পারে? Moo মানচিত্র: লঙ্ নীচে, জেমস


Churka


সঙ্গে চলতে লাগল ডায়রি লেখা। সার্ভের কাজে বেরোনোর দিনক্ষণ উল্লেখ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়ে কড়চা তৈরি করা, যে বিবরণী পরে বিখ্যাত হয়েছে রেনেলের ডায়রি বা জার্নাল নামে। সেই ডায়রি থেকেই জানা যায় সেই সব দিনের রোমাঞ্চকর নানান অভিযানের কথাও। জার্নালের ছিয়াত্তর পাতার একটা ঘটনা পড়লে হাড় হিম হয়ে যায়। সার্ভের প্রয়োজনে সাহেব তখন কাজ করছেন। ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এলাকায়, ভুটান সীমান্তের গহন অরণ্যে। হঠাৎ বিদ্রোহী সশস্ত্র সন্ন্যাসীরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল তাঁদের দল। সঙ্গীরা সবাই সৈনিক, তাই প্রচণ্ড লড়াই হল। কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক কম। কিছু ক্ষণ প্রতিরোধ করা গেলেও শেষে ঘটে গেল এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। সন্ন্যাসীদের তলোয়ারের ঘা এসে পড়ল সাহেবের

কাঁধে। হাঁ হয়ে গেল মাংস, কোপ পড়ল ডান ঘাড়ের হাড়ে, কেটে গেল পিঠের দিকের বেশ কয়েকটা পাঁজর। পালকিতে কোনও মতে পালিয়ে প্রাণে বাঁচা গেল ঠিকই, কিন্তু কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছিল সাক্ষাৎ মৃত্যু।


১৭৬৬ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কেটে গেল অনেক সময়। পরের বছর মার্চ নাগাদ জার্নাল লেখার কাজ শেষ হল, হঠাৎ এক মারাত্মক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গুটিয়ে আনতে হল গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদী-জরিপের কাজ। বাংলায় থাকাকালীন জ্বরটা আসছিল মাঝেমধ্যেই, স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল। তবে রেনেল দমবার পাত্র নন কিছুতেই। পুরনো শত্রু সন্ন্যাসী-ফকিরদের বিরুদ্ধে অভিযানের সুযোগ হাতে আসতেই এ বার ঝাঁপালেন ব্রিটিশ বাহিনীর কমান্ডার হয়ে। বিদ্রোহ সমনে সাফল্যও পেলেন। এ বার থিতু হয়ে বিয়ে করলেন জেন থ্যাকারে নামের একটি মেয়েকে। বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক উইলিয়ম মেকপিস থ্যাকারের পিসি-ঠাকুমা ছিলেন এই মেয়েই।


১৭৭৬ সালে মেজর পদে উন্নীত হলেন রেনেল। ওয়ারেন হেস্টিংস-এর কাছ থেকে বড় অঙ্কের পেনশনের সঙ্গে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজের দেশ ইংল্যান্ডে ফিরে গেলেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর গভীর নিষ্ঠায় বাংলার সমস্ত নদী ও সড়ক পথের যে পর্যালোচনা তিনি করে গিয়েছেন তার জন্য তাঁর কাছে আমাদের ঋণ কি কখনও ফুরোবে? আর আঠেরো শতকের বাংলার নিসর্গ বুঝতে গেলে রেনেলের ডায়রি ছাড়া গতি নেই। পড়তে পড়তে চোখে ভেসে ওঠে কত হারিয়ে যাওয়া নদী, জনপদ। মাইলের পর মাইল ধানখেত, পানের বরজ, বাঁশবন, বট-পিপুল শাল-তাল- নারকেল-সুপারির সারি। ঘনঘোর বর্ষা, রোদেলা শরৎ, কুয়াশা জড়ানো শীতের দিনের ছবি, এমনকী বাঘের আসা যাওয়ার পথও। দেশজ শব্দগুলো তাঁর উচ্চারণে অদ্ভুত শোনায়। বনগাঁ হয়ে যায় বোনগঙ্গ, বারাসত ব্যারাসেট, কৃষ্ণনগর কিসটানাপুর, কুষ্টিয়া কাস্টি, সুন্দরবন সান্ডারবাউন্ড, ইছামতী নদী রিভার ইসামোট, ব্রহ্মপুত্র বারামপুটরে, খেজুরগাছ কাজিরগাছ। নামে কী এসে যায়, আসল কথা হল দেশের ভূগোলটাকে হাতের তালুর মতো চেনার নিবিড় চেষ্টা। আর সেই চেষ্টার জন্যেই হয়তো, তাঁর জীবনীকার ক্লেমেন্ট মার্কহ্যাম রেনেলকে বলেছিলেন উনবিংশ শতকের গ্রেট ব্রিটেনের ভোর


ভূগোলবিদ। রেনেল তো শুধু ভারতেরই না, তাঁর কাজ বিশ্বজোড়া। দুনিয়াসুদ্ধ ভূগোলবিদরা এক কথায় মেনে নিয়েছেন, সর্বকালের সেরা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে জেমস রেনেল অন্যতম। জীবনভর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ আর সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ দিকের একটি সমুদ্রস্রোতের নামকরণ হয়েছে তাঁর নামে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, যে বাংলার মাটি তাঁর প্রতিভা বিকাশের ভিত্তিভূমি, যে নরম নদীর সবুজ দেশে মানুষটি নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছিলেন, সেই দেশের মানুষ এই ম্যাপ সাহেব'কে ভুলে বিয়েছে। কিন্তু বাংলার নদী, মাঠঘাট, পথপ্রান্তর কি কথনও তাঁকে ভুলতে পারবে। নদীর কি হৃদর থাকে? থাকলে নিশ্চয়ই সেখানে চিরকালের জন্য।


লেখা থাকবে প্রিয় নামটি মেজর জেমস রেনেল

"গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান" ইউক্যালিপটাস বর্জন করুন

 "গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান" প্রাণ বাঁচাতে পরিবেশের ক্ষতি করছেন না তো। বর্তমানে গাছ লাগানোর হিড়িক পড়ে গেছে আমাদের দেশে। কম দামের কারণে এখন অনেকেই ইউক্যালিপটাস (আকাশমনি) গাছ লাগাতে চাচ্ছেন । কিন্তু আপনি কি জানেন এই গাছ পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর ?

ইউক্যালিপ্টাস গাছ আশপাশের প্রায় ১০ ফুট এলাকার ও ভূগর্ভের প্রায় ৫০ফুট নিচের জল শোষণ করে আকাশে উড়িয়ে দেয়। এই গাছ রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই জল শোষণ করে বাতাসে ছাড়ে। এর ফলে মাটিতে জলের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এই গাছ শুষ্ক বা মৌসুমী জলবায়ু যুক্ত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই গাছের আশপাশে অন্য প্রজাতির গাছ জন্মাতে পারে না কারন এই গাছের পাতায় প্রচুর টক্সিন থাকে যা গাছের গোড়ায় পড়ে আশেপাশের মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে। এ গাছ মাটিকে শুষ্ক করার ফলে মাটিতে অবস্থিত খনিজ আয়ন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে যার ফলে দেশীয় গাছের বাঁচার ক্ষমতা কমে যায়। কারন দেশীয় যে গাছগুলি আমরা দেখি সেগুলি মাটির খনিজ গুলোকে আয়ন হিসাবে গ্রহণ করে। মাটিতে খনিজ গুলো আয়ন হিসাবে থাকলে আমরা তাকে উর্বর জমি বলি। ইউক্যালিপ্টাস গাছ কেটে ফেললেও মাটির উর্বরতা ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। ইউক্যালিপ্টাস গাছ বর্জন করা উচিত। ফলে যে জায়গায় গাছটি লাগানো হয়, সে স্থানটি হয়ে পড়ে জলশূন্য ও কমে যায় উর্বরতা শক্তি। এতে জলের স্তর নিচে নামাসহ অন্য প্রজাতির গাছের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। এসব জানার পরও ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানোর হিড়িক পড়েছে। ফলে ইউক্যালিপটাস সমৃদ্ধ অঞ্চল একদিন মরু অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।



জমির আইল, কৃষিজমি ও পতিত জমিতে লাগানো এ গাছ উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিই বেশি করে। ইউক্যালিপটাসের পাতা ও ডালপালা অজৈব পদার্থের মতো কাজ করে কৃষিজমিকে অনুর্বর করে। ফলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। এত কিছু জানার পরও কেন এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?

অন্যান্য গাছের তুলনায় ইউক্যালিপটাস গাছ দ্রুত বড় হয়। এ কাঠের চাহিদা বেশি, কাঠে ঘুণ ধরে না, দামও বেশি। তাই ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়ে থাকে।তবে আবাদি জমির আইলে ইউক্যালিপটাস রোপণ করায় দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

গাছ হলো পরিবেশের বন্ধু।অথচ ইউক্যালিপটাস গাছ এর বিপরীত। আমার মতে, এটির উপকারিতা অপেক্ষা অপকারিতাই বেশি। অনেকেই অজ্ঞতার কারণে ভূল জায়গায় ইউক্যালিপটাস গাছের বাগান করে থাকে যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।এর ক্ষতিকর দিকগুলো হলো:-

১) দৈনিক একটি পূর্ণবয়স্ক এই গাছ ৪০ থেকে ৫০ লিটার পানি শোষণ করে মাটিকে নিরস ও শুষ্ক করে ফেলে।১০-১২ ফুট সীমানার জল শোষণ করার কারণে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর দ্রুত নেমে যায়। যা কিনা বিরাট সেচ সমস্যার সৃষ্টি করে।

২) এর আশেপাশে অন্য প্রজাতির গাছ লাগালে তা অপুষ্টির কারণে জন্মাতে পারেনা। শুধু তাই নয়, এই গাছের শেকড় মাটির গভীরে সর্বোচ্চ ৩০-৩৬ ফুট পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

৩) এর পাতা এবং রেণু আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর।

৪) এই গাছগুলি পাখি বাসা বাঁধার উপযোগী নয়।

৫) বেশি জল শোষণের ফলে আশপাশের জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়। যার কারণে ২০-৩০ বছর পরও আশেপাশে অন্য কোনো প্রজাতির গাছ জন্মাতে পারে না।

৬) কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

৭) পাতা সহজে পঁচে মাটিতে মেশে না। এই কারণে দাবানল সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকট, কাঠেও খুব দ্রুত আগুন ধরে যায়।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণ গাছ প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষার পাশাপাশি প্রাণিকুলের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে আর অক্সিজেন সরবরাহ করে সহায়তা করে। কিন্তু ইউক্যালিপটাস তা করে না। বরং এ গাছ অক্সিজেন গ্রহণ, কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ এবং নাইট্রোজেন নির্গমন করে। আবাদি জমির আইলে এ গাছ থাকলে খেতে পোকামাকড় ও রোগবালাই বেড়ে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছ জমির উর্বরতা শক্তি কমিয়ে দেওয়াসহ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। 

পরিবেশবিদ ও পরিবেশ কর্মীরা মাঠপর্যায়ে এ গাছ না লাগাতে এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের নিরৎসাহিত করে যাচ্ছেন।


সুতরাং #ইউক্যালিপটাস গাছ, রেইন ট্রি এর মত ক্ষতিকারক গাছ না লাগিয়ে ফল গাছ লাগান, বট,পাকুর এর মত ছায়া দেয় এমন গাছও বাড়তে দিন। সবরকম গাছ সব জায়গায় লাগানোর জন্য উপযুক্ত নয়। ধরুন এমন গাছ রাস্তার divider এ লাগালেন যেগুলোর শিকড় অনেক বড় হয় বা গভীরে যায়,তাহলে হবে না। খুব বেশি শাখা প্রশাখা হয় এমন গাছ লাগালেও দেখা যাবে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হবে। বৃক্ষ রোপনের জন্য উপযুক্ত একটি লিস্ট দেওয়া হল, এতে পরিবেশের পক্ষে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা রাখা করা যায়।


রাস্তার ধার (Roadside):🌳

    1. নিম 

    2. রেইন ট্রি 

    3. জারুল 

    4. কদম

    5. সিলভার ওক 

    6.সোনালু

    7.কৃষ্ণচূড়া

    8.জাকারান্ডা

 


রাস্তার বিভাজক (Road Divider):🪴

    1. জবা 

    2. কান্টিকারা 

    3. রতনগাছ 

    4.রাধাচূড়া  

   5.দেবদারু

    6.কৃষ্ণচূড়া

    7.জাকারন্ডা


পার্ক (Park):🌲

    1. বটগাছ 

    2. কদম 

    3. চাপালিশ 

    4. কনক চাঁপা 

    5. অশোক 


ফুটপাথ (Footpath): 🌱

    1. পারুল 

    2. সিঙ্গাপুরের চেরি

    3. ক্রিসমাস ট্রি

   4.দেবদারু

    


খোলা জায়গা (Open Space): 🌳

    1. মেহগনি 

    2. কৃষ্ণচূড়া 

    3. শিমুল 

    4. অর্জুন গাছ 


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (Institutional Areas): 🌳

    1. আম 

    2. কাঁঠাল 

    3. জামরুল 

    4. বেল 

    5. পাকুড় 


বাড়ির উঠোন (Homestead): 🪴🌳


ফলের গাছ 

    1. আম 

    2. কাঁঠাল 

    3. লিচু 

    4. পেয়ারা 

    5. নারিকেল 

    6. কলা গাছ 

    7. পপাই 

    8. জামরুল 

    9. কামরাঙ্গা 

    10. বেল 

চলুন সবাই অন্তত ৫-১০ টি গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নি। তাহলে যদি ভবিষ্যত প্রজন্ম একটু স্বস্তিতে বাঁচে। তাতে যদি প্রকৃতির দবদাহ একটু কমে। 



শান্তিপুর ব্রাহ্মসমাজ

 কৃষ্ণনগর গভর্ণমেন্ট কলেজের ভিত্তিস্থাপন, বিধবাদের পুনরায় বিবাহের ব্যবস্থা, শিক্ষার বিস্তার, একাধিক সমাজ সংস্কার আন্দোলনে নদিয়া জেলার ব্রাহ্মসমাজ নিজেদের ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন কৃষ্ণনগরে, শান্তিপুরে, কুমারখালিতে (বর্তমানে বাংলাদেশে), তেহট্টে, চাকদহে, শিবনিবাসে। শান্তিপুর অঞ্চলে ব্রাহ্মসমাজের সামাজিক সংস্কারমূলক আন্দোলনের ধারা অনুকূল পরিবেশ পেয়েছিল ভিন্ন একটি কারণে। যাঁকে কেন্দ্র করে শান্তিপুরের এই কর্মকাণ্ড ফলদায়ী হয়ে উঠতে পেরেছিল, তিনি শিক্ষিত ও উদারমনা ব্যক্তিত্ব শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। তিনি সদস্য হয়ে গেলেন ব্রাহ্মসমাজের। দায়িত্ব পেলেন ব্রাহ্মধর্মের অন্যতম প্রচারকের। শান্তিপুরে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠা ও সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকেই পাখির চোখ করে তুললেন তিনি। যাত্রা হল শুরু।

বিজয়কৃষ্ণের মতো উচ্চশিক্ষিত মানুষকে ব্রাহ্মধর্মে যুক্ত হতে দেখে সাহস করে একে একে এগিয়ে এলেন শান্তিপুরের একাধিক কৃতবিদ্য মানুষ। দীর্ঘ তালিকার কয়েক জন, ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, অঘোরনাথ গুপ্ত, ভুবনমোহন গুপ্ত, রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ডাক্তার অভয়চরণ বাগচী, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, বীরেশ্বর প্রামাণিক, হরেন্দ্রনাথ মৈত্র, পুণ্ডরীকাক্ষ মুখোপাধ্যায়, প্রাণনাথ মল্লিক, যোগানন্দ প্রামাণিক প্রমুখ।

 1898 সালে শান্তিপুরে ব্রাহ্ম সমাজ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।

 ১৩০৪ বঙ্গাব্দে ক্ষেত্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বীরেশ্বর ব্রহ্মচারী ও যোগানন্দ ব্রহ্মচারী র সহযোগিতায় শান্তিপুর মতিগঞ্জের কাছে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা হয়। ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার সময় প্রথম আচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হল রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশকে। এর পর ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ব্রহ্মসমাজের আচার্য হন। এক ঝাঁক শিক্ষিত মুক্তমনা যুবাপুরুষ ঝাঁপিয়ে পড়লেন ঘুণধরা সমাজকে অশিক্ষা, কুসংস্কার ও জাতপাতের সঙ্কীর্ণতা থেকে তুলে আনার কাজে। 

শান্তিপুরে ব্রাহ্মসমাজ গড়ে ওঠার পর থেকে যে সমাজসংস্কার মূলক কাজগুলি মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রেখেছে, সেগুলি হল অনাথ আশ্রম স্থাপন, ব্রাহ্মমিশন বিদ্যালয় স্থাপন, ডায়মন্ড জুবিলি ইনস্টিটিউশন (আজকের শান্তিপুর ওরিয়েন্টাল একাডেমি), শান্তিপুর শিক্ষয়িত্রী বিদ্যালয়, আত্মোৎকর্ষ বিধায়িনী সভা, বালবিদ্যোৎসাহিনী সভা ইত্যাদি।



শান্তিপুর মচাঁদ মন্দির

 

শান্তিপুরের  বড়বাজারের  শ্যামচাঁদ  পাড়ায়  অবস্থিত  পাঁচ  খিলানবিশিষ্ট,  অলিন্দযুক্ত,  দক্ষিণমুখী,  বাংলা  আটচালা  শ্রেণীর  শ্যামচাঁদ  মন্দিরটি  পশ্চিমবঙ্গের  এ  শ্রেণীর  বৃহতম   মন্দিরগুলির  অন্যতম।  উঁচু  পাদপীঠের  উপর  নির্মিত  এ  মন্দিরের  দৈর্ঘ্য,  প্রস্ত,  ও  উচ্চতা  যথাক্রমে  ৫২ ফুট ( ১৫.৮ মি. ),  ৩৬ ফুট ( ১১ মি. )  ও  আনুমানিক  ৭০ ফুট ( ২১.৩ মি. )। 
মন্দিরটির  টেরাকোটা-সজ্জা  যৎসামান্য।  খিলানগুলির  উপরের  চারিদিকে  বাংলা  আটচালা  শ্রেণীর  প্রতীক  শিবালয়  এবং  তার  মধ্যে  শিবলিঙ্গ।  উপরের  কার্নিসের  নিচে  দুই  প্রস্থে  পোড়ামাটির  ফুল  এবং  দু  পাশের  উপরে-নিচেও  একই  রকমের  ফুল  মন্দিরটির  অঙ্গ  সজ্জারূপে  বিন্যস্ত  হয়েছে।  খিলানগুলির  উপরের  প্রস্থে  পঙ্খের  কাজ  ছাড়া  কোন  পোড়ামাটির  কাজ  নেই।  শ্যামচাঁদের  এই  মন্দিরটির  সঙ্গে  নদিয়া  জেলার  কাঞ্চনপল্লীতে  অবস্থিত  কৃষ্ণরায়ের  আটচালা  মন্দিরটির  আকার  ও  আয়তনের  দিক  থেকে  অনেক  সাদৃশ্য  আছে।  শ্যামচাঁদের  এই  মন্দিরটির  অবস্থা  এখনও  বেশ  ভাল।  মন্দিরের  গর্ভগৃহের  দরজার  কাঠের  কাজও  খুব  সুন্দর।  যদিও  অযত্নে  ও  রঙের  প্রলেপে  তা  অনেকটাই  ম্লান। 
শ্রী শ্রী শ্যামচাঁদ  বিগ্রহ  প্রতিদিন  পূজিত  হন।খাঁচৌধুরীদের  পারিবারিক  বিগ্রহ  রাধাকান্তও  এখানে  উপাসিত।  মন্দির  প্রাঙ্গণে  ঢুকতে  বাঁ  দিকে  একটি  ছোট  মন্দিরে  একটি   শিবলিঙ্গ  এবং  অপর  একটি  ছোট  মন্দিরে  শ্রীগৌরাঙ্গ,  শ্রীনিত্যানন্দ  ও  শ্রীঅদ্বৈতের  মূর্তি  আছে।  মন্দিরের  ডান  দিকে  একটি  ছোট্ট  ঘরে  মাধবেন্দ্রপুরীর  মূর্তি  আছে।  মন্দিরের  সামনে  একটি  বড়  নাটমন্দির  আছে।  মন্দির  প্রাঙ্গণ  পাঁচিল  দিয়ে  ঘেরা। 
রাস  পূর্ণিমা  উপলক্ষে  এই  মন্দিরে  চার  দিন  ব্যাপী  ভক্তবৃন্দ  দ্বারা  হরিনাম  সংকীর্তন  হয়  কিন্তু  ভাঙ্গারাসের  শোভাযাত্রায়  এই  বিগ্রহ  অংশ  নেন  না।  দোল  পূর্ণিমার  পরদিন  অর্থাৎ,  প্রতিপদে  হয়  শ্যামচাঁদের  দোল।  সেদিন  শ্যামচাঁদ  মন্দিরে  হয়  বিশেষ  পূজা,  ভোগ।  চলে  নাম  সংকীর্তন।  সন্ধ্যায়  শ্যামচাঁদ  জিউ  নগর  ভ্রমণে  বেরিয়ে  গুরু-গৃহ  উড়িয়া  গোস্বামী  বাড়িতে  যান।  তাঁর  নগর  পরিক্রমা  দেখতে  রাস্তার  দু'দিকে  ভিড়  উপচে  পড়ে।  উড়িয়া  গোস্বামী  বাড়ি  পৌঁছে  শ্যামচাঁদ  জিউ   'ডালিধরা'  অনুষ্ঠানে  যোগ  দেন।  

পথনির্দেশ: শান্তিপুরের  শ্রী শ্যামচাঁদ  মন্দিরে  যেতে  হলে  শিয়ালদহ  থেকে  শান্তিপুর  লোকাল  ধরুন ।  রেলপথে  শান্তিপুরের  দূরত্ব  ৯৩  কি. মি. ;  ট্রেনে  সময়  লাগে  আড়াই  ঘন্টা ।  স্টেশন  থেকে  রিকশায়  বা  টোটোতে  পৌঁছে  যান  বড়বাজারে  অবস্থিত   শ্রী শ্যামচাঁদ  মন্দির।

তথ্য সূত্র:



রহস্যময় কৈলাস পর্বত

 কৈলাস পর্বত পশ্চিম তিব্বতে অবস্থিত একটি পবিত্র স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৬৫৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পর্বতটি হিন্দু, বৌদ্ধ, বন এবং জৈন ধর্মের অগণিত মানুষের কাছে পবিত্র জায়গা হিসেবে বিবেচিত। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী এই পর্বতটি দেবতা শিবের বাসস্থান এবং বিশ্বের কেন্দ্রস্থল। আবার জৈন ধর্মমতে পর্বতটি সেই জায়গা যেখানে তাদের পূর্বপুরুষ ঋষভনাথ পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিব্বতী বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে এই পর্বত সীমাহীন সুখের প্রতিনিধিত্বকারী চক্রসমভারের আবাসস্থল। বন ধর্মের কাছে কৈলাস একটি স্বস্তিকা পর্বত, যা আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই পর্বত ও তার আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা বহুকাল আগে থেকেই ঘটে আসছে। এসব ঘটনা লোকমুখে শোনা যায়। সেখানে তদন্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো উপসংহার পৌঁছান যায়নি। কৈলাস পর্বতকে ঘিরে তেমনই কিছু রহস্য আজও রয়েছে।



হিমালয়ে অবস্থিত কৈলাস পর্বত সেখানকার সবচেয়ে উঁচু পর্বত না হলেও এই পর্বতশৃঙ্গে কেউ আরোহণ করেনি। কারণ, এটা বিশ্বাস করা হয় যে কৈলাস পর্বতে আরোহণ করা দেবতাদের অপমান করার সামিল। তবে প্রাচীন কিংবদন্তী অনুযায়ী, মিলারেপা নামে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এ পর্বতে আরোহণ করেছিলেন। চারজন পর্বতারোহী এই পর্বতে আরোহণের সময় মারা গিয়েছিলেন। ধর্মীয় বিশ্বাস হোক বা প্রাকৃতিক কারণ, কৈলাস পর্বতে আরোহণ যেন একপ্রকার নিষিদ্ধ কাজ।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, কৈলাস পর্বতের চূড়াটি আসলে একটি মনুষ্যসৃষ্ট ভ্যাকুয়াম পিরামিড, এবং এটি ১০০টিরও বেশি ছোট পিরামিড দিয়ে বেষ্টিত। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, পিরামিড কমপ্লেক্সের উচ্চতা ১০০ থেকে ১,৮০০ মিটারের মধ্যে, যেখানে মিশরীয় পিরামিডের উচ্চতা মাত্র ১৪৬ মিটার। এই অনুমান যদি সত্য হয়, তবে এটি আজকের যেকোনো পরিচিত পিরামিডের চেয়ে বড় হবে।

ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে একে পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। তবে ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে এর বিশেষত্ব রয়েছে। কারণ, যুক্তরাজ্যের স্টোনহেঞ্জ থেকে এর দূরত্ব ৬,৬৬৬ কিলোমিটার, যা কৈলাস থেকে উত্তর মেরুর দূরত্বও বটে। আবার কৈলাস থেকে দক্ষিণ মেরুর দূরত্ব ১৩,৩৩২ কিলোমিটার, যা উত্তর মেরু বা স্টোনহেঞ্জের দূরত্বের ঠিক দ্বিগুণ।


কিছু বিজ্ঞানীর মতে, কৈলাস পর্বতমালায় এমন কোনো শক্তি রয়েছে যা শরীর এবং মনকে উদ্দীপ্ত করে। বলা হয়ে থাকে, কৈলাসের আশেপাশে যারা ১২ ঘন্টা সময় ব্যয় করেন, তাদের চুল এবং নখের বৃদ্ধি এত বেশি হয় যা স্বাভাবিক সময়ের দুই সপ্তাহের সমান!


কৈলাস পর্বতের পাদদেশে দুটি হ্রদ রয়েছে। একটি মানস সরোবর হ্রদ ও আরেকটি রাক্ষস তাল হ্রদ। মানস সরোবর হ্রদটি পবিত্র এবং এটি একটি মিঠা পানির হ্রদ। আবার রাক্ষস তাল হ্রদ একটি লবণাক্ত জলের হ্রদ যা ভূতের হ্রদ হিসেবে পরিচিত। মানস সরোবরের একটি বৃত্তাকার আকৃতি রয়েছে যা সূর্যের অনুরূপ এবং রাক্ষস তাল দেখতে অর্ধচন্দ্রের মতো। এজন্য হ্রদ দুটি যথাক্রমে আলো ও অন্ধকারের প্রতিনিধিত্ব করে।

যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন পর্বতের ছায়া এমনভাবে পড়ে যে ধর্মীয় প্রতীক স্বস্তিকার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যা হিন্দুদের মধ্যে একটি শুভ চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়।


হিমালয়ের কৈলাস এবং নিকটবর্তী মানস সরোবর হ্রদ থেকে এশিয়ার সিন্ধু, গঙ্গা, সতলজ নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম হয়েছে। সেখান থেকে উৎপন্ন হয়ে চারটি নদী হাজার হাজার মাইল পথ প্রবাহিত হয়ে ভারত মহাসাগরে পতিত হয়েছে।


দক্ষিণ দিক থেকে দেখলে কৈলাস পর্বতের গায়ে ওম (ॐ) প্রতীক আছে বলে মনে হয়। বিশেষত পাহাড়ের চূড়া থেকে বিশাল বরফের গর্ত এবং অনুভূমিক শিলা গঠনের ভূপ্রাকৃতিক কারণে এরূপ আকৃতি গঠন করে। তবে ধর্মীয় দিক থেকে এই বিষয়টি বিশ্বাসের সাথে জড়িত।


হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কৈলাস পর্বত স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে একটি সিঁড়ি। মহাভারত অনুসারে, পাণ্ডবরা তাদের একমাত্র সঙ্গী দ্রৌপদীর সাথে মোক্ষ অর্জনের জন্য কৈলাস পর্বতে আরোহণ করেছিলেন। স্বর্গে যাওয়ার পথে, যুধিষ্ঠির ব্যতীত সকলেই চূড়ায় আরোহণ করার সময় একে একে পিছলে গেল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে স্বর্গের দরজা শুধুমাত্র যুধিষ্ঠিরের জন্য খোলা হয়েছিল। পিরামিড-আকৃতির কৈলাস পর্বতের চারটি ঢাল কম্পাসের চারটি দিকের দিকে মুখ করে রয়েছে, যা একে পরিপূর্ণতার প্রতীক করে তোলে। শিষ্যরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এটি স্বর্গের প্রবেশদ্বার।


কৈলাস পর্বত গ্রানাইট দিয়ে গঠিত। এ পর্বতের চারটি মুখ চারটি দিক, যেমন- উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে মুখ করে আছে। ধর্মীয় বিশ্বাসমতে, এই পর্বত তার চারটি দিক থেকে বিভিন্ন শক্তি নির্গত করে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বিষ্ণু পুরাণে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে- কৈলাস পর্বতের পশ্চিম মুখ চুনি বা পদ্মরাগমণি দিয়ে, দক্ষিণ মুখ নীলকান্তমণি দিয়ে, উত্তর মুখ স্বর্ণ দিয়ে এবং পূর্ব মুখ ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মতো মূল্যবান পাথর দিয়ে গঠিত। এটি কৈলাস পর্বতের রহস্য নিয়ে আরও একটি আলোচিত বিষয়।


কেউ কেউ দাবি করেছেন যে তারা রাতে কৈলাস পর্বতের কাছ থেকে অদ্ভুত ফিসফিস শুনতে পান। প্রকৃতপক্ষে, এই কৈলাস পর্বত রহস্য ড. আর্নস্ট মুল্ডাশিফের লেখা একটি বইয়েও নথিভুক্ত করা হয়েছে। কৈলাস পর্বতের নিঃশব্দ প্রাসাদ থেকে আসা অদ্ভুত ফিসফিসের বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

অন্য একরাতে ড. মুল্ডাশিফ এবং তার দলের সদস্যরা পাথর পড়ার একটি বিভীষিকাময় শব্দ শুনতে পান যা কৈলাস পর্বতের ভেতর থেকে আসার মতো মনে হয়েছিল। তার মতে, এটা খুবই সম্ভব যে এখনও কিছু জীবিত প্রাণী কৈলাস পর্বতের পিরামিডের ভেতরে বাস করে।


এটি কৈলাস পর্বতের সেই রহস্যগুলোর একটি যা দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। তিব্বতি গুরুদের মতে, কৈলাস পর্বতের আশেপাশের অঞ্চলে অতিপ্রাকৃত শক্তি রয়েছে যা বর্ণনা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে, তিব্বতীরাও বিশ্বাস করে যে রহস্যময় শহর শাম্ভালাও কৈলাস পর্বতের আশেপাশের অঞ্চলে অবস্থিত। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুসারে, সিদ্ধা এবং তপস্বী লোকেরা এখনও রহস্যময় শাম্ভালা শহরে বাস করে।


অনেকে বলেন, কৈলাস পর্বত ভেতর থেকে ফাঁপা। কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, ‘ওম’ শব্দ কৈলাস পর্বত থেকে আসে। কোনো কোনো বিজ্ঞানীর আবার দাবি, এই শব্দ আসলে বরফ গলার আওয়াজ। বলা হয়, যখন শব্দ ও আলো মিলিত হয়, তখনই ‘ওম’ শব্দটি উৎপন্ন হয়।


মানস সরোবর হ্রদের রহস্যময় আলো কৈলাসের সবচেয়ে বড় রহস্য। বেশ কয়েকবার মানস সরোবর হ্রদের উপরে রহস্যময় আলো দেখা গেছে। এছাড়া এলিয়েন নিয়েও এই পর্বতকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু তত্ত্ব। অনেক অভিযাত্রীর ভাষ্যে, তারা কৈলাস পর্বতের আশেপাশে রহস্যময় আলোর পাশাপাশি ‘এলিয়েন শিপ’ দেখেছে! অনেকের ধারণা, কৈলাস আসলে এলিয়েনদের গোপন শহর, যেখানে তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে বৈঠক করে।


তবে এতসব রহস্য থাকলেও কৈলাস পর্বত ধর্মীয় দিক থেকে একটি অনন্য স্থান দখল করে আছে। এই পর্বতের রহস্য উদঘাটন করতে না পারলেও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবশ্যই মানুষকে বিমোহিত করবে।









বিশ্ব জলাভূমি দিবস

  ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিশ্বব্যাপী জলাভূমি দিবস পালিত হয়ে থাকে। জলাভূমি সংক্রান্ত সম্মেলনে সাক্ষর গ্রহণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই এ দিবস পালন।বিশ্বের জলাভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে জাতিসঙ্ঘের উদ‍্যোগে ১৯৭১ সালে ২রা ফেব্রুয়ারি ইরাণের রামসার শহরে একটি চুক্তির মাধ‍্যমে বিশ্বজলাভূমি দিবসের সূত্রপাত, যা ‘রামসার চুক্তি’ নামে পরিচিত।তারপর ১৯৯৭ সালের পর থেকে প্রতিবছর ২রা ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্ব জলাভূমি দিবস রূপে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়  পালিত হয়ে আসছে।

পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে জলাভূমির ভূমিকা অপরিসীম। এর সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে নদীর জলস্তর স্বাভাবিক রাখা, বন‌্যপ্রাণী সংরক্ষণ সহ অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি, যা বিশ্বজুড়ে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে সর্বোতোভাবে সাহায্য করে। জলাভূমি বিলুপ্ত হলে বিপন্ন হবে মৎস‍্য প্রজাতি ছাড়াও বিভিন্ন জলজ প্রাণী সহ অন‍্যান‍্য পশু ও পরিযায়ী পাখি যাদের বাসস্থান হল জলাভূমি। জলাভূমি বিনষ্ট হলে বাড়ে বন‍্যা ও খরার সম্ভাবনা, বিঘ্নিত হয় খাদ‍্য শৃঙ্খল। জলাভূমি অবলুপ্তিতে ক্ষতি হয় ধান, পাট চাষের যাতে লাগে অতিরিক্ত পরিমাণে জল। এছাড়াও স্বল্পব‍্যায়ে যোগাযোগের মাধ‍্যম ও পর্যটন শিল্প হিসেবেও কাজ করে এই জলাভূমিগুলো, যা সভ‍্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশের ভিত্তিভূমি।

গত ১০০ বছরে বিশ্বে জলের ব‍্যবহার ৬গুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে অনেক বড় বড় জলাভূমি। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে বিগত তিন দশকে ৩৫% জলাভূমির অবলুপ্তি ঘটেছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর, নদী, খাল, জলাশয় ভরাট করা বেআইনী। কিন্তু বর্তমান আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে এবং নগরায়নের দোহাই দিয়ে প্রভাবশালী ব‍্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মদতে এবং সরকারের উদাসীনতায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য জলাভূমি। ফলে জলাভূমিনির্ভর প্রান্তিক মানুষদের উপরে পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।


বর্তমানে জলাভূমি সংরক্ষণ সম্বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এই বিষয়ে সদর্থক উদ‍্যোগ নিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে একে একটা গণআন্দোলন এর রূপ দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ‍্য হওয়া উচিত।



সুরধনী নদী

 

শান্তিপুরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে সুরধনী নদী। নবদ্বীপের কাছেই মূল ভাগীরথী থেকে সুরধনী নদীর উৎপত্তি। শান্তিপুরের গয়েশপুর থেকে নদীটি বাঁক নিয়ে বাগআঁচড়া, বাবলা, সারাগর হয়ে ঘোড়ালিয়ার কাছে ফের মূল গঙ্গায় মিশেছিল। গতিপথ ছিল প্রায় ১৪ কিলোমিটার। স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষায় ফুলেফেঁপে উঠত সুরধনী। জলরাশি প্রবাহিত হওয়ার সময় শ্রুতিমধুর সুর সৃষ্টি হতো। সেই থেকেই নদীর নাম হয় সুরধনী। জনশ্রুতি, প্রায় ৫৫০ বছর আগে অদ্বৈত আচার্য্যের স্মৃতি বিজড়িত বাবলা গ্রাম দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়েছিল। অতীত এই নদী বেয়ে এসে শান্তিপুরের একটি গাছতলায় তপস্যা করেছিলেন অদ্বৈত আচার্য। সেই কারণে শান্তিপুরের বাবলায় অদ্বৈত আচার্যর নামে অদ্বৈত পাঠ মন্দির স্থাপিত হয়। এই নদীতেই ফুল নিক্ষেপ করে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবকে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। শুধুমাত্র দেশ নয়, বিদেশের বহু ভক্তরাও এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। 

প্রায় ৫০ বছর আগে নিজের গতিপথ হারিয়ে ফেলা শান্তিপুরের সুরধনী নদীকে এখন চেনাই দায়। ইতিহাস সমৃদ্ধ নদিয়ার ঐতিহ্যবাহী সুরধ্বনি নদী আজঅবলুপ্তির পথে। সুরধনী নদী আসলে গঙ্গার ছেড়ে আসা এক খাত।কোনও নদী গতিপথ পরিবর্তন করলেও একটি বিন্দুতে (‘নোডাল পয়েন্ট’) সে অপরিবর্তিত থাকে। নবদ্বীপ গাঙ্গেয় বদ্বীপের অন্যতম ‘নোডাল পয়েন্ট’। নবদ্বীপকে অপরিবর্তিত রেখে তার আগে-পরে গঙ্গা একাধিক বার গতিপথ বদলেছে শান্তিপুরে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিহ্ন রেখে গিয়েছে। কখনও তার নাম সুরধনী, কখনও তার নাম হরি নদী। প্রকৃতিগত দিক থেকে সুরধনী হল আদিগঙ্গার মতো। গঙ্গার ছেড়ে আসা এক খাত।

১৯২২ সালের আগে সুরধনী মূল গঙ্গার উৎসমুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তখনও অবশ্য মোহনা থেকে জল ঢুকেছে। মোহনার থেকেও সুরধনী শেষে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চল্লিশের দশকে। ১৯৪৩ সালের টপোশিট বিশ্লেষণ করে সেই সময়ের গঙ্গার দু’টি ছেড়ে আসা খাতকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। একটি হরি নদী, যার নাম তখনকার টপোশিটেও উল্লেখ রয়েছে। আরেকটি হল এই সুরধনী। সুরধনীকে অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছিল জলাভূমি হিসেবে।



একদা সুরধনী ছিল প্রাণচঞ্চল। নিজের গতিপথ হারিয়ে ফেলা শান্তিপুরের সুরধনী নদীকে এখন চেনাই দায়। স্রোতস্বিনী নদী আজ একটা সাধারণ নর্দমা! নদীখাতের কোথাও পলি জমে চরা পড়েছে। তার জেরে গতিহারা হয়ে মজে যাচ্ছে সুরধনী। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে নদীর বুকে শুরু হয়েছে অবাধে চাষাবাদ। আবার কোথাও হারিয়ে যাওয়া নদীর গতিপথে তৈরি হয়েছে কারখানা। কোথাও আবার প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে বেআইনি কংক্রিটের নির্মাণ। তবে আশার কথা, সুরধনীর যৌবন ফেরাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সেচদপ্তর।


তথ্য সূত্র:

১.

২.

৩.

৪.



রিভার্স ওয়াটারফল : নানেঘাট

 

প্রকৃতির থেকে আশ্চর্য জাদুকর বোধহয় আর কেউ হয় না। জাদুই বটে, না হলে মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে কখনও জল বয়ে যেতে পারে? ভাবছেন তো এমন জায়গা ভূ-ভারতে আর কোথায় আছে? মহারাষ্ট্রের পুণেতে নানেঘাট পর্বতমালায় রয়েছে এমনই এক জলপ্রপাত। প্রকৃতিও মাঝেমধ্যে বিজ্ঞানকে ছাড়িয়ে যায়। বিজ্ঞানের সব সূত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজত্ব করে নিজের নিয়মে। সাধারণত কোন জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়ালে আপনার কি মনে হবে? জলরাশি একেবারে হুড়মুড়িয়ে উপর থেকে নিচে দিকে ঝাঁপিয়ে পড়বে, চারিদিকে জলের কুয়াশায় ভর্তি হয়ে যাবে কিন্তু এমনটা হয় না? তবে কি হয়? জলরাশি যায় কোথায়? নিচের দিকে না পড়ে তা উপরে উড়ে যায়। কথাটা বিশ্বাস না হলেও এমনটাই হয়। এখানে জল বয়ে যায় উল্টো দিকে। হ্যাঁ ভারতের দক্ষিণের নানেঘাট জলপ্রপাতে ঘটছে এমনই উদ্ভট ঘটনা।

সেই অসাধারণ সৌন্দর্য্য জলপ্রপাতটি সব জলপ্রপাতের থেকে আলাদা, কেন বলতে পারবেন? স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণের টানের সূত্র কম-বেশি সবার জানা। মাধ্যাকর্ষণের টানের কারণেই কোনো বস্তু ফেলে দিলে তা নিচে পড়ে, ওপরে উঠে না।  সূত্র অনুযায়ী কোনও জিনিস বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না। মাটিতে পড়তে সে বাধ্য, উল্টো দিকে সরে যাওয়ার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সেই চিরন্তণ সত্যকেই যেন মিথ্যে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে আমাদের দেশের একটি জলপ্রপাত। নাম নানেঘাট জলপ্রপাত। স্থান মহারাষ্ট্র।

মহারাষ্ট্রের পুনে থেকে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার এবং মুম্বই থেকে প্রায় ১৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নানেঘাট অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় ট্রেকিং স্থল। বর্ষাকালে পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কাছে অবস্থিত এই নানেঘাটের সৌন্দর্য্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাই বর্ষায় এখানে ভিড় জমান পর্যটকরা। আর এই অঞ্চলের প্রথম এবং প্রধান আকর্ষণ হল নানেঘাট জলপ্রপাত। নানেঘাট হল ২৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পশ্চিমঘাটের একটি গিরিপথ। এটি কোঙ্কন উপকূল এবং দাক্ষিণাত্য মালভূমির জুন্নার শহরের মাঝে অবস্থিত।



কোনওভাবেই উপেক্ষা করা যায় না নানেঘাটের জলপ্রপাতের দৃশ্য। নানেঘাটের অন্য এক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে এখানের জলপ্রপাতে। দুই পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতের জল পাহাড়ের গা বেয়ে নীচে নামে না। উড়ে যায় উপরের দিকে। মহারাষ্ট্রের পুণের কাছে লোনাভলা যেতে এই নানেঘাট জলপ্রপাতটি দেখতে পাওয়া যায়। এটি মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে বয়ে যায়। জলপ্রপাতের কাছেই অবস্থিত লোহাগড় দুর্গ। আর দুর্গ থেকেই জলপ্রপাতটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়।

লোহাগড় দুর্গ থেকে যখন নানেঘাট জলপ্রপাতের দিকে তাকাবেন তখন স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে জলপ্রপাত উল্টো দিকে বইছে। অবাক হবে, মনে প্রশ্ন জাগবে। তাহলে কি ওইখানে মাধ্যাকর্ষণশক্তি কাজ করে না? নিশ্চয়ই করে। আসলে জলপ্রপাতের এই স্থানটিতে প্রবল শক্তিশালী বাতাস প্রবাহিত হয়। এতটাই জোরে বাতাস প্রবাহিত যে জলপ্রপাতের জলধারাকে নিম্নমুখী হতে দেয় না। উপরের দিকে ঠেলে উপরের দিকে বিপরীতে ঠেলে উঠিয়ে দেয়। সেই উল্টোদিকে বয়ে যাওয়া জল আবার পাহাড়ের কোল জুড়ে ঊর্ধ্বমুখী জলরাশি আগত পর্যটকদের শরীর স্পর্শ করে। আর ঠিক এই কারণেই এই জলপ্রপাতটি আর পাঁচটা জলপ্রপাতের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। চোখের সামনে এমন দৃশ্য সকলকে অবাক করে। সত্যিটা জানার পরও লোকে অবাক হয়। এবারের অবাক হওয়ার কারণ বাতাসের শক্তি প্রবণতা।

 এই স্থানে প্রবাহিত প্রবল শক্তিশালী বাতাস জলপ্রপাতের জলধারাকে নিম্নমুখী হতে দেয় না, তা ওপরের দিকে বিপরীতে ঠেলে উঠিয়ে দেয়। রিভার্স ওয়াটারফলের ঘটনা নিয়মিত ঘটেনা। বলা চলে খুবই বিরল। তবে, অনুমান করা হয় বাতাসের তীব্র গতিবেগের ফলে ঘটতে পারে এমন ঘটনা। পাহাড়ের চূড়ায় যখন বায়ুপ্রবাহের গতি ৭৫ কিমি তখন জলপ্রপাতের ধারা বিপরীত দিকে যেতে শুরু করে। মূলত তীব্র বায়ুপ্রবাহ জলগুলোকে নিচে যেতে না দিয়ে পুনরায় উপরের দিকে টেনে নিয়ে যায়। পূর্বে এসব জলপ্রপাতের এমন অবস্থার পেছনে সেসব স্থানগুলোর দুর্বল মধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে বলে ধারণা করা হতো। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা তীব্র বায়ুপ্রবাহের ফলাফল হিসেবে জলপ্রপাতের বিপরীতমুখী গতিপথকে চিহ্নিত করছেন।

জলপ্রপাতের নামটা শুনতেই হয়তো অনেকে চমকে উঠেছেন, হয়তোবা তাদের সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেছে, অসাধারণ জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখে পাগল পাগল হয়ে যাওয়ার কথা ভ্রমণ পিপাসু মানুষের। যাঁরা ব্যতিক্রমী, রহস্যময় স্থানের সন্ধানে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন তাঁদের এই অদ্ভূত জলপ্রপাতটি দুর্দান্ত লাগবে। নানেঘাট ভ্রমণের সেরা সময় বর্ষাকাল। তবে বর্ষার শেষে দিকে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো। কারণ এই সময়, বৃষ্টির জলে জলপ্রপাতগুলি জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই সময় জলের লাফিয়ে পড়া বা জলের উল্টো দিকে বয়ে যাওয়ার দৃশ্যের কোনও তুলনা হয় না। নানেঘাট পাহাড়ে ট্রেকিংয়ের জন্য আবহাওয়া প্রায় সবসময়ই মনোরম এবং উপযুক্ত। তবে যেকোনো সময় এই জলপ্রপাতটি একবার দেখে আসতে পারেন, ভারতবর্ষে যে এমন সুন্দর একটা জায়গা আছে তা না দেখলে কিন্তু বিশ্বাসই করতে পারবেন না।


তথ্য সূত্র:

১. আনন্দবাজার পত্রিকা

২. এইসময়

৩. টিভি 9 বাংলা

৪. নিউজ 18 বাংলা

৫. এবিপি আনন্দ 

৬. Wikipedia 

বাংলার প্রথম ভূতত্ত্ববিদ : ‘পি এন বোস’

 

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার গৈপুরে তাঁর জন্ম। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে এফএ পাস করে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজে অধ্যয়নকালে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি গিলক্রাইস্ট বৃত্তি লাভ করে ইংল্যান্ড যান এবং ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর রয়্যাল স্কুল অফ মাইনস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।



১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে প্রমথনাথ ‘জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’-তে উচ্চপদে নিয়োগ পান। কিন্তু বিশেষ কারণবশত ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করেন। উক্ত ভূতাত্ত্বিক সংস্থায় চাকরিকালীন সময়ে তিনি মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খনিজ সমীক্ষা পরিচালনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো ধুল্লী ও রাজাহারা লৌহখনি আবিষ্কার, যার ফলে ভিলাই কারখানা স্থাপিত হয়। তিনি কিছুদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ভূবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।


প্রমথনাথ বসুর শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো জামসেদপুর লৌহখনি আবিষ্কার (১৯০৩-৪)। এরই ভিত্তিতে ভারতের বিখ্যাত টাটা-কোম্পানী লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপনে সম্মত হয়। অধিকন্তু তিনি রানীগঞ্জ, দার্জিলিং ও আসামে কয়লা, সিকিমে তামা এবং ব্রহ্মদেশে খনিজ অনুসন্ধান পরিচালনা করেন।


প্রমথনাথ বসু ছিলেন স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত। তিনি ভারতে বিজ্ঞান ও শিল্পশিক্ষার উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে বিলেতে ‘ইন্ডিয়া সোসাইটি’র কর্মসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। একই লক্ষ্যে তিনি স্বদেশে ১৯০৬ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে স্থাপিত বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের (বর্তমান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম অবৈতনিক অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি এর পরিদর্শক পদে উন্নীত হন।


উপরিউক্ত কাজে পূর্ব থেকেই প্রমথনাথ লেখনী পরিচালনা করেন। বাংলা মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে তিনি ছিলেন দৃঢ় বিশ্বাসী। স্বদেশী আন্দোলনে তাঁর অবদান প্রশংসনীয়। তিনি ‘বেঙ্গল একাডেমী অব লিটারেচার’ স্থাপন করেন যা পরবর্তীকালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। উক্ত একাডেমীর লক্ষ্য ছিল পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নির্বাচনে সহায়তা করা। তিনি কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিরও সদস্য ছিলেন।


প্রমথনাথ অনেক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। সেগুলির বিষয়বস্ত্ত শিক্ষা, সংস্কৃতি ও হিন্দু সভ্যতা। শেষ জীবনে ১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি অমৃতবাজার পত্রিকায় নিজের জীবনস্মৃতিমূলক ধারাবাহিক প্রবন্ধ রচনা করেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।"


১২ মে ১৮৫৫। চব্বিশ পরগনা তখন আক্ষরিক অর্থেই— ২৪টি পরগনার সমাহার। কুশদহ পরগনার গোবরডাঙা অঞ্চলের গৈপুর গ্রামে প্রমথনাথের জন্ম। খাঁটুরার আদর্শ বঙ্গ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া, কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পাশ মাত্র ১৫ বছর বয়সে। ১৬ বছরে এন্ট্রান্স (এখন যা মাধ্যমিক) দেওয়া যায় না, তাই এক বছর অপেক্ষা করে পরীক্ষায় বসা এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেকেন্ড হওয়া। দু’বছর পর এফএ বা ফার্স্ট আর্টস (অধুনা উচ্চমাধ্যমিক) পরীক্ষায় পঞ্চম হয়ে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। ১৮৭৪-এ দেশে প্রথম স্থান অধিকার করে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে বিলেত যাত্রা। চার বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এসসি, দুর্দান্ত ফল করে রয়্যাল স্কুল অব মাইন্‌স-এ ভর্তি হওয়া, এবং প্যালিয়োন্টোলজি নিয়ে লেখাপড়া।


প্রত্নজীববিদ্যা অধ্যয়নের পাশাপাশি বিলিতি সমাজকেও খুঁটিয়ে দেখতেন প্রমথনাথ। ‘ভারতে বিলাতী সভ্যতা’ প্রবন্ধে সেই অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন। দুই দেশের তুলনামূলক আলোচনা ফুটিয়ে তোলেন, কেন এবং কোথায় ভারত পিছিয়ে আর বিলেত এগিয়ে। মোটেই ঔপনিবেশিক শাসকের ঘাড়ে একতরফা দোষ চাপাননি, সতীদাহ প্রথার মতো ভারতের মন্দগুলোর প্রবল সমালোচনা করেছেন, রেলরোড বা শিক্ষা বিস্তারের মতো ব্রিটেনের শুভ উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন। তবে, ও দেশে থাকতেই পরাধীনতার গ্লানিও অনুভব করেন প্রমথনাথ। ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ শাসনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে বক্তৃতা ও লেখালিখি করতে থাকেন। দাদাভাই নৌরজি, আনন্দমোহন বসু, লালমোহন ঘোষের সঙ্গে মিলে ‘ইন্ডিয়া সোসাইটি’-র কাজ শুরু করেন। তাঁকে আর বিলেতে রাখা সমীচীন বলে মনে করে না বিলেত সরকার, অতএব ভারত সচিবের পদে নিয়োগ করে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়। ১৮৮০ সালে ১৩ মে মাত্র ২৪ বছর বয়সে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন ভূতত্ত্ববিদ প্রমথনাথ।



Sunday, 27 April 2025

PDF Under Construction 🚧 🏗️

 


Under Construction 🚧 🏗️ 

https://drive.google.com/file/d/1V-YGW5aQSS1JcapKkAH7kYqGj0OWVitl/view?usp=drive_link

Sample Question Paper