Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Friday, 24 June 2022

পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় উদ্যান (National Park)

 পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে ৬ টি জাতীয় উদ্যান (National Park) রয়েছে। এগুলি হল --



(১) সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান : 

স্থাপিত - ১৯৮৪ ; জেলা - দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ; আয়তন - ১৩৩০.১০ বর্গকিমি ; প্রকৃতি - ম্যানগ্রোভ ; প্রধান জীবজন্তু - বাঘ, মেছো বিড়াল, কুমীর, কচ্ছপ, কাঁকড়া প্রভৃতি ; বিশেষ মর্যাদা - ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (১৯৮৭), রামসার সাইট (২০১৯)। 


(২) সিংগলিলা জাতীয় উদ্যান : 

স্থাপিত - ১৯৮৬ ; জেলা - দার্জিলিং ; আয়তন - ৭৮.৬০ বর্গকিমি ; প্রকৃতি - পূর্ব হিমালয় ; প্রধান জীবজন্তু - চিতাবাঘ, লাল পান্ডা, ভালুক, প্যাঙ্গোলিন, বন্য শূকর প্রভৃতি। 


(৩) নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান :

স্থাপিত - ১৯৮৬ ; জেলা - কালিম্পং ; আয়তন - ১৫৯.৮৯ বর্গকিমি ; প্রকৃতি - পূর্ব হিমালয় ; প্রধান জীবজন্তু - চিতাবাঘ, লাল পান্ডা, ভালুক, সম্বর হরিণ, বন্য শূকর প্রভৃতি।


(৪) গোরুমারা জাতীয় উদ্যান : 

স্থাপিত - ১৯৯৪ ; জেলা - জলপাইগুড়ি ; আয়তন - ৭৯.৪৫ বর্গকিমি ; প্রকৃতি - ডুয়ার্স ; প্রধান জীবজন্তু - একশৃঙ্গ গন্ডার, বাইসন, হাতি,  বন্য শূকর, সম্বর হরিণ প্রভৃতি।


(৫) বক্সা জাতীয় উদ্যান :

স্থাপিত - ১৯৯৭ ; জেলা -  আলিপুরদুয়ার ; আয়তন - ১১৭.১০ বর্গকিমি ; প্রকৃতি - ডুয়ার্স ; প্রধান জীবজন্তু - বাঘ, চিতাবাঘ, হাতি, সম্বর হরিণ, বাইসন প্রভৃতি ; বিশেষ মর্যাদা - টাইগার রিজার্ভ (১৯৮৩)। 


(৬) জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান :

স্থাপিত - ২০১২ ; জেলা - আলিপুরদুয়ার ; আয়তন - ২১৬.৩৪ বর্গকিমি ; প্রকৃতি - ডুয়ার্স ; প্রধান জীবজন্তু - একশৃঙ্গ গন্ডার, চিতাবাঘ, হাতি, সম্বর হরিণ, বাইসন প্রভৃতি। 

তথ্যসূত্রঃ- ENVIS ; Wikipedia ; The Times of India ; Project Tiger 

Wednesday, 22 June 2022

লবঙ্গের দ্বীপ 'জাঞ্জিবার'

আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে ভারত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত জাঞ্জিবার (Zanzibar) হল একটি দ্বীপপুঞ্জ, যা তানজানিয়া একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জ ৪ টি প্রধান দ্বীপ, যথা : উঙ্গুজা (বৃহত্তম), পেম্বা, মাফিয়া ও ল্যাথাম এবং আরও ৪০টিরও বেশি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত।জাঞ্জিবার 'লবঙ্গের দ্বীপ' (Islands of Cloves) নামে পরিচিত। লবঙ্গ হল একপ্রকার মশলা ; চিরসবুজ লবঙ্গ গাছের ফুলের শুকনো কুঁড়িকেই লবঙ্গ বা লং বলা হয়। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium aromaticum। মানব সমাজে লবঙ্গের ব্যবহার কয়েক হাজার বছরের পুরানো। রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশেই এখনও ঔষধি উপাদান হিসেবে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। একসময় শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার মালুকু দ্বীপপুঞ্জে লবঙ্গ উৎপাদিত হত। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ওমানের সুলতানের উদ্যোগে জাঞ্জিবারে লবঙ্গের চাষ ও উৎপাদন শুরু হয়। জাঞ্জিবারের উঙ্গুজা ও পেম্বা দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে লবঙ্গ উৎপাদন হত। প্রায় দেড়শো বছর ধরে জাঞ্জিবার ছিল লবঙ্গ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। ১৯৬৪ সালে জাঞ্জিবার তানজানিয়ার একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়। ১৯৭০ এর দশকে জাঞ্জিবারের লবঙ্গ রপ্তানি ৮০% হ্রাস পায়। বর্তমানে লবঙ্গ উৎপাদনে বিশ্বে ইন্দোনেশিয়া প্রথম, মাদাগাস্কার দ্বিতীয় এবং তানজানিয়া তৃতীয় স্থান অধিকার করে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বে ৭০% এরও বেশি লবঙ্গ উৎপাদন করে। আর জাঞ্জিবার সেখানে মাত্র ৭%। 



Sunday, 12 June 2022

জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিপারকাস

প্রাচীন গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল হিপারকাসের হাতে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০ অব্দে প্রথম গ্রিসের রোডস দ্বীপে তিনি একটি মানমন্দির স্থাপন করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটিই ‘রোডস মানমন্দির’ বা হিপারকাসের মানমন্দির নামে পরিচিত। এখন প্রশ্ন হল, কে এই হিপারকাস! যিনি প্রাচীনকালেই জ্যোতিষীক চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে গাণিতিক ও পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চার জন্য এমন একটি ভিত্তি স্থাপন করলেন।



হ্যাঁ, হিপারকাস ছিলেন প্রাচীন যুগের অন্যতম সেরা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০ অব্দে গ্রিসের বিথিনিয়া প্রদেশের নিকিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। নিকিয়াতে জন্মগ্রহণ করলেও জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটান রোডস দ্বীপে। তিনি মৃত্যুবরণ করেন খ্রিষ্টপূর্ব ১২০ অব্দে। সে সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে দ্বীপটি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। আস্তরলাব (অ্যাস্ট্রোল্যাব) ও নভোগোলক ব্যবহার করে তিনি প্রথম আকাশের ১০২৫টি তারার একটি অবস্থান–তালিকা নির্ণয় করেন। তারাচিত্রের ধারাবাহিক পরিবর্তন পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি অয়ন-চলন (Precession) আবিষ্কার করেন। এটি ছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। 


এছাড়া ঔজ্জ্বল্যতা অনুযায়ী তারাদের ছয়টি শ্রেণীতে ভাগ করেন এবং প্রতিটি তারা অন্য তারার তুলনায় কত উজ্জ্বল, তা–ও স্থির করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৪ অব্দে বৃশ্চিক রাশিতে একটি নবতারা বা নোভা দেখেই তিনি তারার তালিকা প্রণয়নে উৎসাহিত হন। তিনি তাঁর তালিকায় নীহারিকার মতো দুটি বস্তু অন্তর্ভুক্ত করেন। বস্তু দুটির একটি হল মধুচক্র স্তবক বা প্রিসিপ (এম৪৪), অপরটি পারসিয়াস মণ্ডলের যুগ্ম তারাস্তবক। বর্তমানে এটি এইচ ও কাই পার্সিই নামে পরিচিত। পর্যবেক্ষণ করেন গ্রহগুলোও। এ ছাড়া চন্দ্রের দূরত্বসহ আয়তনও নির্ণয় করেন। গণিতে তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান সমতলীয় ও গোলকীয় জ্যামিতি আবিষ্কার। হিপারকাসের পূর্বসূরিরা ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী থেলিস, ইউডক্সাস ও অ্যারিস্টার্কাস। থেলিস ছিলেন পৃথিবীর প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি অঙ্ক কষে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৫ অব্দের ২৮ মে সূর্যগ্রহণের কথা বলেছিলেন। সেদিন থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের জন্মদিনের সূচনা বলে ধারণা করা হয়। ইউডক্সাসই প্রথম ‘খ-গোলক’ তৈরি করেন, যার নাম ছিল ‘ইউডক্সাসের গোলক’। আর অ্যারিস্টার্কাসকে বলা হয় গ্রিক যুগের কোপার্নিকাস। তিনি বলেন, সূর্য স্থির আর পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারদিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরছে। হিপারকাসের উত্তরসূরী ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি। টলেমির তারা বর্ণনা প্রায় পুরোটাই হিপারকাসের বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল। পরে হিপারকাস ও টলেমির হাত ঘুরে গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চলে যায় মধ্যযুগের আরবদের হাতে।


হিপারকাস প্রচলিত যন্ত্রপাতির সাহায্যে ব্যাপক ও নির্ভুল পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। তিনি প্রাচীন ও পূর্বতন বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণলব্ধ বৈজ্ঞানিক তথ্যের চুলচেরা বিচার ও বিশ্লেষণ করেছেন, বৈজ্ঞানিক তথ্যকে সহজ ও বিধিবদ্ধ উপায়ে প্রকাশ করে, গণিতের সহায়তা গ্রহণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণিত ব্যর্থ হলে গণিতের উন্নতি সাধন অথবা নতুন গণিতের উদ্ভাবন (যেমন: ত্রিকোণমিতি) এবং বিশেষ জ্যামিতিক চিত্রের সাহায্যে চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহদের গতির বর্ণনা ও ব্যাখ্যায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। হিপারকাস সম্পর্কে বিখ্যাত ফরাসি গণিতবিদ দ্য লম্বর তাঁর প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাস গ্রন্থে বলেছেন, ‘হিপারকাসের আবিষ্কার পরবর্তী সমস্যাগুলোর সমাধান, সংশোধন, তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা ও অসংখ্য গণনা ইত্যাদির কথা চিন্তা করলে, মনে হয় কী একটা বিরাট প্রতিভা এই হিপারকাস। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে এত বড় পণ্ডিত আর ছিলেন না।’

সৌজন্যেঃ- প্রথম আলো

Saturday, 4 June 2022

বিশ্ব পরিবেশ দিবস (World Environment Day)

 বিশ্ব পরিবেশ দিবস (সংক্ষেপে WED) প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স (United Nations Conference on the Human Environment) শুরু হয়েছিল। এই কনফারেন্স হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি। এই কনফারেন্স ঐ বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা। তখন থেকেই প্রতি বৎসর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। উত্তর গোলার্ধে দিবসটি বসন্তে, আর দক্ষিণ গোলার্ধে দিবসটি শরতে পালিত হয়।১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৪ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ ই জুনকে জাতিসংঘ 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে ঘোষণা দেয়। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।



বন উজাড়, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণতা, খাদ্যের অপচয় ও ক্ষতি, দূষণ ইত্যাদির মতো পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলা করা প্রয়োজন। সারা বিশ্বে কার্যকারিতা আনতে একটি নির্দিষ্ট থিম এবং স্লোগান নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রচারণার আয়োজন করা হয়।


এই দিনটি সফলভাবে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন, গ্রিনহাউস প্রভাব হ্রাস, বন ব্যবস্থাপনা, অবক্ষয়িত জমিতে রোপণ, সৌর উত্সের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন, প্রবাল প্রাচীর এবং ম্যানগ্রোভের উন্নয়ন, নতুন নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য পালিত হয়।


মহাবিশ্বে লাখো কোটি নক্ষত্রের মধ্যে আমাদের বাড়ি ‘সৌরজগতে’, অর্থাৎ সূর্য নামক নক্ষত্রটিকে ঘিরে যে গ্রহগুলো ঘুরছে, তাদেরই একটি হচ্ছে আমাদের এই ‘পৃথিবী’। তবে এখন পর্যন্ত ‘পৃথিবী’ ছাড়া আর কোনো গ্রহই প্রাণী বসবাসের উপযোগী নয়। তাপমাত্রা বিবেচনা করলেও এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রতীয়মান। সূর্যের দিক থেকে কাছাকাছি দূরত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর আগের গ্রহটি হচ্ছে শুক্র, আর পরবর্তী গ্রহটি হচ্ছে মঙ্গল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই তিনটি গ্রহের তাপমাত্রা যথাক্রমে শুক্র (প্রায় ৫০০ ডিগ্রি সে.), পৃথিবী (প্রায় ১৫ ডিগ্রি সে.) আর মঙ্গল (প্রায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সে.)। সূর্য থেকে দূরত্ব বিবেচনায় এভাবে আর সব কটি গ্রহের তাপমাত্রাই যথাক্রমে বাড়তে অথবা কমতে থাকে, যার মানে হচ্ছে এই যে সৌরজগতে শুধু পৃথিবীর তাপমাত্রাই কেবল প্রাণী বসবাসের যোগ্য, আর কোনোটি নয়। প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় আর সব উপাদানও নেই আর কোনো গ্রহে।


কিন্তু তারপরও ‘একটি মাত্র পৃথিবী’ আর এই একই পৃথিবীর বাসিন্দা আমরা সবাই, এ ধারণা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বরাবরই আমাদের অনেক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে গেলে, এক গাঁয়ের মানুষকে আপন মনে হয়, দূর প্রবাসে নিজ দেশের যে কাউকে আপন মনে হয়, একইভাবে সে যে গ্রাম, উপজেলা বা জেলারই হোক না কেন। কিন্তু এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে আমাদের যাতায়াত নেই বিধায় এ সুযোগ আমাদের কখনোই হয়ে ওঠেনি সেই হিসাবে যে আমরা একই গ্রহের বাসিন্দা, যার নাম ‘পৃথিবী’।


আবার এই একই পৃথিবীতে আমাদের পরস্পরের মাঝে যোগসূত্রও একই সুতায় বাঁধা। পরিবেশবিজ্ঞানে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও বিভিন্ন তত্ত্ব আর সূত্রের অবতারণা করা হয়েছে। ‘এনভায়রনমেন্টাল ইউনিটি’ ধারণাটিতে বলা হয়েছে, সমগ্র পৃথিবী একটি ‘কন্টিনিউয়াম’ বা একক সত্তা।


পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কারণে মানুষের জীবন বিদ্যমান। পরিবেশ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বাতাস থেকে শুরু করে খাদ্য এবং পানীয় সবকিছু সরবরাহ করে এবং পৃথিবীতে বসবাসের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ দেয়। এ সবই প্রকৃতির দান। প্রকৃতি ও পরিবেশের কারণেই মহাবিশ্ব সুচারুভাবে চলে। প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছু দেয় কিন্তু বিনিময়ে মানুষ কেবল প্রকৃতিকে শোষণ করেছে এবং পরিবেশকে দূষিত করেছে। এতে প্রকৃতির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি প্রাণের অস্তিত্বও হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। বিশ্ব উষ্ণায়ন, সামুদ্রিক দূষণ এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ করুন, যাতে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এ জন্য প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়।  এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে, প্রকৃতি রক্ষার জন্য ৫ টি সংকল্প  নিন, যাতে পরিবেশ আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।


 সংকল্প ১:

 বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রথম সংকল্প নিন যে আমরা ঘর থেকে উৎপন্ন বর্জ্য সঠিক স্থানে নিয়ে যাব। প্রতিদিন আমাদের বাড়ি থেকে প্রচুর আবর্জনা বের হয়। যা মানুষ এখানে-ওখানে ফেলে দেয়। এই বর্জ্য হয় পশুর পেটে যায় অথবা নদীতে ভেসে যায়। এ কারণে আমাদের নদীগুলোও দূষিত হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা এখানে-ওখানে না ফেলে নিজেই ডাস্টবিনে ফেলুন। শুকনো ও ভেজা বর্জ্য আলাদা করে ফেলুন যাতে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। 


সংকল্প ২:

শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জীবন চলে  এবং শ্বাস নিতে বিশুদ্ধ বাতাসের প্রয়োজন হয়। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শপথ নিন যে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বিশুদ্ধ বাতাস থাকবে, এর জন্য আমরা পেট্রোল-ডিজেলের পরিবর্তে ই-বাহন ব্যবহার করব।  ব্য়ক্তিগত গাড়ির পরিবর্কে  বেশি গণপরিবহন ব্যবহার করবেন।


 সংকল্প ৩:

গাছ-গাছালির উপর নির্ভরশীল প্রকৃতি। কিন্তু আজকাল নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার কারণে অক্সিজেনের অভাবের পাশাপাশি আবহাওয়া চক্রেরও অবনতি ঘটছে। এ কারণে অনেক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হতে পারে। এমতাবস্থায় অঙ্গীকার নিন যে, গাছ কাটা বন্ধ করে আমরা আরও বেশি করে চারা রোপণ করব, যাতে এ পর্যন্ত প্রকৃতির যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়।


 সংকল্প ৪:

গাছ-পালা, মাটি, মাটি, প্রাণী, জল ইত্যাদি পরিবেশকে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রার্থনা করুন পরিবেশের ভারসাম্য যেন সবসময় বজায় থাকে এবং পরিবেশের ভারসাম্য ও নিরাপদ রাখতে যা যা করা দরকার তাই করবেন।


 সংকল্প ৫:

পরিবেশ দিবসে পঞ্চম এবং শেষ সংকল্প  নিন যে আমরা পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করব। প্রকৃতির সবচেয়ে বড় শত্রু পলিথিন ও প্লাস্টিক। এমতাবস্থায় আপনি নিজে যেমন এগুলো ব্যবহার করবেন না, তেমনি অন্য কাউকে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার করতে দেখলে তাকেও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করবেন।


তথ্যসূত্র:

১) Wikipedia 

২) কালিকলম

৩) আজতক বাংলা 

৪) প্রথম আলো


লেখক:

অয়ন বিশ্বাস
বি.এসসি, এম.এ(ভূগোল), বি. এড্
ঘোড়ালিয়া, শান্তিপুর, নদিয়া।


.........................................................................................................
লেখকের লিখিত অনুমতি ছাড়া সমগ্র বা আংশিক অংশ প্রতিলিপি করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোন তথ্যের সমগ্র আংশিক ব্যবহার মুদ্রণ বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (জিংক, টেক, স্ক্যান, পিডিএফ ইত্যাদি) পুনরুৎপাদন করা নিষিদ্ধ।