Welcome to GEO HUB (Enhance Your Geo Knowledge) Ghoralia, Santipur, Nadia, West Bengal-741404, Mobile: 8926495022 email: geohubghoralia@gmail.com

Diable copy paste

Wednesday 23 November 2022

পশ্চিমবঙ্গের ফুলের উপত্যকা (Valley of Flowers in West Bengal)

 পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার নিকট অবস্থিত ক্ষীরাই হল 'পশ্চিমবঙ্গের ফুলের উপত্যকা' (Valley of Flowers in West Bengal)। পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র ফুলের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশই এখানে চাষ হয় (সূত্র : কৃষি জাগরণ বাংলা)। ক্ষীরাই হল স্থানীয় একটি ছোট্ট রেলস্টেশন, যা পার্শ্ববর্তী ক্ষীরাই নদীর নাম থেকে এসেছে। ক্ষীরাই ফুলের উপত্যকা নামে বিখ্যাত হলেও, ফুলের ক্ষেতগুলি সংলগ্ন অঞ্চলের দোকান্ডা, পশ্চিম কোল্লা, ভবানীপুর প্রভৃতি গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। কলকাতা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ক্ষীরাই অঞ্চলে কাঁসাই ও ক্ষীরাই নদী কিছুটা দূরত্বে প্রায় সমান্তরাল ভাবে বয়ে চলেছে। আর এই দুই নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় ফুলের রাজত্ব। এই অঞ্চলে রেললাইনের দুপাশে পুকুর, মাটির ঘরবাড়ি, কৃষিজমি প্রভৃতি এক অনুপম গ্রাম্য দৃশ্যপট রচনা করেছে। 



দোকান্ডায় মূলত চাষ হয় গাঁদা, অ্যাস্টর, ক্যালেন্ডুলা। দোকান্ডা পর্যটকদের সদ্য তোলা ফুলের মালা, ফুলের টায়রা ইত্যাদি দিয়ে স্বাগত জানায়। বেশ কম দামে পর্যটকরা নিজেদের পচ্ছন্দমত ফুলের তৈরি জিনিস কিনতে পারেন। দোকান্ডা গ্ৰামের পর আছে পশ্চিম কোল্লা গ্ৰাম। এ যেন চন্দ্রমল্লিকার রাজ্য। সাদা চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি লাল-হলুদ-হালকা বেগুনি রঙা চন্দ্রমল্লিকাও রয়েছে। এছাড়া রয়েছে করন, ডালিয়া ও গোলাপের ক্ষেতও। গ্ৰামে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বাড়ির মেয়ে-বউরা ফুলের কাজে ব্যস্ত। কেউ মালা গাঁথছেন, কেউবা ফুল বিক্রি করতে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করছেন। পশ্চিম কোল্লার পর আছে ভবানীপুর। এই গ্ৰামে বিশেষ করে চাষ হয় হোয়াইট মেরিগোল্ড, মোরগ ঝুঁটি, চন্দ্রমল্লিকা। ফুলের জমিতে শখের সবজি চাষও নজরে পড়বে।


ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাইতে চারিদিক জুড়ে শুধুই ফুলের সমারোহ ; বর্ণময় ফুলের বাগান। ফুলের উপত্যকায় হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ৩-৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাবে, তা বোঝাই যাবে না। একদিন ঘুরে আসার পক্ষে সত্যিই দারুণ জায়গা। এখানে বিভিন্ন রঙবেরঙের ফুলের চাষ হয়। লাল গাঁদা, হলুদ গাঁদা, রক্তগাঁদা, সাদা গাঁদা, গোলাপ, মোরগ ঝুঁটি, সাদা-লাল-হলুদ-হালকা বেগুনি চন্দ্রমল্লিকা, অ্যাস্টর, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, করন, রজনীগন্ধা সহ আরো অনেক নাম-না-জানা ফুলের চাষ হয়। ব্রীজের উপর থেকে দেখলে মনে হবে, নদীর চরে বিভিন্ন রঙের কার্পেট বিছানো আছে। ফুল আছে অথচ মধুকর নেই, তা ভাবাই যায় না। বর্ণময় ফুলের উপর প্রজাপতি, মৌমাছির আনাগোনা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। 


এখানে মূলত শীতকালেই ফুলের চাষ হয়। অক্টোবর মাসের শেষ থেকে এখানে ফুলের চাষ শুরু হয়। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি নানা রঙের ফুলে ভরে যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুলের উপত্যকা ভ্রমণের সেরা সময়। এসময়েই পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। চাষিভাইরা সর্বদা ফুলগাছের পরিচর্যাতে ব্যস্ত থাকেন। কৃষক পরিবারের প্রায় সকলেই ফুলচাষে কোনো না কোনো ভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। কোথাও কৃত্রিমভাবে ফুলের দ্রুত বৃদ্ধি করতে জমিতে বৈদ্যুতিক ল্যাম্পও ব্যবহার করা হয়। এখানকার চাষিরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ফুল চাষ করেন, যা তাঁদের রুজি-রোজগার। এখানে সরাসরি চাষিভাইদের থেকে ফুল কেনা যায়। ক্ষীরাইয়ের ফুল এরাজ্যের কোলাঘাট ও কলকাতার পাশাপাশি মুম্বাই, দিল্লিতেও রপ্তানি করা হয়।


সাম্প্রতিক কালে ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাইতে পর্যটক ও ফুলপ্রেমীদের ভিড় অনেকাংশে বেড়েছে। বিশেষত, সপ্তাহান্তে শনি-রবি বার অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে এখানে অস্থায়ী কিছু খাবারের দোকান আছে সারিসারি। ফুল চাষ হল এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। এক শ্রেণীর পর্যটক ক্ষীরাই ভ্রমণে এসে ফুল ছেঁড়া, জমিতে খাবারের প্যাকেট ফেলা, ফুলের ছবি তুলতে গিয়ে জমিতে নেমে ফুলের গাছ নষ্ট করা প্রভৃতির মাধ্যমে ফুলচাষিদের ক্ষতি করেন। তাই এমন কিছু করবেন না, যার দ্বারা ফুলগাছের বা চাষের জমির কোনোরকম ক্ষতি হয়। এমনিতেই করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ লকডাউনে ফুল চাষ ও ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে।


পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাই উদ্যান কৃষি বা হার্টিকালচারের এক আদর্শ উদাহরণ। নদী অববাহিকার উর্বর জমি, কলকাতা-হাওড়া-হুগলি পৌর অঞ্চলের বিশাল বাজার, চেন্নাই-কলকাতা হাইওয়ে ও রেলপথের মাধ্যমে উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এই অঞ্চলে 'ফ্লোরিকালচার' গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি বিস্তীর্ণ ফুলের উপত্যকা পর্যটনেরও প্রসার ঘটিয়েছে। 

★ কিভাবে যাবেনঃ- হাওড়া থেকে খড়গপুর বা মেদিনীপুর গামী ট্রেনে করে ক্ষীরাই স্টেশনে নেমে ৩ নং লাইনের পাশের রাস্তা ধরে হাওড়ার দিকে মুখ করে ১ কিমি হাঁটা পথ। আবার পাঁশকুড়া থেকে সরাসরি গাড়ি করে যাওয়া যায় দোকান্ডা গ্রামে।


তথ্যসূত্রঃ-

১) Zee News 

২) আনন্দবাজার পত্রিকা 

৩) কৃষি জাগরণ বাংলা 

৪) Calcutta News (CN)

No comments:

Post a Comment