শান্তিপুরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে সুরধনী নদী। নবদ্বীপের কাছেই মূল ভাগীরথী থেকে সুরধনী নদীর উৎপত্তি। শান্তিপুরের গয়েশপুর থেকে নদীটি বাঁক নিয়ে বাগআঁচড়া, বাবলা, সারাগর হয়ে ঘোড়ালিয়ার কাছে ফের মূল গঙ্গায় মিশেছিল। গতিপথ ছিল প্রায় ১৪ কিলোমিটার। স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষায় ফুলেফেঁপে উঠত সুরধনী। জলরাশি প্রবাহিত হওয়ার সময় শ্রুতিমধুর সুর সৃষ্টি হতো। সেই থেকেই নদীর নাম হয় সুরধনী। জনশ্রুতি, প্রায় ৫৫০ বছর আগে অদ্বৈত আচার্য্যের স্মৃতি বিজড়িত বাবলা গ্রাম দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়েছিল। অতীত এই নদী বেয়ে এসে শান্তিপুরের একটি গাছতলায় তপস্যা করেছিলেন অদ্বৈত আচার্য। সেই কারণে শান্তিপুরের বাবলায় অদ্বৈত আচার্যর নামে অদ্বৈত পাঠ মন্দির স্থাপিত হয়। এই নদীতেই ফুল নিক্ষেপ করে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবকে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। শুধুমাত্র দেশ নয়, বিদেশের বহু ভক্তরাও এই মন্দির দর্শন করতে আসেন।
প্রায় ৫০ বছর আগে নিজের গতিপথ হারিয়ে ফেলা শান্তিপুরের সুরধনী নদীকে এখন চেনাই দায়। ইতিহাস সমৃদ্ধ নদিয়ার ঐতিহ্যবাহী সুরধ্বনি নদী আজঅবলুপ্তির পথে। সুরধনী নদী আসলে গঙ্গার ছেড়ে আসা এক খাত।কোনও নদী গতিপথ পরিবর্তন করলেও একটি বিন্দুতে (‘নোডাল পয়েন্ট’) সে অপরিবর্তিত থাকে। নবদ্বীপ গাঙ্গেয় বদ্বীপের অন্যতম ‘নোডাল পয়েন্ট’। নবদ্বীপকে অপরিবর্তিত রেখে তার আগে-পরে গঙ্গা একাধিক বার গতিপথ বদলেছে শান্তিপুরে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিহ্ন রেখে গিয়েছে। কখনও তার নাম সুরধনী, কখনও তার নাম হরি নদী। প্রকৃতিগত দিক থেকে সুরধনী হল আদিগঙ্গার মতো। গঙ্গার ছেড়ে আসা এক খাত।
১৯২২ সালের আগে সুরধনী মূল গঙ্গার উৎসমুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তখনও অবশ্য মোহনা থেকে জল ঢুকেছে। মোহনার থেকেও সুরধনী শেষে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চল্লিশের দশকে। ১৯৪৩ সালের টপোশিট বিশ্লেষণ করে সেই সময়ের গঙ্গার দু’টি ছেড়ে আসা খাতকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। একটি হরি নদী, যার নাম তখনকার টপোশিটেও উল্লেখ রয়েছে। আরেকটি হল এই সুরধনী। সুরধনীকে অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছিল জলাভূমি হিসেবে।
একদা সুরধনী ছিল প্রাণচঞ্চল। নিজের গতিপথ হারিয়ে ফেলা শান্তিপুরের সুরধনী নদীকে এখন চেনাই দায়। স্রোতস্বিনী নদী আজ একটা সাধারণ নর্দমা! নদীখাতের কোথাও পলি জমে চরা পড়েছে। তার জেরে গতিহারা হয়ে মজে যাচ্ছে সুরধনী। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে নদীর বুকে শুরু হয়েছে অবাধে চাষাবাদ। আবার কোথাও হারিয়ে যাওয়া নদীর গতিপথে তৈরি হয়েছে কারখানা। কোথাও আবার প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে বেআইনি কংক্রিটের নির্মাণ। তবে আশার কথা, সুরধনীর যৌবন ফেরাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সেচদপ্তর।
তথ্য সূত্র:
১.
২.
৩.
৪.
No comments:
Post a Comment